অতিথি বিভ্রাট
লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া মুকিম ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১১:৫১:১৭ রাত
শফি সাহেবের বাসায় আজ রাতে মেহমান আসছে। এতে অবাক হওয়ার মতো কিছু নেই! মেহমান দাওয়াত দেয়া এবং নিজেরা মেহমান হওয়া দুটো কাজই উনারা খুবই আন্তরিকতা এবং পছন্দর সাথেই করেন! ব্যাপরটা সেখানে নয়, শফি সাহেব অন্যান্য দিনের চাইতে আজ একটু টেনশনে আছেন! টেনশনটা মেহমান বা রান্না - বান্না নিয়ে নয়! গতকালকেই জেনেছেন আজকের হঠাৎ মিটিং এর ঘোষনা! বিশেষ একটা জরুরী প্রয়োজনে মিটিং ডাকা হয়েছে এবং উনাকে অবশ্যই জয়েন করতে হবে! মিটিং এর কারনে দাওয়াত ক্যানসেল করতে চাইছিলেন না আবার মিটিং থেকে ছুটি নেয়ার ইচ্ছেও নেই উনার! উভয় কূল সামলানো কি যে জটিল তা ভেবে ভেবে ভিতরে ভিতরে অনেক্ষন ধরে এটা নিয়ে পরেশানী হচ্ছেন তিনি যদিও স্বভাবসুলভ দুষ্টামি আর খুনসুটি করেই স্ত্রীকে রান্নায় সংগ দিয়ে যাচ্ছেন!
সালাদ কাটার দায়িত্ব বরাবর শফি সাহেবই পালন করেন, কাটতে কাটতে স্ত্রীর দিকে তাকালেন- একমনে কাজ করে যাচ্ছে সুবহা, যেনো কোনো ক্লান্তি নেই তার আজ! কিছু বিশেষ মূহুর্ত আছে যে সময়গুলোতে ভালোবাসার মানুষটির দিকে তাকালে মানুষটির স্বীয় মাধুর্য পরিপূর্ন ভাবে ফুটে উঠে তাঁর চেহারায়! স্ত্রীর দিক তাকিয়ে এখন উনার তাই মনে হচ্ছে! মেহমান আসলে স্ত্রী যে অতিশয় খুশী হন সেটা উনি বোঝেন আর সেটা সুবহার অতি মনোযোগের সাথে রান্না করার দিকে তাকালেই বোঝা যাচ্ছে। আর এটাই হয়ত মেহমানদের দাওয়াত ক্যনসল না করার সবচাইতে বড় কারন ছিলো!
শফি সাহেবের নিজের খুব একটা হৈ চৈ, মানুষের সাথে উঠাবসা, দাওায়াতে যাওয়া এগুলোর সাথে সম্পর্ক ছিল না কখনোই! তবে বিয়ের পর থেকে জীবনসংগীর ছোঁয়ায় উনার নিজের জীবনে রং ধরতে খুব সময় লাগে নি! খুব অল্প সময়ে মানুষের সাথে মিশার, বন্ধুত্ব করার এবং ঘনিষ্ঠ মানুষে পরিনত হওয়ার চমৎকার স্বভাবটি উনি সুবহার মাঝে দেখেছিলেন! সময়ের আবর্তনে তিনি নিজেও এখন মানুষের সাহচার্য বেশ উপভোগ করেন! বন্ধুত্ব আর মেহমানের আন্তরিক বলয়ে নিজেও আনন্দ ও ভ্রাতৃত্ববোধ উপভোগ করেন!
রান্নার শেষ মুহূর্তে তাড়াহুড়োটা মনে হয় একটু বেশিই লাগে, খাবারগুলো ডিসে পরিবেশন করা, রান্নাঘর পরিপাটি করা, ধোয়া মোছা, বাকি রুমগুলোর কি অবস্হা সেটা তদারকি করা এবং সবশেষে নিজেরা সহ বাচ্চাদের গুছিয়ে নিতে নিতে মেহমান মনে হয় বুঝি চলে আসে আসে অবস্হা! সুবহার কখনোই পছন্দ নয় মেহমান এসে দেখেবে যে সে এখনো রান্নাঘরে মলিন বেশে রান্না করছে আর হুড়োহুড়ি করে ঘর গোছাচ্ছে! তাই সে এ ব্যাপারে যথেষ্ট তৎপর ও সাবধানে থাকে!
