নিঝুম দ্বীপের রাজকন্যা
লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া মুকিম ১১ মার্চ, ২০১৩, ০৯:২৫:৪০ রাত
অনেক অনেক দিন আগের কথা! লোকালয় থেকে অনেক দূরে ছিল এক ছোট্র রাজ্য। কি যে অপরুপ সৌন্দর্যে পরিপূর্ন ছিলো সেই রাজ্য বলার মতো নয়! নীল আকাশের নিচে প্রশস্হ জমীন যেন সবুজ কার্পেট! সেখানে ছিলো সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের মূর্হ মূ্র্হ ঝাপট, ছিল গহীন বনের সারি সারি বৃক্ষের সমাগম, শুধু তাই নয় সেই রাজ্যের সকলের ঘুম ভাংতো কিচির মিচির করা পাখির সুমধুর স্বরের মনমাতানো মিষ্টি গান শুনে!
রাজ্যের সকলেই ছিল খুব ভলো মনের মানুষ! সকলের মধ্যে ছিল সততা, সহানুভুতি আর সহমর্মিতার গুনাবলী!
সেই রাজ্যে বাস করতো অপরাজিতা! সে বংশ পরম্পরায় রাজকন্যা হয়নি সে রাজকন্যার গুনাবলী অধ্যাবসায়ের মাধ্যমেই অর্জন করে নিয়েছিলো! সবার সাথে অপরাজিতার এতো সদ্ভাব ছিলো ওকে ছাড়া কেউ কখনো থাকতে পারতো না! সবার মধ্যমনি অপরাজিতা নিজ গুন দিয়েই সবার মন জয় করে নিয়েছিলো! সমাজের ছোট শিশু কিশোর থেকে শুরু করে বৃদ্ধারাও ভীষন পছন্দ করতো তাকে! সবার সাথে একাকার হয়ে মিশতে পারার, সবাইকে বোঝার,সকলের সুখ-দুঃখ,হাসি-কান্না অনুভব করার অপার যোগ্যতা ছিলো অপরাজিতার!
সারাদিন অপরাজিতার সময় কাটতো বই পড়ে! অসংখ্য বইয়ের জগতে নিজেকে ভাসিয়ে নিয়ে যেত জ্ঞানের জগতে! সব ধরনের বই পড়তো -দর্শন, ইতিহাস, ভূগোল, ধর্মীয় জীবনবোধ সব ধরনের বই পড়েই আনন্দ পেতো! অর্জিত জ্ঞানের সবটুকু ছড়িয়ে দিত আশে পাশের স্বজনদের! ফলে রাজ্যের সবাই নিজেদের সঠিক আদর্শে গড়ে তুলতে পেরেছিলো আর এর অবদান ছিলো অপরাজিতার!
বই পড়ার পাশাপাশি আরেকটা জিনিষ তাকে টানতো ভীষন রকম! প্রকৃতি! অসম্ভব প্রকৃতি প্রেমী ছিলো! উন্মুক্ত সাগর, বিশাল পাহাড়, রং-বেরং এর ফুল, গুনগুনানী ভোমরা, বাহারি প্রজাপতি, সবুজ তরুলতা, খোলা আকাশ, উচ্ছল বাতাস সবকিছুর সাথে অকৃত্রিম ভালোবাসা ছিলো অপরাজিতার!
একদিন রাজ্যের রাজকুমার আসলো এই রাজ্যটি পরিদর্শন করতে! সকলের মধ্যে আদর্শ শিক্ষার প্রতিফলন, ভ্রাতৃত্ব আর সহানুভূতির প্রস্ফুটন রাজকুমারকে আনন্দিত করে তোলে! লোকমুখে জানতে পারে সবকিছুর নেপথ্যে আছে এক অবগুন্ঠিত ললনা-অপরাজিতা!
রাজকুমার ফিরে আসে রাজপ্রাসাদে। এক অজানাকে জানার, অচেনাকে চেনার, কাউকে আপন করে পাওয়ার তীব্র আকাংখা অন্তরের অলিন্দ-নিলয়ে!
রাজা-রানী সকলেই রাজকুমারের অব্যক্ত কথন বুঝতে পারলেন! প্রস্তাব নিয়ে আসা হলো অপরাজিতার অভিভাবকের নিকট! রাজকুমার অপরাজিতাকে পছন্দ করেছে ,রাজা-রানী স্বয়ং এসেছেন -বাড়ির সকলেই হাস্যজ্জল,আন্তরিক সম্বোর্ধনা জানালেন!
কিন্তু অপরাজিতার মুখে হাসি নেই,নেই প্রানের স্পন্দন!
