মৃত্যুপুরীতে একটি সকাল....
লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া মুকিম ১৬ মার্চ, ২০১৫, ১০:৪১:৫৩ রাত
গভীর রাত! বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকার! বাগানের ল্যাম্প পোস্টের তীর্যক আলোক রেখা জানালার কাঁচের উপর এসে পড়েছে! গুটি গুটি শিশিরবিন্দু জানালার কাঁচের সাথে নিবিড়ভাবে মিশে আছে! এই ক্ষীন আলোয় শীতের শিশির আর বাইরের আলোর সংমিশ্রন আমি বিছানায় শুয়ে শুয়ে অবলোকনের ব্যর্থ চেষ্টা করছি!
সারারাত এপাশ ওপাশ করেও সেকেন্ড, মিনিট , ঘন্টা মিলিয়ে দু ঘন্টাও ঘুম হয়নি! চোখের পাতা এক করতে পারছিলাম না কোন ভাবেই! সেই শিশির কনার মতোন এক শীতল অনুভূতির অস্তিত্ব টের পাচ্ছিলাম আমার সমস্ত অস্তিত্ব জুড়ে! মানুষের মানসিক অবস্থা যদি এক্স-রে করে দেখা যেতো সেই রিপোর্টে আমার এই মূহূর্তের ভিতরের বিপর্যস্থতা সুনামির ঝড়কেও হার মানাতো মনে হয়!
ফজরের সালাত শেষে কিছুটা সময় অধ্যয়ন করে রেডি হয়ে নিলাম। সাড়ে -ছয়টার দিকে গাড়ি আসবে, তারপর আমরা কয়েকজন বোন মিলে হাসপাতাল অভিমুখে রওনা দিব ইনশা আল্লাহ!
যথাসময়ে হাসপাতালের নির্দিষ্ট গেটে এসে নামলাম সবাই। অন্যান্য জায়গার চাইতে এ জায়গাটি বেশ নিরিবিলি, গা ছম ছম করা কেমন এক ভাব!
উপস্থিত বোনেরা সবাই মিলে আরেকবার আলোচনা করে নিলাম আমাদের দায়িত্ব ও করনীয় সম্পর্কে। সবাইকে অভয় দিয়ে আল্লাহর প্রতি গভীর বিশ্বাস ও আস্থা নিয়ে আমরা হাসপাতালের লাশ ঘরে ঢুকলাম।
সম্পূর্ন লাশ ঘরের দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন একজন মাত্র মহিলা নার্স। চেহারায় এক নির্লিপ্ত ভাব নিয়ে সব কাজ একা একা করে যাচ্ছেন। অনুভূতি বলতে কিছু আছে সেই ভাবের প্রকাশ উনার চেহারায় কঠিনভাবে অনুপস্থিত!
বেশ কিছু কফিন সাজিয়ে রাখা হয়ছে মূল দরজার সাথে । চকচকে বার্নিশ করা কাঠের কফিন গুলো যদিও এখন শূন্য কিছুক্ষন পরেই এই শূন্য স্থান পূর্ন হয়ে যাওয়ার অপেক্ষায়...
সিঁড়ি বেয়ে মাটির নিচে নেমে এলাম আমরা। এখানে মোবাইলের নেটওয়ার্ক কাজ করে না ! যে জায়গাটি জীবন নামক নেটওয়ার্ক হীন লাশের জন্য নির্ধারিত বলাই বাহুল্য যান্ত্রিক মোবাইলের নেটওয়ার্ক পাওয়ার প্রশ্নটাই এখানে অবান্তর!
সামনে- পিছনে সারি সারি কফিন রাখা তবে এগুলোর কোনটাই খালি নেই ! বেশির ভাগ বৃদ্ধ এবং বৃদ্ধাদের লাশ ! আমার এই লাশ ঘরে আসা যদিও নতুন অভিজ্ঞতা নয় তথাপি এবার কিছু নতুন বোন আছেন যাদের জন্য এই পরিবেশটা একদম অপরিচিত। তাদেরকে দুহাতে ধরে সাহস দিয়ে একসাথে সামনে এগিয়ে গেলাম!
