নতুন ক্ষুদে বন্ধুর সন্ধান
লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া মুকিম ১১ জানুয়ারি, ২০১৩, ০১:১০:১২ দুপুর
ফাতিহা রোজ স্কুল ছুটির পর ওদের বাসার সামনের যে ফুল বাগানটা আছে তাতে খেলা করতে আসে,সাথে থাকে ওর আরো দুই বান্ধবী মীম আর রিপা।ওরা সবাই স্কুল ছুটির পর ফিরার পথে যে বিষয়ে কথা বলে তার মূল আলোচ্য বক্তব্য ই হলো কে রান্না করবে ,কি কি রান্না করবে,কে বাজার করবে এসব পরিকল্পনা।ওদের কথাগুলি কেউ শুনলে নির্ঘাত ভাববে আসলেই এরা একশো ভাগ খাঁটি রাঁধুনি!!
বাসায় এসে দুপুরের খাওয়া দাওয়ার পর মনে হয় সময় ই কাটে না!ফাতিহাদের বাসার চিরাচরিত নিয়ম হলো দুপুরের খাবারের পর ঘুমাতে যাওয়া আর এখানেই যত বিপত্তি !ফাতিহার কি আর ঘুম আসে!ওর মাথায় কতো চিন্তা!সেদিন বালি এনে রেখেছে ভাত রান্না করার জন্য,পাতাবাহার গাছের পাতা দিয়ে আজ সে শাক রান্না করবে,কাকঝিংগে লতার ফলটা লাউ হিসেবে দারুন হবে!শুয়ে এপাশ ওপাশ করতে করতে চোখ কুঁচকে ঘড়িটা দেখে! উফ এখনো অনেক দেরী আছে কখন যে মুয়াজ্জিন আংকল আসরের আযান দিবেন তবেই ওর মুক্তি!
প্রথম শ্রেনী থেকেই ওদের তিন বান্ধবীর ভীষন খাতির।তবে তিন বান্ধবীর মধ্যে ফাতিহার প্রভাব ই সবচেয়ে বেশি।ওর মধ্যে কেমন জানি একটা বড় বড় ভাব আছে। আর ওকে কেন জানি সবাই খুউব মানে!
ফাতিহা ই সবার আগে বাগানে আসলো।মাটির আর এ্যলুমুনিয়ামের ছোট ছোট হাড়ি,পাতিল,কড়াই,প্লেট গ্লাস এগুলো ই ওদের রান্নাবাটি খেলার সরন্জাম!
বাগানে এসে নির্ধারিত জায়গায় জিনিষগুলো রাখতেই ওর চোখ আটকে গেল!অবাক হয়ে ও দেখলো ছোট্ট একটা বালির ঢিবি।পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য এর একটা বই গিফট পেয়েছিলো ও ,সেখানে দেখেছিলো বিশাল মেগা সাইজের পিরামিড!তার আকৃতির মতই কিন্তু অনেক অনেক গুন ছোট এই ঢিবি তার সমস্ত মনোযোগ আকর্ষন করে আছে!খুব ভালো মতো তাকিয়ে ও খেয়াল করলো ঢিবির মুখে কিছু পিঁপড়া,আর আরো লম্বা সারি ধরে আরো কিছু পিঁপড়া ঢিবির ভিতরে ঢুকছে, ঐ পিঁপড়াগুলির মাথার উপর আছে গতকাল ওদের খেলার পর পড়ে থাকা সব পাতা গুলির ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উচ্ছিষ্ট!
ফাতিহা বুঝে নিলো ওদের প্রতিদিনের খেলার জায়গাটা এখন পিঁপড়াদের দখলে! আর এই বালির ঢিবিটা যে সে দেখছে তা পিঁপড়াদের ঘর!কিন্তু পাতা দিয়ে কি করবে ওরা?ঠিক এসময় ও বাকি দুই বান্ধবী হুড়মুড় করে এসে উপস্হিত!ফাতিহা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলো ওদের কাউকেই কিছুই বলবে না।চট করে বললো -
ফাতিহা- আজ আমরা অন্য জায়গায় খেলবো।
মীম- কেন ?এখানে কেন খেলবো না?
রিপা- হ্যা,তাইতো ফাতিহা, কেন খেলবো না এখানে?
ফাতিহা-সব সময় কি এক জায়গায় খেলতে ভালো লাগে?আজ কে আমরা মনে করো বাসা পাল্টাবো তাই এজন্য ই খেলার জায়গাটাও বদলে যাবে।
বাকি দুজন বলে উঠে ঠিক আছে!
