ইসিস, চার্লি হেবডো এবং আমরা
লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া মুকিম ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ১১:২১:২৬ রাত
অনিয়মিত হলেও এখানকার সংবাদপত্রের হেডলাইনগুলোতে চোখ বুলানোর সুযোগটা প্রায়ই আসে। পেপারেই প্রথম পড়েছিলাম ইসিসের কথা। যদিও তখনো এদের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য সম্পর্কে আমার কিছুই জানা ছিল না!
যখনি পেপারের হেড লাইনে ইসিসের লোমহর্ষক কর্মকান্ডের সংবাদ পড়ি সত্যি এতটাই মন খারাপ লাগে যা বলে বোঝানো যাবেনা। মুসলিমবিশ্ব আর মিডিয়ার সম্পর্ক যেখানে সাপে নেউলে অবস্থা সেখানে ইসিসের করে যাওয়া ঘৃন্য অধ্যায়গুলি এখানকার মিডিয়া লুফে নিয়ে যখন প্রথম পাতায় স্থান দেয় তখন বারবার শুধু ভাবনায় পড়ে যাই এই খবরগুলো এখানকার মানুষদের অর্থাৎ ইউরোপিয়ানদের উপর যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে তার কথা! ভালোচোখে নেয়ার প্রশ্ন তো উঠেই না বরং আমরা যারা বিদেশী এবং মুসলিম আমাদের এখানে যেন টিকে থাকার অস্তিত্বটাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠে!
তারসাথে কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিয়েছিলো ফ্রান্সের চার্লি হেবডোর কার্টুন কে ঘিরে ঘটে যাওয়া অত্যন্ত ঘৃন্য এবং নিন্দনীয় ঘটনাটি।
এ ধরনের দুর্ঘটনাগুলোর কারনে আমরা যারা সাধারন মুসলিম আমাদেরকে খুবি বিব্রতকর পরিস্থিতির সন্মুখীন হতে হয়। আমাদের দুজন অমুসলিম প্রতিবেশিনী আছেন, আমাদের প্রতি যথেষ্ট কল্যানকামী- শুভাকাংখী মনোভাব পোষন করেন উনারা। আমার খবরের কাগজ বা নিউজ দেখা হয় অনিয়মিত কিন্তু উনাদের বিষয়টা অন্যরকম। প্রতিদিন সকালে নিয়মিত কফি পান করার সাথে উনারা খবরের কাগজ আর ডেইলি টিভি নিউজ ও গলাধ:করন করেন অত্যন্ত যত্নের সাথে। তাই পৃথিবীর কোন খবরই উনাদের নজর এড়ায় না। আর যখন মুসলিমদের কেন্দ্র করে কোন নৃশংস ঘটনা ঘটে ঠিকই উনারা সবার আগে এসে আমাকে প্রশ্ন করেন। অন্তত উনাদেরকে ভুল ধারনা পোষন না করা আর মুসলিমদের সম্পর্কে সুধারনা দেয়ার জন্য লেটেস্ট নিউজগুলো সম্পর্কে কিছুটা হলেও আয়ত্বে রাখতে চেষ্টা করতাম ।
এক প্রতিবেশিনী- মারিয়া, একদিন আমার সামনে পেপারটা রেখে প্রথম পৃষ্ঠাটা দেখিয়ে বললো, এ বিষয়ে তোমার কি মতামত? আমি তাকিয়ে দেখলাম একজন মানুষকে জ্বলন্ত আগুনে পুড়িয়ে মারার সংবাদ এবং সংবাদটি এসেছে ইসিসের পক্ষ থেকে! কিছুক্ষন স্তব্ধ হয়ে পরে বললাম, শোনো ওরা যা করছে বা করে এসেছে কি উদ্দেশ্যে ওরা কাজ করছে তার কোনটাই আমি জানিনা। তবে ওরা যা করছে এর কোনটাই আমার ধর্ম একসেপ্ট করেনা। এমনকি ওরা নিজেদের দলের যে নাম দিয়েছে সেখানে শুধু নামেমাত্রই ইসলাম আছে ওদের কর্মকান্ড কোনকিছুই আমাদের ধর্ম মূল ইসলামকে অনুসরন করছে না!
