" মনের যত কথা"
লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া মুকিম ০৩ অক্টোবর, ২০১৫, ০৩:২৩:০১ রাত
একজন মানুষ কতখনি সুস্হ তার অনেকখানি নির্ভর করে তার হার্ট কতখানি সুস্হ তার উপর। সিস্টোল আর ডায়াস্টোল সিস্টেমের মাধ্যমে সর্বক্ষন চালু রেখে অংগে রক্ত সন্চালন করা, বিশুদ্ধ রক্ত সরবরাহ করা, দূষিত রক্ত বের করে দেয়া এবং এভাবেই আমাদের সারা শরীরকে সচল রাখে হার্ট। আমাদের অনেকেরই আশে পাশে হার্টের রোগী আছে, আমরা জানি তাদের প্রতি কি পরিমান খেয়াল রাখা প্রয়োজন! সর্বক্ষণ ডাক্তারদের আলাপ- পরামর্শ, ডায়েট, ঔষধ, অপরিসীম যত্নের মাধ্যমে চলে তাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত।
আমাদের কেউ যখন অসুস্হ হয়ে পড়ে খুব দ্রুত তাকে ডাক্তারের কাছে নেয়া হয়,ডায়াগনোসিস, যাবতীয় চিকিত্ৎসা, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়! আমাদের সবার কাছেই শারীরিক সুস্হতার গুরুত্ব অনেক বেশী কিন্তু এর মাঝে আমরা অনেক বেশী গুরুত্বের বিষয়টা ভুলে যাই! যার ফলে শারীরিক মৃত্যুর অনেক আগেই আমাদের আগোচরেই আমাদের অন্তরের কখন যে মৃত্যু হয়ে যায় তা আমরা নিজেও টের পাই না!
আমরা সুস্হ হার্ট ছাড়া যেমন সুস্হ ভাবে বেঁচে থাকতে পারিনা তেমনি বিশুদ্ধ অন্তর ছাড়াও মুসলিমের জীবন পরিপূর্নতা লাভ করতে পারে না! স্বাস্হ সচেতন ব্যক্তি বছরে একবার হার্ট পরীক্ষা করান কিন্তু আমারা কয়জন মুসলিম আমাদের অন্তরের প্রকৃত অবস্হা জানার চেস্টা করি?
আমরা প্রতিদিন পাঁচ বার সালাত আদায় করছি কিন্তু সালাত আমাদের মনের ময়ালাগুলি পরিস্কার করে না,জীবন থেকে ফাহেশা কাজগুলোকে দূরীভূত করে না, আমাদেরকে আমাদের প্রিয় প্রভুর সাথে সেই কাংখিতো মানে উন্নীত করে না!
আমরা কোরআন তিলাওয়াত- অধ্যয়ন করছি কিন্তু আমাদের নয়নযুগল অশ্রুসিক্ত হয়না, আমাদের জীবনকে পরিশুদ্ধ করে না, অন্তর নরম হয় না! সুন্নাহ আর মাসনুন দোআ গুলি পড়া হয় অথচ এগুলো আমাদেরকে আমাদের প্রিয় রাসুল (সা) এর আদর্শ ও শিক্ষার আলোকে গড়ে তোলে না! সাহাবীদের জীবনী পড়ি, উনাদের জীবনী আমাদের অন্তরকে আলোড়িত করে তথাপি আমরা উনাদের মতোন আমলে সালেহ করতে পারিনা! চোখের সামনে কতো অভাবী দরিদ্রক্লিষ্ট মানুষকে দেখি, তাদের কষ্টের কথা শুনি কিন্তু আমরা তাদের দুঃখ কষ্টে সঠিক সহানুভূতি প্রকাশের হক বা দাবী আদায় করার অন্তরের অবস্হা আমাদের নেই!
