চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সফর
লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া মুকিম ৩০ অক্টোবর, ২০১৫, ১০:৫০:৪৮ রাত
পাহাড়, সাগর আর দিগন্তের অভূতপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করার জন্য অনন্য যে স্থান - আমার মতে সেটি চট্টগ্রাম। আমাদের বাড়ি (বাবা ও শ্বশুড় বাড়ি) চট্টগ্রাম হলেও আমাদের ভাই-বোনদের মধ্যে শুধু মেঝোভাই বিয়ে করলেন চট্টগ্রামে। ভাইয়ার কর্মস্থল কক্সবাজার হওয়াতে আমরা দেশে গেলেই কক্সবাজার যাওয়ার চেস্টা করি। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয় নি। আমরা সপরিবারে রওয়ানা হলাম কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে, সময় বাঁচানোর জন্য সফর করলাম বিমানে। ঢাকা থেকে রওয়ানা হওয়ার সময় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ছিলো, কক্সবাজার নামার পর সেটা বিশাল ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরে বর্ষাকালের অস্তিত্ব জানান দিতে লাগলো।
বর্ষাকালের শেষ বিকেলের অস্তগামী সূর্যটার আলোকরশ্মি নেই বললেই চলে। এখানেও সারাদিন ঝিম বৃষ্টি ছিলো। চারিদিক ধূষর আঁধারে ছাওয়া , ছোট বিমানবন্দরটিতে নেমে প্রথমেই মনে মনে বললাম, আগামী কালটা যেনো আজকের দিনের চাইতে সুন্দর হয়!
পাহাড় আর সমুদ্র দুটোই ভীষন পছন্দ তাই ভেবেছিলাম এরকম দর্শনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য মন্ডিত কোনো স্থানে ঘুরতে যাবো। এর আগের বার এসে হিমছড়ি গিয়েছিলাম, সুদীর্ঘ উঁচু সিঁড়ি বেয়ে শেষ পর্যন্ত যখন হিমছড়ি চূড়ায় উঠেছিলাম সেখানে সবুজের ছড়াছড়িতে প্রাণ অদ্ভুত রকমের চঞ্চলানন্দে ভরে উঠেছিলো। নিচে তাকালেই ছোট বড় টিলাগুলোর বাঁক আর উপরে দূর-দিগন্তের নীল মেঘেদের ছড়াছড়ি- এক কথায় অপূর্ব! সেই স্মৃতি আরেক বার আস্বাদনের জন্যে পাহাড় বা সমুদ্রের কাছাকাছি যাওয়ার কথা বলতেই স্থান নির্বাচন নিয়ে সমস্যায় পড়লাম। কারণ এবার এসেছি বর্ষাকালে; রাস্তাঘাটের অবস্থা মোটেও সুবিধাজনক নয় আর পাহাড়ী এলাকাগুলো বৃষ্টিতে ভিজে বিপদজনক অবস্থায় রয়েছে।
প্রভাতে সূর্যিমামার দেখা মিলবে যতখানি আশা আর স্বপ্ন নিয়ে রজনীকে বিদায় দিলাম, ঠিক ততখানি হতাশ করে অবিশ্রান্ত বৃষ্টির ধারাবর্ষণ অব্যাহত থাকলো সারাদিন ব্যাপী! ক্ষণে ক্ষণে জানালায় দাঁড়িয়ে মনের রেইনগেজে বৃষ্টির গতিবেগ মাপার মিছে চেষ্টা করে বারবার ব্যর্থ হচ্ছিলাম আর এই বর্ষন দ্বিধাহীন বেগে আমার মনোবাসনাকে ভেংচি কেঁটে অভিকর্ষের প্রভাবে বিশাল ফোঁটায় ফোঁটায় সবুজ জমিনকে ভাসিয়ে নেয়ার পরিকল্পনায় বদ্ধ পরিকর রইলো!
