উন্মুক্ত হৃদয়ে আকাংখিতো যে প্রেরণা (যিলহজ্ব)
লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া মুকিম ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১১:৩৬:৫৩ রাত
যখন কোনো সুপার শপে সুপার ডিসকাউন্ট দেয় তখন আমরা অনেকেই বিভিন্ন রকম কেনাকাটা করি। কারণ হাফ দামে একটি মূল্যবান পণ্য ক্রয় করা সম্ভব হয় যা অন্য সময়ে পূর্নমূল্যেই ক্রয় করতে হতো। খুব তৃপ্তি অনুভব করি এই ভেবে যে চমৎকার একটি সুযোগের সঠিক ব্যবহার করতে পেরেছি!
আল্লাহ সুবহানাহু তা'য়ালা আমাদের কে এমন কিছু বারাকাহময় সময় দিয়েছেন যে সময়ে আমরা ইবাদাত করে অন্য সময়ের চাইতে অনেক বেশি গুন পুন্য অর্জন করতে পারি ।
আমরা প্রত্যেকেই এমন এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত পার করছি যা আ'মাল এবং ফজিলতের দিক থেকে অনেক তাৎপর্যময়।
আল্লাহ সুবহানাহু তা'য়ালা আমাদেরকে খুব মেহেরবানী করেছেন যে, তিনি আমাদের কে কিছু উত্তম সুযোগ দান করেছেন যার মধ্যমে আমরা প্রত্যেকেই আমাদের নেক কাজগুলোকে আরো সৌন্দর্যমন্ডিত এবং আমলের ভান্ডার পরিপূর্ণ করতে পারি । সূরা তওবা থেকে আমরা জানতে পারি-
" আল্লাহ্র দৃষ্টিতে [বছরে] মাসের সংখ্যা বারো ।আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই তিনি এই ব্যবস্থা বিন্যস্ত করেছেন। তার মধ্যে চারটি পবিত্র মাস । এটাই সহজ বিধান।কাজেই এ চার মাসে নিজেদের ওপর জুলুম করো না। " (তওবা- ৩৬)
আল্লাহ তাআলা বারোটি মাসের মধ্যে চারটি মাসকে ‘আশহুরে হুরুম’ তথা সম্মানিত ঘোষণা করেছেন। উল্লেখিত আয়াতে যে চারটি মাসের কথা বলা হয়েছে তা সম্পর্কে আমরা হাদীস থেকে জানতে পারি-
"বারো মাসে বছর। তার মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। তিনটি ধারাবাহিক : যিলকদ, যিলহজ্ব, মহররম আর চতুর্থটি হল রজব, যা জুমাদাল উখরা ও শাবান মাসের মধ্যবর্তী মাস" ।-(সহীহ বুখারী )
প্রতি দিন সকালে ঘুম থেকে উঠছি আবার কাজকর্ম শেষ করে ঘুমোতে যাচ্ছি। একজন মুমিনের জীবন শুধু এটুকুতেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়। বরং পবিত্র ও সন্মানিতো এই সময়ের সম্পূর্ন ফায়দা কিভাবে অর্জন করা যায় সেজন্য তৎপর হওয়া উচিত।
আজকে আমরা যিলকদের শেষ প্রান্তে আর জিলহজ্বের চাঁদ দেখার অপেক্ষায় আছি। দুটো মাসই পবিত্র এবং সন্মানিতো। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা জিলকদে ভালো আমলের পরিমান বেশি করেছেন এবং আসন্ন জিলহজ্বে আরো বেশি ও সুন্দর আমল করার ইচ্ছে পোষন করেছেন ইনশা আল্লাহ!
وَذَكِّرْ فَإِنَّ الذِّكْرَىٰ تَنفَعُ الْمُؤْمِنِينَ
-তুমি উপদেশ দান কর। নিশ্চয়ই উপদেশ মুমিনদের জন্য উপকারী । (যারিয়াত -৫৫)
আসন্ন মোবারক সময়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু আমলের আলোকপাত-
ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন : যিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনে নেক আমল করার মত প্রিয় আল্লাহর নিকট আর কোন আমল নেই। তারা প্রশ্ন করলেন হে আল্লাহর রাসূল ! আল্লাহর পথে জিহাদ করা কি তার চেয়ে প্রিয় নয় ?
রাসূলুল্লাহ স. বললেন : না, আল্লাহর পথে জিহাদও নয়। তবে ঐ ব্যক্তির কথা আলাদা যে তার প্রাণ ও সম্পদ নিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদে বের হয়ে গেল অত:পর তার প্রাণ ও সম্পদের কিছুই ফিরে এল না।[বোখারি -৯৬৯, তিরমিজি- ৭৫৭ ]
অর্থাৎ যিলহজ্বের প্রথম দশদিনে করা আমল আল্লাহর নিকট অনেক বেশি প্রিয়। সুতরাং আমাদের প্রত্যেকের উচিত এই মূল্যবান সময়ের গুরুত্ব অনুধাবন করে তার যোগ্য ব্যবহার করা!