অপরাজিতা তার বাবা-মা সহ সকল স্বজন দের জানিয়ে দিল সে রাজকুমার কে জীবনসংগী হিসেবে কখনো ভাবেনি! তার মন প্রস্তুত নয় যাকে গ্রহন করার তাকে সে জোর করে গ্রহন করতে চায় না!
সবার মাথায় বজ্রপাত ঘটলেও এতোটা অবাক হতো না ! সবাই ছুটে আসলো তার নিকট কেন সে চায় না তা জনতে! এই কেনো এর কি কোনো উত্তর আছে?
সকলের মাঝে উচ্ছল প্রনবন্ত মমতাময়ী অপরাজিতার নিজস্ব আপন একটা জগত আছে! সেই জগতের মালিক সে নিজেই! নিজের সাথে কথা বলে আপনমনে, স্বাধীন হয়ে! অপরাজিতা ভাবছিলো -
সে খুব সহজ সরল একটা মেয়ে, উচ্চাকাংখা, লোভ, হিংসা কখনই তার মধ্যে নেই! বরং নিজে কষ্ট করে অপরের মুখে হাসি ফোটাতেই সকল আনন্দ তার! আর তাই নিজেকে নিয়ে যখন ভাবে, চিন্তা করে এমন কাউকে জীবন সাথী করে পাবার যে হবে তারই মতো! মনের ক্যানভাসে কেউ ভেসে আসে সেই সুপুরুষ অচেনা কোন দূরদেশ হতে আগত, যার হাতে হাত রেখে সারাটা জীবন নিশ্চিন্তে নিরবধি অবারিত সুখের সন্ধানে হেটে যাবে সোনালী ভবিষ্যতের দিকে! যার আগমনে তার মনের আকাশে নীল মেঘ গুলো ভেসে যাবে দিগন্ত ছড়িয়ে, স্বপ্নের সাম্পানে করে ছুটে চলবে সাগর পেরিয়ে, বনের তরুলতা, ফুল, পাখি সকলেই গেয়ে উঠবে মন রাংগানো ভালোবাসার গান! কিন্তু যাকে ভাবছে অপরাজিতা সে তো রাজকুমার নয়! তাহলে?
অবশেষে একদিন সাগর পাড়ে অনেক অনেক জাহাজের মাঝে এক দূরদেশী সওদাগর তার জাহাজের নোংগর ফেললেন! এই সওদাগর বানিজ্য করতে এসে এই ছোট্র রাজ্যটিকে ভালোবেসে ফেলেন! এই আগন্তুক সওদাগর তার বুদ্ধিমত্তা, ব্যাক্তিত্ব, আদর্শ ও নৈতিকতা দিয়ে ধীরে ধীরে সকলের পছন্দের পাত্র হয়ে উঠলো!
এবার সওদাগর নিজের জন্য জীবনসাথী খুঁজতে লাগলো! শুনতে পারলো অপরাজিতার কথা! কিন্তু এও শুনলো স্বয়ং রাজকুমারও তাকে বিয়ে করতে পারেনি! তবু দমে যায়নি প্রস্তাব পাঠিয়ে দিলো!
অপরাজিতা শুনেছিলো সওদাগররের কথা! কোন অজানা কারনে তার মনের বনে মধুর বসন্ত দোলা দিলো! ভালোলাগার উত্তাল হাওয়া নাড়িয়ে দিল তার সমস্ত প্রকৃতি, সুর আর ছন্দে হেসে উঠলো সব ফুল পাখিরা!
অপরাজিতা সম্মতি দিলো! সবাই যারপরনাই অবাক হলো! রাজকুমার তো যোগ্যতায় কোন অংশেই কম ছিলেন না! আবার সেই প্রশ্নের ঢিল আসতে থাকলো চারপাশ থেকে! কেন রাজি হয়নি আগের বার রাজকুমারের সাথে বিয়েতে?
অপরাজিতা হাসি মুখেই বলে সব কেনো' র উত্তর নেই আর তাই তা জানতে চাওয়া ও বুদ্ধিমানের কাজ নয়! আরো বললো মনে প্রানে তোমাদের কাছে একটা জিনিষই চাই আর কখনো এই কেনো আর কিন্তু এ নিয়ে অযথা কষ্ট পেয়ো না সময় নষ্ট করোনা! এখন সময় হয়েছে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার, পিছনের অতীত ঘেটে আগামীকে সুন্দর ভবিষ্যত কে ভূলন্ঠিত করতে নারাজ অপরাজিতা!
অবশেষে সওদাগর আর অপরাজিতার এক শুভক্ষনে অনেক হাসি আনন্দের মাঝে এই যুগলের শুভপরিনয় ঘটে!
ছোট গল্প
বিষয়: বিবিধ
৪২০০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন