একটি হাতুড়ি এবং আমাদের জীবনের লক্ষ্য.........
লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া মুকিম ২১ এপ্রিল, ২০১৫, ০৯:৫২:২১ রাত
"তোমার জীবনের লক্ষ্য" এই রচনা লিখে বিদ্যাপীঠ অতিক্রম করে এসেছি তাও আজ বহু বছর গত হয়েছে! গত বছর মেয়েকে দেখেছি এই রচনা লিখতে! সে অবশ্য আমার মতোন নোট মুখস্থ করে রচনা লিখে নি! বলাবাহুল্য এখানে মুখস্থ বিদ্যার রচনা অচল!
কন্যার রচনা লিখার পিছনে যে মহৎ কারন ছিলো সেটি হলো, এখানে সপ্তম শ্রেনী থেকেই ক্যারিয়ার গঠনের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় কোর্স এবং অভিজ্ঞতা সরবরাহ করা হয়। স্টুডেন্ট তার পড়াশোনার সাবজেক্ট পছন্দ করে, কোন পেশায় সে নিজেকে দেখতে চায় সে অনুযায়ী সে রচনা লিখে! সেই রচনাকে বিশেষ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেন শিক্ষকমন্ডলী। ক্লাস এইট থেকে শুরু হয় চূড়ান্ত নির্বাচন! বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আগত শিক্ষকগন এবং অভিজ্ঞ ক্যারিয়ার স্পেশালিষ্ট গন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে বেশ কয়েকটি গ্রুপ তৈরি করা হয়! তারপর ধাপে ধাপে আলোচনা করা হয় দেশের পরিস্থিতি সহ,বর্তমান বিশ্বের অবস্থা,যুগের চাহিদা , পড়াশোনার পিছনে ব্যয়িত সময় -শ্রম এবং সাবজেক্ট পড়তে গেলে সুবিধা ও সীমাবদ্ধতার কথা ! এর আলোকে স্টুডেন্ট নিজের পছন্দমতোন স্কুল নির্বাচন করে, পছন্দের সাবজেক্টে ভর্তি হয়! শুরু হয় জীবনের লক্ষ্য পানে ছুটে চলা....
স্টুডেন্টদের সাথে কিছু কোর্সে অভিভাবকদেরকেও সুযোগ দেয়া হয়। সে সুবাদে আমিও কয়েকটি প্রোগ্রামে অংশ গ্রহন করেছিলাম। যখন বাসায় ফিরতাম নিজেই ভেবে ভেবে কূল হারিয়ে ফেলতাম! অনেকবার মনে হয়েছে, এই বয়সের একটা বাচ্চা কি আদৌ বোঝে ভবিষ্যতে সে নিজেকে কিভাবে দেখতে চায়? এটা নিয়েও আমি কথা বলেছিলাম টিচারের সাথে! উনি আমাকে আশ্বস্থ করে বলেছিলেন, গবেষনায় দেখা গেছে বেশিরভাগ বাচ্চারাই সক্ষম হয়েছে বা কাছাকাছি গিয়েছি তাদের লক্ষ্য অর্জনে! কিছু বাচ্চাদের ডিসিশন সঠিক ছিল না পরে তারা পরিবর্তন করে নেয় সিদ্ধান্ত ও পড়াশোনার বিষয়! সেখানেও কোন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় না বাচ্চাদের! গ্রুপের কাজ হচ্ছে বাচ্চাদের কাছে জীবন সম্পর্কে সঠিক ভিউ তুলে ধরা!
কোর্সগুলোতে অংশ নিয়ে পড়াশোনার সঠিক বিষয় নির্ধারনে যথেস্ট উপকার সাধিত হয়েছে শুধু তাই নয় খুব প্রয়োজনীয় একটি বিষয় আমার অন্তর্চক্ষুকে উন্মোচিত করতে সাহায্য করেছে!
যেহেতু এরা উন্নত দেশ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে এরা এগিয়ে আছে, এরা খুবি পরিকল্পিত এবং বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে বাচ্চাদের সাথে কাজ করে। এই দেশ আগে থেকেই এদের নাগরিকদের সঠিক ভিশন তৈরি করতে প্রয়োজনীয় সব উপকরনগুলো দিয়ে দেয়। সেই নকশায় ক্ষুদে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ধীরে ধীরে দৃঢ়তার সাথে এগিয়ে যায় লক্ষ্য অর্জনে...