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত নবী কারীম স. বলেছেন : এ দশ দিনে (নেক) আমল করার চেয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রিয় ও মহান কোন আমল নেই। তোমরা এ সময়ে তাহলীল (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ) তাকবীর (আল্লাহু আকবার) তাহমীদ (আল-হামদুলিল্লাহ) বেশি করে পাঠ কর।[আহমদ-১৩২
তারমানে এই নয় এই তাসবীহ গুলো আমরা দশদিন আমল করেই ছেড়ে দিবো বরং দশদিন আমল করে তা আমরা সারাজীবনের দৈনন্দিন জিকরে তা শামিল করে নিতে অভ্যস্থ হয়ে যাব ইনশা আল্লাহ।
সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. ও আবু হুরাইরা রা. যিলহজ মাসের প্রথম দশকে বাজারে যেতেন ও তাকবীর পাঠ করতেন, লোকজনও তাদের অনুসরণ করে তাকবীর পাঠ করতেন।(বোখারি, ঈদ অধ্যায় )اَللهُ أَكْبَرُ، اَللهُ أَكْبَرُ، لَاإِلَهَ إِلاَّ اللهُ، وَاللهُ أَكْبَرُ، اللهُ أَكْبَرُ وَلِلهِ الحَمْدُ
সাহাবী রাদিয়াল্লাহু আহুম গনের অভ্যাস ছিলো তাকবীর পড়া , আমরা চেষ্টা করবো উনাদের যথাযথ অনুসরণ করতে !
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ স. বলেন : 'আরাফার দিন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার বান্দাদের এত অধিক সংখ্যক মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন যা অন্য দিনে দেন না। তিনি এ দিনে বান্দাদের নিকটবর্তী হন ও তাদের নিয়ে ফেরেশতাদের কাছে গর্ব করে বলেন- 'তোমরা কি বলতে পার আমার এ বান্দাগণ আমার কাছে কি চায় ?'[ মুসলিম-১৩৪৮ ] একটা বার যদি চিন্ত করি পৃথিবীর আনচে কানাচে হতে আল্লাহ প্রিয় বান্দা- বান্দীগন ধূলি ধূসরিত হয়ে, ক্লান্ত -শ্রান্ত হয়ে , পরনে সাদা কাপড় পরিধান করে লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক বলছেন, সুবহানাল্লাহ! যাদের প্রত্যেকের অন্তর আল্লাহ অভিমুখী, শুধু তাঁরই নিকট ক্ষমাপ্রার্থী এবং এই সমস্ত বান্দাদের দেখিয়ে আল্লাহ ফেরেশতাদের নিকট গর্ব করেন, সুবহানাল্লাহ আমাদের যাদের এখনো সেই নেক স্থানে যাওয়ার সৌভাগ্য হয় নি আমরা দোআ করি আল্লাহ আমাদের কবুল করুণ এবং যারা ঐখানে থাকবেন আল্লাহ তাদের মনবাঞ্ছনা কবুল করে নিন! আমীন!
আবু কাতাদাহ রা. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ স. বলেন : 'আরাফার দিনের সওম আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বিগত ও আগত বছরের গুনাহের কাফফারা হিসেবে গ্রহণ করেন।' (মুসলিম) আমরা মুক্বীম ব্যক্তিরা আরাফার দিনে সিয়াম পালন করে এই সোয়াবের অংশীদার হবো ইনশা আল্লাহ!
হাফসা রা. থেকে বর্ণিত যে নবী কারীম স. কখনো চারটি আমল পরিত্যাগ করেননি। সেগুলো হল : আশুরার সওম, যিলহজের দশ দিনের সওম, প্রত্যেক মাসের তিন দিনের সওম, ও জোহরের পূর্বের দু রাকাত সালাত।[আহমদ ]
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ গুলোর উপর নিয়মিত যথাসাধ্য আমল করার চেস্টা করবো ইনশা আল্লাহ!
ইবনে উমর রা. বলেছেন : নবী কারীম স. দশ বছর মদিনাতে ছিলেন, প্রতি বছর কোরবানি করেছেন। (আহমদ)
সামর্থ্য অনুযায়ী কোরবানীতে অংশগ্রহন করবো!
আব্দুল্লাহ ইবনে কুর্ত রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলে কারীম স. বলেছেন : আল্লাহর নিকট দিবস সমূহের মাঝে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দিন হল কোরবানির দিন, তারপর পরবর্তী তিনদিন।আবু দাউদ
আল্লাহর নিকট বেশি বেশি ইস্তিগফার করবো এই শ্রেষ্ঠ দিনগুলোতে তিনি আমাদের ভুল ত্রুটি গুলোকে ধুয়ে মুছে পবিত্র হিসেবে কবুল করে নিন।
উম্মে সালামাহ রা. থেকে বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন : তোমাদের মাঝে যে কোরবানি করার ইচ্ছে করে সে যেন যিলহজ মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকে। ইমাম মুসলিম যারা কোরবানী তে অংশ নিচ্ছি অবশ্যই স্মরন রেখে আমলটি করে নিবো!
আমাদের অনেকের ভুল ধারণা আছে জিলহ্জ্ব মাস মানেই শুধু কোরবানীর আয়োজন করা এবং আমরা অনেক সময় ভুলেই যাই এই গুরুত্ব পূর্ন সময়ে কতো বেশি সুযোগ থাকে নেক আমল করার ! আমরা যেনো শুধু কোরবানী কি দিবো, কতো দামের গরু বা ছাগল দিবো, গোশত সংরক্ষনের জন্য ডীপফ্রিজ কিনবো, ঈদের আয়োজনে ঘরবাড়ি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে না পড়ি! বরং আমলের দিকে যত্নবান হই। কেননা এই বছর আমি আমল করতে পারছি , এই সুন্দর সময় পেয়ে গেছি আগামী বছর আমি বেঁচে থাবো তার কোন নিশ্চয়তা নেই!
আর হ্যা, আমরা সবাই সুন্দর মন নিয়ে আমল করলাম, অনেক আনন্দ নিয়ে ঈদ করলাম, কোরবানী করলাম অথচ আমাদের দ্বীনি ভাই-বোন রা অনাহরে আছেন, অভাবে আছেন তাদের কথাও যেনো আমরা স্মরন রাখি! আমরা চ্যারিটির ব্যবস্থা করতে পারি অথবা যারা উদ্যোগ নিয়েছেন তাদের সাথে সহযোগিতা করে সেই সব ভাইবোনদের ঘরে ঈদের আনন্দটুকু পৌঁছে দিতে পারি- প্রয়োজন শুধু একটু সদিচ্ছা ইনশা আল্লাহ!
আপনাদের প্রত্যেকের দোআয় আমাদের শরীক রাখার বিনীত আবেদন রইলো! আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ!
(বিণীত কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি মুহতারাম আবু জান্নাত ভাইকে- উনার অনুরোধে স্বল্প সময়ে এই পোস্টের অবতারণা।)
বিষয়: বিবিধ
১২৯১ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
পড়ে মন্তব্যে আসছি। শেষের দিকে আমার নাম দেখা যাচ্ছে।
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ আপু,
আলহামদুলিল্লাহ আপনার লিখা পড়ে যিলহাজ্ব মাসের আমলগুলোর কথা পুণঃরায় স্বরণে এলো, ইন-শা আল্লাহ যতটুকু পারি, আমল করার চেষ্টা চালিয়ে যাবো। আমার জন্য ও আমার পরিবারের জন্য বিশেষ করে তাহাজ্জুদের সময় মহান প্রভূর দূয়ারে হাত তুলে দোয়া করবেন।
আমি না! বিদেশ আসার পর থেকে খুব আলসে হয়ে গেছি। নফল ইবাদাতের প্রতি একেবারে উদাসীন, মনমানসিকতাও তেমন একটা ভালো যাচ্ছে না। প্লীজ দোয়ায় আমি অধমকে স্বরণে রাখবেন।
আল্লাহ তায়ালা আমার আপুসহ সকল মুমিনের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দিক। আমীন ইয়া আল্লাহ।
আপনারা পরিচিত কয়েকজন মিলে ছুটির দিনে ব অবসরে ইসলামীক প্রোগ্রাম পরিচালনা করতে পারেন , এতে পুনঃচর্চা এবং আমল করতে আগ্রহ কিছুটা সজীব হবে আশাকরি!
আল্লাহ আমাদের সকল কে সিরাত্বল মুস্তাকীমে কবুল করে নিন, দ্বীনের পথে ইস্তিকামাত দান করুণ! আমীন!
জাযাকাল্লাহ খাইর!
আপনাকেও আন্তরিক শুকরিয়া পড়া ও মন্তব্যের জন্য! আমীন!
আপনাকেও আন্তরিক শুকরিয়া! আল্লাহ আমাদের সুন্দর ভাবে আমল করার তৌফিক দান করুণ! আমীন
আপনাকেও আন্তরিক শুকরিয়া পড়া ও মন্তব্যের জন্য!
আপনাকেও আন্তরিক শুকরিয়া পড়া ও মন্তব্যের জন্য!
আমাদের সবাইকে আল্লাহ কবুল করে নিন! শুকরিয়া
মন্তব্য করতে লগইন করুন