ইশিতার সংসারের ইতিবৃত্তি-১
লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া মুকিম ০৫ মার্চ, ২০১৫, ০৩:০৪:৩৩ রাত
ইশিতা - দেখতে সুন্দরী, পড়াশোনায় ভাল, বাবার আর্থিক অবস্থাও খারাপ নয়! উঠতি বয়সের কিছু খুটিনাটি ত্রুটি ছিল- পড়ার বইয়ের চেয়ে গল্পের বই ভালো লাগতো, পড়ার চাইতে আড্ডা, বাসায় থাকার চাইতে বান্ধবীদের সাথে ঘোরাফেরা ইত্যাদি!
ক্লাসমেট বা পাড়ার ছেলেদের নজরে পড়ে গিয়েছিলো খুব দ্রুত! ইশিতার মা -বাবা যদিও মেয়েকে অবাধ স্বাধীনতা দেন নি কিন্তু স্কুলে- কোচিং এ তো যতেই হতো! মেয়ে বড় হওয়ার সাথে সাথে বাসার সামনের জটলা যে দিনে দিনে বড় হচ্ছিলো সেটাও খেয়াল করেছেন ইশিতার বাবা- মিজান সাহেব। সেদিন বাজার থেকে ফিরার পথে দেখেছেন ইশিতার পিছন পিছন সাইকেলে করে একটা ছেলে বাসা পর্যন্ত এসেছে!
মিজান সাহেব মেয়েকে নিয়ে দুর্ভাবনায় দিন যাপন করছিলেন আর ভাবছিলন এর সমাধান কি ভাবে করা যায়? দিনকাল যা পড়ছে ছেলেদের কিছু বললে উল্টা টিজিং আর বিরক্তির পরিমান বাড়িয়ে দিবে। মেয়েটা যদি শেষ পর্যন্ত শক্ত থাকতে না পারে! সেদিনই তো শুনলেন কার মেয়ে নাকি পালিয়ে চলে গেছে, আরেকটা মেয়ে আত্নহত্যা করেছে প্রেমিকের সাথে বি্যেতে অমত করেছিল বলে তার পরিবার!
এসব ভেবে ভয়ে শিউরে উঠলেন মিজান সাহেব! মেয়েটা অন্তত এস,এস,সি পাশ করুক এটা চাচ্ছিলেন মিজান সাহেব! তবে উনার চিন্তা বাস্তবে পরিনত হতে সময় লাগলো না! পরিচিত এক আত্নীয় ইশিতার জন্য বিয়ের প্রস্তাব আনলেন। মিজান সাহেব যদিও চাচ্ছিলেন না এস, এস, সির আগে বিয়েটা হোক কিন্তু ছেলে পক্ষের জোড়াজুড়ির কারনে তিনি রাজি হয়েছিলেন কিছু বিষয়কে সামনে রেখে! ইশিতাকে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ আর পরে পড়ার সুযোগ দিতে হবে এই শর্তে! পাত্র পক্ষ মেনে নেয়াতেই বিয়ের আয়োজন শুরু হলো!
আর ইশিতা? বুঝতেই পারছিলো ওর বেশিদিন পড়াশোনা হবে না ! উটকো ছেলেদের ডিস্টার্ব ছিল কিন্তু সেতো নিজে থেকে ওসব কিছুতে জড়ায় নি! যে ছেলেরা পিছ পিছ ঘুরে তারা যে ইম্যচিউর এটা বোঝাই যায়! পিছন পিছন আসা, সাইকেলে করে ফলো করা আর একে তাকে ধরে চিঠি পাঠানো ছাড়া এদের আর কোন সাহস নেই! ইশিতা এগুলো নিরবে মেনে নিয়েছিলো! অভ্যস্থও হয়ে গিয়েছে! কিন্তু ওর বাবা যে ভয় পাচ্ছেন সেরকম কিছু তো ইশিতা করেনি! উঠতি বয়সের সব মেয়েদের পিছনেই ছেলেরা ঘুরে, ডিস্টার্ব করে! এটার সমাধান কি বিয়ে দিয়ে দেয়া?
