সে প্রেরণায় উজ্জীবিত হোক সকল হৃদয়
লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া মুকিম ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০২:২৮:১২ রাত
ছোটবেলায় কোরবানীর সময়ে আমাদের কলোনীটা একেবারে পাক্কা গ্রামে পরিণত হয়ে যেতো! গরু আর ছাগলে ছড়াছড়ি! সবাই যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী হাটে যাচ্ছেন খরিদ করে আনছেন! আনার পর সেই গরু বা ছাগল কে গলায়- শিং এ জরির মালা জড়িয়ে ঘাষ খাওয়ানোর জন্য এদিক সেদিক ঘোরাফেরা ! কলোনীর ভাইয়ারা তখন পুরোদমে রাখাল বণে যেতেন! এক হাতে একটা লাঠি অপর হাতে গরুর রশি ধরে পরমানন্দে উনারা পুরো কলোনী ঘুরতেন, খাওয়াতেন, গোসল করাতেন -সব কিছুই করতেন! আর যখন কেউ জিজ্ঞেস করতো এই তোমাদের গরুর দাম কতো? কয় ভাগ? আর পায় কে! যার গরুর যত দাম ততো বেশি আনন্দে আটখানা হয়ে যেতেন জবাব দিয়ে!
আমি ছোটবেলা থেকেই দূরে দূরে থাকতাম! ভয় পেতাম যদি তেড়ে এসে গুঁতো দেয়! আমরা বান্ধবীরা সবাই দল বেঁধে দূর থেকেই আমাদের কোরবানীর নির্দিষ্ট গরু দেখতাম!
কোরবানীতে আমাদের একটি ছাগল ও থাকতো! এই প্রাণীটির সাথে অল্প সময়ে খাতির হয়ে যেতো! কাঁঠাল পাতা খাওয়ানোর নামে ছোট ভাইকে দিয়ে একবার গাছের পুরো ডাল কাটিয়ে ফেলেছিলাম এবং খুব বকুনি খেয়েছিলাম কারণ গাছটা আমাদের ছিলো না!
ছাগল কে যেনো মশা না কামড়ায়,শীত না লাগে, পিপাসা না লাগে, ক্ষুধা না লাগে এজন্য মশার কয়েল, ভাঁজ করা চট, পানি আর অতিরিক্ত ঘাস এনে সামনে রেখে দিতাম! দিন যতো যেতো ততো বেশি মায়া বাড়তো অবলা পশুর প্রতি!
কোরবানীর আগেই দেখতাম দা, বঠি, ছুরি,পাটা ধার করানোর জন্য নির্দিষ্ট কিছু লোক এই দা-বঠি-ছুরি বলে হাঁক ডাকতেন আর সবাই প্রয়োজনীয় সরন্জাম ধারালো করে নিতেন!
ঈদ যতোই ঘনিয়ে আসতো মনটা ততোই ধুক ধুক করতো! ঈদের এক-দুদিন আগে থেকেই খেয়াল করতাম পশুগুলোর মন খুবই খারাপ থাকতো , খাওয়ার চাহিদা কমে যেতো একেবারে! গরুর চোখের দিকে তাকিয়ে দেখতাম চোখের কোণ দিয়ে পানি পড়ে কালো দাগ হয়ে যেতে! ঈদের জামাত শেষে আব্বা- ভাইয়ারা সবাই যখন গরুর নিকট যেতেন , জানালা দিয়ে সেই দূরে তাকিয়ে থাকতাম।বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠতো! দূর থেকেই শুনতাম জোরে বিসমিল্লাহ -আল্লাহু আকবর ধ্বনি! পশুটি সজোরে নড়ে ওঠতো, ফিনকি দিয়ে রক্ত প্রবাহিতো হতো! নিজের অজান্তে চোখে পানি পানি চলে আসতো !ধমনীতে রক্ত সঞ্চলিত হতো দ্রুত থেকে দ্রুততরো..........
তারপর ঝটপট মুহূর্তেই ভাইয়া গরুর কলিজা নিয়ে আসতেন। আম্মা আগে থেকেই মশলা কষিয়ে রাখতেন। আনা মাত্রই তা রান্না শুরু হয়ে যেতো! ঈদুল আযহার দিন আমরা সকালে কিছু খেতাম না, ঈদের জামাত শেষে কোরবানীর পশুর জবাই করা মাংস দিয়েই প্রথম খাবার খাওয়া হতো! আম্মা রান্না শেষে বড় একটা প্লেটে গরম পোলাও আর কলিজা ভূনা নিয়ে আমাদের সবাইকে নিজ হাতে খাইয়ে দিতেন! আরেকটা প্লেটে কিছু খাবার দিয়ে আব্বা ও অন্যান্য আংকেল দের জন্য পাঠিয়ে দিতেন!
ঈদুল ফিতরে সব বান্ধবীরা মিলে অনেক ঘুরতাম কিন্তু ঈদুল আযহাতে ছিলো সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থা! সমস্ত গোশত বাসায় আসার পর তা তিন ভাগ করে গরীব, আত্নীয় এবং নিজদের জন্য নেয়া হতো! কলোনীতে সেদিন দুঃস্থদের ঢল নামতো! বাসার দরজায় বসে সবাইকে সেই গোশতো দেয়া হতো আবার আশেপাশের প্রতিবেশীদের বাসায় নিয়ে যাওয়া হতো! হাঁটতে হাঁটতে পা ব্যথা হয়ে যেতো তারপরেও কাজটি করতাম অনেক আনন্দ নিয়ে!
এবার আসি ছাগলের বেলায়! কিযে কান্না করতাম এর জবাইয়ের সময়! সামনেই যেতাম না! এমনকি অনেকদিন আমি ছাগলের গোশত খেতে পারতাম না! ছাগলটি আম্মার পক্ষ থেকে কোরবানী হতো আর তাই জবাই করতেন আম্মা নিজে! বড় ভাইয়া একবার বলেছিলেন যার যার কোবানীর সে নিজে জবাই করা উত্তম আর তারপর থেকে আম্মা নিজেই জবাই করতেন-ভাইয়ারা সহযোগিতা করতেন! চিন্তা করতাম আম্মার কত্তো সাহস( মায়া-দয়ার অভাব আছে কি না তা নিয়ে ভীশন চিন্তান্বিতো হতাম) !
ছোট বেলার সেই সময় আর এখনকার সময়ে অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়েছে। কোরবানীর ধারণা এখন শুধু পশু জবাই নয় বরং ইবাদতের এক মহৎ অংশ। বছরের পর বছর ধরে আমাদের মুসলিম সমাজে কোরবানীর রেওয়াজ চালু আছে কিন্তু কেনো জানি মনে হয় এর সাথে ইবাদাহ এর সঠিক কানেকশন সংযুক্ত হতে পারছে না! জিলহজ্ব মাস আসলেই আমরা সবাই নফল সিয়াম রাখছি, তসবীহ পড়ছি, নখ-চুল কাটা থেকে বিরত থাকছি , কোরবানীর পশুর রক্ত প্রবাহিতো করছি আর ঈদের পর আমাদের ভিতর এর চেতনা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যায় বলা যায়! ঈদ কেমন জানি মাংস খাওয়ার উৎসবে পরিণত হয়!
সালাতের খুশু -খুজু বাড়ানোর জন্য এ বিষয়ে বই-নোট পড়া প্রয়োজন, জীবনে ইসলামী চেতনাকে উজ্জীবিত করার জন্য সাহাবীগনের জীবনী-ত্যাগ তিতীক্ষা পড়া প্রয়োজন, রমাদানের আগে সিয়ামের সাথে সংশ্লিস্ট হাদীস- ব্যাখা পড়া প্রয়োজন তেমনি যিলহজ্ব আসার আগেই এই দশদিনের ফজিলত, কোরবানী এবং হজ্ব নিয়ে পড়াশোনা করা প্রয়োজন!
তাহলে আমরা কানেক্ট হতে পারবো কোরবানীর মূল স্পিরিটের সাথে । কোরবানী সম্পর্কে জানতে গেলেই সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টা চলে আসে তা হলো আবুল আম্বিয়া ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম এর ঘটনা!
কোরআনে ২৫টি সুরাতে ২০৪টি আয়াতে ইবরাহীম আলাইহিস সালামের বিভিন্ন ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। এগুলো যখন আমরা কোরআন অধ্যয়ন করে পড়তে যাবো তখন দেখবো আমাদের মুসলিমদের জন্য অফুরন্ত হিদায়াত ও শিক্ষনীয় ঘটনা রয়েছে।
ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এবং উনার স্ত্রী হাজেরা উনাদের মাঝে রয়েছে গুরুত্ব অনুধাবণের মতো অনেক গুলো বিষয়। একটা কথা ভেবে ভেবে অবাক হই, বিষ্মিত হই ,ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যখন আল্লাহর নির্দেশে স্ত্রী ও দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সেই জনমানবহীন মরুভূমিতে রেখে আসছিলেন , হাজেরা আলাইহিস সালাম শুধু একটা প্রশ্ন করেছিলেন, আপনি কি আল্লাহর নির্দেশে আমাদের এখানে রেখে যাচ্ছেন? উত্তর হ্যা এটা বুঝে, সম্বিৎ ফিরে পেয়ে অটল বিশ্বাস ও দৃঢ় মনোভাব নিয়ে তিনি জবাব দিয়েছিলেন-তাহলে আল্লাহ আমাদের ধ্বংস করবেন না!
সুবহানাল্লাহ! কতো সুমহান ঈমানের অধিকারী ছিলেন তিনি! আমাদের মহিলাদের মাঝে আল্লাহর প্রতি এই ঈমান এবং ভরসা প্রকৃত অর্থেই যদি থাকতো অনেক সমস্যা থেকে, বালা -মুসবীত -পরীক্ষা থেকে আমরা সহজেই বেঁচে যেতাম , সবরের প্রকৃত পরাকাস্ঠা দেখাতে পারতাম! সামান্য কারণে হায়-হুতাশ করতাম না!
বার বার মনের পর্দায় ভেসে আসে সূরা সফফাতের আয়াতগুলো! অতঃপর [ পুত্রটি ] যখন পিতার সাথে কাজ করার মত বয়েসে উপনীত হল সফফাত ১০২
পিতা এবং পুত্রের এই মায়াবী বন্ধনের সময়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে যে স্বপ্নীয় হুকুম আসলো কিভাবে দৃঢ়চিত্তে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিলেন!
আমাদের সন্তানকে কোরবানি করবো সেটা দূরে থাক তাদের ইসলামের হুকুম -আহকামগুলো শিখানো থেকেও গাফিলতি করি , তাদের কে সঠিক বয়সে নামাযের জন্য অভ্যাস করানো, সামান্য শাস্তি দানেো আমরা অপারগতা প্রকাশ করি! খুব কম সংখ্যক অভিভাবকদের পাওয়া যাবে যারা ইসলামের ফরজ বিধান শিখানোর জন্য , সন্তানকে কবিরা গুনাহ থেকে বাঁচানোর জন্য সামান্য কঠোর হয়েছেন পক্ষান্তরে যখন স্কুলের রেজাল্ট বা দুনিয়াবী কোনো বিষয় হয় তখন অগ্নিমূর্তি ধারণ করতেও কুন্ঠাবোধ করেন না!
যে কোনো সৎ কাজ করতে গেলে শয়তানের পক্ষ থেকে ওয়াসওয়াসা -বিরোধিতা আসবেই। শয়তান চেয়েছিলো উনাদের পিতা-পুত্রকে বিভ্রান্ত করতে। ইবরাহীম আলাইহিসসালাম শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করেছিলেন। আমাদের জীবনেও যখন শয়তান বিভিন্ন পথ ও বাহানায় আসবে ,বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে আসবে আমাদেরো জাগ্রত ও সচেতন থাকতে হবে এই ধোঁকা থেকে বেঁচে থাকার উপায় সম্পর্কে!
কোরাবনীর দিন আমরা শুধু পশুর রক্তই প্রবাহিতো করি না বরং এই দিন আমাদের শিক্ষা দেয় নিজেদেরর ভিতর থেকে সমস্ত রাগ- অহংকার-হিসা-বিদ্বেষ - ঈমান বিধ্বংষী বিষয়গুলোকেও কোরাবনী করতে! শিক্ষা দেয় আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নিজের প্রিয় থেকে প্রিয় বিষয় কে ত্যাগ করতে, উজ্জীবিত করে তোলে আদর্শ মুসলিম হওয়ার প্রেরণা !
ইবরাহীম আলাইহিস সালাম কি শুধু নিজের সন্তানের গলায় ছুরি ধরেছিলেন? সেই ছুরি ছিলো অতি আদরের -ভালোবাসার প্রাণ প্রিয় সন্তানের গলায়! আর তিনি সমস্ত কিছুর উর্ধে আল্লাহর ভালোবাসাকেই প্রাধান্য দিয়েছিলেন! এবং এভাবেই তিনি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন! আত্নসমর্পিত একনিষ্ঠ মুসলিমে পরিণত হয়েছিলেন!
