"টুকরো টুকরো আনন্দ"
লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া মুকিম ১৮ অক্টোবর, ২০১৫, ১১:২২:১৯ রাত
রাতের খাবারের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন নাঈমা, টেবিলে খাবার পরিবেশন করার সময় পুত্র - কন্যাকে সাথে রাখেন তিনি, ওদের কে দিয়ে প্লেট-গ্লাস সাজানো, জগে পানি রাখা এই কাজ গুলো নিয়মিত করনোর চেষ্টা করেন। এতে বাচ্চারা কাজ করতে অভ্যস্থ হয়, পাশাপাশি একসাথে কাজ করার কারণে সময়টাও সবার সুন্দর কাটে। ওদেরকে ডাক দিবেন এই সময় মেয়ে -মাঈশা খিল খিল করে হাসতে হাসতে কিচেনে প্রবেশ করলো । হাতে ধরা একটি বই নিশ্চয়ই পড়তে গিয়ে মজার কোনো বিষয় এসে পড়েছিলো এখন সেটা মায়ের সাথে শেয়ার করতে এসেছে। পিছু পিছু ছোটো ভাই মাহিরও এসে হাজির। বড় বোনকে এভাবে হর্ষোৎফুল্ল হতে দেখা নেহায়াৎ সৌভাগ্যের ব্যাপার সচরাচর ঘটে না তাই সেও উদ্গ্রীব কি ঘটেছে তা জানার জন্য!
এক হাত বইয়ে আরেক হাত পেটে চেপে ধরে হাসি অবদমনের ব্যর্থ চেষ্টায় রত মাঈশা একবার দাঁড়িয়ে এক বার বসে কোনো ভাবেই কথা শুরু করতে পারছে না, শুধু আম্মু- আম্মু -আম্মু ছাড়া!
- আরে কি হয়েছে বলবে তো! এভাবে হাসতে থাকলে আমি বুঝবো কি করে হাসির পিছনে ঘটনা টা কি? কিঞ্চিৎ ধমকের সুরে বললেন মা নাঈমা।
পেট থেকে হাত সরিয়ে মুখে হাত চাপা দিয়ে হাসি থামানোর আবারো প্রচেষ্টা , উহুম এহেম ওকে আর হাসবো না, বলছি কি হয়েছে। হিটলার -হিটলার বলতে বলতে আবারো এই হাসির ঝংকার মৃদু থেকে উচ্চ তালে -লয়ে ঊর্ধ্ব গতিতে উঠছে বুঝতে পেরে এবার নাঈমা হাতের তরকারির লাঠি নিয়ে মেয়ের দিকে আসলেন-
- এই বলবি কি হয়েছে, আগা মাথা কিছু না বলেই সেই কখন থেকে হা হা হি হি করছিস?
মাকে তেড়ে আসতে দেখে হাসি প্রাণপনে বন্ধ করে বইটা মায়ের সন্মুখে মেলে ধরে বললো -
-পড়ো এই খান থেকে এই টুকু পড়ো, আমি বলতে পারছি না। চোখে মুখে এখনো হাসির রেশ তুলে কোনোরকমে বললো মাঈশা।
- আরে কোনো বইয়ের এভাবে মাঝ খান থেকে পড়লে বুঝবো কিভাবে ঘটনা? আমি তো আগে এই বই পড়িনি - অবাক স্বরে বললেন নাঈমা!
- আচ্ছা আমি তোমাকে শর্টলি ঘটনা টা বলি- ১৯৬০
শতকের দিকে এই বইটি To Kill a Mockingbird রচনা করেছেন Harper Lee , উনি নিজ অভিজ্ঞতার আলোকে বইটির মাঝে তুলে ধরেছেন ঐ সময়ের অবস্থা। আমেরিকাতে তখন বর্ণবাদী বৈষম্য ছিলো মারত্নক রকমের প্রকট, সেই ঘটনার মাঝে লেখিকা উনাদের প্রাইমারী স্কুল লাইফের এক দিনের বিবরণ দিচ্ছেন আর এখানেই রয়েছে মজার ঘটনাটি যা আমি মুখ বলতে পারছি না বলেই আবারো হাসি ------ হি হি হি হি
আচ্ছা ঠিক আছে বলে বইটা টেবিলে রেখে চোখ বুলালেন নির্দিষ্ট স্থানে -
টিচার মিস গেটস ক্লাসের সবাইকে হোম ওয়ার্ক দিয়েছেন ।সেটা হলো জার্নাল থেকে সাম্প্রতিক ঘটিত ঘটনা গুলো বাছাই করে এনে ক্লাসে প্রেজেন্টেশন করতে হবে। যদিও বিষয়টা চমৎকার তথাপি সেই গ্রামের স্কুলের ছেলে- মেয়েদের জন্য কিছুটা কঠিন হয়ে উঠলো কারণ ওদের বেশিরভাগ হলো কৃষকের ছেলে -মেয়ে এবং অধিকাংশের ধারণা পর্যন্ত ছিলো না জার্নাল বা সাম্প্রতিক ঘটনা সম্পর্কে!