ইশিতা বিয়েতে অমত করেনি! করেও লাভ নেই! ওর বাবা ওকে নিয়ে যে আর পরেশানী হতে চান না এটা সে বুঝেছে! খুব কি লাভ হতো? উল্টো ওর বাবা সন্দেহ করতো ওর কি কারো সাথে কোন রিলেশন আছে কিনা? আর ইশিতার মা? বেচারীর আর কি ভূমিকা এই সংসারে? বড় ভাই ঠিক ভাবে পড়াশোনা করতো না, রেজাল্ট খারপ করেছিলো সব দোষ- দায়ভার তো ওর মা কেই নিতে হয়েছিলো! আদেশ আর আনুগত্যের নিশ্চুপ জ্বলন্ত উদাহরন হয়ে নিরবে চোখের পানি ফেলা ছাড়া কি ই বা করার আছে ওর মায়ের!
শুনেছে পাত্র বেশ অবস্থা সম্পন্ন! মাস্টার্স করা। বাবা সরকারী চাকুরিজীবি! নিজেদের বাড়ি আছে, দোকান পাট আছে, ছেলে এগুলো দেখাশোনা করে! ছেলে একাই আর এক বোন আছে ওর,বোনের বিয়ে হয়ে গেছে তিন বছর আগেই! একেবারেই নিরিবিলি -নির্ঝন্ঝাট সংসার!
যেদিন ছেলে পক্ষ দেখতে এসেছিলো তখন ইশিতা, পাত্র-মানিকের সাথে কথা বলছিলো! ইশিতার চাইতে ১৫ বছরের বড়! যদিও দেখে ছেলের বয়স বুঝা যায় নি আর আধুনিকতা -বিত্ত বৈভবের চাকচিক্যতো চেহারা- পোশাক- আশাকে ছিলোই!
বিয়ের প্রস্তুতি চলছে দু পরিবারেই! মিজান সাহেব উনার সামর্থ্যের মধ্যে যতটুকু সম্ভব তা করতে ত্রুটি করছেন না! ইশিতা সকল ব্যস্ততার ফাঁকে জানালা দিয়ে সামনে তাকায়! সবসময় মৌমাছির মতো ভিড় করে থাকা সেই জটলা আর নেই! বিয়ের সংবাদ ইতিমধ্যেই পেয়ে গেছে তাহলে সবাই! তারা কি ইতিমধ্যেই নতুন মৌ এর সন্ধানে লেগে গেছে?জানালা থেকে সরে দাঁড়াতে গিয়েই দেখলো সাইকেলে চড়া সেই ছেলেটি! মাস দুই ধরে পিছে পিছ ঘুরছিলো! চিঠি পত্র দেয়া দূরে থাক, কোন বাজে কমেন্টও করেনি ইশিতাকে! শুধু পিছে পিছে আসতো আর নিরবেই চলে যেত! মৃদু হাসলো ইশিতা ভাবলো এই সাইকেলওয়ালা শিওর এখনো জানে না আর জানলে এই বেশি ছ্যাকা খাবে! অজান্তেই ঠোঁটের কোনায় হাসি চলে আসে ইশিতার!
অবশেষে খুব জাঁকজমক ভাবেই বিয়েটা হয়ে গেলো! মানিকদের পক্ষ থেকে বধুর জন্য আনা শাড়ি-গহনা, বিয়ের সরন্জাম সবকিছু পাড়া -প্রতিবেশী সবার প্রশংসা কুড়িয়েছিলো!
ইশিতার শ্বশুড় বাড়ির নিয়ম কানুন সব অদ্ভুত! একমাত্র ওর শ্বশুড় কেই দেখছে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে! সময় মতো সকালে উঠেন, নামাজ পড়েন, অফিসে যান! কিন্তু শ্বাশুড়ি আর মানিক এদের না আছে কোন টাইমটেবিল না আছে নিয়ম কানুন! এরা সারা রাত সজাগ থাকে, সারা সকাল ঘুমায়! উঠে দুপুরে তারপর শ্বাশুড়ি যায় বাজারে, কেনাকাটা সেরে রান্না চুলায় দেয়, রান্না শেষে খাওয়া খেতে খেতে বিকাল চারটা কখনো পাঁচটা! বলাই বাহুল্য এখানে ইশিতার ভূমিকা কি? ওর দায়িত্ব শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখা! শ্বাশুড়ি ওকে আগেই বলেছে এ বাড়ির কেউ উনার রান্না ছাড়া খেতে পারে না! সুতরাং ওর সেই চেস্টা করা লাগবে না! বাসায় ছুটা বুয়া আছে যিনি অন্যান্য কাজগুলো করে দেন! সব মিলিয়ে ইশিতার সুখী হওয়ার কথা! কিন্তু কি যেন একটা নাই, এতো প্রাচুর্য- বিত্ত- বৈভব কোন কিছুই যেনো হৃদয় -মনকে তৃপ্ত করতে পারেনা, একটা হাহকার সারাক্ষন ওকে চারিপাশ থেকে ছেয়ে রাখে! কারো সাথেই সম্পর্কের গভীরে পৌঁছতে পারছে না সে এই অনুভূতি গুলো ধীরে ধীরে পীড়িত করে তোলে ইশিতাকে....................