আর আমি যা নিজের চোখে দেখিনি সেটা সম্পর্কে তো আর এর থেকে সঠিক কিছু বলতে পারব না। আমি খবরের কাগজে যা দেখি তুমিও তাই দেখো! কিন্তু আমি সত্যি করে বলছি খবরের কাগজগুলোর উপরও আমার সন্দেহ হয়! এরা ঠিক কতখানি এদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে তার উপর আমার আস্থা আসেনা। আমি নিজে একজন মুসলিম হয়ে বলতে পারি যে আমার ধর্ম আমাকে কখনোই কোন অন্যায় করার আদেশ দেয় না ! জুলুম আর অনাচার থেকে বিরত থাকার কথাই আমাদের ইসলাম বলে।
মারিয়া- ওরাতো মুসলিম বলেই নিজেদের দাবী করছে, ওরা বলছে এভাবে মানুষদের গলা কেটেই ওরা ইসলামিক স্টেট তৈরি করবে!
ওরা নিজেদের যাই ঘোষনা দিক না কেন ওদের এসব হত্যাকান্ড কোনটাই সমর্থন করিনা আমরা মুসলিমরা।আমার মনে হচ্ছে এর নেপথ্যে অন্য কোন ষড়যন্ত্র বা চক্র কাজ করছে! আমাদের মুসলিমদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করার জন্য কোন শত্রু দল এদের সাহায্য করছে। এরা মুসলিমের মুখোশ পড়ে আছে কিন্তু রিয়েলি ওরা মুসলিম না!
তুমিই দেখো এই নিউজের লোকটি যাকে আগুনে পুড়ে জ্বলন্ত হত্যার খবরটি আমরা দেখছি এই লোকটি একজন মুসলিম পাইলট! এক মুসলিম কি তার অন্য মুসলিম ভাইকে এভাবে আগুনে পুড়ে মারতে পারে? আমাদের ধর্ম আমাদের এটা শিক্ষা দেয়নি! বরং আমাদের ধর্ম আমাদের এ শিক্ষা দিয়েছে কোন পিঁপড়াকেও যেন আমরা আগুন পুড়ে হত্যা না করি মানুষ তো দূরের বিষয়!
তুমিই বলো, তুমি তো একজন ক্যাথলিক খ্রীস্টান, নরওয়েতে যখন সেই খ্রীস্টান লোকটি ৬৮ জন মানুষকে মেরে ফেলেছিলো সেটা কি সে তোমাদের বাইবেল অনুসরন করে করেছিলো?
ঐ নরওয়েজিয়ান তো একটা অসুস্থ মেন্টালিটির লোক! বিরক্ত হয়েই বললো মারিয়া!
মারিয়া- আচ্ছা কার্টুন এঁকে ব্যংগ করাতে কি মানুষ মেরে ফেলতে হবে? আমরা তো এখন ভয়ে আছি কখন আবার তোমাদের ফান্ডামেন্টালিস্ট মুসলিমরা আমাদের দেশেও নাশকতা শুরু করে!
-তোমার মা কে নিয়ে আমি যদি গালি দেই তোমার কেমন লাগবে? তোমার যদি মায়ের প্রতি ভালোবাসা থাকে তুমি অবশ্যই উত্তেজিত হবে তাই না?
শোন, কার্টুন এঁকে তুমি অনেক কিছু করতে পারো, কিন্তু সব পারসোনালিটি নিয়ে তুমি কার্টুন এঁকে ব্যাংগ করতে পারনা! আমাদের কাছে আমাদের প্রফেট এর অনেক সন্মান। আমাদের প্রফেটকে আমরা আমাদের নিজের জীবন থেকেও বেশি ভালোবাসি! উনাকে নিয়ে ব্যংগ করা হলে আমাদের কষ্ট লাগাটাই কি স্বাভাবিক নয়?
আমি বলব শুধু চার্লি হেবডো না পৃথিবীর কারোই কখনোই উচিত হবেনা মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত আনে এমন কিছু নিয়ে ঠাট্রা করা। যদি কেউ করে তার একটা রিয়েকশন হবেই! সুতরাং উত্তেজিত হতে হয় এ ধরনের সিচুয়েশনই যেন তৈরি না হয় সেটার পরিবেশ থাকা উচিত। এটা অবশ্যই স্বীকার করব, আমার অনেক খারাপ লেগেছে আমার ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে ওরা কিন্তু এর রিয়েকশন যেটা হয়েছে সেটাকে আমি সমর্থন করিনা মানে যারাই এর কারনে মানুষ হত্যা করেছে এভাবে আইন হাতে তুলে নেয়াটাকে সঠিক মনে করিনা!