অতিবাহিত করা দিনগুলোতে ছিলাম প্রচন্ড রকম আত্নমগ্ন! একটা নিরবিচ্ছিন্ন চিন্তার জাল আমার মষ্তিষ্ককে সবসময় আচ্ছন্ন করে রাখতো! প্রথমবার বুঝতে পারলাম সন্তানের মা হওয়া অনেকটা সহজ কিন্তু সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করা অনেক কঠিন। আমি এতটাই পেরেশান ছিলাম আমার পতিজ্বি ,আমার স্বজনরা আমাকে সতর্কবানী শোনাতেন যে, এতো পেরেশানীর কিছু হয় নি!
একদিন সন্ধায় পারিবারিক তালিমে ছিলাম আমরা! সবার সাথে স্কুলের এই ক্যারিয়ার গঠনের সিস্টেমটা আলোচনা করে ওদের বলতে বললাম, এখান থেকে মুসলিম হিসেবে আমাদের কি শিক্ষনীয় আছে?
ছোট পুত্র জবাব দিয়েছিলো - মুসলিমদের ভেবেচিন্তে স্কুল নির্বাচন করতে হবে! ওর ছোট কথাটিতেও আমার খুশি হয়েছিলাম কিন্তু আমার মূল লক্ষ্য ছিলো আমার মেয়েকে ঘিরে! সে বলেছিলো- মুসলিমকে ডিটারমাইন্ড হতে হবে লক্ষ অর্জনে ,হতাশ হওয়া যাবে না এবং সিদ্ধান্ত নেয়ার পর আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে সফল হওয়ার জন্য! কন্যার কথাটিও যথেস্ট গ্রহনযোগ্য।সবার উদ্দেশ্যে একটা গল্প শেয়ার করলাম-
অনেক কাল আগে যখন প্রথমবার হাতুড়ি তৈরি করা হলো, তখন হাতুড়ি বেজায় খুশি! উজ্জল কাঠের চকচকে হাতল এবং ধাতব লোহার সাহায্যে তৈরি হাতুড়ি সৃষ্টির আনন্দে আনন্দিত! হাতুড়ির মালিক হাতুড়িটিকে টুলবক্সে রেখে দিলেন। হাতুড়ি সেখানে আটকে পড়ে কিছুটা দুঃখিত হলো এবং আনমনে ভাবতে লাগলো, নিশ্চয় আমাকে কোন বিশেষ কাজের উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করা হয়েছে তবে আমাকে কেনো আটকে রাখা হলো? সে প্রহর গুনতে লাগলো কবে সে সৃস্টির উদ্দেশ্য সাধন করতে পারবে!
কিছুদিন পর সেই মালিকের বাড়ির সমানের একটি গাছ ভেংগে গেলো, এর কিছু ডাল পালা সবাইক একষ্ট দিচ্ছিলো। মালিক টুল বক্স থেকে হাতুড়ি বের করলো এবং কিছু ডালপালা সেই হাতুড়ির সাহায্যে সরিয়ে দিলেন।
হাতুড়ি কিছুটা খুশি হলো, কিন্তু তার আপনমনেই ভাবনা উদয় হলো- সে আজ কিছু কাজ করেছে কিন্তু ঠিক এই কাজটার জন্যই মনে হয় তাকে সৃষ্টি করা হয়নি! সে আবারো বাক্সবন্দি হয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো কবে সঠিক কাজটি সম্পাদনের আশায়!
মালিকের বাসার চেয়াররের পায়া ঢিলা হয়ে গেলে, আবারো হাতুড়ির আগমন ঘটলো। হাতুড়ি এবার চেয়ারের ঠিলা পায়া শক্ত করে দিলো। প্রথমবারের তুলনায় হাতুড়ি এবার একটু বেশি খুশি ! তারমনে হলো এবার সে অনেকটাই তার সৃষ্টির উদ্দেশ্য সফল করতে পেরেছে! আবারো হাতুড়ি বাক্সবন্দী হয়ে প্রকৃত সৃষ্টির সফলতা খুঁজতে লাগলো!