দুনিয়ার সমস্ত ভালোবাসার চাইতে প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহকে ভালোবাসার শিক্ষাই কোরবানী আমাদের জন্য নিয়ে আসে!
একটাবার কি ভেবে দেখেছি আমরা, কোরবানীর এই বিধান যদি গরু, ছাগল, উট, দুম্বার মাধ্যমে না হয়ে প্রিয় সন্তানদের দিয়েই কোরবানীর বিধান জারী থাকতো তাহলে এই ঈদ কি কখনো ঈদের আনন্দ বয়ে আনতো আমাদের মাঝে? এতো আনন্দের বন্যা বয়ে দিয়ে যেতো আমাদের ঘরে ঘরে?
বিষয়: বিবিধ
১৪৪৩ বার পঠিত, ২৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কুরবানীর প্রকৃত শিক্ষা এবং গুরুত্ব সম্পর্কে সাবলীল সুন্দর উপস্হাপনা আমাদের অনুভূতিতে শক্ত আসনে বসুক-এই দুয়া আল্লাহর কাছে!
'জাগতিক সকল কিছুর উর্ধ্বে মহান আল্লাহর প্রতি ভালবাসা ও তার হুকুম পালন করা' কুরবানীর এই শাশ্বত শিক্ষা ভূলে গিয়ে আনুষ্ঠানিক কার্য্যকলাপে পরিণত করে নিয়েছি আমরা কুরবানী!
আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন!আমিন!
জাযাকুমুল্লাহু খাইরান!!
কোরবানী এখন শো অফ এর ব্যাপার হয়ে গেছে। কার গরুর দাম কতো, কত গোশত পেলো এটাই যেনো এখন মুখ্য! ইবাদাতের মূল স্পিরিট থেকে দূরে সরে এসেছি আমরা!
গঠনমূলক চমৎকার মন্তব্য এবং আন্তরিক দোআর জন্য শুকরিয়া!
আপনিই ফাস্টু হয়েছেন-ধরে নেন মুহতারাম!!
আপনার আন্তরিকতা সত্যি মন ছুঁয়ে গেলো! অনেক ব্যস্ততার পড়েছেন এবং কমেন্ট করেছেনে এতেই আপনাদের বোন সন্তুষ্ট!
আল্লাহ আপনাদের সবাইকে ভালো রাখুন, নেক কাজে তৎপর রাখুন! শুভকামনা রইলো!
আর হ্যাঁ, শৈশবের স্মৃতিচারণের মোটামুটি সবটুকুই আমার শৈশবের সাথে মিলে যায়। শুধু ঐ অংশটুকু ছাড়া যেখানে বলেছেন, পাক করার পর মা নিজ হাতে খাইয়ে দিতেন...। আম্মা কবে নিজ হাতে খাইয়ে দিয়েছিলেন তা আমার মনেই পড়েনা। এই আপু, মায়ের কথা মনে এলেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি। প্লীজ আমার বৃদ্ধ, অসুস্থ মায়ের জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করবেন কিন্তু।
মুকিম ভাইসহ পরিবারের সবার প্রতি রইলো ঈদের অগ্রিম শূভেচ্ছা।
মডুমামার প্রতি আবেদন লিখাটি স্টিকি করা হউক। কোরবানী ঈদ নিয়ে স্মৃতিচারণ এমন একটি বিষয়ের উপর প্রতিযোগিতামূলক লিখাও আহবান করতে পারেন তাঁরা।
ঘটনমূলক যেকোনো মন্তব্য লেখককে শুধু আনন্দ ই দেয় না বরং আরো নতুন করে লিখার অনুপ্রেরণা জোগায়! আপনি এই কাজটি যথার্থ করেছেন আলহামদুলিল্লাহ!
প্রায় প্রতিটি পরিবারের গল্প একই রকম হয়ে থাকে অল্প স্বল্প ব্যতিক্রম থাকে। আল্লাহ আপনার মা কে সুস্থতা দান করুণ! আল্লাহ উনার প্রতিটি কাজ সহজ করে দিন!বার্ধক্য জনিত সকল কষ্টের উত্তম সহজতা দান করুণ! আমীন!
আপনাদের পরিবারের সকল সদস্যদের জন্য ঈদের শুভেচ্ছা ও দোআ রইলো!
আশাকরি মডারেশন টীম উনাদের কাজ সঠিক ভাবে আন্জাম দিবেন!
জাযাকাল্লাহ খাইর!
শৈশবের প্রতিটি দিন ক্ষন সব সময় তাড়া করে ফিরে! সেই আনন্দমাখা দিনগুলোর হাতছানি কখনোই ভুলবার নয়!
শুকরিয়া আপনাকে!
চাঁদ দেখার স্মৃতিগুলো ঘটনা কোথায়
সেদিন আমাদের একটা ইসলামিক প্রোগ্রামে কথা প্রসংগে চাঁদ দেখার ব্যাপার টা এলো! অবাক হয়ে খেয়াল করলাম অনেকেই জানেন না যে ঈদুল আযহা মাসের ১ তারিখে হয় না বরং মাসের ১০ তারিখে হয়!
হাজিরার জন্য শুকরিয়া! আশাকরি আপনিও লিখবেন! অনেকদিন কিছু লিখছেন না!
শুধু কুরবানীর ঈদ কেন , রোজার ঈদেও কি আমরা ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্য ধরে রাখতে পারি ?
গতকাল টিভিতে একটা অনুষ্ঠানে দেখলাম এক জনপ্রিয় টিভি নায়িকাকে বলছে ঈদের সময় কি কি সাজ নেবে ?
ঈদ হয়ে গেছে মানুষের কাছে নিজেকে জাহির করার একটা মোক্ষম সুযোগ ।
নিজের পশু নিজেই কুরবানী করা উচিত হলেও এটা আসলে ৫% লোকও করে না ।
নিজে কুরবানী করলেও মাংশ গুলোকে সাইজ করাই হচ্ছে এখনকার কুরবানীর ঈদে সবচেয়ে ঝামেলাপূর্ণ কাজ ।
হুজুর এসে গরু ফেলে গেলেও মূল কসাই আসে অনেক দেরিতে । ফলে যে কাজ সকাল সাড়ে আট টার মধ্যেই শুরু হয়ে যাবার কথা সেটা শুরু হতে হতে ১২ টা লেগে যায় । শেষ হতে হতে বিকাল ৫ টা বা প্রায় সন্ধ্যা ।
আপনারা যারা প্রবাসী তাদের ওখানে কি কাহিনী একই না ভিন্ন রকমের ?
মানুষ ধীরে ধীরে মূল ইসলাম থেকে কতোটা দূরে সরে যাচ্ছে তা তারা নিজেরাো জানে না! ঈদ উপলক্ষে নতুন নতুন সিনেমা মুক্তি পাওয়া, নাটক, বাহারি আকর্ষনমূলক প্রোগ্রামগুলো ইবাদাতের মূল স্পিরিট থেকে অনেক দূরে নিয়ে- মানুষ এগুলোকে নির্দ্বিধায় গ্রহণ করে এগুলোতে মশগুল থাকে- এটাও ভাববার বিষয়!
ইমাম সাহেবক এদিয়ে জবাই করানোর ট্রেন্ড থেকে মুসলিম দের বের হয়ে আসতে হবে!
আমাদের এখানে শহরে জবাই করার পারমিশন কারো নেই! শহর থেকে বেশ দূরে যেতে হয়! গরু কেনার পর গরুর ফিজিক্যাল হেল্থ টেস্ট করা হয় -পজিটিভ হলেই জবাইয়ের পারমিশন দেয়! এমনকি জবাইয়ের পরেও আবার টেস্ট করা হয়! গোশত বাসায় আসতে কখনো পরের দিন বা দুদিন লেগে যায়! যেখানে জবাই করা হয় সেখানে বেশ কিছু সিস্টেম আছে। সম্পূর্ন গরু মেশিনে করে কাত করা হয়, শুধু জবাই করেন আমাদের ভাইরা। তারপর বিশাল এক হ্যাংগারে করে ঝুলিয়ে রাখেন গরু। সেইসব মেশিনারী দেখলে অনেক ভয় লাগে! জীবন্ত কষাই খানা একেবারে! এখানকার একেকটা গরু অনেক বড় হয় , একেকজন শেয়ার হয় মাথাপিছু খরচ পড়ে প্রায় ২৫০ ইউরো ! জনপ্রতি গোশত পান ১০০-১৫০কেজি। এখানকার সবাই সবাইকে গোশত বিতরণ করে।
ছাগল গুলো মোটামোটি বাছুর টাইপের বড় হয়। একেকটার ওজন হয় প্রায় ৪০ কেজি এর উর্ধে !