সব কাজ গুছিয়ে সদ্য পাট ভাংগা বিছানায় চাদর লাগিয়ে তারপর বাচ্চাদের পরিপাটি করে দেয় সুবহা!
এ্যাই, তুমি কি রেডি হয়েছো? শফির উদ্দেশ্যে বলেন সুবহা!
বাথরুমে দাঁড়িয়ে পান্জাবি পড়তে গিয়ে মন মনে প্রমাদ গুনেন শফি সাহেব! দরজা খুলে হেসে বলেন, আমি রেডি! কিভাবে যে বলবেন আর আধা ঘন্টা পর উনাকে বের হতে হচ্ছে! যদিও উনি মিটিং এর সবাইকে বলে রেখেছেন মাত্র আধা ঘন্টার জন্য উনি আসবেন এবং বাসায় গেস্ট আছে উনাকে অবশ্যই বাসায় চলে আসতে হবে জন্য তিনি ছুটি ও চেয়ে রেখেছেন! তারপরেও কেন জানি পূর্ব ঝড়ের বিপদ সংকেতের আভাস পাচ্ছেন তিনি! কেন যে বললেন না গতকালকেই সুবহাকে মিটিং এর কথা! বলি বলি করেও বলা হয়নি, আর আজ এতোই দেরি হয়ে গেছে এখন না বলে আর উপায় ও নেই! নিজের উপর কি একটু বিরক্ত হলেন? নাহ! অবশ্যই না! মনে মনে ভাবছিলন উনি যদি আজকের মিটিং এর কথা বলতেন স্ত্রীকে- সুবহার কি রিআ্যকশন হতো! সুবহা যে ভীশন অপ্রস্তুত, কষ্ট এবং বিরক্ত হতো তাতে কোন সন্দেহ নেই আর উনি প্রিয় মানুষটিকে এর কোনটিই দিতে চাচ্ছিলেন না! কথামত যদি মিটিং থেকে চল আসতে পারেন তাহলে তো কোন সমস্যাই নেই! দু কূলই রক্ষা হলো! কিন্তু যদি না হয়.....আর ভাবতে চাইলেন না ধুততুরি যদিকে ফেলি নদিতে বলে সুবহার সামনে এলেন!
সুবহা কখনোই বাসার বাইরে সাজগোজ করে যায়না আর তাই যখন বাসায় মেহমান আসে তখন নিজে এবং কন্যাকে বলে, সাজো! আজকে বাসায় থাকা হচ্ছে, পর পুরুষের দেখার কোন সুযোগ নেই তাই মনের মতো করে সেজে গুজ তৈরী হও!
লাল-কালো কম্বিনশনের শাড়ি পড়ে শফি সাহেবর সামনে এলেন সুবহা! মুখে ঘনীভূত হওয়া কালো মেঘের আভাস বেশ কিছুক্ষন ধরেই খেয়াল করেছেন সুবহা! এবার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন, কিছু হয়েছে তোমার? এমন দেখাচ্ছে কেনো তোমাকে?
বুকে সাহস নিয়ে এবার বলেই ফেললেন শফি সাহেব, আসলে হয়েছে কি আমাকে হঠাৎ ঘোষনায় একটা মিটিংএ জয়েন করতে হবে আজ!
মুহহুর্তেই পিনপতন নীরবতা নেমে এলো পুরো রুমটিতে! সুবহা কিছুই বললো না! একটা কথাও না!
শফির সুবহার নীরবতাকে এতোই অসহ্যকর লাগছিলো, মনে হচ্ছিলো তারচাইতে সুবহা একটু চিৎকার করতো ,তার সাথে এটা নিয় একটু ঝগড়া করতো তাও নিজেকে স্বান্তণা দেয়া যেতো! ওর নীরবতা যেনো বরফের মতোন শীতল,ভয়াবহ রকমের ঠান্ডা, প্রচন্ড ধারালো, অস্বস্হিকর, যাতনাময় !
সুবহার তখন মনের অবস্হা খুবই করুন! আজকে যাদের দাওয়াত দেয়া হয়েছে উনারা আজকেই প্রথম আসছেন এ বাসায়! এসে যদি দেখেন মেজবানই নেই কেমন হবে? মেহমান দাওয়াত দিয়ে নিজে আবার অন্য কোন কাজে ব্যস্ত হওয়ার মানেটা কি? এর কোন অর্থ হয়? মিটিং যদি এতোই ইম্পর্ট্যান্ট হতো মেহমানদর না হয় অন্যদিন বলা যেত! এ ধরনের অপ্রস্তুত পরিবেশে কারোই পড়তে হতো না! আর এখনই বা তাকে কেনো বললো? আগে কেনো বলেনি? সব প্রশ্ন একসাথে ঘুরপাক খাচ্ছিলো আর বিরক্তির চোরাবালিতে একটু একটু করে ডুবে যাচ্ছিলো সুবহা! কি এক লজ্জা, এক অনাকাংখিত মুহূর্তের গোপন অধ্যায় উদ্ভাসিত হতে যাচ্ছে তাঁর সামনে আর কিছুক্ষন পরে!
দরজা খুলে রুমে ঢুকলেন শফি সাহেব, সুবহা খাটের উপর দু হাটু ভাজ করে বসে আছে! ঠিক এভাবেই বসে ছিলো ফুলশয্যার রাতে! সেদিনের অনুভূতি আর আজকের অনুভূতি কতো ব্যবধান! মাথার মধ্যে হঠাৎ ৩৩০ ওয়াটের ভালভের মতোন বুদ্ধি খেলে গেলো!
শোনো, আমাদের বিয়ের দিন তুমি ঠিক এভাবেই বসে ছিলে জানো? আর সেদিনের চাইতে আজ তোমাকে..... বলা শেষ হয়নি তার আগেই সুবহা উঠে দাঁড়ালো! সুবহা যখন বেশি রাগান্বিত থাকে তখন কথা বলতে পারেনা, কথা বলা শুরুর আগেই তার কান্না শুরু হয়ে যায়! এই মুহূর্তে সুবহার এই স্বভাবের জন্য নিজেকে রীতিমত ভাগ্যবান মনে হচ্ছে শফির! বোঝাই যাচ্ছে সুবহা এখন কথা বলবে না!
শফি বলতে থাকে, প্লিজ, আমাকে বোঝার চেষ্টা কর! তুমি মনে কষ্ট পাবে তাই আমি তোমাকে বলিনি, আর মেহমানদের দাওয়াতও ক্যানসেল করিনি! আর আমিতো মিটিংএ বলে দিয়েছি আমি বেশিক্ষন থাকতে পারবনা, ছুটি নিয়েছি শুধু আধ ঘন্টার জন্য যাচ্ছি! আমিতো অন্তত এটা বুঝি মেহমান বাসায় এসে মেজবান না পেলে যে কেমন দেখায় সেটা তাইনা? আমার নিজেরো খারাপ লাগছে এখন! প্লিজ তুমি মন খারাপ করে বসে থেকো না! মেহমান আসলে খোশআলাপ করতে করতে খাবারের সময়ের আগেই আমি চলে আসব ইনশা আল্লাহ! এখন আমাকে হাসি মুখে বিদায় দাও প্লিজ!
সুবহা ভাবলো থাক, যা হওয়ার তা তো হয়ছেই! এখন উনি সময় মতোন আসতে পারলেই রক্ষা! গম্ভীরমুখে সুবহা বললো, আমাদের বাসায় কিন্তু উনারা আজই প্রথম আসছেন! এটা বিবেচনায় রেখো!
রাত ৮টায় মিটিং শুরু হবে, শফি সাড়ে ৮টা পর্যন্ত থাকবে! বাসায় ফিরতে বড়জোর ২০ মিনিট! আর মিটিংএও একজন দাওয়াতী মেহমান আছে সুতরাং টেনশন নেই! দুজনে মিল চল আসব সময় মতো! ভাবতে ভাবতে ফোন দিলো মেহমানদের এবং বুঝিয়ে বললো সবাইকে,যে জরুরি মিটিংএ আ্যটেন্ড করার জন্য ওকে যেতে হচ্ছে, এজন্য ক্ষমা সু্ন্দর দৃষ্টির প্রার্থনা এবং কিছুক্ষন অপেক্ষার আবেদন জানিয়ে দিলো! সবাই শফি সাহেব কে আস্বস্হ্ করলেন এবং হাসিমুখেই মেনে নিলেন পরিস্হিতি!
৮টার দিকে যখন মেহমানরা আসতে শুরু করলো তখন সুবহা লজ্জায় মাটিতে মিশে যাওয়ার মতোন অবস্হা! এতো মেহমান তাঁর বাসায় দাওয়াত দিয়েছে কিন্তু এ ধরনের লজ্জাকর দুর্ঘটনা আজই প্রথম!
