পুত্রের লুংগি বিলাস........
লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া মুকিম ১৬ আগস্ট, ২০১৫, ০৬:৩৩:২৫ সন্ধ্যা
পুত্র আমার ভীশন মিশুক স্বভাবের। অল্পতেই সবার সাথে মিশে যেতে পারে! আমাদের যাওয়া উপলক্ষে আমরা সব ভাই বোন একত্রিত হয়েছিলাম। তাই বিচ্ছুদের দিয়ে পরিপূর্ণ ছিলো বাসা ।পুত্রেরও সংগীর অভাব হয়নি!
বড় ভাইয়ার ছেলে সহীহ এবং বোখারী আর মেঝ ভাইয়ার ছেলে উমায়ের এর সাথে ছিলো তাঁর খুব ভাব! একসাথে খেলা করা থেকে শুরু করে খাওয়া, ঘুম নামাযও পড়তে যেতো সবাই মিলে!
দেশে অত্যন্ত গরম পড়েছিলো শুনে আমি পুত্রের জন্য একটি মাত্র ফুলপ্যান্ট নিয়েছিলাম, বাকি গুলো থ্রি কোয়ার্টার (হাঁটুর নিচ পর্যন্ত) !
চার ভাই মিলে একসাথে মসজিদে নামাযে গিয়েছিলো। নামাজ শেষ করে এসেই বোখারীর তুমুল অভিযোগ! ফুপি, ওকে পান্জাবি পায়জামা পড়িয়ে মসজিদে নিতে হবে! সবাই ওর এই হাফপ্যান্ট এর দিকে খুব খারাপভাবে তাকিয়ে ছিলো!
আমি বলেছিলাম, হাফপ্যান্ট নাতো। থ্রি কোয়ার্টার! ওর তো সতর ঢাকা ছিলো! সমস্যা কোথায়?
আমাদের মসজিদে পা দেখা যায় এমন প্যান্ট পড়ে গেলে সবাই মাইন্ড করে!
কি আর করা। পরের বার পুত্র পান্জাবী -পায়জামা পড়েই গেলো! এবারেও নামাজ শেষে বোখারী হন্তদন্ত হয়ে ঢুকলো! কি ব্যাপার আবার কি ঘটলো? চিন্তাক্লিষ্ট হয়ে আমিও শুনতে চাইলাম!
ফুপি, মুয়াজ তো ঠিক ভাবে নামাজ পড়ে না! যতবার তাকবীর দেয় ইমাম ও ততবার হাত তোলে! জোরে আমীন বলে! সবাই নামায শেষ করে ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করছিলো ও কোথা থেকে এসেছে? কোথায় এই নামায শিখেছে! আমার তো ভয় হচ্ছে ওকে না কেউ শিয়া মনে করে! আমার আর আব্বুর প্রেস্টিজটা এক বার চিন্তা করেন?
গম্ভীরভাব বজায় রেখে বললাম, তাকবীরে হাত উঠানো এটা তো সুন্নাহ ! একে রফউল ইয়াদাইন বলে! ফাতিহা শেষে ইমামের আমীন, মুক্তাদীর আমীন যদি একসাথে ফেরেশতাদের আমীনের সাথে মিলে যায় তাহলে পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়! আমরা নিজেরাও এমন করে থাকি!
ভাতু্ষ্পুত্র এবার খুব বিব্রত হলো! ফুপি ভুল হলো এটা স্বীকার না করে আবার ভুলের মাশুল গাইলো! যাই হোক সেদিনের মতো এখানেই এই টপিক শেষ হলো!
পুত্র আমার কি বুঝলো জানি না অন্তত এই টুকু বুঝেছে তাঁর নামাযের সাথে মসজিদের মুসুল্লি সর্বোপরি ইমাম(তাঁর মামা) সবার সাথে কিছুটা পার্থক্য আছে! বুদ্ধি করে সেও সবার সাথে সমান্জস্যশীল নামায পড়তে লাগলো!
দেশে বাসার ভিতর সবাই লুংগি পড়েন। এই বিষয়টা পুত্রের নজরে এড়ায়নি! হঠাৎ ভরা মজলিসে সে বলে বসলো, তাঁর ঘরের ড্রেস লাগবে!
হত বিহবল দৃষ্টিতে আমি তাঁর দিকে ক্ষানিক তাকিয়ে বললাম, তোমার তো অনেকগুলি ঘরে পড়ার ড্রেস আছে! আমাকে অবাক করে দিয়ে সে বললো, কই আমার তো একটাও লুংগি নাই!