নির্দিষ্ট ওয়াশ রুমে ঢুকলাম আমরা! নার্স মহিলাটি ভিতরের এক রুম থেকে বড় ট্রলি ঠেলে সাদা কাপড়ে আবৃত আমাদের এক বোনের লাশ নিয়ে এলেন। মৃত বোনটির সাথে আমার পূর্ব পরিচয় ছিল না! আল্লাহর ইচ্ছা এটাই ছিলো আমাদের এভাবেই সাক্ষাত হবে!
প্রথমে আমরা পূর্বে রেডি করা কাফনের কাপড় আরেকটি বড় ট্রেতে ধারবাহিকভাবে বিছিয়ে নিলাম । উষ্ণ পানি প্রস্তুত করে নিলাম! আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়ে, প্রয়োজনীয় সমস্ত জিনিষ হাতের কাছে রেখে কাজ শুরু করলাম!
বোনটির, একদিন বিকেলে আসা জ্বর ভয়াবহ আকার ধারন করেছিলো, আর তাই উনাকে হাসপাতালে আনা হয়েছিলো চিকিৎসার জন্য। আজ থেকে সপ্তাহ খানেক আগে মারা গিয়েছেন বোনটি! হাসপাতালের কাগুজে জটিলতা, দেশে লাশ নিয়ে যাওয়া সংক্রান্ত আইনী ঝামেলা শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত এই মৃতদেহকে সাতদিন পর্যন্ত এই মৃত্যুপুরীর হিমাগারে থাকতে হলো!
এই বোন কি জানতেন চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল এসে এখান থেকে উনার আর কোনদিন বাসায় ফিরে আসা হবে না?
দেশে উনার ছোট বোন অসু্স্থ ছিলেন, সেই বোনকে কথা দিয়েছিলেন কিছুদিনের মধ্যেই দেশে ফিরে আসবেন তিনি ! উনি কি জানতেন, উনি নয়- উনার লাশকে নিয়ে যাওয়া হবে দেশে?
ছোট ছেলেকে বিয়ে করাবেন তাই অনেক শখ করে কত কিছু কেনাকাটা করে লাগেজ গুছিয়ে রেখেছিলেন! উনি কি কখনো ভেবেছিলেন ছেলের বউ দেখার স্বপ্ন যে চির অপূর্নই রয়ে যাবে?
"পৃথিবী আমার আসল ঠিকানা নয়" এই ইসলামী সংগীত বহু বার শুনেছি ! আজ মৃত্যুপুরীতে এসে আবারো অনুভব করলাম তবে এখানে সেই সংগীতের না কোন সুর বা না কোন ছন্দ কানে ভেসে এসেছিলো শুধু এক নিঃস্তব্ধতার শূন্যতার হাহাকার হৃদয় মাঝে রেখে গেলো যা সমস্ত অনুভূতিকে নিমিষে গ্রাস করে নেয়!
আমরা যখন কাফনের কাপড় পড়ানো শেষ করছিলাম, চাদর দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলার আগে বোনটির ছেলেকে জিজ্ঞাসা করা হলো সে কি তাঁর মায়ের মুখখানি দেখতে চায় কি না? আমরা সবাই দূরে একপাশে দাঁড়িয়ে রইলাম! ছেলেটি ঢুকেই সাদা কাফন জড়ানো তাঁর মাকে দেখে অনুচ্চ স্বরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকলো! জানতে চাইলো সে কি তাঁর মায়ের পা দুখানি একটু স্পর্ষ করতে পারবে কি না?
আমাদের নিজেদের অজান্তেই বাঁধভাংগা জোয়ারের মতোন চোখে পানি চলে আসতে চাইলো! ছেলেটি তাঁর মায়ের পা ধরে শুধু কোন রকম অষ্ফুট স্বরে বলার ব্যর্থ চেষ্টা করছিলো- আমার মা, আমার মা! চলে যাওয়ার সময় মায়ের কপালে শেষ বারের মতোন পরম মমতায় একটি আদর দিয়ে গেলো! মা ছেলের এই আশ্চর্য ভালোবাসা আমাদের রিডয় মনে কি যে এক তোলপাড় তুলেছিলো!
নিজের কথা ভাবছিলাম! আজ কতো সুন্দর পোষাক পড়ি, নিজের বাসায় স্বামী-সন্তান নিয়ে বাস করি- যখন আমার মৃত্যুর সময় এসে হাজির হবে, আমাকেও আজকের এই লাশ ঘরের মৃত্যুপুরীতে নিয়ে আসা হবে! শীতল হিমাঘরে একাকী রাখা হবে! আমার বোনেরা আসবেন আমাকে গোসল করাতে, কাফন পড়াতে! মুসলিম ভাই স্বজনগন আসবেন জানাযা পড়াতে!
যে সময় মালাকাল মাউত আমার মৃত্যুর পরোয়ানা এনে হাজির হবেন ঐ সময় আমার মানসিকতা, আমার হালত কেমন হবে? আমি কি কন্ঠে শাহাদাতের উচ্চারন করতে পারব? আমার জন্য কি জান্নাতের সুগন্ধি এবং কাফন নিয়ে আসা হবে? মৃত্যুর পূর্বে কি আমার সৌভাগ্য হবে জান্নাতের আসীম নিয়ামতের সুসংবাদ গ্রহন করার?
যখন আমার মৃত্যু উপস্থিত হবে, চোখদুটি স্হির হয়ে যাবে,আত্না শরীর থেকে বের হয়ে যাবে, চামড়া সংকুচিত হয়ে যাবে, আংগুল গুলি কাঁপতে থাকবে ঠিক ঐ মূহুর্তে আমি কি পারব শাহাদাত উচ্চারন করতে? ঐ মূহুর্তে কি পারব আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করাকে ভালোবাসতে?
আমার প্রিয় বাবা- মা, ভাই- বোন, পরিবার পরিজনদের কারো সাথে আর দেখা হবে না! দু চোখ ভরে পানি আসলো মায়ের কথা ভাবতে গিয়ে! আমার মৃত্যু সংবাদ শুনে আমার মায়ের কেমন লাগবে? আমার মা অনেক পরহেজগার মহিলা ! আমার জন্য অনেক অনেক অনেক দোআ করবেন, প্রান খুলে দোআ করবেন নিশ্চয়ই!
আমার স্বামী- সন্তানরা ? আমার মেয়েটা, যে সারাক্ষন আমার সাথে দুষ্টূমির খুনসুটি করতেই থাকে , যে আমাকে ছাড়া একটা মূহুর্ত থাকতে চায় না আমার মৃত মুখটি দেখে কেমন লাগবে ওর?
দুনিয়ার সব বন্ধন ছেড়ে সবাইকে রেখে আমি একা রওনা হয়ে যাব! শুধু আমার আমল যাবে আমার সাথী হয়ে অন্ধকার কবর গৃহে!
আয়শা রাদিয়াল্লাহু তায়াল আনহা থেকে বর্নিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,যে কেউ আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করতে ভালোবাসে, আল্লাহ ও তার সাথে সাক্ষাত করতে ভালোবাসেন আর যে আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করতে ঘৃনা করে আল্লাহ ও তার সাথে সাক্ষাত করতে ঘৃনা করেন!(বু,মু)
ইয়া আল্লাহ, আমাদের জীবনের সমস্ত গুনাহকে আপনি ক্ষমা করে দিন, যে সমস্ত সৎ আমল করলে আপনি খুশি হন আমাদেরকে সেগুলি বেশি বেশি করার তৌফিক দিন, আপনার লানত এবং নাখোশ হওয়া কাজ থেকে আমাদেরকে রক্ষা করুন! আমাদের পরিবার পরিজনদের ঈমান ও ইসলামের পথে রাখুন! আমাদের যখন মৃত্যুবরন করা কল্যানকর হবে তখন আমাদের মৃত্যু দিয়েন , যতদিন আপানর সন্তুষ্টরি পথ চলতে পারি হায়াত দীর্ঘায়িত করুন! আপনার রহমত ,কল্যান এবং জান্নাতের সুসংবাদ যেনো আমাদের দেয়া হয়! আমরা যেনো আপনার সাথে সাক্ষাত লাভ করাকে ভালবাসি! আমাদেরকে কবরের আযাব হতে রক্ষা করুন, জাহান্নামের আযাব হতে রক্ষা করুন, আমাদের জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা হতে রক্ষা করুন! আমাদের জান্নাতুল ফেরদৌস দাখিল করুন!আমীন!