এবার মালিক একটি টেবিল তৈরির মনস্থির করলেন। প্রয়োজনীয় কাঠ, পেরেক, হাতুড়ি নিয়ে কাজ শুরু করলেন। যখনি কাঠে পেরক গেঁথে হাতুড়ি মারলেন তখন হাতুড়ি আর পেরেকের একটা সূক্ষ স্ফুলিংগ বের হলো! হাতুড়ি প্রথমবার আনন্দের সাথে উপলব্ধি করতে পারলো কি সেই উদ্দেশ্য যার জন্য হাতুড়ির জন্ম! পেরেকের সাহায্যে সঠিকভাবে গেঁথে কোন অবকাঠামো তৈরি করা হলো হাতুড়ি সৃষ্টির উদ্দেশ্য! হাতুড়ি তাঁর সৃষ্টির প্রকৃত উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে পরামানন্দিত হলো!
হাতুড়ির উপমা হলেও গল্পটির মাঝে রয়েছে চমৎকার একটি শিক্ষা । জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য জানার শিক্ষা।
একি ভাবে মানুষকেও জানতে হবে কি কারনে সৃষ্টি করা হয়েছে তাঁকে? কি সেই মহান লক্ষ্য? এবং কিভাবে সৃষ্টির এই উদ্দেশ্য সফল হবে?
কোরআনে সুরা যারিয়াতের -৫৬ আয়াতে আল্লাহ বলেন- জ্বিন ও মানুষদের আমি সৃষ্টি করেছি এজন্য যে, তারা শুধুমাত্র আমারই ইবাদত করবে । সুতরাং মানুষ সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর ইবাদত করা! এই মূল কথাটি আমাদের প্রত্যেক মুসলিমকে ভালো করে স্মরনে রাখতে হবে। এই উদ্দেশ্য সঠিক ভাবে সফল করার জন্য কাজ করতে হবে।
বলেছিলাম, একজন স্টুডেন্ট সে জানে তার কাজ মনোযোগের সাথে পড়াশোনা করা, প্রতিটি সাবজেক্টে উত্তীর্ন হওয়া, এক ক্লাস থেকে আরেক ক্লাসে সন্মানের সাথে অতিক্রম করা। তেমনি একজন মুসলিমকেও মনোযোগের সাথে ইবাদত করতে হবে, আল্লাহর নির্দেশগুলো জানতে হবে এবং মেনে চলতে হবে। ব্যক্তি সকালে ঘুম থেকে ওঠা নিয়ে আবার ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আল্লাহর সমস্ত বিধানগুলো গুলো নিজ জীবনে বাস্তবায়ন করতে থাকে তখন সে আদর্শ মুসলিমে পরিনত হয়।সুতরাং একজন আদর্শ মুসলিম হওয়াই আমাদের জীবনের মূল লক্ষ্য । আদর্শ মুসলিম হিসেবে বেঁচে থাকা এবং নিজ জীবনে আল্লাহর প্রতিটি আদেশ - নিষেধ মেনে চলেই আমরা আমাদের সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য এটার সঠিক ভিউ জানা থাকলে এবং মেনে চললেই সৃষ্টির সঠিক উদ্দেশ্য সফল করতে পারব ইনশা আল্লাহ!
বিষয়: বিবিধ
১৪৩০ বার পঠিত, ৪৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
চমৎকার লিখাটি অনেক হৃদয়গ্রাহী এবং শিক্ষণীয়। জাজাকাল্লাহু খাইর।
ঘটনাটি অনেক আগের তারপরেও লিখেছি, সেদিন ইয়ং মেয়েদের প্রোগ্রমে ঘটনাটি বলেছিলাম আবার মনে পড়ে গেলো! এভাবেই লিখা!
আপনার অনুপ্রেরনা আমার লিখার পথ কে কুসুমাস্তীর্ন করবে ইনশা আল্লাহ!
বারাকাল্লাহু ফিক!
হাতুড়ির ব্যবহারে জনগন সচেতন হইবেন এবং যথাযথ লক্ষ্য পূরনে সচেষ্ট হইবেন আশাকরি!