নেই কাজ তো খই ভাজ- এতোদূর আসা তো আর ব্যর্থ হতে দেয়া যায় না, আমরা ভাই-বোনরা মিলে বাসার মধ্যেই জমিয়ে তুললাম আড্ডার পরিবেশ। খিচুড়ি ভূনা,ডিম ভাজি,মেজবানী গোশত, নান রুটি,কাবাব, সমুচা, ঝাল মুড়ি,পিঁয়াজু ,ডিম পরোটা, সামুদ্রিক তাজা মাছ, নানান রকমের শুঁটকি, ভর্তা-ভাজি রন্ধন-পরিবেশন-গলাধঃকরণের মাধ্যমে হৈ চৈ করেই দিনগুলো যাচ্ছিলো! আশ্চর্যের বিষয় হলো তিন দিন থাকার পরেও বিন্দুমাত্র বৃষ্টি কমার লক্ষণ নাই বরং সাথে যোগ হলো সমুদ্র সংকেত ৭ ।
দেশে আসার পর থেকেই অবিরাম দৌড় ঝাপে কাটাতে হয়েছে, পাসপোর্ট জমা দেয়া সংক্রান্ত পেরেশানী আর দুশ্চিন্তা মাথা থেকে নামেনি পর্যন্ত; হাতে সময় কম, দিন গুনে গুনে ব্যবহার না করলে পরে পস্তাতে হবে, যাওয়ার সময় ঘনিয়ে আসছে, সমস্ত কেনাকাটা বাকি, আমাদের আসা উপলক্ষে পুরো পরিবার নিয়ে আমরা ঘুরতে বেড়িয়েছি অথচ বৃষ্টির কারণে গৃহবন্দী হয়ে সময় কাটাতে হচ্ছে এই সব ভেবে ভেবে মূল্যবান দিন গুলো অলস সময়ে কাটিয়ে দিতে হচ্ছিলো।
সবচাইতে কল্যাণকর যেটা হলো , আমরা ভাই-বোন-বাচ্চারা একটা সুন্দর পরিবেশ পেয়েছি , একান্ত মনে সময় কাটাতে পেরেছি বিশেষ করে আমি মায়ের সাথে এতো আনন্দঘন নিবীড় সময় কাটিয়েছি যা এর পরে আর সম্ভব হয় নি! সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বাসায় সময় কাটিয়ে লাভ হয়েছে তা না হলে দৌড়ঝাপেই সময় চলে যেতো।
অনার্স পড়ুয়া ছোট ভাইকে পেয়ে বাচ্চারা ভীশন মজা পেয়েছে, একদিকে ছোটো চাচ্চু অপরদিকে ছোটো মামা দুই গ্রুপের টানাটানিতে বেচারার কাহিল দশা হলেও আমরা মাদার্স গ্রুপ ছিলাম পুরাই নিশ্চিন্তে।
মেঝো ভাইয়ার ছেলে-মেয়ে - উমায়ের আর উমরা ওদের সাথে নিবীড় আলিঙ্গনে কাটানো মুহূর্ত গুলো এখনো মনের স্মৃতির আকাশে উজ্জল তারা হয়ে জ্বলে ওঠে! ওদের দুষ্ট -মিষ্টি কথায়- আলাপণে-দুষ্টুমিতে হারিয়ে যেতাম আমাদের ছোটবেলায়।
উমায়ের দাঁত নড়বড়ে অবস্থায় সেই রমাদান থেকে, সে কাউকে তাঁর দাঁতে হাত দিতে দেয় না। ভাবীর দিবারাত্রি চিৎকার নিচ দিয়ে আরেকটা দাঁত উঠে গেলো, ভাইয়াকে ভুয়া ডেন্টিস্ট হওয়ার মিথ্যা অপবাদ দিয়েও কোনোভাবেই পুত্রের দাঁত ফেলা যাচ্ছিলো না। ভাইয়ার নো টেনশন মনোভাব দেখে বললাম, একটা টান মেরে দাঁত টা ফেলছেন না কেনো? সারাদিন কতশত মানুষের দাঁত ফেলেন আর নিজের ছেলের বেলায় এতো অবহেলা কেনো?
মৃদু হেসে ভাইয়া বললো- রুগীর দাঁত ফেলা অনায়াসেই সম্ভব কিন্তু আপনজন-ছেলে বলে কথা! একবার ওরকম টান দিয়ে ফেলার পর থেকে সে আমাকে তাঁর আশে পাশে দেখলেই ভয়াবহ চিৎকার জুড়ে দেয়! তার থেকে কোনোরকম পড়ুক পরে সবগুলো একবারে চেম্বারে নিয়ে ঠিক করে দিবো!