নিয়ম অনুযায়ী পুরুষরা আলাদা রুমে আর মহিলারা আলাদা রুমে বসেন। মহিলাদের সবার সাথে সালাম বিনিময় আর হালকা কথাবার্তার পাশাপাশি বারবার সুবহা ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছিলো! কখন যে সে আসবে! মহিলাদের নিয়ে কোন সমস্যা নেই কিন্তু পুরুষরা সবাইতো শফিসাহেবর উপস্হিতি আশা করবেন, বাসায় আর কোন ছেলে মানুষও নেই যে উনাদের সংগ দেবেন! তবে সব ছেলেরা মিলে ভালোই গল্পের আসর জমিয়েছে তা কথা বার্তায়ই বোঝা যাচ্ছে!
অন্যদিনের মতোন উৎফুল্ল হতে পারছেন না সুবহা! অজানা শংকা ঘিরে রয়েছে মনের ভিতরটায়! কি ঘটতে যাচ্ছ আজ? সময় মতোন না আসতে পারলে কি হবে? আর ভাবতে চাইছে না সুবহা! কথাবার্তা আর কাজকর্মেই নিজেক ব্যস্ত রাখতে চাইছে নিজেকে এখন! তাও যদি একটু টেনশন ফ্রি হওয়া যায়!
বাচ্চাদের খাবার দেয়ার পর্ব শুরু করে দিলো, ঘড়ি দেখলো সাড়ে ৮টা! ৯টার মধ্যেই চলে আসবে ইনশা আল্লাহ! এই কথাটি খুব খুব বিশ্বাস করতে চাইলো!
বাচ্চাদের খাওয়া শেষ হয়ে গেলো! ৯টা বেজে ১০মিনিট! ঘড়ির একেকটা কাঁটা যেনো হাতুড়ির ঘন্টার মতোন বেজে উঠছে বুকের ভিতর! ফোন করার উদ্দেশ্যে সেলফোনটা হাতে নিলো, রিং হতে হতে কেটে গেলো! তারমানে কি আসছে? শুনতে পাচ্ছে না রিং টোন? ১০ মিনিট পর আবার রিং দিলো এবার বন্ধ! বিরক্তি এবার চরমে পৌঁছেছে সুবহার! সে এ কোন এক আজব শফির পরিচয় পেতে যাচ্ছে? ঠিক ৯ টা ৩০ তখন ভাবীরা বলতে শুরু করলন ভাইদের খাবারটা অন্তত রেডি করে ফেলার জন্য ! আর অতোক্ষনে না হয় শফিভাই চল আসবে!
সুবহা খাবার গরম করে দিলো, এক ভাবীর সহায়তায় ভাইকে দিয়ে খাবার পাঠিয়ে দেয়া হলো উনাদের রুমে! এখন ৯:৪৫ মিনিট!
সুবহার ইচ্ছে হচ্ছে কোথাও পালিয়ে যেতে, জীবন থেকে আজকের দিনটিকে , এই দুঃসহ মুহূর্তটুকু মুছে ফেলতে! চোখ ফেটে তাঁর কান্না আসছে! ভাইয়ারা এবার শফি সাহেবক ফোন দিলেন, এবং জানালেন শফি সাহেব বলেছেন খাওয়া শুরু করে দিতে! এটা শুনে আর ঠিক থাকতে পারলেন না সুবহা! পেয়েছে কি সে? রিং করার জন্য ডায়াল করতে গেলেই "জান" লিখা নাম আর প্রোফাইল পিকে থাকা হাস্যোজ্জল শফিকে দেখে আরো রাগ হচ্ছিলো! নিজের ভিতরে Hulk এর মতোন সবকিছু ধ্বংসের গর্জন শুনতে পাচ্ছিলো সে! এখনি জান কেটে জানের দুশমন নামে যদি সেইভ না করেছে শফিকে, এডিটে যাওয়ার আগেই শফির ফোন.....
আমি আসছি, এইতো রাস্তায়, গাড়িতে আছি....
কিছু বলার আর শোনার কোন সুযোগ না দিয়েই কেটে দিলো লাইন!