চমৎকার মন্তব্যটি বোনের মনে অনেক আশার সন্চারন ঘটিয়ে দিয়ে দিলো আলহামদুলিললাহ!
দোআ করবেন আামাদের জন্য আমরা সবাই যেনি ইসলামী শিক্ষার ছা্যাতলে থাকতে পারি!
বারাকাল্লাহু ফিক|!
বাচ্চাদের বোঝানোর জন্য গল্পের সাহায্য নেয়া খুব কার্যকর একটি পন্থা! হাতুড়ির এই গল্পটি আমি প্রায় স্মরন করি এবং উপদেশ হিসেবে গ্রহন করি যে, মানুষ হিসেবে আমি যেন জানি এবং পালন করি আমার জীবনের মূল লক্ষ্য মুসলিম হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করা!
চমৎকার মন্তব্যের মাধ্যমে বোনকে অনুপ্রানিত করার জন্য শুকরিয়া!জাযাকাল্লাহু খাইর!
আপনার মন্তব্য আমাকে সবসময় অনুপ্রেরনা যোগায়! আল্লাহ আপনাকে ভালো ও সুস্থ রাখুন! বারাকাল্লাহু ফিক!
আল্লাহ আমাদের সবাইকে মুসলিম জীবনের লক্ষ্য অর্জনে সঠিক ভাবে পথ চলার তৌফিক দান করুন!
জ্বী খাম্মুণি.. পড়েছি এখন। অনেক সুন্দর শিক্ষনীয় পোস্ট। দুই জনকেই থ্যাংক্স
রব্বি জিদনী ইলমা বেশি বেশি পড়ুন! হাত, পা, চোখ, নফসকে আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে রাখুন!
আল্লাহ আপনাকে ভালো ও সুস্থ রাখুন ।আল্লাহ আমাদের সবাইকে মুসলিম জীবনের লক্ষ্য অর্জনে সঠিক ভাবে পথ চলার তৌফিক দান করুন!
আমাদের মধ্যে কিন্তু জিবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ধারনা একটাই একটা উচ্চতর ডিগ্রি আর বেশি বেতন ও কম পরিশ্রম এর চাকরি!!
আপনার মন্তব্য এবং আগমনে আনন্দিত হলাম!
সঠিক কথা বলেছেন আপনি! এই ভুল সম্পর্কে জানা থেকে বেরিয়া আসতে হবে আমাদের! জাযাকাল্লাহু খাইর!
আপু আমার জন্য দুয়া করবেন বেশী করে ।
তোমার চমৎকার নেক ইচ্ছার কথা শুনে অনেক ভালো লাগলো! আল্লাহ চাহে তো ইনশা আল্লাহ পূরন হবে!
অনেক অনেক অনেক নেক দোআ রইলো আফরাআপুর জন্য! জাযাকিল্লাহু খাইর!
জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা জরুরী। আর বিষয়টি যেসব উদাহরনের মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন তা অতি যুক্তিযুক্ত। একটি হাতুড়ির যেমন তার নিজের জন্যে নির্ধারিত কাজ রয়েছে। মানুষেরও তেমনি কাজ নির্ধারিত হয়েছে। আর এর জন্যে উত্তম মজুরীও রয়েছে। বুদ্ধিমানরাই তা গ্রহন করে
অবশেষে স্লেভ ভাইয়ার দেখা মিললো!
বিশাল লম্বা মন্তব্য দেখে আগডুম বাগডুম হচ্ছিলাম পড়তে গিয়ে দেখি অর্ধেক আমার লিখা! বাকি অর্ধেকের জন্য জাযাকাল্লাহু খাইর !
একটি হাতুড়ির যেমন তার নিজের জন্যে নির্ধারিত কাজ রয়েছে। মানুষেরও তেমনি কাজ নির্ধারিত হয়েছে। আর এর জন্যে উত্তম মজুরীও রয়েছে। বুদ্ধিমানরাই তা গ্রহন করে দারুন লাগলো!
আল্লাহ আপনাকে বুদ্ধিমানের তালিকায় রাখুন!