বিষয়: বিবিধ
১৬০৫ বার পঠিত, ৪০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় কর এবং তোমরা আত্মসমর্পণকারী না হয়ে কোনো অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করো না।-সূরা আল ইমরান : ১০২
জাযাকাল্লাহু খাইর!
বলা বাহুল্য যে, আপনার লিখাগুলো মনে দারুণভাবে দাগ কাটে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে যাই লিখেন, একটা নির্দিষ্ট বার্তা দেয়ার চেষ্টা করেন, যারা এই বার্তা ক্যাচ করতে পারবে, নিশ্চিতভাবেই তারা উপকৃত হবে।
মৃত্যুপুরীতে আসা যাওয়ায় আপনার মনে মৃত্যু ভয় বেশি নাড়া দিয়েছে, বোধ করি, সব সময়ই নাড়া দেয়, কিন্তু আমাদের যেতে হয় না কোন মৃত্যুপুরীতে, আমরা প্রতিনিয়ত মৃত্যুর প্রহর গুনি এই মৃত্যু পুরীর দেশে। আমাদের সম্ভাব্য বিপদ আশংকায় স্বজনের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মনে এখন আর সান্ত্বনার বাণী খুব একটা কাজে দেয় না, তবুও বলি, 'আল্লাহ ভরসা'। আজ কেউ নিরাপদ নয়, আমি আমরা যেকোন সময় চলে যতে পারি না ফেরার দেশে, অতএব দোয়া করেন, গোনাহর বোঝা হালকা করে যেন মরতে পারি।
আপনার মেয়ে, স্বামী, স্বজনেরা আপনার বিয়োগ বেদনায় কাঁদবে, শোকে মুহ্যমান হবে, তারও একটা শেষ আছে, একটা সময় আপনার জন্য কষ্টের তীব্রতা কমে আসবে, এক সময় হয়ত একেবারেই ভুলে যাবে, কিন্তু আপনি যখন যাবেন, এবং যেখানে যাবেন, তার কোন শেষ নেই, চলতেই থাকবে অনন্ত অসীমের পথ ধরে। সাথে করে নিয়ে যাওয়া পুণ্য আপনাকে অনন্ত সুখের নীড়ের দিকে নিয়ে যাবে আর পাপ নিয়ে অতল গহ্বরের দিকে।
অতএব পুণ্য অর্জনই হোক ক্ষণিক জীবনের ব্রত।
অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও বিনয়ের সাথে জানাচ্ছি আপনার চমৎকার- দীর্ঘ মন্তব্যটি আমাদের স্বদেশকে কিভাবে যমের আখড়া করে রেখেছে!সত্যি দুঃখজনক! স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলার অধিকারটুকু জনগন হারিয়ে ফেলেছে!নিজ দেশে এখনো পরাধীনতার স্বীকার আমরা!
সুন্দর বিশ্লেষনমূলক মন্তব্য এবং অনুপ্রেরনার জন্য আন্তরিক শুকরিয়া,দোআ ও শুভকামনা রইলো!
জাযাকাল্লাহু খাইর!
নিশ্চয়ই দুনিয়া দ্রুত বিদায় হচ্ছে আর আখিরাত দ্রুত এগিয়ে আসছে। উভয়েরই রয়েছে কিছু সন্তান। সুতরাং তোমরা আখিরাতের সন্তান হও, দুনিয়ার সন্তান হয়ো না। সাবধান, আজ শুধু কর্ম, হিসাব নেই। আর আগামীকাল শুধু হিসাব, কর্মের সুযোগ নেই।- আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু!
কাল মন্তব্য করবো।
পড়ার এবং মন্তব্য করার জন্য শুকরিয়া!
জাযাকাল্লাহু খাইর!