যদি পকেট থেকে ১০০টাকা হারিয়ে যায়, অথবা কোন সুপার ডিসকাউন্ট মিস হয়ে যায় মনটা কতো খারাপ হয়ে যায়! তুলনা করা হয় যদি ১ ওয়াক্ত সালাত সঠিক সময়ে পড়া হয় নি বা একদিন কোরআন তিলাওয়াত মিস হয়েছে মনটা ততোখানি খারাপ হয় না যতখানি হয় টাকা হারিয়ে গেলে বা দুনিয়াবী কোনো সুবিধা বন্চিত হলে !
সময় তার নির্ধারিত গতি অনুযায়ী বয়ে চলছে, ক্যালেন্ডারের পাতা প্রতিদিন একটি করে ক্ষয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন আমরা ঘুম থেকে উঠে সকালের সূর্য উদয় দেখছি, গোধূলি বেলায় সূর্যাস্ত দেখছি কিন্তু আমাদের যে পরিবর্তন আসা দরকার সেই পরিবর্তন আর আসে না! অথচ মুমিনের আজকের দিন গতকালের থেকে উত্তম হওয়ার কথা, আজকের থেকে আগামী কাল আরো সুন্দর হবে এই প্রত্যয় অন্তরে থাকার কথা! কোন একটা জায়গায় এসে আমরা অন্ধ হয়ে যাই, আমাদের চোখ অন্ধ হয় না বরং অন্ধ হয়ে গেছে আমাদের অন্তরের চোখ!
আমাদের অন্তর আজ বন্দী, কারারুদ্ধ, শৃঙ্খলিত হয়ে আছে কেমন করে তা আল্লাহ ও আখিরাতের আবাসের দিকে ধাবিত হবে? কেমন করে আমরা অগ্রসর হবো যখন আমাদের অন্তর অবরুদ্ধ এবং চারদিক থেকে প্রতিমুহূর্তে ক্ষতিকর বিষয়সমূহ নিকটবর্তী হচ্ছে? কিন্তু আমরা সত্যকে গ্রহন করি না মন্দকে বর্জন করি না!
অন্তরের উপমা একটি বিহঙ্গের ন্যায়। সে যত উপরে আরোহন করতে থাকে ততই ক্ষতিকর বিষয়সমূহ থেকে দূরবর্তী হয়। আর যত সে নীচে অবতরণ করতে থাকে ততই তাকে আঘাত করতে পারে এমন ক্ষতিকর বিষয়ের নিকটবর্তী হয়।
আমরা শারীরবৃত্তীয় হার্টের ব্যাপারে যতটাই উদ্বিগ্ন বা পেরেশান হই তার একটুও যদি অন্তরের ব্যাপারে হতাম আজকে আমাদের অবস্হা অনেক ভালো হতো!
একটি হাদীসে তো এমনই বর্ণনা করা হয়েছে যে, শয়তান হল মানুষের জন্য নেকড়ে স্বরূপ। যে মুহূর্তে ভেড়ার কোন রক্ষক নেই আর সে নেকড়ে দ্বারা পরিবেষ্টিত, ঠিক তখনই নেকড়ে ক্ষিপ্রগতিতে তার উপর আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়ে। অনুরূপভাবে যে বান্দার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন প্রতিরক্ষা নেই, তার নেকড়ে (অর্থাৎ তার কামনা-বাসনা, প্রবৃত্তি ইত্যাদি) তার উপর শিকারী পশুর মত (ঝাঁপিয়ে পড়ে)। সুতরাং বান্দার জন্যে আল্লাহর নিরাপত্তা ব্যতীত কোন পরিত্রাণ, কোন নিষ্কৃতি নেই।
