জুমু'আর নসীহা
লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া মুকিম ১০ এপ্রিল, ২০১৫, ১০:৫১:০৯ রাত
আউযুবিল্লাহিমিনাশ্শাইতনির রজীম, বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম!
মানুষকে আল্লাহ সৃষ্টির সেরা জীব- আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে সৃষ্টি করেছেন।সৃষ্টির মাঝে মানুষকে আল্লাহ্ সৃষ্টি করেছেন সর্বাপেক্ষা সুন্দরতম গঠনে, শুধু শারীরিক নয় মানসিক গঠনেও। জন্মলগ্নে মানুষ পূত পবিত্র আত্মা নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে থাকে। মানুষের কর্তব্য হচ্ছে আত্মার সেই পবিত্রতা রক্ষা করা ।
আল্লাহ্ মানুষকে সীমিত স্বাধীন ইচছাশক্তি দান করেছেন। আরও দান করেছেন বুদ্ধি,বিবেক, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা। একমাত্র মানুষই পারে ন্যায় ও অন্যায়ের মধ্যে, সত্য ও মিথ্যার মধ্যে এবং ভালো ও মন্দের মধ্যে পার্থক্য করতে। মানুষের এই বিশেষ ক্ষমতার জন্যই মানুষ সুসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রাণী।
আল্লাহ সবাই কে শারীরিক অবয়বে একই রকম সৃষ্টি করলেও সবাইকে একই রকম যোগ্যতা বা সামর্থ্য দেন নি! কেউ খুব বলিষ্ঠ আবার কেউ খুব ঠুনকো স্বাস্থ্যের অধিকারী!
সমাজে সবার অবস্থানও এক রকম নয়। এখানে বৈষম্য রয়েছে সম্পদের, চারিত্রিক অবস্থার এবং জ্ঞানের ! ইসলাম এই বৈষম্যকে ভেংগে সব মুসলিম ভাইকে ইসলামী সৌন্দর্যের এক কাতারে দেখার আহবান জানায়!
এক জন মুসলিম শুধু নিজেই ভালো থাকা , খাওয়া, পরার ব্যাপারে নিমগ্ন থাকতে পারে না, একা একা নিজে সুন্দর আমল করে যাবে না, নিজেই শুধু জ্ঞানের আলোয় আলোকিত থাকবে এটা নয় বরং একজন মুসলিমের দায়িত্ব হলো, তার পাশে যদি কেউ অভাব গ্রস্থ থাকে তাঁর অভাব দূর করতে সাহায্য করবে, যে ঋণগ্রস্হ তাকে ঋণ পরিশোধে সাহায্য করবে, যার ইসলামী জ্ঞানের দৈন্যতা / অভাব আছে তাকে জ্ঞানের মাধ্যমে উপকৃত করবে, যার মাঝে ইসলামের বিপরীত কাজ আছে তাকে হিদায়তের পথে আহবানের মাধ্যমে ইসলামের মধ্যে ফিরিয়ে আনবে!
আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা: থেকে বর্ণিত, প্রিয় নবী সা: ইরশাদ করেছেন, ‘মুসলমান মুসলমানের ভাই, সে তার ওপর জুলুম করবে না এবং তাকে ধ্বংসের দিকে ফেলে দেবে না। যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের অভাবে সাহায্য করবে, আল্লাহ তায়ালা তার অভাবে সাহায্য করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দুঃখ-কষ্ট দূর করবে, আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন তার বিপদগুলোর কোনো একটি বিপদ দূর করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবে, আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন’ (বুখারি, মুসলিম ও মিশকাত শরিফ)।
পরোপকার ইসলামের একটি মৌলিক ও মহৎ গুন। ইসলাম পরোপকার করাকে উৎসাহিত করে এর শিক্ষাও নির্দেশ দেয় । আমরা কোরআনে অসংখ্য আয়াতে এবং হাদীসে মুসলিম ভাতৃত্বের সুন্দর অনুকরনীয় উদাহরন পাই। মুসলিম ব্যক্তি নিজে, পরিবার পরিজনদের, প্রতিবেশী, সমাজ, রাস্ট্র এমনকি আল্লাহর সমস্ত মাখলুককে সাধ্যানুযায়ী পরোপকার করার চেষ্টা করবে।