একটি হাতুড়ির যেমন তার নিজের জন্যে নির্ধারিত কাজ রয়েছে। মানুষেরও তেমনি কাজ নির্ধারিত হয়েছে। আর এর জন্যে উত্তম মজুরীও রয়েছে। বুদ্ধিমানরাই তা গ্রহন করে
দোআ করবেন আমাদের জন্য! জাযাকাল্লাহু খাইর
জীবন থেকে ২৪টি বছর গত হয়ে গেলো ২৫ এ পা দিয়েছি আলহামদুলিল্লাহ।
তবে যেটা আশ্চর্য সেটা হলো গতকাল পর্যন্ত আমার জীবনের লক্ষ্যটা খোঁজ করছি! আমি বোঝাতে চাচ্ছি যে, সিক্স বা সেভেন বা এখন জীবনের রিজিক এর পথে কোন মাধ্যম বা লক্ষ্য বানাবো!? আমাদের দেশের শিক্ষাব্যাবস্থা কতটা নাজুক তা আমাদের থেকে আপনি ভালো জানবেন আপু। এই একটু আগে সহকর্মিদের সাথে এ ব্যাপারে আলোচনা করলাম। আসলে জীবনের কোন গতিপথ ফিক্সড করতে পারছিনা! দোদুল্যমান অবস্থা আর চোখে অন্ধকার। মহান রব্বুল কারীম সহজ ব্যাবস্থা করে দিন। আমিন।
তবে এটা নিয়ত করেছি আমি,
যে কাজই করিনা কেনো সেটা যেনো হালাল হয়। হারাম পথে না হয়। আর রিজিকের জন্য যে কোন হালাল কাজ অবলম্বন করা আর রব্বুল কারীমের সন্তুষ্টির তালাশ করা।
সত্যিই উদ্দেশ্যকে ভুলে যাই বলে কত গুণাহ আমাদের কিন্তু যাদের উদ্দেশ্য নেক আল্লাহ তাদেরকে উদ্দেশ্য পূরণের তৌফিক দান করেন।
অথবা অনেকের স্বপ্ন পূরেণর পূর্বেই মাটিচাপা পড়ে কিন্তু তার স্বপ্ন থেমে থাকেনা সেটা হয় বহমান।
নিচের ঘটনাটি দেখুনঃ
ইতিহাসের শিক্ষা:২৪
বিয়ের উদ্দেশ্য - শাইখ আতিকউল্লাহ আতিক
এক: নাজমুদ্দীন আইয়ুব (রহ.)। সুলতান সালাহুদ্দীন আইয়ুবীর (রা.) পিতা। তার হাতে তিকরীতের শাসনভারের গুরুদায়িত্ব। কিন্তু বিয়ের বয়েস পেরিয়ে যাচ্ছে, তবুও বিয়ের নামগন্ধ নেই।
এটা দেখে ভাই আসাদুদ্দীন শিরকূহ চিন্তিত হয়ে পড়লেন:
-কিরে বিয়ে থা করবে না?
-আমার মনমতো পাত্রী পাচ্ছি না তো।
-আমি পাত্রী দেখবো তোমার জন্যে?
-পাত্রীটা কে শুনি?
-মালিক শাহের মেয়ে অথবা নিযামুল মুলকের মেয়ে?
-নাহ, তারা আমার কাঙ্খিত পাত্রী নয়।
-তোমার কাঙ্খিত পাত্রীর বৈশিষ্ট্য কী বলো তো শুনি!
-আমি চাই একজন সুশীলা স্ত্রী, যে আমার হাত ধরে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাবে। যে আমাকে একটি নেক সন্তান উপহার দিবে। সে সন্তানকে যথাযথ লালন-পালন করে বড় করবে। বড় হয়ে সে ছেলে হবে একজন দুর্দান্ত ঘোড়সওয়ার, সাহসী মুজাহিদ। আরও বড় হয়ে যে মুসলমানদের জন্যে বায়তুল মুকাদ্দাস ফিরিয়ে আনবে।
দুই: দুই ভাইয়ে যখন কথা হচ্ছিল, তারা ছিলেন তিকরীতে, যেরুযালেম থেকে অনেক অনেক দূরে। বায়তুল মুকাদ্দাস ছিল ক্রুশেডারদের হাতে। কিন্তু নাজমুদ্দীনের তনুমন পড়ে ছিল আল আকসার পানে। এমনকি নিজের বিয়েটা পর্যন্ত স্বপ্নের সাথে জড়িয়ে ফেলেছিলেন।
*** আসাদুদ্দীন ভাইয়ের কথায় আশ্বস্ত হতে পারলেন না:
-তুমি যেমন কনের আশায় বসে আছ, ইহজীবনে পাবে কিনা আমার ঘোরতর সন্দেহ আছে।
-যে ইখলাসের সাথে আল্লাহকে রাযি করার জন্যে কোনও নিয়্যাত করে, আল্লাহ তাকে তা দিয়ে দেন।
*** উক্ত ঘটনার কয়েক দিন পর, নাজমুদ্দীন তিকরীতেরই এক শায়খের মজলিসে বসে আছেন। তার সাথে কথা বলছেন। এমন সময় এক যুবতী এসে পর্দার আড়াল থেকে শায়খকে সালাম দিল। শায়খ সালামের উত্তর দিয়ে বললেন:
-তোমার জন্যে যে পাত্রটা পাঠিয়েছিলাম, তাকে তোমরা ফিরিয়ে দিলে কেন? কে কম কিসে?
-শায়খ! আপনার পাঠানো পাত্র জ্ঞানে-গরিমায় কোনও অংশে ফেলনা নয়। রূপে-গুণে-পদে-অর্থেও বাছার মতো নয়।
-তাহলে ফেরত দিলে কেন?
-শায়খ! এই পাত্রের মধ্যে আমার কাঙ্খিত বৈশিষ্ট্য নেই।
-তুমি কেমন পাত্র চাও?
- আমি চাই একজন নেককার পাত্র, যে আমার হাত ধরে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাবে। যে আমাকে একটি নেক সন্তান উপহার দিবে। সে সন্তানকে যথাযথ লালন-পালন করে বড় করবে। বড় হয়ে সে ছেলে হবে একজন দুর্দান্ত ঘোড়সওয়ার, সাহসী মুজাহিদ। আরও বড় হয়ে যে মুসলমানদের জন্যে বায়তুল মুকাদ্দাস ফিরিয়ে আনবে।
*** নাজমুদ্দীন অবাক হয়ে দুজনের কথোপকথন শুনছিলেন। মেয়েটার শেষ কথা শুনে তিনি একেবারে বাক্যহারা হয়ে গেলেন। দুইজন অপরিচিত মানুষের কথা এমন অক্ষরে অক্ষরে মিলে যায় কী করে? তিনি ভাবনার অতলে হারিয়ে গিয়েছিলেন। হঠাৎ সম্বিত ফিরে পেয়েই বলে উঠলেন:
-শায়খ! আমি এই পূণ্যবতী মানুষটাকে বিয়ে করতে চাই।
-নাহ, তা কী করে সম্ভব! এই মেয়ে আমাদের মহল্লার সবচেয়ে গরীব ঘরের সন্তান। তুমি হলে আমাদের ওয়ালী!
*** নাজমুদ্দীন শায়খকে সব কথা খুলে বললেন। শায়খ সব শুনে অজান্তেই একটা আয়াত তিলাওয়াত করলেন:
-তাঁর (আল্লাহর) অন্যতম একটা নিদর্শন হলো, তিনি তোমাদের জন্যে, তোমাদের থেকেই স্ত্রীদেরকে সৃষ্টি করেছেন। যেন তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি লাভ করতে পারো।
*** দুইজন মহৎপ্রাণ যুবক-যুবতীর বিয়ে হয়ে গেল। আল্লাহ তা‘আলা তাদের ইখলাস ও নিয়্যাতের বরকতে তাদেরকে দান করলেন:
= গাজী সালাহুদ্দীন আইয়ুবীকে (রহ.)।
তিন: আমাদের বিয়ের উদ্দেশ্য কী হয়? আমরা কেন বিয়ে করি? আমাদের সন্তান জন্মদানের পেছনে কী নিয়্যাত থাকে?
*** আসুন না, আমাদের বিয়ে ও সন্তান জন্মদান আরেকজন সালাহুদ্দীনের জন্যে হোক!
*** মসজিদে আকসা আজ কাঁদছে। ইহুদিরা নিচ দিয়ে মাটি খুঁড়ে মাযলুম মসজিদকে ধ্বসিয়ে ফেলার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। কেউ কি আছেন?