ওয়াইস কুরুনী রহ.-কে যখন বলা হত, ‘আপনার দিনকাল কেমন যাচ্ছে’? তিনি বলতেন, ‘ঐ ব্যক্তির দিনকাল আর কেমন যাবে, যে সন্ধ্যা বেলায় উপনীত হলে ধারণা করে যে, সে সকাল পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না, আবার সকাল বেলায় উপনীত হলে ধারণা করে যে, সে আর সন্ধ্যা করা পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না। অতঃপর তাকে হয়তো জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হবে অথবা জাহান্নামের দুঃসংবাদ’।
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় কর এবং তোমরা আত্মসমর্পণকারী না হয়ে কোনো অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করো না।-সূরা আল ইমরান : ১০২
সময় করে পড়া ও মন্তব্য করার জন্য শুকরিয়া! জাযাকাল্লাহু খাইর!
ইয়া আল্লাহ আমি দুনিয়াকে মোটামুটি চিনেছি এবং এটা সত্যিই একটি তুচ্ছ স্থান। আমি আপনার দেওয়া রিজিকে সন্তুষ্ট,আমি আপনার দেওয়া স্বাস্থ্যে স্ন্তুষ্ট,আমি আপনার পক্ষ থেকে আমার উপর নিপতিত রহমতে অতিরিক্ত সন্তুষ্ট। আমি আপনার কর্তৃক নির্ধারিত হায়াতে সন্তুষ্ট। ইয়া আল্লাহ আমি আপনার কাছে ফিরতে চাই,আপনি যখন চান। আমি আপনাকে ভয় করি এবং ভালবাসি। আপনি আমাকে যখন উঠিয়ে নিবেন,তখন যেন আপনি আমার উপর অতিশয় সন্তুষ্ট থাকেন। আমি আপনার সাক্ষাতের অপেক্ষায় প্রহর গুনছি। আমার প্রত্যেকটি দিনকে পূর্বের দিনের চাইতে সুন্দর করুন,হে আমার একমাত্র মালিক !
اَللّـهُـمَّ حَـاسِـبْـنِـىْ حِـسَـابًا يَّـسِـيْـرًا
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা হা-সিব্নী হিসাবাই ইয়াসীরা
অর্থ : হে আল্লাহ! আমার হিসাবকে সহজ করে দিও। (মিশকাত : ৫৫৬২)
আপনার অন্তর ছোঁয়া দোআয় আমীন! ইয়া রব!
জাযাকাল্লাহু খাইর!
মহামহিমের দরবারে একটাই প্রার্থনা আমরা সবাই যেন এখনকার মত জান্নাতেও একে অপরের শুভাকাঙ্ক্ষী ও কল্যাণকামী হতে পারি।
আপনার হৃদয় ভরানো দোয়ায় আমীন।
আর সন্তানদের কথা তো আছি! রব্বির হামহুমা কামা রব্বিয়ানি সগীরা বলে ওরা আমাদের জন্য দোআ করবে তো? আমাদের মৃত্যুর পরেও সাদাকায়ে জারিয়া হিসবে অব্যাহত থাকবে তো?
আল্লাহর কাছ হাজারো শুকরিয়া তিনি আমাদের সুযোগ দিয়েছেন এখনো আমল করার। পরকালীন জীবন ভাবার!
জাযাকিল্লাহু খাইর! দোআর আবেদন রইলো!
আপনার জন্য নিরন্তর দোয়া ও শুভকামনা রইলো।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
শ্রদ্ধেয় ভাইয়া, আপনি পড়েছেন এবং আপনার মূলবান অনুভূতি শেয়ার করেছন -শুকরিয়া!
: হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি জাহান্নাম এবং কবরের শাস্তি হতে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। তোমার কাছে আশ্রয় চাই দাজ্জালের ফিতনাহ্ হতে। জীবনের এবং মৃত্যুর ফিতনাহ্ হতে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। প্রভু হে! নিশ্চয় আমি তোমার কাছে আরো আশ্রয় চাই সকল গুনাহ এবং ঋণের দায় হতে। (বুখারী ও মুসলিম)
জাযাকাল্লাহু খাইর!
হু চিন্তার বিষয়।
প্রতিদিন শুধু কবার যদি গভীর ভাবে মৃত্যু নিয়ে চিন্তা করা হয় আমাদের আমলগুলো আরো অনেক সুন্দর হয়ে যেতো! দুনিয়াবী পার্থিব মোহ আমাদের অনেকসময় ভুলিয়ে দেয় আখিরাতের কথা, মৃত্যুর কথা!
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন, একজন আনসারী ব্যক্তি (সাহাবী) আরজ করলেন, আল্লাহর রাসূল! সবচেয়ে বুদ্ধিমান ও সর্বাধিক সম্মানিত ব্যক্তির পরিচয় কী? আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে মৃত্যুকে সবচেয়ে বেশি স্মরণ করে এবং মৃত্যুর জন্য সবচেয়ে বেশি প্রস্ত্ততি গ্রহণ করে। তাঁরাই তো দূরদর্শী। দুনিয়ার সম্মান ও আখিরাতের মর্যাদা তো তারাই নিয়ে গেল।-সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ২৪০৯
জাযাকাল্লাহু খাইর!দোআর আবেদন রইলো!
০ অথচ দুনিয়াতে থাকাকালীন এই মাকে তার ছেলের কাছ থেকে আলাদা রাখতে আপনাদেরই কোন না কোন বোন সারাটা দিন চুকলিবাজি করে যাচ্ছিল ।
মৃত্যুপুরীতে এসে যখন পরকালের চিন্তা করছেন তখন কি এটাও মনে হয় না যে আমরা কেন এরকম হই ?
ঘটনা দেখে যে চোখের পানি ফেলেছিলেন বলতে পারবেন তা কুম্ভিরাশ্রু ছিল না ?
অন্যকে পরকাল সম্পর্কে উপদেশ , ভয় ও সুসংবাদ দেখানোর পাশাপাশি নিজেদের কি সেভাবে সেটআপ করেন আপনারা ?
করলে তো দুনিয়াতে অশান্তি থাকতো না ! মায়ের লাশটাকেও সাত দিন ধরে মর্গে পড়ে থাকতে হত না !
শ্রদ্ধেয় ভাই, আপনার মন্তব্য পড়ে বুঝত পারলাম আপনার তিনটি প্রশ্ন রয়েছে আমার পোস্টটিকে ঘিরে!
১)প্রথমত, যে বা যারা সারাদিন সম্পর্কছিন্ন করতে ব্যস্ত থাকে তাদের সমস্যা কে ফোকাস করে আমি মূলতঃ পোস্ট লিখিনি! দ্বিতীয়ত, যে বা যারা এ ধরনের কাজ করে তাদের সন্মুখে -
৭। কেহ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে সে তা দেখবে,
৮। এবং কেহ অণু পরিমাণ পাপ করলে সে তাও দেখবে।(সূরা যিল্যাল)
এই আয়াত বা এই আয়াতের আহবান ,এর শিক্ষা, মর্মবানী তাদের অন্তরে প্রবেশ করে নি!
২)মৃত্যুপুরীতে গিয়ে মৃত্যুকে স্পর্ষ করে, মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে উপলব্ধি করেছি! মৃত্যুর চিন্তা কম বেশী সব সময় করি কিন্তু সেই চিন্তা আর লাশ ঘরে গিয়ে লাশ ধরার পর মৃত্যু নিয়ে চিন্তাকরা অনেক আলাদা!
আপনার প্রতি সম্পূর্ন শ্রদ্ধা রেখেই বলছি,
এই পোস্ট লিখেছি মৃত্যুকে কে ঘিরে আমার অনুভূতিকে নিয়ে! আপনি আমার পোস্টের বানান ভুল সংশোধন করতে পারেন, আমি ভুল কোন তথ্য দিলে তা অবহিত করতে পারেন কিন্তু আমার অনুভূতি নিয়ে- সেখানে আমার চোখের পানি কুম্ভিরাশ্রু ছিল কি না এই অনুভূতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারেন না! আপনার এই হস্তক্ষেপ আমাকে ব্যথিত এবং মর্মাহত করেছে!
ইতালীতে যে সমস্ত বাংলাদেশী মারা গেছেন তাদের সকলের লাশ দেশে নিয়ে যেতে যে দীর্ঘ সময় লাগে তার জন্য লাশকে সাত দিন কখনো বা সাত দিনের বেশী সময় লাগে! অনেক বলার পরেও কেউ এখান কবরস্থ করতে রাজি হন না! ফলে লাশটার কষ্ট বেড়েই চলে!