তারপরেও যেহেতু হোমওয়ার্ক সবাই চেষ্টা করতো টিচারের মন রক্ষার জন্য। সেদিন ছিলো চেচিল জ্যাকবের পালা! টিচার ওকে ডাকতেই চেচিল নিজ আসন ছেড়ে ক্লাসে সবার সামনে এসে দাঁড়ালো এবং বলতে শুরু করলো -
- "Old Hitler-"
- "Old Hitler-"
- "Adolf Hitler, Cecil," said Miss Gates. "One never begins with Old anybody."
"Yes ma'am," he said. [b]"Old Adolf Hitler[/b] has been prosecutin' the-"
"Persecuting Cecil...."
"Nome, Miss Gates, it says here- well anyway, old Adolf Hitler has
been after the Jews and he's puttin' 'em in prisons and he's taking
away all their property and he won't let any of 'em out of the country
and he's washin' all the feeble-minded and-"
"Washing the feeble-minded?"
"Yes ma'am, Miss Gates, I reckon they don't have sense enough to
wash themselves, I don't reckon an idiot could keep hisself clean.
Well anyway, Hitler's started a program to round up all the
half-Jews too and he wants to register 'em in case they might wanta cause him any trouble and I think this is a bad thing and that's my current event."
বুড়া হিটলার এবং ওয়াশড দেয়ার মেন্টাল এই দুই ঘটনা মেয়ের মধ্যে হাসির সংক্রমন ঘটিয়েছে তা আর বুঝতে বাকি রইলো না নাঈমার। কিন্তু নাঈমা বুঝলেও পুত্র মাহির তো বুঝে নি তাই সে শুরু করলো চিৎকার কি পড়েছো তোমরা , এতো হেসেছো কেনো ,আমাকেও বলো, আমিও এই পরিবারের একটি অংশ, আমাকেও বলো.?????
এবার মাঈশা ধীরে ধীরে তার ভাইয়ের উদ্দেশ্যে পুরো ঘটনা খুলে বলতে লাগলো
-ধরো তোমাকে যদি টিচার সাম্প্রতিক কোন ঘটনা বলতে বলে এবং সেই ঘটনার সাথে যদি প্রেসিডেন্ট জড়িত থাকে তোমাকে অবশ্যই সন্মানজনক ভাবে প্রেসিডেন্ট এর নাম বলতে হবে তাই না?
যেমন ধরো আমরা যদি আমেরিকার কোনো ঘটনা বলি বা ইতালি বা বংলাদেশের তখন এই দেশের প্রেসিডেন্টকে অবশ্যই সন্মানের সাথে উচ্চারন করতে হবে যদি না করে কেউ বলা শুরু করে- বুড়ো বারাক ওবামা বা বুড়ো বেরলুস্কোনি বা বুড়ি শেখ হাসিনা .. কেমন হবে? খুবই অভদ্রতা হবে তাই না?
মাহির বুঝতে পেরে নিজেও এবার শুরু করলো হা হা হি হি..
মাঈশা আবারো বলতে লাগলো-
ঠিক এরকম ভাবে ক্লাসের চেচিল নামে এক স্টুডেন্ট তার বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রথমেই বললো- বুড়ো হিটলার!
আচ্ছা তারপর ?
তারপর টিচার বললো বুড়ো না আ্যডল্ফ হিটলার - এই বলে সংশোধন করে দিলো চেচিলকে - দু ভাই- বোনে আবার সম্মিলিত হাসি ..
তারপর টিচার বললেন এরপর থেকে কেউ কারো নাম বলার আগে এই ধরণের বুড়ো শব্দ ব্যবহার করবে না !
হুম হুম তারপর?
তারপর চেচিল আবারো শুরু করলো - বুড়ো আ্যডল্ফ হিটলার ইহুদিদের ধরে নিয়ে জেলখানায় আটক করলো এবং এমন ব্যবস্থা করলো যেনো কেউ সেই দেশ ছেড়ে বাইরে যেতে না পারে এবং সে দুর্বল জনগনের মন পরিষ্কার করেছিলো- হি হি হি- ব্রেইন ওয়াশ কে মন ওয়াশ বলেছে ..........আবারো সম্মিলিত হাসি ক্রমেই ঊর্ধ্বগতি........
-আর চেচিল কি ব্যাখ্যা দিয়েছে এর জানো?
- কি?
খুব সাধারণ মানুষও জানে কিভাবে নিজেদের পরিষ্কার রাখতে হয় কিন্তু ঐ দুর্বল মানুষদের জানা ছিলো না তাই হিটলার ওদের মন পরিষ্কার করে দিয়েছিলো হি হি হি হি ................