প্রতিবেশীর ঘরে সামান্য হাদিয়া পাঠানো, রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো, অসুস্হব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া, রোগীর সেবা করা, অনাহারী কে খাবার দেয়া, অভাবীকে সাহায্যকরা,এতিমের মাথায় হাত বুলানো ইত্যাদি অসংখ্য ব্যপারে এতো সংখ্যক চমৎকার হাদীস আছে যা ফজিলতের দিক থেকে অত্যন্ত উঁচুমানের।
মুসলিমরা এই সমাজিক পরোপকার সাধ্যনুযায়ী অবশ্যই করবে তার মধ্যে একটা দায়িত্ব এবং উপকার এমন মূল্যবান যা না করলে আমরা প্রত্যেক মুসলিম কাল কিয়ামতের ময়দানে আল্লাহর সামনে কঠিন জবাবদিহিতায় আটকে যাব! সেই মূল্যবান কাজটা হচ্ছে হিদায়াতের মাধ্যমে উপকার করা!মানুষকে ইসলামের পথে আহবান করা । একজন অমুসলিমকে মুসলিম বানানো, একজন কালিমাপাঠককে নামাযী বানানো, একজন নামাযীকে পরহেজগার বানানো, একজন পরহেজগারকে আল্লাহর প্রিয় বান্দাতে বানানোর দাওয়াত ও প্রচেস্টা সকল মুসলিমের মধ্যে অবশ্যই থাকতে হবে।
রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
(لَأَنْ يَهْدِىَ اللهُ بِِكَ رَجُلاً وَاحِداً خَيْرٌسلم فضائل الصحابة ] لَكَ مِنْ حُمْرِ النَّعَمِ) [رواه البخاري -كتاب المغازيم
আল্লাহ যদি তোমার মাধ্যমে একজন ব্যক্তিকেও হেদায়াত দান করেন, তবে ইহাই তোমার জন্য লাল উট অপেক্ষা উত্তম (বুখারী,,মুসলিম,২৪০৬)।
মুসলিমদের মধ্যে অনেকে শিরক, বিদায়াত ও বিজাতীয় সংস্কৃতির যে সয়লাব চলছে এটা থেকে আমাদের ভাইবোনদের ফিরিয়ে আনতে হবে। আর কিছু দিন পরেই আসছে ১লা বৈশাখ। আমাদের অনেক ভাইবোনরা জানেনা বা সঠিক বুঝ নেই যে, এই উৎসব ইসলাম সমর্থিত নয়, সেখানে যা করা হয়, নাচ, গান, বেপর্দা হয়ে নারী পুরুষের অবাধ মিলামেশা প্রতিটি কাজ আল্লাহ নিষেধ করে দিয়েছেন। দুঃখের সাথে বলতে হয় আমাদের মুসলিম ভাইবোনরা এই সব অনুষ্ঠানে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহন করেন টাকা পয়সা এবং উপস্হিতির মাধ্যমে ।
ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলা নববর্ষ সংক্রান্ত যাবতীয় অনুষ্ঠানে চারটি ইসলাম বিরোধী বিষয় রয়েছে :
১.শিরকপূর্ণ অনুষ্ঠানাদি,চিন্তাধারা ও সংগীত
২.নগ্নতা,অশ্লীলতা,ব্যভিচারপূর্ণ অনুষ্ঠান
৩.গান ও বাদ্যপূর্ণ অনুষ্ঠান
৪.সময় অপচয়কারী অনর্থক ও বাজে কথা , কাজ
এ অবস্থায় প্রতিটি মুসলিমের দায়িত্ব হচ্ছে নিজে এগুলো থেকে সম্পূর্ণরূপে দূরে থাকা এবং বাঙালি মুসলিম সমাজ থেকে এই প্রথা উচ্ছেদের সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো নিজ নিজ সাধ্য ও অবস্থান অনুযায়ী।
আমরা ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেকে আমাদের বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন, সহপাঠী, সহকর্মী ও পরিবারের মানুষকে উপদেশ দিতে পারি এবং নববর্ষ পালনের সাথে কোনভাবে সম্পৃক্ত হওয়া থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করে যেতে পারি ইনশা আল্লাহ!