উপস্থিত সবার মাঝে হাসির রোল বয়ে গেলো! ভাবিজ্বি তড়িৎ গতিতে আলমারি খুলে একখান চকচকে ছোট লুংগি বের করে আনলেন! সহীহ এর সুন্নাহ করার সময় কেনা লুংগিটা তখনো ইনটেক ছিলো! পুত্র তো লুংগি পেয়ে বেজায় খুশি! সাথে সাথেই পরিধান করলো! কিন্তু কোন ভাবেই সুন্দর করে পরতে পারছিলো না। লুঙ্গি গিঁট দিতে গিয়ে এমন উপরে উঠে যাচ্ছিলো তখন ওটাকে মিনি স্কার্ট মনে হচ্ছিলো! যাই হোক সবার সহায়তায় সে কোনোরম লুংগি পড়লো! আয়নার সামনে ঘুড়িয়ে ফিরিয়ে দেখলো, নাহ! খারাপ তো লাগছে না!
আমার কন্যা তাঁর ভাইকে উপাধি দিলো বিদেশী ফকির! তবু পুত্র এতোটুকু দমে যায় নি!
স্যান্ডেল পায়ে যখন সে বাইরে যেতে চাইলো, তখন আমি কিছুটা ভড়কে গেলাম! বললাম - বাবা, লুংগি তো ঘরের ড্রেস এটা পরে কেউ বাইরে যায় না!
তাঁর ঝটপট উত্তর- আমি অনেককেই দেখেছি লুংগি পড়ে বাইরে ঘুরতে! কিচ্ছু হবে নাহ! বলেই সে বাইরে চলে গেলো! এক চক্কর দিয়ে এসে বললো , আম্মু বাংলাদেশী এই ড্রেসটা আমার জন্য বেশি করে কিনবে আমি ইতালি নিয়ে যাবো!
নাতির লুংগি বিলাস দেখে নানী অতিসত্বর জরুরি পরোয়ানা জারী করে তৎক্ষনাত আর কয়েকটি লুংগি কেনার ব্যবস্থা করলেন! পুত্র এই অসাধারণ উপহার পেয়ে খুশীতে বিগলিত হয়ে উঠলো!
বারবার সবাইকে লুংগি পরিয়ে দাও বলাটা কষ্টজনক! তাই পুত্র এবার দারুন এক বুদ্ধি বের করলো! লুংগির উপর একটা বেল্ট বেঁধে নিলো ! এতে করে সে গিঁট দিয়ে বাঁধতে না পারলেও বেল্টের কারণে ঠিকই লুংগি বাঁধা হয়ে গেলো!
লাগেজ করার সময় সবার আগে পুত্র আমার তাঁর লুংগিটি রেখেছিলো পরম যতনে.........................
বিষয়: বিবিধ
১৯১৭ বার পঠিত, ৪৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
স্বতস্ফুর্ত অনুপ্রেরণার জন্য আন্তরিক শুকরিয়া জানবেন!জাযাকাল্লাহু খাইর!
সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং হলো লুঙি বেল্টের সাথে পড়া,
এটা একটা নতুন স্টাইল হলো
ধন্যবাদ।
আপনাকেও অনেক অনেক শুকরিয়া আপু! জাযাকিল্লাহু খাইর!
তোমাকে ছবি পাঠাচ্ছি দাঁড়াও
পুত্রের মাঝেও কোনোরকম লজ্জা অনুভব দেখিনি আমি! বরং সে বলছিলো ছবি তুলে তার ক্লাস ফ্রেন্ডদের গ্রুপে সেন্ড করতে! সে যে একটা নতুন ড্রেস পরেছে এটা তাকে খুবই আনন্দ দিয়েছে! অবশ্য দেশপ্রীতি হয়তো এখনো তাঁর সেভাবে জন্মে ওঠেনি!
আমার হাসব্যান্ড একবার বাসায় লুংগি পরা অবস্থায় ছিলো, এমন সময় আমাদের খুব বন্ধুভাবাপন্ন প্রতিবেশী আসলেন, উনি আমার হাসব্যান্ডকে জিজ্ঞেস করছিলেন, তুমি কি লং স্কার্ট পড়েছো? এরপর থেকে এচারা এমন লজ্জা পেয়েছিলো যাও আগে টুকটাক লুংগি পরে নিচে নামতো সেটাও বন্ধ হয়ে গেলো!
গ্রোসারীতে লুঙ্গীপরে গিয়ে জিলাপী প্রাইজ পাওয়ার ঘটনা টা জানতে ইচ্ছে করছে! উযোগ পেলে লিখবেন আশাকরি!
জ্বি ভাইয়া, আপনি সম্ভবত কানাডা থাকেন!
আলবার্টা আর ব্রিটিশ কলম্বিয়া সফরের বিবরণী নিয়ে আশাকরি পোস্ট পড়ার সুযোগ করে দিবেন!
জাযাকাল্লাহু খাইর!
বাচ্চারা ল্যাংটা হলেও দোষের কিছু নাই কিন্তু বাচ্চাদের পরিবর্তে মধ্য বয়স্ক বয়স্কারা ল্যাংটা হচ্ছে তা দেখার জন্য আবার ১৫০০০ টাকার টিকেটও লাগছে!
মসজিদের বিষয়টা অনেক দুর্ভাগ্যজনক নিজেদের আমরা এতই সহিহ মনে করি যে একটা শিশুকে ভয় দেখাতে পারি।
আপনার কমেন্টে ব্যাপক আনন্দ পেলাম ভাইয়া! জামা-কাপড়ের কিছু বিজনেস অনেকেই খুলেছিলেন কিন্তু লাভ করতে পারেন নি! জনগন কেনার সময় কত টাকার জিনিষ কতো ইউরোতে কিনছেন এটা বেশি চিন্তা করেন তাই ব্যবসায়ীদের লস হচ্ছে!
মসজিদের বিষয়টার জন্য আমারো খারাপ লেগেছিলো যাই হোক অন্তত কিছু বিষয় মানুষ জেনেছে, আলোচনা করেছে আমার পুত্রের কারণে এটাই সান্তনা!
জাযাকাল্লাহু খাইর!
আমীন আস্তে ও জোরে দু'প্রকারের হাদীস যেহেতু আছে, ইচ্ছাধীন। আস্তে বললেও ফেরেস্তা ও ইমামের সাথে মিলে, জোরে বললেও, কেননা সবাই ওয়ালাদ্দোয়াল্লীন এর পরপরই আমীন বলে।
যেহেতু আমাদের দেশে আস্তে বলার প্রচলন আগে থেকে চলে আসছে, তাই কোন প্রবাসী হটাৎ করে জোরে বললে সবাই তার দিকে একটু তাকাবে এটাই স্বাভাবিক।
রাফে ইয়াদাইনের ব্যপারেও একই কথা বলবো।
শেষের দিকে এসে লুঙ্গী ভাগিনাকে লুঙ্গী পরা অবস্থায় দেখতে বড়ই ইচ্ছে হচ্ছে, জানি না এই শখ পূরন হবার কি না!
সবার জন্য সালাম ও দোয়া রইল।
সুন্দর পোষ্ট, অনেক অনেক ধন্যবাদ
জাযাকিল্লাহ খাইর
আমাদের দেশের মানুষদে রসবচাইতে বড় প্রবলেম হলো উনারা যেটা প্র্যাকটিস করে আসছেন তার বিপরীত কিছু করতে বা শুনতে দেখলে মারাত্নক রিয়াক্ট করে এমনকি ভুল বলতেও পিছপা হয় না! এটাই খারাপ লাগে! অথচ একই বিষয়ের উপর কতোগুলো হাদীস বর্নিত আছে তাই না?
আমাদের সবার জন্য দোআ করবেন! আপনার আন্তরিক সালাম ও দোআ পৌঁছে দেয়া হলো!
বারাকাল্লাহু ফিক!
ভাল লাগল ধন্যবাদ ।
"খুলে যাবার সম্বাবনাও অনেক" - বুঝলাম না!
তোমাকেও শুকরিয়া আপু!
জাযাকাল্লাহু খাইর!
দীর্ঘ বিরতির পর লিখছি খুব সময় লেগে যাচ্ছে! আপনারা যে কষ্ট করে পড়ছেন এতেই সান্তনা!
আমার বড় ভাইয়ার দুই ছেলে, ওদের নাম ই -সহীহ, বুখারী!
বিদেশী ফকির নামট আমার কন্যা তার ভাইকে দিয়েছে
"লুঙ্গির সাথে বেল্ট" বাঁধার প্রক্রিয়ায় আমরাও খুব মজা পেয়েছি!
দোআ করবেন আমাদের জন্য! আন্তরিক উপস্থিতি ও মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক শুকরিয়া!
জাযাকাল্লাহ খাইর!
চমৎকার পোস্টের জন্য ধন্যবাদ
আপনাকেও প্রাণঢালা শুকরিয়া
হাজিরা দেয়ার জন্য শুকরিয়া ভাই আপনাকে!শুনলাম বন জংগলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সাপ-আর ব্যাং খাওয়া অভিযানে? সাথে জিপিএস নিতে ভুলবেন না যেনো!
শুভকামনা রইলো!
অনেক অনেক শুকরিয়া! শুভ কামনা রইলো!
বড় ভাইয়ার ছেলে সহীহ এবং বোখারী দুনিয়াতে বুঝি আর নাম খুজেই পাইলোনা? শেষ পরযনত হাদিসের নামগুলোও দখল করলো, কপাল ভাল "কোরান" নাম রাখেনি!!!
আমিন জোরে বলে মুসুল্লিদের আক্রমনের শিকার হতে পারেন যেহেতু উনাদের প্রাক্টিস নেই!
নাম গুলো আপনার পছন্দ হয় নি বুঝি?
জাযাকাল্লাহু খাইর!
দোআ রেখো আমাদের জন্য! শরীর ভালো তো_?
ধন্যবাদ।
জাযাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন