সংসারের বন্ধন- পিতা পুত্র
লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া মুকিম ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ১০:১৮:১৭ রাত
মুয়াজ অস্থিরভাবে ঘড়ির দিকে বারবার তাকাচ্ছে, অধীর অপেক্ষায় আছে কখন তার আব্বু বাসায় ফিরবে! তার ছোট ক্ষুদে মনটার ভিতর জল্পনা -কল্পনা চলতে থাকে প্রিয় বাবাকে ঘিরে, ইশ! আব্বুকে কতো কষ্ট করে চাকরিতে যেতে হয়, সেই সকালে যায় আর বিকেলে আসে! অনেক সময় সে দেখেছে তার আব্বুর বাসায় ফিরতে ফিরতে অনেক রাত মাঝে মাঝে গভীর রাতও হয়! আব্বু বাসার বাইরে থাকলে তাই মুয়াজের খুবি মন খারাপ লাগে! কত কষ্ট করতে হয় তার আব্বুকে!
প্রতিদিন যখন মুয়াজের আব্বু অফিস শেষে বাসায় ঢুকে সবসময় বাবা ছেলে একসাথে লুকোচুরি খেলে কিছুক্ষন! তারপর একে অপরের সারাদিনের খোঁজ খবর নেয়। কখনো বাইরে খেলতে যায় আবার কখনো একসাথে বাসায় বসেই গেইম খেলে দুজনে মিলে। আবহাওয়া সুন্দর থাকলে বাবার সাথে সুপার মার্কটেও যায় বাজার করতে! আব্বুর সাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত অনেক অন্নেক আনন্দের মুয়াজের জন্য! তাই তো মুয়াজ সবসময় অপেক্ষায় থাকে কখন তার আব্বু বাসায় ফিরবে!
কিন্তু আজ মুয়াজের লুকোচুরি খেলার কোন লক্ষন নেই বরং দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে আব্বু আসা মাত্রই যেন দারুন খবরটা আব্বুকে সাথে সাথেই দেয়া যায়! ভাবতেই উত্তেজনায় চোখ মুখ চিকচিক করে উঠলো মুয়াজের।
দরজায় চাবির শব্দ শোনা মাত্রই দুরুম করে দরজা খুলেই আব্বুকে সালাম দিলো! ছেলের চেহারা দেখেই আসিফ সাহেব আঁচ করলেন কিছু একটা হয়েছে উনার ছেলের! উন্মুখ হয়ে তিনিও জিগগেস করলেন কি খবর আব্বু তুমি যে আজ একেবারে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছ? আজ আমরা লুকোচুরি খেলব না?
আব্বু , অনেক দারুন একটা জিনিস ঘটেছে, তোমার আর কষ্ট করে অফিসে যেতে হবে না! এখন থেকে তুমি বাসায় থাকতে পারবে সবসময়! আর আমি অনেক বেশি সময় তোমার সাথে খেলতে পারব। তোমার জন্য মজার একটা জিনিষ আবিষ্কার করেছি আমি! একনাগাড়ে বলে যাচ্ছিলো মুয়াজ!
তার আগে এটা বলোতো আব্বু, তোমাকে এক ঘন্টায় কত ইউরো পে করে তোমার অফিস থেকে? চোখ বড় বড় করে পিতার কাছ জানতে চায় পুত্র!
প্রশ্ন শুনে আসিফ সাহেব একটু থতমত খেলেন! ভয়ে ভয়ে বললেন কেনো বাবা? তোমার কি আবারো নতুন কোন খেলনা লাগবে?(মনে মন প্রমাদ গুনলেন আসিফ সাহেব)
না আব্বু সেটা না! শোন তোমাকে খুলেই বলি তাহলে-
আমি আজকে একটা এনিমেশন কার্টুন দেখার জন্য কম্পিউটারে বসেছিলাম, কার্টুনটা শুরু হওয়ার আগে হঠাৎ একটা বিজ্ঞাপন আমার সামনে এলো! কি বলছিলো লোকটা জানো?
আসিফ সাহেব ও কৌতুহল চপে রাখতে পারছেন না, উৎকন্ঠিত হয়ে তিনিও বললেন- কি?
বলছিলো যে " তুমি কি কম পরিশ্রমে অনেক টাকা আয় করতে চাও? মাত্র ১ ঘন্টায় উপার্জন করতে পারবে ৫০০ ইউরো! "
আব্বু, তুমি কত বেশি পরিশ্রম করো , কত বেশি সময় তোমার বাইরে থাকা লাগে আর বেতন পাও এইটুকু! তোমাকে এখন এই নতুন চাকরিটা করতে হবে, তাহলে বাইরে ও যাওয়া লাগবে না , তুমি সবসময় বাসায় থেকেই এত্তগুলো টাকা উপার্জন করতে পারবে! আর আমিও সবসময় তোমার সাথে অনেক কিছু খেলা করতে পারব ! আব্বু দারুন না? দেখেছো আমি কত বুদ্ধিমান হয়েছি? তুমি তো আমাকে খালি বলো আমি ছোট! দেখেছো আমার আট বছরেই আমি কত জিনিয়াস! হাসতে হাসতে বললো মুয়াজ!
আসিফ সাহেব এবার সমস্ত ঘটনার শানে নূযুল বুঝত পারলেন, হেসে ছেলেকে কোলে নিয়ে বললেন, আমি তো জানি আমার ছেলে জিনিয়াস! তা তোমার আম্মুটাকে দেখছি না যে? নাকি তোমার আম্মুকে অলরেডি চাকরিতে জয়েন করিয়েই দিয়েছো?
মুয়াজ এবার গলার আওয়াজ নামিয়ে বললো - সাবধান আম্মুকে বলো না কিছু! আমি যখন বিজ্ঞাপনটা দেখছিলাম আম্মু আমার সাথেই ছিল! আম্মুকে বলতেই সাথে সাথে না করে দিল! আর বললো আমি যেন কোনভাবেই ওদের ওয়েব সাইটে ক্লিক না করি! ওরা নাকি প্রতারক! আম্মুর কান্ডটা দেখেছো? এজন্য এটা তুমি আর আমি করব! টপ সিক্রেট ঠিক আছে? আম্মুকে বলাই যাবে না! পরে যখন অনেক টাকা হবে আমাদের আম্মুকে তাতাংংং করে দেখাব! কত্ত মজা হবে তাইনা? পিতার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে মুআজ!
এবার আসিফ সাহেব ব্যাপক আনন্দ পেলেন এবং বললেন তুমি জানো না, আমি তোমার আম্মুকে লুকিয়ে কিছুই করতে পারি না? এই লুকোচুরিতে তোমার আম্মু সবসময় পুলিশ হয়ে যায়! আর আমি চোর... বলেই হো হো করে হসে উঠলেন আসিফ সাহেব!
মুয়াজ গলার স্বর নামিয়ে বললো আম্মু জানলে তো এটা করতেই দিবে না! অত্যন্ত পেরেশানী হয়ে পড়লো মুয়াজ!
এতোক্ষনে মিসেস আসিফ রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসলেন পিতা পুত্রের কাছে। আগেই পিত পুত্রের ফিসফিসানি উনার কান পৌঁছে গিয়েছে তারপরেও কপটভাব ধরে বললেন
এখানে পিতা পুত্রের কিসের গোপন মিটিং হচ্ছে?
সাথে সাথে পিতা পুত্র হাসতে হাসতে সমস্বরে বলে উঠলো, টপ সিক্রেট বলা যাবে না! মিসেস আসিফও সে হাসিতে যোগ দিলেন!
(শিশুদের মন সহজ -সরল -পবিত্র আর নিষ্কলুস! সহজেই বিশ্বাস করার প্রবনতা ওদের মাঝে প্রবলভাব বিরাজ করে। পিতা-মাতার প্রতি যে নিঁখাদ ভালোবাসা অনুভব করে শিশুরা তার ভিত্তিতেই চেষ্টা করে পিতামাতাকে সবসময় হাসি খুশি দেখতে।
মনের মাঝে ক্রম বর্ধমান ভালোবাসাকে উজার করে বিলিয়ে দিতে চায় , ছড়িয়ে দিতে চায় প্রিয়জনদের মাঝে। প্রয়োজন শুধু নিষ্পাপ ভালবাসাটুকু সঠিকভাবে গ্রহন করার, উপলব্ধি আর ধারন করার...)
বিষয়: বিবিধ
১৮১০ বার পঠিত, ৫৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
পিকচারটা বৃত্তাপুর পোষ্ট সর্বপ্রথম দেখেছিলাম।
আমি অনেক খুঁজে ছবিটা পেলাম! আপুর পোস্টে আমি খেয়াল করিনি ! তবে বৃত্তাপুকে ভীশন মিস করছি!
সকালে উঠেই তো ভাইয়ের ক্ষুধা লাগবে, তাই নাস্তা আগেই রেডি করে রাখলাম যেন পোস্ট পড়ার সাথে নাস্তাটাও হয়ে যায়!
ছিটা রুটি
গরুর গোশত
সবশেষে রসোগোল্লা!
অনেক অনেক শুকরিয়া!
পুরো জবাবটা জিহ্বা দিয়ে পড়লাম
এইরকম প্রতারনামূলক বিজ্ঞাপন এর ফাঁদে পরে অনেকেই সময় ও অর্খ নষ্ট করে!
ঠিক বলেছেন। আর বাচ্চাদের কোন অভিভাবক ছাড়াও কম্পিউটারের সামনে থাকে ঠিক নয়! অনেক সময় বড়রাও ভুল করে ফাঁদে পড়ে যান!
শুকরিয়া আপনাকে
ছোট্ট খোকা টুকটুকিয়ে রাখছে কদম পথে
মুখে হাসি, বুকে সাহস আছেন বাবা সাথে
রাহ’বার বাবা জীবনের আঁকাবাঁকা মোড়ে
নীল নকশা এঁকে দেন পুত্রের অন্তর জুড়ে
সকল বাঁধা পেড়িয়ে খুঁজে নিতে সুখানীড়
উত্তাল সাগরে বাবা আশ্রয়ের সবুজাভ তীর......
তোমার আগমন ধ্বনিতে ব্লগবাড়ি আমার খুশিতে ঝিকমিক করছে
হে ছন্দ আর কবিতার খনি, চমৎকার কবিতাটির জন্য অন্নেক অন্নেক শুকরিয়া
হৃদীতাপু আওণ তো তার ডায়রী পেলোনা।
শুভেচ্ছা রইলো।
শুভ রাত্রি।
শুভকামনা রইলো
তবে এটাও ছিল ভালবাসার প্রকাশ... একেক জনের প্রকাশ একেক রকম
আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো!
মডু মামাকেও অনেক শুকরিয়া
ডেস্টিনি & ডলেন্সার এর জোয়ার বয় আমাদের দেশে আবার যখন এরা চম্পট দেয় তখন আহজারির ও জোয়ার বয়।
ন্যাড়া একবার বেলতলায় যায় বাট আমাদের দেশের ন্যাড়ারা বারবার অসংখ্যবার বেলতলায় যায়।
শুভকামনা ও অনেক দোআ রইল!
ফেসবুকে কিছু প্রতারণার নমুনা দেখুন। গত দুই মাসে এমন মেসেজ কমপক্ষে দশবার পেলাম।
Download the attachment and contact us with your (RESUME) if you are interested.
ভুলেও ক্লিক করেননি আশা করি!
ডিজিটাল প্রতারকে ছেয়ে আছে পুরো বিশ্বটাই আজ!
শুভকামনা রইলো!
স্টিকি পোষ্টের জন্য-
তবে ভাইয়া মাওলানা সাব না বলে মাওলানা সাপ বলবেন ঠিক আছে!
টাইটেল আর টাইটেল
দস্তর লম্বা ওনার।
সবার জন্য আছে-
ছানার সন্দেশ
(জিরেল্লা- রোল কেক)
শুভকামনা রইলো!
ভুলেও ক্লিক না করার অনুরোধ রইলো! অনেক শুকরিয়া! শুভকামনা রইলো!
সন্তান ও বাবা-মা’র ভালোবাসার আদান-প্রদানের অনেকখানিই সংগোপনে হয়ে থাকে। যা কখনো বাবা-মাকে বুঝে নিতে হয়, কখনো সন্তানদেরকে। কিন্তু ভালোবাসার সাথে সাথে ছোটবেলা থেকেই সন্তানদেরকে জীবনের প্রয়োজন গুলোর সাথেও পরিচয় করিয়ে দিতে হবে।
বিশেষ করে গল্পের শিশুটি যেভাবে বাবার জন্য ভালোবাসা খুঁজে নিয়েছে। এমন ক্ষেত্রগুলোতে প্রচন্ড ভালোবাসাময় স্বীকৃতি এবং মমতার ছোঁয়ায় বুঝিয়ে সতর্কও করে দিতে হবে এসব বিষয়ে। সন্তানদের কোন কিছু থেকে আনন্দ নেবার অর্থ এটা নয় যে, সেই বিষয়ের নেতিবাচক দিক তাদের কাছ থেকে আড়াল করে রাখতে হবে।
বরং ছোটবেলা থেকেই আমাদের সন্তানরা শিখতে শিখতে এগিয়ে চলুক জীবনের পথে..
যথার্থ এবং তাৎপর্যময় মন্তব্যটির জন্য আন্তরিক শুকরিয়া!
সত্যি, আপনার মন্তব্যটি আমাকে বিষয়টি সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে অনেক সাহায্য করেছে!
সন্তানদের কোন কিছু থেকে আনন্দ নেবার অর্থ এটা নয় যে, সেই বিষয়ের নেতিবাচক দিক তাদের কাছ থেকে আড়াল করে রাখতে হবে। - এই কথাটুকু আসলেই অনেক মূল্যবান!
জাযাকাল্লাহু খাইর! শুভকামনা রইলো!
পিতা পুত্রের গল্প অনেক ভাল লাগছে আপু ।
তোমারো ছিটা রুটি পছন্দ জেনে খুব ভালো লাগলো! তোমাকে আবার বানিয়ে খাওয়ানোর ইচ্ছে পোষন করছি!একেবারে টাটকা গরম গরম!শুভকামনা রইলো
মন্তব্য করতে লগইন করুন