উমায়েরকে ৫০ টাকার লোভ দেখানোর পরেও সে আমাকে তাঁর দাঁতে হাত দিতে দিলো না, শুধু দিবা স্বপ্ন দেখলো কোনো এক ম্যাজিকে যদি তার দাঁতটা পড়ে যেতো আর ফুপির কাছ থেকে ৫০ টাকা নিয়ে দৌড়ে মোড়ের দোকান থেকে কতো লজেন্স আর আইসক্রিম খাওয়া যেতো!
ততোদিনে উমায়ের স্কুল খুলে গেছে, কিন্তু বেচারার পড়াশোনায় মন নেই বিন্দুমাত্র। বাসায় এতোগুলো মেহমান রেখে আসলেই কি সম্ভব মন দিয়ে পড়া? আমরা যখন ড্রয়িংরুমে বসে গল্প-আড্ডায় ব্যস্ত ঐ সময় এক বার স্কুলের টিচার, আরেকবার আরবী টিচারের আবির্ভাব বেচারার মনে নিদারুণ কষ্টের ছাপ রেখে যেতো!
বার বার জিজ্ঞেস করতো ফুপি- ইতালির স্কুলে আফনান ভাইয়াকে প্রতিদিন হোমওয়ার্ক দেয় না তাই না? স্কুলে লম্বা সময়ের ব্রেক দেয় তাই না? ইশ ! কেনো যে আমি ইতালি যাই না! এই পঁচা দেশে আর থাকতে ইচ্ছে করেনা! খালি হোম ওয়ার্ক আর সিটি এক্সাম! ফুপি এবার যাওয়ার সময় আমাকে আপানদের সাথে নিয়ে যাবেন কিন্তু! কচি মুখের আব্দার শুনে শুধুই মিছে আশ্বাস দেয়া ছাড়া কিছুই করার থাকতো না!
আর যখন সকাল বেলায় স্কুলে যাওয়ার সময় হতো, পেটেব্যথা, মাথায় ব্যথা, শরীরের এহেন কোনো স্থানের ব্যথার কথা অনুল্লেখ থাকতো না তবু মায়ের কাছ থেকে স্কুল মিসের ছুটি মিলতো না অবশেষে চোখ মুছতে মুছতে করুণভাবে শেষ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ধীর পায়ে স্কুল গমন করতো!
উমরার স্কুলের বয়স হয়নি, ও বাসায় থাকতো আর মজার মজার কথায় পরিবেশ জমিয়ে রাখতো। ওর কথায় শুদ্ধ আর চিটাগং এর আঞ্চলিক ভাষার একটা মিহি সুর চলে আসতো যা আমরা খুব উপভোগ করতাম! প্রতিটা লাইন শেষে.... করছি যে আবার কখনো ও বুউউক .. বলে একটা লম্বা টান দিতো - আহা! কিযে মিষ্টি লাগতো! ওদের দেখে প্রায় মনে হতো জীবন নামক চলন্ত গাড়ির স্টিয়ারংটা ব্যাকগিয়ারে দিয়ে যদি ওদের বয়সটাতে পৌঁছে যাওয়া যেত! কি মধুর শৈশব কাটিয়েছিলাম আমরাও ওদের মতো একসময় - যা এখন শুধুই স্মৃতি......
বৃষ্টিও থামলো না, কক্সবাজারের থাকার সময়ও ফুরিয়ে এলো, অগত্যা সবাই মিলে আবার রওয়ানা দিলাম চট্রগ্রামের উদ্দেশ্যে। সফর শুরু করার জন্য খুব সকালের সময় নির্ধারণ করে শুরু হলো যাত্রা। যাওয়ার সময় ভাবী দেখালেন একটি পাহাড় যার অংশ বিশেষ টানা বৃষ্টির কারণে ধ্বষে পড়ে মারা গেছেন একই পরিবারের ৫জন সদস্য। মন খারাপ হয়ে গেলো জায়গাটা দেখে। কক্সবাজারের মায়া ছেড়ে আমরা চললাম চট্টগ্রামের পথে।
টানা কিছু দিন বাসায় ছিলাম, বাইরে বের হই নি, শুধু খবরের কাগজে পড়েছি বৃষ্টির খবর আর এখন বাইরে বেড়িয়ে, রাস্তায় নেমে দেখলাম বাস্তব অবস্থা! একেবারে ভয়াবহ । টানা বৃষ্টির ফলে নদী-নালা-খাল- বিল পানিতে পানিতে পরিপূর্ণ- একেবারে টইটুম্বুর যাকে বলে। পানির লেভেল একেবারে রাস্তা সমান সমান। হয়তো আর সামান্য বৃষ্টিতেই বন্যা শুরু হয়ে যাবে!