মানুষের অন্তরের মালিক আল্লাহ! আল্লাহকেই বলছি আমাদের কঠিন অন্তরগুলোকে গুনাহ হতে, পাপ হতে , কু ধারনা সমস্ত অন্যায় হতে রক্ষা করুন!আমি সর্বাবস্থায় প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আমাকে ,আমার আহালকে, পরিচিত স্বজনকে ইসলাম মেনে চলতে! আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক পথে রাখুন এটাই দোআ ও কাম্য!
"ইয়া মুকাল্লিবাল কুলুব, সাব্বিত কালবি আলা দ্বীনিক"
(হে হৃদয়সমূহকে ঘুরিয়ে দেয়ার অধিকারি! আমার হৃদয়কে তোমার দ্বীনের উপর অবিচলভাবে প্রতিষ্ঠিত রাখ)।(তিরমিযি)
জাযাকাল্লাহু খাইর!
এক হৃদয় গ্রাহী বর্ণনার মাধ্যমে তুলে ধরেছেন সেই বাস্তবাতা।
আল্লাহ ঈমানের সাথে আমাদের এমন মৃত্যু দান করুন যে মৃত্যু তাঁর সাথে সাক্ষাতের উসিলা হয়।
ধন্যবাদ আপু।
শ্রদ্ধেয় ভাইয়া, জানিনা পনার কখনো সুযোগ এসেছিলো কি না কোন লাশকে গোসল-কাফন পড়ানোর! ঐ মূহুর্তে মনের অনুভূতি যদি লিখে প্রকাশ করা যেতো আর তা প্রতিদিন কবার করে পড়া যেতো, শিক্ষা নেয়া যেতো ব্যক্তির নিজে র মৃত্যু এবং আখিরাতের প্রস্তুতি অনেক সুন্দর হতো!
সময়ের সাথে আমার অনুভূতি অনেকটা হালকা হয়ে আসবে এটাই স্বাভাবিক! কিন্তু কোন একদিন আমার সন্তানরা যেনো এই লিখাটি পড়ে এই ছোট একটি সুপ্তআশা ছিলো!আমার পরকালীন জীবন সার্থক হোক এটাই কাম্য ও দোআ!
জাযাকাল্লাহু খাইর!দোআর আবেদন রইলো!
মৃত্যু এক কঠিন বাস্তবতা কিন্তু আমরা কজন মনের রাখি সে কথা ।
হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি প্রসঙ্গে রাসুল (সা.)-এর উপস্থিতিতে আলোচনা হচ্ছিল। তার বহুবিদ সুকর্মের প্রশংসা করা হচ্ছিল। তা শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, ‘সেই লোকটি কি মউতের কথা স্মরণ করতো?’ তারা বললেন, ‘মৃত্যু সম্পর্কে তিনি আলোচনা করেছেন বলে কখনও শুনিনি।’
রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, সে সেথায় নেই।’ অর্থাত্ মৃত্যুর ব্যাপারে সচেতন না থাকলে, কোনো ব্যক্তি কল্যাণ অর্জন অব্যাহত রেখেছে এমন চিন্তার অবকাশ নেই। কিছু কিছু সময় আমরা মৃত্যুর কথা আলোচনা করেও থাকি। কিন্তু গাফেল হৃদয়করণ থেকে আসার কারণে তা হৃদয়ে কার্যকর প্রভাব ফেলে না। সাহাবি হজরত আবু দারদা (রা.) সে বিষয়টিকে লক্ষ্য করে বলেছেন, ‘মৃতদের কথা আলোচনা হলে, তুমি নিজেকে তাদের মধ্যে গণনা কর।’
জাযাকিল্লাহু খাইর আপুমনি !