আমরা যারা জানি এই সব ইসলাম বিরোধী সংস্কৃতি ইসলামে জায়জ নয় তারপরেও কি চুপ করে থাকা উচিত হবে? আমাদের কি সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করা উচিত নয়? আল্লাহ বলেন-
إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَن تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَة وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
যারা চায় মু’মিনদের সমাজে অশ্লীলতার প্রসার ঘটুক তারা দুনিয়ায় ও আখেরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ভোগ করবে ৷ আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জানো না ৷ (নূর -১৯)
আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর সঠিক আনুগত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার তাওফীক দান করুন । আমাদেরকে সঠিকভাবে ইসলামের অনুসারী হওয়ার তৌফিক দান করুন! সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য বুঝার তৌফিক দান করুন । সৎ আমল করে আল্লাহর পছন্দনীয় বান্দাবান্দীদের কাতারে শামিল করুন! আমিন!
(আজকের জুম্মার খুতবার অংশবিশেষ)
বিষয়: বিবিধ
১১৩৬ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাজাকাল্লাহ খায়রান সুন্দর পোস্টটির জন্যে। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি আইয়ামে জাহেলীর চাইতেও ভয়াবহ। এটা একটা গজব কারন এখানে কোটি কোটি মুসলিম অন্যায়ের প্রতিবাদ করেনা,তারা তা হজম করে,ফলে আল্লাহ তাদেরকে তাদের মাধ্যমেই পর্যুদস্ত করছেন। আল্লাহ যেন আমাদের সঠিক বোধ দান করেন এবং সকল ধরনের অনাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াবার মনোবল দান করেন।
আপনি সঠিক বলেছেন। আপনার বিজ্ঞ মতামতের জন্য শুকরিয়া! বারাকাল্লাহু ফিক! আল্লাহর অবারিত রহমত আপানর জীবনে বর্ষিত হোক!
আপানকেও আন্তরিক শুকরিয়া সময় পড়া এবং অনুপ্রানিত করার জন্য! আল্লাহর অবারিত রহমত আপানর জীবনে বর্ষিত হোক !বারাকাল্লাহু ফিক!
আপানকেও আন্তরিক শুকরিয়া সময় পড়া এবং অনুপ্রানিত করার জন্য! আল্লাহর অবারিত রহমত আপানর জীবনে বর্ষিত হোক !বারাকাল্লাহু ফিক!
আমাদের জন্য সবসময় দোআ করবেন! আল্লাহ আমাদের সঠিক পথে চলা সহজ করে দিন!
আপানকেও আন্তরিক শুকরিয়া সময় পড়া এবং অনুপ্রানিত করার জন্য । জাযাকাল্লাহু খাইর!
আপানকেও আন্তরিক শুকরিয়া সময় পড়া এবং অনুপ্রানিত করার জন্য । এভাবেই চলে আসবেন মাঝে মাঝে! বারাকাল্লাহু ফিক!
বাংলাদেশে এখন অল্প কয়েকটি মসজিদে মাতৃভাষায় খুতবা দেওয়া শুরু হয়েছে যার ফলে খুতবার প্রকৃত উদ্দেশ্য কিছুটা সফল হচ্ছে।
আমাদের মসজিদের মূল ইমাম মরোক্কান, এতদিন আরবীতেই খুতবা হতো রিসেন্টলি আরবীর পাশাপাশি বাংলায় হচ্ছে! আপনার সাথে একমত! প্রতি সপ্তাহে যে নসীহা পাওয়া হয় এটাই পারে মুমিনের জীবন কে আলোকময় করতে!
আপানকেও আন্তরিক শুকরিয়া সময় পড়া এবং অনুপ্রানিত করার জন্য
গুরুত্বপূর্ণ খুতবাটা শেয়ার করার জন্য জাজাকাল্লাহ আপু
আন্তরিক শুকরিয়া সময় পড়া এবং অনুপ্রানিত করার জন্য ।বারাকাল্লাহু ফিক
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক আনুগত্য করাসহ ইসলামের অনুসারী হওয়ার তৌফিক দান করুন! সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য বুঝার তৌফিক দান করুন । সৎ আমল করে আল্লাহর পছন্দনীয় বান্দাবান্দীদের কাতারে শামিল করুন! আমিন!
আপনার অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী দোয়ায় আমীন। ছুম্মা আমীন।
হৃদয়ছোঁয়া লিখাটির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
আপানকেও আন্তরিক শুকরিয়া সময় পড়া এবং অনুপ্রানিত করার জন্য! আল্লাহর অবারিত রহমত আপানর জীবনে বর্ষিত হোক !বারাকাল্লাহু ফিক !
আপুকে দেখিনা যে ইদানিং! ব্যস্ত?
মন্তব্য করতে লগইন করুন