= আমি লাব্বাইক!
আর আমি কি করি? সর্বোচ্চ দ্বীনদার একটি পাত্রি তালাশ করি, যাতে দুনিয়াতে সুখে থাকতে পারি আর আখিরাতে কামিয়াব হতে পারি। কিন্তু ভালোর মধ্যেওতো একটা স্তর আছে। এটা ভালো ঠিক যেমন যেমন রুপা মূল্যবান, কিন্তু স্বর্ণ আরো মূল্যবান তার থেকেও মূল্যবান হীরা। আমার নিয়ত থাকে ঐ রূপা থেকেও নিম্নস্তরের! আল্লাহ আমাদের বড় বড় নিয়ত করার তৌফিক দান করুন। আমীন।
এরকম সবযায়গায় সবকাজে আমার নিয়ত এমন ছোট!
কিন্তু আল্লাহপাক আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে প্রেরন করেছেন।
আর এটার কারন এই যে আমরা সৎকাজে আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ করবো।
তথা দ্বীনের সম্পূর্ণ জিম্মাদারি পালন করবো।
একঃ নিয়ত সর্বোচ্চ হওয়া চাই।
দুইঃ এর সাথে সর্বোচ্চ চেষ্টা। দ্বীনের মেহনতের জিম্মাদারী পৌছে দেয়া
তিনঃ দোয়া করা।
মহান রব্বুল কারীম ইব্রাহীম (আলাইহিমুসসালাম) এর দোয়ার বরকতে হুজুর (সল্লাল্ল-হু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে ইব্রাহীম (আলাইহিমুসসালামের) এর বংশ থেকে প্রেরন করেছেন।
বাট এখনতো আমরা নিয়ত করার হিম্মতই করতে পারিনা।
চেষ্টা আর দোয়াতো পরে হবে....ইয়া রব্ব আমাদেরকে বড় বড় নিয়ত, চেষ্টা এবং দোয়া করার তৌফিক দান করুন।
আমিন...
হাতুড়ি তার উদ্দেশ্য পূরণের জন্য যেমন অপেক্ষমান থাকে আমাদের কিন্তু আমাদের উদ্দেশ্য পূরনের জন্য শুধু ওই বাক্সের ভিতরে অপেক্ষমান থাকলে চলবেনা বরং উদ্দেশ্যপূরনের সকল উপলক্ষ্য সঠিক ভাবে তৈরি করতে হবে।
সবচেয়ে বড় যেটা সেটা হলো পাহাড় পরিমান ইমানের হিম্মত নিয়ে দাড়াতে হবে.....
কি হিম্মত হবেতো???????
এ লিখাটি সম্পূর্ণ পড়ার অনুরোধ রইলো " http://www.alkawsar.com/author/mawlana-abu-taher-meshah "
-তুরস্ক তুর্কিস্তানের সন্ধানে।
পড়তে পড়তে ভালোলাগায় সিক্ত হলো অন্তর, জেগে উঠলো ঈমানের দাবী! সুবহানাল্লাহ! কত সুন্দর করে চিন্তা করেছিলেন উনারা! কত পরিচ্ছন্ন নিয়ত এবং সুদৃঢ় ইরাদা!
চমৎকার কথোপথনটির সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছো, কি বলে ধন্যবাদ দিব তোমাকে ? জাযাকাল্লাহু খাইর!
খুব খুব ভালো লাগলো তোমার চিন্তাভাবনার সাথে পরিচিত হতে পেরে! আলহামদুলিল্লাহ! আমার লিখা সার্থক মনে করি, আমার লিখার চাইতেও হাজার গুন চমৎকার তোমার মন্তব্যখানি! এটা তুমি একটা ছোট পোস্ট আকারে দিয়ে দাও ভাই! সবাই উপকৃত হবে ইনশা আল্লাহ!
আল্লাহ তোমার সমস্ত কল্যানাকাংখাঘুলো পূরন করুন! দুনিয়া ও আখিরাতে কামিয়াবি দান করুন! আমিন!
সূর্য - আশাকরি তুমিও পড়েছো!
মন্তব্য করতে লগইন করুন