আজকে যত ই খেলছিলো ফাতিহা ওর মন পড়ে ছিলো পিঁপড়া দের প্রতি!কত প্রশ্ন জমা হচ্ছে মনের মধ্যে!পিঁপড়ারা কি আমাদের মতোই রান্নাবাটি খেলছে?মীম আর রিপার মতো ওদের ও কি বান্ধবী আছে ?পিঁপড়াদের মধ্যে কোন পিঁপড়া টি ফাতিহা?ফাতিহার বড্ড জানতে ইচ্ছে করছে!আড় চোখে ও দেখে নিয়েছে পিঁপড়াদের অবস্হা নাহ ওদের দ্বারা কোন ক্ষতি হচ্ছেনা পিঁপড়াদের!
মাগরিবের আযানের সাথে সাথে ওরা উঠলো।ফাতিহা চলে আসার সময় একনজর পিঁপড়াদের দেখেছে! মনটা কিছুটা ভার আর একগুচ্ছ প্রশ্ন নিয়ে বাসায় এলো ফাতিহা।
ফাতিহার বড় আপু ফাতিমা,বোনের সাথে ফাতিহার অনেক খাতির ।ফাতিহা ঠিক করলো আপুর নামায আর কোরআন তিলাওয়াত শেষ হলেই ও আজকের সব ঘটনা খুলে বলবে ।তার আগে ফাতিহাকে ও আপুর সাথে নামাজ পড়তে হবে!
দুই বোনের নামাজ পড়া শেষ হতেই মা এলেন।
মা- ফাতিহা আজ তুমি ক্লাস হোম ওয়ার্ক আম্মুর কাছে করবে ঠিক আছে?
(অবাক হয়ে )ফাতিহা- কেনো আম্মু?
মা- কারন ফাতিমা আপুর কাল পরিক্ষা আছে !আপুর একটু নিরিবিলি পড়াশোনা করা দরকার!
ফাতিহা স্কুল ব্যাগ নিয়ে আম্মুর কাছে আসে।ওর ভিতর প্রশ্ন গুলো যেন উশখুশ করছে!তারমানে রাতে ঘুমানোর আগে ছাড়া আর আপুর সাথে কথা বলা যাবে না!
উপযুক্ত সময় আসতেই ফাতিহা আপুর কাছে গড়গড় করে আজকের সমস্ত কথা গুলো বলে।সব শুনে
ফাতিমা-তুমি এতো অবাক হচ্ছো কেন ?আগে কখনো পিঁপড়া দেখোনি?
ফাতিহা- দেখেছি কিন্তু এভাবে দেখিনি!ওরা মনে হয় আমাকে পছন্দ করেছে তাই আমাদের খেলার জায়গায় এসেছে খেলতে!
ফাতিমা (হেসে)-না আপু না!পিঁপড়ারা তোমাদের মতো খেলতে আসেনি,ওরা বসবাস করার জন্য ই এসেছে,আমাদের মতো।দেখোনা আমরা সবাই আব্বু আম্মু তুমি আমি পরিবারের সকলে এই বাসায় থাকছি,খাচ্ছি,ঘুমাচ্ছি!পিঁপড়ারাও আমাদের মতো পরিবারভুক্ত কিন্তু ওদের পরিবার আমাদের মতো এত ছোট না অনেক অনেক পিঁপড়া নিয়ে ওদের পরিবার।
ফাতিহা(বিষ্মিত কন্ঠে)-তাহলে এতো পিঁপড়া কিভাবে ঐ ছোট ঘরে থাকবে?
ফাতিমা- আমাদের দেখতে মনে হয় ছোট ঘর,ওদের জন্য ঠিক আছে।আর দেখোনা পিঁপড়ারা কতো ছোট্ট,ওদের ছোট্ট ঘরেই হয়ে যায়!
ফাতিমা বলতে থাকে,জানো পিঁপড়াদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখার আছে,যেমন পিঁপড়ারা খুব দক্ষ আর পরিশ্রমী সবসময় মিলেমিশে কাজ করে!কেউ খাবার তৈরী করে,কেউ বাসা বানায়,কেউ বাসা পাহারা দেয়!
ফাতিহা-বাসা পাহারা দিতে হয় কেন?