ভেড়া রাখালের যত কাছাকাছি অবস্হান করে, ততই সে নেকড়ে হতে থাকে নিরাপদ। আর রাখাল থেকে সে যত দূরবর্তী হয়, ধ্বংস তার ততই নিকটবর্তী হতে থাকে। সুতরাং তার অভয়ারণ্য হল রাখালের নিকটে অবস্হানের মাঝে। কারণ নেকড়ে তো সেই নিঃসঙ্গ ভেড়াটিকেই নেবে যে তার দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে, যে ভেড়া রাখাল থেকে সবচেয়ে দূরে। যখনই অন্তর আল্লাহ থেকে দূরবর্তী হয়, ক্ষতিকর জিনিসসমূহ দ্রুত তার দিক ধাবিত হতে থাকে। আর যত তা (অন্তর) আল্লাহর নিকটবর্তী হয়, ক্ষতিকর জিনিসসমূহ ততই তার থেকে ব্যবধানে থাকে।
আজ আমাদের অন্তর আমাদের প্রভুর নিকট হতে অনেক দূরে আর আমারা এই বিষয়ে অনেক উদাসীন! আজ নিজের জন্য যা একান্ত জরুরী তা হলো একটি বিশুদ্ধ অন্তর! যা আমাদের প্রভুর সন্তুষ্টি আর ভালোবাসায় আবৃত থাকবে, প্রভুর অসন্তুষ্টি আর ক্রোধের ভয়ে সচেতন থাকবে! অন্যায় অসত্য থেকে দূরে থাকবে, সত্য সঠিক পথে এগিয়ে আসবে! একটাই প্রার্থনা "হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী ! আমাদের অন্তরসমূহকে দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখুন!
নিশ্চয় মানুষের শরীরের মধ্যে একটি মাংসপিন্ড আছে। মাংসপিন্ডটি সুস্থ থাকলে সমস্ত শরীরই সুস্থ থাকে, আর এই মাংসপিন্ডটি অসুস্থ হলে সমস্ত শরীর অসুস্থ থাকে, সেটি হচ্ছে ক্বলব।(বুখারী ও মুসলিম)
বিষয়: বিবিধ
১৫১৫ বার পঠিত, ২৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আত্মশুদ্ধির আকুল আবেদনময় সুন্দর উপস্হাপনায় জাযাকিল্লাহু ওয়া ইয়্যানা খাইরাল জাযা!
দুনিয়াবী বিষয়ে প্রবল আকর্ষণ মন-মননে এতোটা শক্ত করে আসন গেড়েছে যে,স্বীয় প্রকৃত দায়িত্ব ও কর্তব্য ভূলেই গেছি আমরা!
গদবাধা কিছু আমলে অভ্যস্ত হলেও এর ফায়দা তাই অনুভূত হয় না!
আল্লাহ মহান আমাদের কে প্রকৃত সঠিক পথে চলার তাওফিক দিন,আমিন!
প্রথম পাঠক এবং মন্তব্যকারী হিসেবে আপনাকে অসংখ্য শুকরিয়া!
যেকোনো বিষয় নিয়মিত করতে গিয়ে এক ধরণের অভ্যস্থতায় পরিণত হয়, তবে বার বার সেই কাজটির আত্নসমালোচনা করলে বিষয়টি অনেক বেশি গঠনমূলক এবং প্রানবন্ত থাকে!
জাযাকাল্লাহু খাইর চমৎকার মন্তব্যের জন্য!
শুকরিয়া অনুভূতি জানিয়ে যাওয়ার জন্য!
চমৎকার মন্তব্য,আন্তরিক দোআ এবং স্বতস্ফুর্ত অভিব্যক্তি প্রকাশের জন্য শ্রদ্ধেয় ভাই আপনাকেও অসংখ্য শুকরিয়া! আপনার জন্যেও অনুরুপ দোআ রইলো!
জাযাকাল্লাহু খাইর!
শারীরিক যত্ন, অসুস্হতার প্রতি আমরা যতটুকু সচেতন থাকি আমাদের কলবের প্রতিও রাখা উচিত!
আল্লাহ আমাদের শরীর -মন উভয় সুস্থ রাখুন! সুন্দরভাবে ইসলামের উপর টিকে থাকার তৌফিক দান করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইর!
আপনাকেও আন্তরিক শুকরিয়া! আমাদের নতুন ভাবীজ্বি ভালো আছেন তো?
জাযাকাল্লাহ খাইর!
যদি পকেট থেকে ১০০টাকা হারিয়ে যায়, অথবা কোন সুপার ডিসকাউন্ট মিস হয়ে যায় মনটা কতো খারাপ হয়ে যায়! তুলনা করা হয় যদি ১ ওয়াক্ত সালাত সঠিক সময়ে পড়া হয় নি বা একদিন কোরআন তিলাওয়াত মিস হয়েছে মনটা ততোখানি খারাপ হয় না যতখানি হয় টাকা হারিয়ে গেলে বা দুনিয়াবী কোনো সুবিধা বন্চিত হলে !
সত্যি কথাই বলেছেন, আমরা আসলে নগদ যা পাই তার প্রতি খুব বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি, আল্লাহ আমাদের সঠিক পথে চলার তাওফীক দান করুন, আমিন।
কলব যেনো অযতনে থেকে জং ধরে না যায় সেই অবস্থা থেকে আল্লাহ আমাদের হিফাজত করুণ!
মা-শা আল্লাহ চমৎকার উপমার মাধ্যমে সত্যিই এক ঈনানী পোষ্ট দিলেন। অনেক দিন পর এমন একটি পোষ্ট পড়লাম, যদ্ধারা আমার অনেক অত্মউপলদ্ধি হল।
দুনিয়ার মোহে ও ঝামেলায় পড়ে সত্যিই আমরা আত্মশুদ্ধি থেকে অনেক পিছু হয়ে পড়েছি। বিশেষ করে প্রবাস জীবনে শুধু দুনিয়া উপার্জনেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছি।
কবে যে আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় কাজ গুলো করার তাওফীক দিবেন। হে আল্লাহ! আমাদের হিদায়াতের উপর অটল রেখো।
সুন্দর পোষ্টটির জন্য শুকরিয়া। জাযাকিল্লাহ খাইর
যেকোনো বিষয় নিয়মিত করতে গিয়ে এক ধরণের অভ্যস্থতায় পরিণত হয়, তবে বার বার সেই কাজটির আত্নসমালোচনা করলে বিষয়টি অনেক বেশি গঠনমূলক এবং প্রানবন্ত থাকে!
জাযাকাল্লাহু খাইর চমৎকার মন্তব্যের জন্য!
পীর ধরুন কাজে লাগবে। আমার পীর হক্কানী পীর। ধরলে জানাবেন।
শুকরিয়া আপনাকে
শুকরিয়া আপনাকে
It's the age of Fitna.
শিরকের মাঝে থাকাটাই মূল ফিৎনা(বুখারী ৬৬১৪, ফিৎনা অধ্যায়)
now we are living in that world which is now controlled by Dajjal and yajug majug but unfortunately still we are in a deep sleep.
আমরা শিরকের মাঝে অবস্হান করছি তাই আল্লাহ আর আমাদের দোয়া কবুল করছেননা। কিয়ামতের ১০ টা আলামতের কথা আমরা ভুলে গেছি। রাসূল (সঃ) বলেছিলেন, দাজ্জালের কথা মানুষ ভুলে যাবে, মসজিদের মিম্বর থেকে তার আলোচনা হারিয়ে যাবে। মুসলিমরাও তাকে চিনতে পারবেনা। হচ্ছেও তাই।
আমাদের ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে বৈশ্বিক পর্যায়ে যা ঘটছে, কোনটাই বিচ্ছিন্ন ঘটনা না।
আল্লাহ আমাদের ঈমানী দুর্বলতা থেকে হিফাজত করুণ।
শুকরিয়া তোমাকে সুন্দর মন্তব্যটির জন্য!
মন্তব্য করতে লগইন করুন