মারিয়া কিছুক্ষন অবাক হয়ে আমার কথা শুনলো কতটুকু বিশ্বাস করলো জানিনা! আমার নিজেরো অনেক মন খারাপ লাগছিলো! শুধু স্বদেশ না পুরো বিশ্বে রাজনীতির কালো ছায়ায় ছেয়ে আছে! কবে আমরা এর থেকে পরিত্রান পাব? আদৌ কি পাব?
বিষয়: রাজনীতি
১২২০ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমাদের ও প্রশ্ন ,ইসিসের দায় কেন সমগ্র মুসলিমকে নিতে হবে?
ইসিসের জন্ম ইসলামকে সকল রাষ্ট্রের নিকট সন্ত্রাস বলে চালিয়ে দেয়ার জন্য ,অথচ তাদের এই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র আল্লাহ্ পাক একদিন নসাত্ করে দেবে এটা কি তারা বোঝেনা?
ইন্টারেস্টিং প্রশ্ন।
আমার মনে হয়ঃ
১। মুসলিম বিদ্বেষী, বিশ্ব শাসনের জন্য হিস্টিরিয়া যাদের পেয়ে বসেছে - তারা মনের মাধুরীতে পবিত্রতম মানুষ, শয়তান ও ফেরেস্তার এক অদ্ভুত মিশ্রনের মাধ্যমে হলিউডের প্রযোজনা ও নির্দেশনার ন্যায় একটার পর একটা ঘটনা ঘটাচ্ছে আর সেটা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড স্ক্রনিং করছে - তাদের এ্যাজেন্ডা তথা 'গণমানুষের এক্সটিংশান' বাস্তবায়নের জন্য - যা সচেতন কিন্তু দুনিয়া বিমুখ, আখেরাত মুখি মুসলমান রা নিশ্চিত জানেন।
২। মুসলিম বিশ্ব সারাক্ষন সেই সব ঘটনার জন্য সহানুভূতি জানাবে, আত্মরক্ষামূলক কথা বলবে কিংবা ডিফেন্ড করবে - এটাই ঐ শাসক ও পরিচালক চক্রের প্রত্যাশা - যাতে করে মুসলিমের বিপক্ষে যে গণমানুষ আছে তাদের কাছে - বিষয়টা আরো বিশ্বাসযোগ্য হয়, বিপক্ষ কে তা প্রতীয়মান হয়?
৩। দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন মুসলিম রা - চুপ থাকাটাকেই যথার্থ মনে করছে। কারন দিনকে দিন তাদের কাছে এটা পরিষ্কার হচ্ছে যে - কোরান যথার্থই বলেছে, মোহাম্মদ সঃ ও যথার্থই বলেছেন দুনিয়ার মোহে পড়লে তার উম্মতের এই অবস্থা হবে।
অন্যদিকে দুনিয়ায় আরো গাড়ী, আরো বাড়ী, আরো টাকা পয়সা, বেতনভাতা ও ক্ষমতার জন্য ব্যস্ত মুসলিমরা বিরক্ত হয়ে ভাবছেন - কেন তাদের ধর্মীয় লিডারশিপরা এসব ঘটনাকে যথাযথভাবে এ্যাড্রেস করতে পারছে না। কিন্তু তারা বুঝতে চাইছেন না যে ধর্মীয় লিডারশীপরা ও তাদের মত দুনিয়ার লোভে পড়ে গেছেন বলে এসব ঘটনার কোন কুল কিনারা করতে পারছেন না।
ধন্যবাদ অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য।
আইসিস আদেী মুসলিমদের প্রতিনিধিত্ব করে কিনা সেটা নিয়ে কিন্তু সেই মিডিয়াগুলি কোন খবর দেয়না। মিসরে নির্বাচিত সরকার উৎখাত কেও সমর্থন দেয়। চার্লি হেবডো নিজেই উস্কানি দাতা। ঘটনার দায়িত্ব তাদের উপর ও বর্তায়। আমাদের প্রয়োজন তাদেরকে প্রকৃত সত্য সম্পর্কে সচেতন করা।
শুকরিয়া আপনাকে
"শুধু স্বদেশ না পুরো বিশ্বে রাজনীতির কালো ছায়ায় ছেয়ে আছে!"
অনেক শুকরিয়া আপনাকে! শুভকামনা রইলো আপু
মন্তব্য করতে লগইন করুন