এতোক্ষণ ধরে নাঈমা পুত্র- কন্যার অবিরাম হাসি আর ঘটনা থেকে আনন্দ লুফে নিয়ে উপভোগ্য দৃশ্য অবলোকন করছিলেন , এবার তিনিও ওদের দুজনের সাথে যোগ দিলেন এবং বললেন অনেক হয়েছে এবার বই বন্ধ, বিনোদন আজকের মতো সমাপ্ত আসো এখন সবাই চুপচাপ ভদ্র ছেলে-মেয়ের মতোন খাওয়া শুরুর আয়োজন করো!
সবাই যার যার জায়গায় বসে খাওয়া শুরু করলো, নাঈমা পুত্র -কন্যা উভয়ের দিকে আড় চোখে তাকালেন, দুজনের মুখেই আনন্দের হর্ষধ্বনি চিক চিক করছে। মেয়ের দিকে তাকিয়ে তার মনে পড়লো বছর খানেক আগেও মেয়েকে গল্পের বই বা সিলেবাসের বাইরের বই পড়াতে তাঁকে যথেস্ট বেগ পেতে হয়েছিলো! কোনো ভাবেই রাজি করানো যায় নি এই ঘাড় ত্যাড়া মেয়েকে। আর তাই বলে হাল ছেড়ে দেন নি তিনি ,অধ্যাবসায়ের লেগে ছিলেন পিছনে! অবশেষে এতোদিন পর মেয়ে নিজ থেকে বই পড়ার আনন্দ খুঁজে নিয়েছে ! এর চাইতে আনন্দ আর কি হতে পারে নাঈমার জন্য?
বিষয়: বিবিধ
১৩১৫ বার পঠিত, ২৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
প্রথম মন্তব্যকারী হিসেবে আপনাকে এবং রং ঝিল মিল করা মন্তব্য খানি চিত্তে আনন্দধারা প্রবাহিত করছে দ্বিগুন! শুকরিয়া
জানিনি পুরোটা পড়েছেন কি না? আমরা কিন্তু হাসতে হাসতে কাহিল হয়ে গিয়েছিলাম ! অনেক সময় লিখতে গেলে সম্পূর্ণ মনের ভাব প্রকাশ করা সম্ভবপর হয়ে উঠে না!
জাযাকাল্লাহ খাইর
তেমন কিছু ঘটনা মনে পড়ায় আরো বেশী মজা পেয়েছি আপনার পোস্টে!!
)(
সাধারণতঃ না পড়ে মন্তব্য করিনা আমি, কখনো তা করতে হলে পারতঃপক্ষে উল্লেখ করি!
আপনি ঠিকই ধরেছেন-
পূরোটা ঠিকমত না পড়লে হাসির মজাটা অধরাই থেকে যাবে!
সাদরে নিমন্ত্রিত ....
সাদরে নিমন্ত্রিত
এরাম আলসে ব্লগারমুক্ত ব্লগ চাই। খুব সুন্দর লেখা আপু। পারিবারিক গল্প। অনেক ধন্যবাদ
.
বইটা রিডিং লিস্টে আছে... কবে যে পড়তে পারবো...!
ভালো ভাবে না পড়লে কিন্তু হাসিটা অধরা রয়ে যাবে - আবু সাইফ ভাই বলেছেন! মুরুব্বিদের কথার গুরুত্ব দিতে হবে কিন্তু!
চমৎকার একটি বই। পুলিৎজার পুরুষ্কার পেয়েছে এবং লেখিকা এখনো জীবিত!
শুভকামনা রইলো!
শুভকামনা রইলো
আপনার মেয়ে যে আপনার মতো বই প্রেমিক হবে তাতে কিঞ্চিত সন্দেহ নেই।
ভালো লাগল,ধন্যবাদ।
আজকালকার ছেলে-মেয়েদের বই পড়ুয়া বানানো অনেক কষ্টসাধ্য! টেকনোলজির প্রলোভনে তাদের অবস্থা করুণ
দোআ প্রার্থী। শুভকামনা জানবেন
ক্লাস রুমে টিচারের সামনে বললে কিন্তু চোদ্দ শিকের ভিতর থাকতে হবে!
শুকরিয়া আপনাকে
আনন্দময় পারিবারিক মুহুর্তটি আমাদের জানানোর জন্য শুভেচ্ছা।
আন্তরিকভাবে দোয়া প্রার্থী, আমাদের সবার জন্য খাস করে দোআ করবেন। পরামর্শের জন্য শুকরিয়া
হুমম, বুড়ো হিটলার.........বুড়ি...........
হি হি হি হি আশাকরি পড়েছেন
শুকরিয়া
আসসলামু আলাইকুম মিরজাফর নিয়ে কোন গল্প নেই
আসসালামু আলাইকুম
তোমার দেখার এবং অনুধাবণের চোখ মাশা আল্লাহ - অনন্য
শুকরিয়া চমৎকার মন্তব্যটির জন্য! অনেক অনেক দোআ ও শুভকামনা
মন্তব্য করতে লগইন করুন