যে বৃষ্টি, যে নদীর কলতান ধ্বনি, স্রোতরেখা মানুষের মনকে প্রেমময় -ভালোলাগায় জাগিয়ে তোলে এখানে সেই রুপ নেই তিল মাত্র! আছে শুধু সর্বনাশা ঘরভাংগা পানির স্রোতের কবল থেকে নিরীহ কিছু মানুষের বেঁচে থাকার পরম আকুতি। যেতে যেতে দেখলাম কতশত ঘরবাড়ি পানিতে অর্ধ ডুবন্ত-প্রায় ডুবন্ত অবস্থা! অনেকেই মাচা বেঁধে নিয়েছেন বাড়ির সাথে, সবচাইতে বেশি কষ্ট গৃহপালিত পশু -প্রানীগুলোর। কৃষক পরিবারে প্রায় সবার বাড়িতে দু-একটা করে থাকা গরু-ছাগল-হাঁস-মুরগি এদের যে কোনো ভাবেই স্থান সংকুলান হয় না!
বেশ সবধানে গাড়ি চলছে, ভিজা রাস্তা, এই ভালো তো এই গর্ত ওয়ালা রাস্তায় ধাক্কা খায় চাকা। দু পাশে নদী, জেলেরা এরি মাঝে জাল দিয়ে, বড়শি ফেলে, জালি ফেলে মাছ ধরছেন, কখনো গভীর জংগল, রাবার বাগান, ছোটো ছোটো টিলা, সবুজ ঘন অরণ্য, দূরে উঁচু কোনো পাহাড়ের চূড়া ছাড়িয়ে ক্রমশ সামনে যাচ্ছি- দু -চোখ ভরে দেখে নিয়েছি বর্ষার প্রকৃত রুপ।
ক্রমাগত বৃষ্টিতে গাছের সবুজ পাতারা যেনো নতুন করে ঘন সবুজ রঙ্গের পোষাক পড়েছে, রাস্তার পাশে জন্মানো হেলেঞ্চা শাকেরা হেলে-দুলে নড়ছে, কচি সবুজ কচু শাক দেখে ইচ্ছে হচ্ছিলো গাড়ি থেকে নেমে মুঠো ভর্তি করে আঁচলে তুলি। পটিয়ার দিকে আসতেই দেখলাম বিস্তীর্ন রাস্তা জুড়ে বাজার। পলিথিনে -ঝুড়িতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা পেয়ারা- লোভ সামলানো সম্ভব নয়- গাড়িত এসবাই ঝিমুনি- ঢুলুনি নিদ্রায় থাকলেও ভাইয়াকে উঠিয়ে এক ঝুড়ি পেয়ারা কিনিয়ে নিলাম, আজকের সফরে পেয়ারা চর্বনে আমার কোনো সংগী জুটলো না!
চট্টগ্রামে ঢুকে পড়লাম। এই শহরটার প্রতি অন্যরকম প্রীতিবোধ কাজ করে- খুব খুব মায়া লাগে! মায়াবী একটা শহর। মেঝো ভাবীর বাবার বাড়ি আর আমার ননদ- চাচা শ্বশুড়-শ্বাশুড়ির বাসায় এবারের ভ্রমন। এই মানুষগুলো এতো অসম্ভব ভালো যাদের দেখে পুরো চট্রগ্রামকে ভালোবাসতে ইচ্ছে করে।
গতবার এসে হাইওয়ের মিস্টি খেয়েছিলাম যার স্বাদ এখনো ভুলিনি, এবার খেলাম আফলাতুন- আগে কখনো খাইনি- খুব্বি টেস্টি!