ভাইদের খাওয়ার ফাঁকে বোনরাও এপাশে খেয়ে নিয়েছে! এর মাঝে ভাইদের খাওয়া শেষ! সাড়ে ১০টা বাজে! সুবহার আর ফোনও করতে ইচ্ছে করছে না এখন! কেনো ও এমন করলো? ভাবতে গিয়ে সে কূল কিনারা কিছুই খুঁজে পাচ্ছে না! আবার রিং আসলো শফির...
শোনো,আমার একটু দেরী হয়েছিলো, মানছি, কথামতো মিটিং থেকে বের হতে পারিনি আমি খুবই সরি! আমরা এখন রাস্তায় আটকে পড়েছি....
মানে কি? সুবহা
আমাদের সমানে একটা গাড়ি আ্যাক্সিডেন্ট করেছে, রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ, আ্যম্বিলেন্স আসবে, রোগী নিবে,পুলিশ কন্ট্রোল হবে তারপর কতোক্ষনে আসব জানিনা....
এমনিতেই রিচ ফুড রান্না করলে সুবহা খেতে পারে না, তারপরে শফির অনুপস্হিতে সে আরো খেতে পারেনি! মনটা এত তিক্ততায় ভরে আছে.....
মেহমানরা সবাই ঘটনাটি খুব স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছে। সবার সাথে পূর্ব আন্তরিকতাই হয়তো এই সহানুভূতি অর্জনে সাহায্য করেছে! যাওয়ার আগে সবাই যখন রান্নার প্রশংসা করছিলো সুবহাকে সেটা মোটেও আনন্দ দেয়নি অথচ শুকনো একটা হাসি ঠিকই ঝুলিয়ে রাখতে হয়েছিলো! নিজের কষ্ট উনাদের বুঝতে দিয়ে আর কি লাভ!
সবাই চলে গেলে পুরো বাসাতে পিনপতন নীরবতা! মনে হয় এখানে যেনো কখনো কেউ ছিলই না বুঝি! এবার বসে বসে সুবহা ভাবতে থাকে আজ যা হয়েছে তা তাকদিরে বহু আগেই লিখা হয়েছিলো! মেনে নেয়া ছাড়া কি আর করা! মিটিং থেকে শফি না হয় সময় মতোন বের হতে পার নি তাই বলে ঠিক ওদের গাড়ির সামনের গাড়ি আ্যক্সিডেন্ট করলো! ওর গাড়িটাও তো আ্যক্সিডেন্ট করতে পারতো! মনে মনে শুকরিয়া আদায় করলো শফির কিছু হয়নি এজন্য! আলহামদুলিল্লাহ!
কিন্তু মনটা আঁকুপাকু করছে ওকে একটা ভয়াবহ শিক্ষা দেয়ার জন্য! কথা বলা বন্ধ এটা তো নাম্বার ওয়ান টপ লিস্টে! আর কি করা যায়?ভাবতে ভাবতে দরজায় সবগুলি চাবি লাগিয়ে দিলো! যেখানে একটা মোচড় দিয়ে ৩০ সেকেন্ডে দরজা খুলতো এখন পাক্কা ৩ মিনিট লাগবে ৩টা চাবিদিয়ে ৩টা লক খুলতে! আর? আর কি করা যায়? আর কিছু করার সুযোগ পাওয়ার আগেই শফির কথার আওয়াজ শোনা গেলো! এই রে, চলে আসছে! সাথে কেউ আছে মনে হচ্ছে!
সুবহা তাড়াতাড়ি এসে লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়লো!
৫ মিনিট লেগেছিলো দরজা খুলতে, বহুদিন সবকটি লক ব্যবহার না করাতে জং পড়েগিয়েছিলো ভিতরে! চাবিযে যে ভিতরে আটকে যায়নি সেই ভাগ্য!
সাথে আনা মেহমানদের খাইয়ে বিদায় করে দিলো শফি!
শফি বুঝতে পারছে ওর সামনে বিপদ আছে! কি করা যায়!
সুবহা যে কথা বলা বন্ধ করবে সেটা শফি জানে! শফি এসে জায়নামাজ নিয়ে অনাদায়ী সুন্নাহ ও বিতর সালাত আদায় করতে শুরু করলো ! এমন সুরেলা কন্ঠে তিলোয়াত শুরু করলো যেনো তা সুবহা কে মোহোত করে! সুবহা বুঝতে পারলো ওর চাইতে বড় কৌশল শফি গ্রহন করেছে! শফির ভালোমতোন জানা আছে সুবহা শফির তিলাওয়াত খুব পছন্দ করে!