যাদের গাড়ি নাই তাদের কোরাবাণীতে অংশগ্রহণ বেশ কষ্টসাধ্য।তাই আমাদের মুসলিম কমিউনিটির পক্ষ থেকে উদ্যোগ নিয়ে সবাইকে যার যার গোশত বাসায় পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমে সহযোগিতা করা হয়! এর ফলে অনেকেই অংশগ্রহণ করতে পারেন!
আমাদের জন্য দোআ করবেন! শুভকামনা রইলো!
আমাদের দেশে জবাইয়ের আগে গরুকে ফেলতে বেশ ভালই ফাইট করতে হয় । মূলত এটাই নিজ হাতে নিজের কুরবানীর পশু জবাই না করার মূল কারণ । প্রফেশনাল না হলে এ সব কাজ করা খুব কঠিন ।
নিশ্চয়ই দোয়াতে আমাকে শামিল রেখেছেন।
ছোটবেলার স্মৃতিগুলো আমারও প্রায় একই রকম। তবে আমাদের এলাকায় কলিজা দিয়ে চাইলের রুটি খাওয়ার প্রচলন। সকালেই সবার ঘরে ঘরে চাইলের রুটি অগ্রিম তৈরী করে রাখেন।
কলিজা রান্না হওয়ার সাথে সাথে চাউলের রুটি দিয়ে খাওয়া ও বাকি গোস্তগুলো কাটাকাটি চলে।
তবে আমার পক্ষে কুরবানীর ঈদ বাড়িতে করার সুযোগ খুব বেশি হয়নি। পড়ালিখা ও প্রাতিষ্ঠানিক কাজে প্রায়ই বাহিরে করতে হয়েছে।
আমাদের কোরবানীর পশৃুটি কেমন হত, তা দেখার আমার সৌভাগ্য হত না, ঈদের দিন রাতে বা পরদিন বাড়িতে আসতাম।
কুরবানীর শিক্ষার অভাবে আজ এই ঈদ শুধুমাত্র উৎসবে পরিণত হয়েছে। মিডিয়ার জালিয়াতিই বলা যায়, রমযানকে বাহারী ইফতার আর মার্কেটিং নিউজ দিয়ে সাজিয়ে রাখে, কুরবানকে গরু ছাগলের হাটবাজার আর ময়লা আবর্জনা পরিস্কার উপদেশে ভরে পার করে দেয়।
সত্যিই বলেছেন, আমরা যেভাবে সন্তানদের দুনিয়াবী বিষয়ে শাসন করি, সতর্ক করি, ঠিক সেভাবে কিন্তু আখিরাতের ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন।
আল্লাহ তায়ালা সকলকে বুঝার তাওফিক দান করুক।
সুন্দর পোষ্টটির জন্য অনেক অনেক শুকরিয়া। জাযাকিল্লাহ খাইর
ঈদের পর দিন আমরা চালের রুটি খেতাম গোশত ভূনা দিয়ে! গোশত ভূনা , কালো ভূনা, নেহারি, ভুড়ি কতকিছু!
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক পথ এচলার তৌফিক দান করুণ! আশাকরি পরিবারের সবাই ভালো আছেন! আপনাদের কি ঈদ উপলক্ষে অফিসে ছুটি থাকে?
বারাকাল্লাহু ফিক! আপনাকেও অনেক অনেক শুকরিয়া!
আলহামদু লিল্লাহ সবাই ভালো।
বুধ, বুহঃপতি ও শুক্রবার ছুটি।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় কোরবানী গোশত খাওয়ার উৎসব! একটা শো অফে পরিনত হয়েছে কোরবানী! আল্লাহ আমাদের এই গোমরাহী থেকে হিফাজত করুণ!
সময়োপযোগী ও শিক্ষণীয় চমৎকার পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।
তারচাইতেও ভীশন ভীশন ভীশন আনন্দিতো হলাম আপনার উপস্থিতি ও কমেন্ট পড়ে!
আপনারা পড়েছেন এতেই আমার আনন্দ!
জাযাকিল্লাহু খাইর!
অনেক শুকরিয়া সময় করে পড়ার জন্য!
অনেক অনেক শুকরিয়া ভাইয়া! আপনার দোআয় আমাদের স্মরণে রাখার আবেদন রইলো!
ঈদ মোবারক!
অনেক অনেক শুকরিয়া! আপনার দোআয় আমাদের স্মরণে রাখার আবেদন রইলো!
মন্তব্য করতে লগইন করুন