বিদেশ থেকে এসেছি এজন্য সবাই শুধু রান্না -বান্না নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চান, বেড়ানোর শেষ পর্যায় আর পেটের সহ্যসীমাও দুর্বলতার ক্রান্তি লগ্নে তাই সবাইকে বললাম আয়োজন করেন ভালো কথা তবে সব হবে দেশী মাছ আর সব্জি। কাঁচকি,পুঁটি, রুপচাঁদা, গুঁড়া চিংড়ীর কাবাব, গলদা চিংড়ী, কাঁচা লইট্রা ফ্রাই, সজিনা শাক, কলমি শাক, কলার মোঁচো, কঁচু শাক, কঁচুর লতি, কঁচুর ছড়া -আমার সব প্রিয় আইটেম গুলো করলেন চাচী আর আপা মিলে! আগে থেকেই উনাদের বলেছিলাম এবার আসলে আমাকে মেজবানী গোশ্ত রান্না করে খাওয়াতে হবে- মোটামোটি একটা বিশাল আয়োজন করেই এই মেজবানী খাওয়া হলো! অনুভূতি - অ সা ধা র ণ ! না খাইলে মিস !
আমাদের বড়দের খাবারের তৃপ্তির অভাব না থাকলেও বাচ্চাদের জন্য ঠিক করা হলো সবাই মিলে চাইনিজে যাওয়া হবে। গেলাম প্যাভিলিয়নে- আগে কখনো যাই নি- এক কথায় চমৎকার লাগলো ডিশ-পরিবেশনা- আপ্যায়ন।
চট্রগ্রামে আসার পরেও অবস্থার কোনো উন্নতি নেই, অবিরাম অক্লান্ত বৃষ্টি, এখানে এসেও কোথাও ঘোরা হলো না। তবে শহরটি আর আগের মতো নেই, সবচাইতে বেশি চোখে পড়লো রাস্তা গুলো ভেংগে চূড়ে অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে! এবার সমুদ্র সংকেত দিলো ৮ নম্বর, স্কুল-কলেজ সব বন্ধ। রাস্তা ঘাটে মানুষ জন নাই, শুনশান নীরবতা , বাইরে তাকালে হঠাৎ মনে হয় কোনো এক ক্ষয়ে যাওয়া শহরে পথ ভূল করে চলে এসেছি !
বাইরে যাওয়া হয় নি, ঘরোয়া ভাবে সবাই একত্রিত হয়ে আড্ডা-গল্প-স্মৃতি চারণে আবারো শেষ হয় এলো বেড়ানোর সময়। মনের ঘরে বিদায়ের ঘন্টা হাতুড়ির মতো ঢং ঢং করে শব্দ করে বেজে উঠলো!
ঢাকার উদ্দেশ্যে ট্রেনে করে যাত্রা শুরু করলাম, আপু - দুলাভাই আসলেন এগিয়ে দিতে, অনেক অনেক ভালোবাসা আর কল্যাণকামীতায় পূর্ন , মুগ্ধ হৃদয়ে , অশ্রু সিক্ত নয়নে বিদায় বেলায় অস্ফুট স্বরে কথা বলা- আবার দেখা হবে! আরো কতো শতো অনুভূতি অব্যক্ত রয়ে গেলো যা পাঁজরের শৃংখল ভেদ করে প্রকাশিত হওয়ার শক্তি পর্যন্ত পেলো না!
চলন্ত ট্রেন, নানান রঙ্গের মানুষ, সবার চোখে মুখে প্রিয় জনের কাছ থেকে বিদায় নেয়ার শোকাবহ অনুভূতি, জানালার গ্লাসে তীর্যক ভাবে ছেয়ে আসা বৃষ্টির ছাঁট , ট্রেনের দুলুনিতে যত দূর চোখ যায় বাইরের চিত্রটুকু ক্ষু্দ্র থেকে ক্ষুদ্র হতে হতে বুদ বুদ আকারে মিলিয়ে যায়- তবু মনের মণিকোঠায় চির উজ্জল হয়ে রয় প্রিয়জনদের সাথে কাটানো মধুর স্মৃতিটুকু.....
বিষয়: বিবিধ
২২১৫ বার পঠিত, ২৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কত সুন্দর প্রকাশ ভঙ্গি শুধু পড়তেই মন চায়
অনেক দিন দেখি নি আপনাকে! প্রথম মন্তব্য এবং অনুপ্রাণিত করার জন্য আন্তরিক শুকরিয়া!
জাযকাল্লাহু খাইর!
এরপর আসলে কিন্তু খবর দেবেন।
চট্টগ্রাম এসে আপনাদের সবার কথা -আপনি, সিটিজিবিডি ভাইয়ের কথা মনে পড়েছিলো। আপনার প্রকাশ করা বইয়ের লিস্টটা সাথে ছিলো ভেবেছিলাম সুযোগ করে কিছু বই কিনবো! পরিস্থিতির ভয়াবহতায় কোনোরকম চট্রগ্রাম থেকে বের হয়েছি বলা যায়!