পরদিন সকালবেলা! সারারাত কেউ কথা বলেনি! রাতে শুয়ে একটু কথা বলতে চেয়েছিলো, সুবহা এমন ভাবে ও পাশে ফিরে কম্বল দিয়ে মাথা ঢেকে শুয়েছে, ভয়েই আর বিরক্ত করেনি শফি!
ফজরের সালাতের পর একটু শুয়ে ছিলো সুবহা! পরোটার সুঘ্রান নাকে লাগলো! ভাবলো এমনিতেই মনে হয়! এপাশ ফিরে শুয়ে গতরাতের কথা চিন্তা করছিলো! টুং টাং শব্দ পেতে আড় চোখে তাকালো , শফি নাস্তা নিয়ে এসেছে!
সুবহা মনে মনে বলছিলো, ঢং এ বাঁচেনা! নিজের হাতে নাস্তা বানিয়ে এনেছে এখন রাগ ভাংগানোর জন্য! রাগ আমার এবার কোনমতেই ভাংবে না! সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি...
আসসালামুআলাইকুম! আ্যাই , নাস্তা এখানেই করবে নাকি টেবিল নিয়ে যাবো?
তোমার নাস্তা তুমি খাও! আর আমার সাথে কথা বন্ধ তোমার!
কথাতো বলছোই তুমি হাসতে হাসতে শফি বলে।
চুপ করে নিজেকে দমন করে সুবহা!
ছোট টেবিলে রাখা মোবাইলটা নিয়ে শফি বলে, সব মেহমানদের দোষ! আজকেই কেনো উনারা আমাদের বাসায় দাওয়াত নিতে রাজি হলো? আমরা দাওয়াত দিয়েছিলাম,উনারা তো রাজি নাও হতে পারতো! এখন এই মেহমানদের কারনে আমার বউ আমার সাথে রাগ করে কথাই বলা বন্ধ করে দিয়েছে! সবাইকে এখন আমি ঝারবো দাঁড়াও! এখন থেকে নো মেহমান! বলতে বলতে সে ডায়াল করলো কাউকে...
হ্যলো, আসসালামুআলাইকুম। ভাই ভালো থাকি কি করে ,কি প্যাচ লাগিয়েদিলেন আপনারা আমার বাসায় এসে, এখন তো সুবহা আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে! কি করবো?
আরে ওতো হুশিয়ারী দেইয়েছে ওর ধারকাছে না যেতে! আর ভাই বইলেন না, আমি তো আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের গলিত ম্যগমা ফুটন্ত লাভার শব্দ পাচ্ছি তাঁর কাছ থেকে....
সুবহা ঝট করে উঠে শফির হাত থেকে ফোনটা নিলো, কাকে ফোন দিয়ে এই সব বলা শুরু করেছে, মাথা পুরাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে...
ফোনের ডায়াল কলে তাকিয়ে দেখে লাস্ট কল গতরাতে হয়েছে, তারমানে শফি মিছেমিছি এই নাটক করছিলো! ফোন রেখে সুবহা শফির বুকে অগুনতি কিল আর ঘুষি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে......
ছবি কৃতজ্ঞতা- আফরোজা হাসান।
বিষয়: বিবিধ
২০২৬ বার পঠিত, ৩৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের প্রাণ নাকি ঝগড়া-ঝাটি
সেই প্রাণেতে তোলে গুঞ্জন অবিরাম খুনসুটি
ভুল বোঝাবুঝি ঢেউ তোলে অভিমানের সাগরে
রাগ-অনুরাগ আরো কাছে আনে অন্তর দুটিরে
ভালোবাসার সুতোয় বোনা বাবুই পাখীর নীড়
দ্বন্দ্ব-সংঘাত কভু না পারে ধরাতে তাতে চিড়
প্রেমের ডোরে বাঁধা থাক সুবহা-শফীর সংসার
শীত-গ্রীষ্ম-বসন্ত সর্বদা ফুলে ফুলে সাজানো সম্ভার......
আজ খুব রোম্যান্টিক গল্প পড়তে ইচ্ছে করছিল। একজনকে লিখতেও বলেছিলাম। কিন্তু সে পাত্তাই দিলো না আমার আবদারকে। এত্তোগুলা সুইট একটা গল্প। বিশেষ করে শেষের অংশটুকু......