চলবে....... ইনশা আল্লাহ।
বিষয়: বিবিধ
২৬৬৬ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তো আপনার কি ফু ফা এর কোন চক্কর জানা আছে?
শুকরিয়া!
ভালোতো গল্পের বই এখন তিনি বেশী বেশীই পড়তে পারবেন
একেবারে ভদ্র মনে হচ্ছে ইশিতাকে
ভালো লাগলো দেখি পড়ের পর্ব কবে আসে অনেক ধন্যবাদ অনেক ধন্যবাদ
খানা দানা আসবে দেখি অন্য কোন পোস্টে! ইহা একটি সিরিকাস পোস্ট ভাই!
দোআ ও শুভকামনা রইলো
এরপরেও তার মন অতৃপ্ত ?
এটা সেই সাইকেল ওয়ালা ছেলেটির জন্যই । অথচ বিয়ের দিন তাকে তার বাড়ির পাশ দিয়ে যেতে দেখে বুঝেছিল যে ছেলেটি হয়ত জানে না যে আজ তার বিয়ে হয়ে গেছে , জানলে সেই বেশী ছ্যাকা খাবে । এটা ভেবে সে মুচকি হেসেছিল ।
মানে সাইকেলওয়ালা ছেলেটির ছ্যাকা খাওয়া দেখাটা তাকে ভালই মজা দিত ।
এটা হিন্দী ছবি ''এইতরাজ'' এর কাহিনীর সাথে মিল পাওয়া যাচ্ছে , যেখানে প্রিয়াংকার উচ্চাকাঙ্খা অক্ষয়কে রিফিউজ করেছিল । পরে যখন সে পজিশন পেয়ে যায় তখন আবার অক্ষয়ের জন্য মন আনচান করা শুরু হয় ।
পাত্র কিন্তু ইশিতার চেয়ে ১৫ বছরের বড়।
আমার উপকার হবে যেহেতু আমি লেখালিখির জগতে পরিপক্ক নই!
পাত্রের আসলেই বয়স বেশি ছিলো! মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতে একসময় এটাই স্বাভাবিক ছিলো।
প্রাচুর্যতাই সুখের মাপকাঠি নয়,একজন ভাল পার্টনার- উত্তম জীবন সংগী যিনি বোঝেন, সময় দেন তাদের মাঝেও সুখ থাকে!
হিন্দী সিনেমা দেখা হয় না ভাই!
মন্তব্য এবং উপস্থিতির জন্য আন্তরিক শুকরিয়া।দোআ ও শুভকামনা রইলো
মন্তব্য এবং উপস্থিতির জন্য আন্তরিক শুকরিয়া।দোআ ও শুভকামনা রইলো
দ্বিতীয় পর্বের অপেক্ষায়..........
মন্তব্য এবং উপস্থিতির জন্য আন্তরিক শুকরিয়া।দোআ ও শুভকামনা রইলো
দ্বিতীয় পর্বের অপেক্ষায়..........
মন্তব্য এবং উপস্থিতির জন্য আন্তরিক শুকরিয়া।দোআ ও শুভকামনা রইলো
অনেক ভালো লিখেন আপনি। শুভেচ্ছা জানবেন।
আপনাকে আজ প্রথম দেখলাম আমার ব্লগ বাড়িতে নিন মিষ্টি মুখ করুন!
দোআ ও শুভকামনা রইলো
মন্তব্য করতে লগইন করুন