পরবর্তী সময় জানিয়ে আসবো ইনশা আল্লাহ! ভাবিকে সালাম জানাবেন। জাযাকাল্লাহু খাইর।
আমরা একটু ভেজালি চাটগাঁইয়া আব্বা চিটাগং- আম্মা গাজীপুর , আবার আব্বার চাকরীর কারণে বড় হয়েছি অন্য জায়গায় তাই আামদের মাঝে চিটাগং এর কোনো কালচার নেই বললেই চলে!
আবার আমার শ্রদ্ধেয় মরহুম শ্বশুড় সরকারী চাকরী করতেন বিধায় উনারাও বড় হয়েছেন চট্রগ্রামের বাইরে। তবে এখন আমাদের যোগাযোগ ভালো হয়- মেঝো ভাই- ভাবীর কল্যাণে!
অনেক দিন পর এলেন, আপনার উপস্থিতি এবং আন্তরিক মন্তব্যের জন্য শুকরিয়া! জাযাকাল্লাহু খাইর!
বাচ্চাদের সাথে মিছে কথা কিংবা মিছে আশ্বাস দিতে হাদিসে নিষেধ করা হয়েছে। উমায়েরের জন্য খারাপ লাগলো। ছোট বেলায় বাড়িতে মেহমান আসলে আমারো উমায়েরের মতো খারাপ লাগতো। কিছুতেই পড়ার টেবিলে যেতে মন চাইতনা।
ভালো লাগল,ধন্যবাদ।
মিছে আশ্বাস দেই নি, বরং উমায়ের এর সাথে চুক্তি ছিলো ও দাঁত ফেললে ওকে ৫০ টাকা দেয়া হবে, ও বললো ফুপি দাঁত পড়ার আগে ২৫, পড়লে ২৫ কি বুদ্ধু দেখেন! পরে দাঁত পড়েছিলো ওর ঘুমে। টাকাও নিয়েছিলো
ছোটবেলার ঘটনাগুলো সবার একই রকম, আমরাও মেহমান আসলে স্কুলে যেতে, পড়তে বসতে চাইতাম না, মেহমান চলে যাওয়ার সময় উনাদের সাথে যাওয়ার জন্য চিৎকার জুড়তাম!
চমৎকার মন্তব্যটির জন্য আন্তরিক শুকরিয়া ভাই!
*বুদ্ধি
দুঃখিত ছবি গুলো দিতে পারলাম না বলে!
আপনি গিয়েছেন হিমছড়ি? ছবি এডিট করতে হবে, অন্য কোন এক দিন ইনশা আল্লাহ!
শুকরিয়া উপস্থিতির জন্য
অস্থির কিছু ছবি আছে পাহাড় থেকে তোলা সাগর - রাস্তা - পাহাড়কে ফোকাস করে ।
কিন্তু..... সব ছবিই ৫০০ এমবির উপরে । ছবি আপলোডেড হয় না। ছোট করলে ছবির মাহাত্য কমে যাবে।
যাক,অনেক সুন্দরভাবে আপনার পবিারের ভ্রমণাভিজ্ঞতা বর্ণনা করে আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করার জন্য ধন্যবাদ..
আসলেই চট্রগ্রামের মানুষরা অনেক অতিথি পরায়ণ এবং আন্তরিক।
আপনাকেও আন্তরিক শুকরিয়া চমৎকার মন্তব্য এবং উপস্থিতির জন্য! শুভাকামনা রইলো-
চট্টগ্রাম নিজের জেলাতো; তাই এর বানানটা ঠিক না দেখলে খারাপ লাগে।
"চট্টগ্রাম" বানানে দুইটা "ট"; ট্ট= ট+ট।
আর ট্র = ট+র। এইটা চট্টগ্রামের বানানে নাই। অবশ্য সংস্কৃত চট্টগ্রামের চেয়েও চলিত চাটগাঁ বা চাটিগাঁও আমার পসন্দনীয়।
'পসন্দনীয়' নয় হবে 'পছন্দনীয়'।
<:-P <:-P <:-P <:-P <:-P <:-P <:-P
আমি ইচ্ছা করেই "ছ" দিয়ে লিখি না। দন্ত্য-স কে দন্ত্য-স এর মত করেই [অর্থাৎ জিহবাকে দাঁতের সাথে লাগিয়ে] উচ্চারণ করা শিখানো উচিৎ।
লজ্জায় আমার মাথা নুঁয়ে আসছে, ধরণী দ্বিধা হও!