তোমার এক্টুস আবদার পূরন হয়েছে তাতেই আমি অ নে ক খুশী।
শেষ পর্যন্ত লিখতে পেরেছি কারন তুমিও অনেক উৎসাহ যুগিয়েছো! জাযাকিল্লাহু খাইর
মেজাজ খারাপের কথা আর বইলা না আপু!
এতো ব্যস্ততার মাঝেও স্মরন করার জন্য আন্তরিক শুকরিয়া তোমায় আপুনি!জাযাকিল্লাহু খাইর
পিকটা খুব্বি সুইট কথাগুলোও
অবশ্যই আছে আপু, এর চাইতেও অনাবিল হাসি- দুঃখ- সুখের মজার কান্ড কারখানায় ভরপুর থাকে সংসার জীবন!
তোমার জন্য অনেক দোআ ও শুভকামনা রইলো!
তবে দাওয়াত দিয়ে মেজবান উধাও হওয়া ইটা আব্বা আম্মা কোনদিন করেন নি !
আপনাদের কথা জেনে অনেক ভালো লাগলো! জাযাকিল্লাহু খাইর! অনেক দোআ ও শুভকামনা রইলো
কেনো ? কে আপনাকে এই নিষেধাজ্ঞা জারী করলো?
প্রথমি বলে রাখি আমি মুফতি নই! যতোটুকু জানি তার আলোকে বলছি, ইশার ফরজের পর যেটুকু সালাত বাকি থাকে যাকে আমরা প্রচলিত ভাষায় কেউ সুন্নাত, কেউ নফল কেউ বিতর বলছি আসলে ফিকহ এর পরিভাষায় এই সবগুলো সালাত নফল সালাত! আর নফল সালাত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো নীরবে পড়েছেন কখনো সরবেও পড়েছেন!হাদীসগুলো একটু যদি দেখে নিতে পারন চোখে পড়ব ইনশা আল্লাহ!
আর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সালাত সম্পাদনের পদ্ধতি- নাসির উদ্দীন আলবানী রহিমাহুল্লাহ এর লিখা তাওহীদ প্রকাশনীর এই বইটা সংগ্রহে রাখতে পারেন, অনেক উপকারী!
জীবন পথে চলতে ফিরতে মুসাফির হয়ে যা ডেখলেন, যা আপনাকে অবাক করলো তা নিয়ে আশা করি কিছু লিখবেন !
জাযাকাল্লাহু খাইর শ্রদ্ধেয় ভাই!
বি.দ্র. ওই শ্রদ্ধ্যেও শব্দটা এখনো আমার সাথে যায় না।
আপনার উত্তরের জন্য অন্নেক ধন্যবাদ, দীর্ঘদিন লেখাপড়া থেকে দূরে থাকার ফলাফল হাঁড়ে-হাঁড়ে টের পাচ্ছি।
অনেক মজার হয়েছে গল্পটা।
প্রেমের ডোরে বাঁধা থাক সুবহা-শফীর সংসার
শীত-গ্রীষ্ম-বসন্ত সর্বদা ফুলে ফুলে সাজানো সম্ভার......
বেশ মজা পেয়েছি দুজনের কর্মকান্ডে) তা তোমার কি খবর ভগ্নী? শুনেছি ভ্রমর নাকি গুন্জরন তুলেছে তোমার বসতিতেও? লিখে ফেলো তাহলে
অনেক অনেক শুকরিয়া শতব্যস্ততার মাঝে ফুসরত করে উঁকি দেয়ার জন্য
হুমম. অনেক রোমান্টিক হইছে গল্পটা। বেশ ভাল লাগল। এই ধরনের গল্প পড়লে মনে হয় লাইফটা অনেক রোমান্টিক, আসলেও কি তাই?
দেরিতে জবাবের জন্য আন্তরিকভাবে দু:খিত
অনেক শুকরিয়া! দেরিতে জবাবের জন্য আন্তরিকভাবে দু:খিত
গল্পটা বেশ রোমান্টিক। কিছুটা মনে হোল হাফিজ সাহেবের সূত্রানুযায়ী। কারণ উনি মনে করেন সকল রোগের ঔষধ হোল খাওয়াদাওয়া
অনেক শুকরিয়া! দেরিতে জবাবের জন্য আন্তরিকভাবে দু:খিত
আমিন।
আন্তরিক দোআয় আমিন
মন্তব্য করতে লগইন করুন