আদরও করিয়া মানুষ আল্লাহ তুমি বানাইয়া
কেমনে দি.......বা জাহান্নামে ফেলিয়া।
মৃত্যুর কথা মনে আসলে দুনিয়া বিষিয়ে উঠে। টাকা পয়সা, ধন দৌলত, ব্যবসা বানিজ্য সবকিছু যেন পাহাড়সহ। কোন সময় মাথায় উপর ভেঙ্গে পড়ে। হাদিসে এসেছে মৃত্যুকে অধিক পরিমানে স্বরণ কর, কেননা মৃত্যু দুনিয়ার স্বাদ আহ্লাদ আশা আকাঙ্খা সবকিছু ধ্বংশ করে দেয়।
জাযাকিল্লাহ খাইর আপু। সালাম রইল।
আল্লামা ইকবাল (রহ.) বলেন, ‘গাফেল মনে করছে মৃত্যুর মাধ্যমেই বুঝি জীবনের অবসান ঘটে, অথচ এ মৃত্যু অনন্ত জীবনের সূচনা মাত্র।’ রাসূলে পাক (সা.) বলেছেন, ‘সে ব্যক্তিই জ্ঞানী, যে আপন নফসকে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং মৃত্যুর পরবর্তী সময়ের জন্য আমল করে।’
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সুন্দর মৃত্যু এবং সফল পরকালীন জীবন দান করুন!
ওয়ালাইকুম সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ! বারাকাল্লাহু ফিক!
তোমার অনুভূতিগুলো সত্যি মনকে ছুঁয়ে দিলো! আসলেই দুনিয়া মুমিনের জন্য কারাগার! তারপরো জান্নাতে গিয়ে যেনো অফুরান নিয়ামত পাই সেটার জন্যই তো সকল প্রচেষ্টা! আল্লাহ আমাদর কবুল করে নিন!
"আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে রসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, "তোমাদের কারো আমল তোমাদের জান্নাতে প্রবেশ করাবে না।" বলা হলঃ "এমন কি আপনিও না, হে আল্লাহর রসূল?" তিনি (সঃ) বললেন, "হে আমিও না। তবে আমার রব্ব যদি আমাকে তাঁর রহমতে আচ্ছাদিত করেন।" (বুখারী ও মুসলিম)
জাযাকাল্লাহু খাইর!
ইয়া আল্লাহ, আমাদের জীবনের সমস্ত গুনাহকে আপনি ক্ষমা করে দিন, যে সমস্ত সৎ আমল করলে আপনি খুশি হন আমাদেরকে সেগুলি বেশি বেশি করার তৌফিক দিন, আপনার লানত এবং নাখোশ হওয়া কাজ থেকে আমাদেরকে রক্ষা করুন! আমাদের পরিবার পরিজনদের ঈমান ও ইসলামের পথে রাখুন! আমাদের যখন মৃত্যুবরন করা কল্যানকর হবে তখন আমাদের মৃত্যু দিয়েন , যতদিন আপানর সন্তুষ্টরি পথ চলতে পারি হায়াত দীর্ঘায়িত করুন! আপনার রহমত ,কল্যান এবং জান্নাতের সুসংবাদ যেনো আমাদের দেয়া হয়! আমরা যেনো আপনার সাথে সাক্ষাত লাভ করাকে ভালবাসি! আমাদেরকে কবরের আযাব হতে রক্ষা করুন, জাহান্নামের আযাব হতে রক্ষা করুন, আমাদের জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা হতে রক্ষা করুন! আমাদের জান্নাতুল ফেরদৌস দাখিল করিও।আমিন।
اَللّـهُـمَّ حَـاسِـبْـنِـىْ حِـسَـابًا يَّـسِـيْـرًا
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা হা-সিব্নী হিসাবাই ইয়াসীরা
অর্থ : হে আল্লাহ! আমার হিসাবকে সহজ করে দিও। (মিশকাত : ৫৫৬২)
জাযাকাল্লাহু খাইর!
আপু আমি অনেক অনেক সরি , আমার পোষ্টে আপনার করা কমেন্ট টা আমার ভুলের কারনে মুছে গিয়েছে । তার জন্য আপু আমি ক্ষমা প্রাথী ।
কোন সমস্যা নেই আপু! একটা কমেন্ট মুছেছে দুইটা কমেন্ট করে দিচ্ছি এখনি !
অনেক অনেক শুকরিয়া শ্রদ্ধেয় ভাইয়া! সময় কর পড়ার এবং মন্তব্য করার জন্য জাযাকাল্লাহু খাইর ! আপনার উপস্থিতি অনেক অনুপ্রেরনাময়..
মন্তব্য করতে লগইন করুন