জাযাকাল্লাহু খাইর!
আমার ভুল বানানের সংশোধনের নিমিত্তে হলেও এলেন এটাও অনেক বড় পাওয়া!
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ আপি।
ভ্রমন বৃত্তান্ত আমার উপভোগ্য বিষয়। মনে হল আপনার বিবরণে আমিও ঘুরে এলাম। চট্টগ্রামের পড়াশোনার সময় প্রতি শুক্রবারই আমার ভ্রমন তালিকায় থাকতো চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন পয়েন্ট, নেভী, পতেঙ্গা, এয়ারপোর্ট, আন্দরকিল্লা, লালদীঘী, ফয়'স লেক, চিড়িয়া খানা, লালখান বাজার মাদরাসা, জিয়া জাদুঘর, এম আজিজ ষ্টেডিয়াম, জামিয়াতুল ফালাহ, পাহাড়তলী, কদমতলী, কর্ণফুলি, কালুরঘাটসহ আরো অনেক জায়গা।
রাউজান রানীর বাজার হয়ে রাঙ্গামাটির সফরটি আজো অন্তরে বেখাপাত করে আছে। পটিয়া দোহাজারী কেরানীরহাট হয়ে বান্দরবার মেঘলা যেন আমাকে বার বার ডাকছে।
কক্সবাজারের সেই সৈকত ও গেস্ট হাউজের কথা বার বার মনে পড়ে, বার্মিজ মার্কেটের সেই আজে বাজে কেনাকাটা আজো মন খুজে ফেরে। কিন্তু আজ দু'য়ের বদলে ছয়টি পা, তাই আর ভ্রমণের সুযোগ নেই।
আগডুম বাগডুম অনেক কথাই বলে ফেললাম। শুকরিয়া আপু।
আপনার অভিজ্ঞতার ঝুলি বিশাল দেখছি আমার শহরের গুটিকয়েক জায়গা ছাড়া তেমন কোথাও যাওয়া হয়নি সময়ের স্বল্পতার জন্য!
আপনার আগডুম বাগডুম কথা গুলো জেনে অনেক ভালো লাগলো। অনেক দোআ ও শুভকামনা আপনাদের পরিবারের প্রতি! জাযাকাল্লাহু খাইর
তোমার মন্তব্যটা পড়ে অনেকক্ষণ ধরে হেসেই চলছি আমি! আমাকে যারা চিনেন তাঁরাও বলেন না আমি চাটগাঁ এর তবে ফরিদপুরের কেউ কোনো দিন বলে নি!
যাই হোক তোমার ধারণা টা তো অসত্য হলো এটাতেই আনন্দ!
শুকরিয় আাপুজ্বি
.
.
মাঝের এক লাইন গুরুচণ্ডালী দোষে দুষ্ট...!
কি যুগ আসলো! সবাই খালি ভুল ধরে! আরে লিখতে লিখতেই তো লিখিয়ে হইবো
অনেক ভালো মার্ক পাইসি, নো চিন্তা
শুকরিয়া!
আসসালামুআলাইকুম।
কারণ-সূদুর প্রবাসে থেকে কখন যে কার চলে যাবার ঘন্টা বাঁজার খবর পাবেন আর চোখ বুজে অশ্রু ঝড়াবেন একবার শেষ দেখার ইচ্ছায় কিন্তু অতৃপ্ত অন্তর কেঁদেই যাবে হয়ত ১০-২০ দিন পরে একটু ঠান্ডাহবে কিন্তু হৃদয়ের কোনে যে ব্যাথা অস্থির হয়ে আছে সেটা ফুরাবার নয়।
ভাগ্য কোথায় নিয়ে ফেলেছে আপনায়। সব আছে তবে অনেক সুদুর মহাক্রশ দূড়ে। হাতদিয়ে ছুঁতে চাইলেও ছোয়া যায় না।
এই চিন্তাটাই ভাবিয়ে তোলে অহর্নিশ
শুকরিয় আপানেক আপনজনের মতো করে ভাবার জন্য!
দোআ প্রার্থী!
মন্তব্য করতে লগইন করুন