ফাতিমা-বারে!পাহারা দিতে হবেনা?আমাদের বাসায় কি আমরা সবাইকেই দরজা খুলে দেই?আগে জিগ্গেষ করি কে?পরিচিত হলে খুলি। তেমনি পিঁপড়ারা পাহারা দেয় যেন কোন অজানা শত্রু এসে সমস্যা না করে।
ফাতিহা-ওরা সারাদিন পাহারা দিয়ে ক্লান্ত হয়ে যায় না?
ফাতিমা-পিঁপড়ারা সব কাজ ছোট ছোট দলে ভাগ ভাগ হয়ে কাজ করে,আর ওরা খুব আনন্দের সাথেই কাজ করে কারন তারা জানে কতো দায়িত্ববান কাজ তারা করছে,তাদের এই কস্টের ফলেই তো বাকি পিঁপড়ারা নিরাপদে থাকতে পারছে। পিঁপড়ারা নিজের থেকেও ওদের পরিবারের সবার ভালো থাকাতেই খুশি হয়।
ফাতিহা- আচ্ছা পিঁপড়ারা তাহলে কিভাবে বুঝে কোন পিঁপড়া ওদের শত্রু?সব পিঁপড়াইতো দেখতে ওদের মতো?
ফাতিমা- তুমি দেখবে পিঁপড়ার মাথার পাশে ওদের শূর এর মতো টিভির এ্যান্টেনার মতো আছে,তা দিয়ে ওরা অন্য পিঁপড়ার গন্ধ শুনে বা টাচ করেই বুঝতে পারে কোনটা শত্রু পিঁপড়া আর কোনটা ওদের দলের পিঁপড়া।
ফাতিহা- আপু ওরা বাসা কিভাবে বানায়?কে শিখিয়ে দিলো ওদের?
ফাতিমা- পিঁপড়াদের মধ্যেই কিছু আছে যারা বাসা তৈরী করে,ওদের কেউ শিখিয়ে দেয়নি ওরা নিজেরা মিলেই শিখে নিয়েছে কিভাবে ওদের বাসা বানাতে হয়।আসলে কি জানো, আচ্ছা বলতো আমাদের কে
সৃস্টি করেছেন?
ফাতিহা- আল্লাহ আমাদের সৃস্টি করেছেন।
ফাতিমা- পৃথিবীর সমস্ত কিছুর সৃস্টিকর্তাই আল্লাহ।পিঁপড়াদের ও আল্লাহ সৃস্টি করেছেন,আল্লাহ পিঁপড়াদের শিখিয়ে দিয়েছেন কোন কাজ কিভাবে করতে হয়,পিঁপড়ারা ঠিক সেভাবেই কাজ করে।জন্মগত ভাবেই পিঁপড়াদের আল্লাহ এ দক্ষতা দান করেছেন। আচ্ছা অনেক হয়েছে চলো এবার ঘুমের দোয়া পড়ে আমরা ঘুমিয়ে যাই।
ফাতিহা - হুম ঠিক আছে।ফাতিহার মাথায় এই নতুন সব অজানা তথ্য গুলি ভাবিয়ে তুললেও অদ্ভুত ভালো লাগাছিলো।কখনই পিঁপড়াদের নিয়ে ও এতো কিছু জানে নি,চিন্তা ও করেনি ওদের জীবন সম্পর্কে।পিঁপড়ারা কতো পরিশ্রমী আর দক্ষ,সবাই মিলে কাজ করে,সবাই কে ভালোবাসে।আল্লাহই পিঁপড়াদের সৃস্টি করেছেন,আল্লাহ ওদের সব শিখিয়ে দিয়েছেন !আল্লাহ'র শক্তি আর শ্রেস্ঠত্ব নিয়ে ভাবলো ফাতিহা।আসলেই আল্লাহ মহান!মনে মনে ঠিক করলো এখন থেকে নিয়মিত নামাজ পড়বে আর কোরআন পড়বে,আর আম্মুকে মনে করিয়ে দিতে হবে না!!
কাল সকালে পিঁপড়া বন্ধুদের সাথে দেখা করে তবেই স্কুলে যাবে ফাতিহা ।মীম, রিপা কে খুব তাড়াতাড়ি এই সংবাদগুলি জানিয়ে দিতে হবে!আগামী কালের নতুন ভোরের অপেক্ষায় ফাতিহা দু চোখ বুজে ঘুমের অতল গহবরে তলিয়ে যায়!!!
বিষয়: বিবিধ
১৪১৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন