ব্যথিত বিবেকের আহাজারি

লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া মুকিম ১০ জানুয়ারি, ২০১৩, ১২:৩৬:৪১ রাত

আজ কদিন ধরেই মনটা খুব খারাপ!একটা অজানা শংকা,ক্ষোভ,আর কস্ট মনের গহীনে শক্ত বরফের মতো বাসা বেঁধে আছে!কষ্টের মাত্রা বেড়েই চলছে তার সাথে এর পরিধিও!কষ্টের স্বরুপ কেমন?মন খারাপ থাকা?কিছুই ভালো না লাগা? নাকি সেই পাহাড় সম কষ্টের বরফ যখন অশ্রু হয়ে নয়নে ঝরে পড়ে?

আমার জন্ম হয়েছে ইসলামিক অনুশাষন মেনে চলা হয় এমন একটি পরিবারে। তাই ছোট বেলা থেকেই ইসলামিক বিধিনিষেধ আইন কানুন মেনে বড় হওয়ার সুযোগ পেছিলাম।যদিও তখনো এই নিয়ামতের মূল্য বুঝিনি!

সময়ের স্রোতে সাগর মহাসাগর দেশ মহাদেশ ছাড়িয়ে আশ্রয় নিয়েছি ইউরোপে!

ইসলামিক জীবন যাপনে অভ্যস্হ এই আমি যখন ভিন দেশি সংষ্কৃতি তে এসে পড়লাম প্রতি পদে পদে অজানা প্রশ্ন,দুঃশ্চিন্তা আর দৈনন্দিন জীবনের রকমারি সমস্যা আমার সামনে গোলক ধাঁধার মতো হাজির হতে থাকলো!খাওয়া দাওয়া,পোষাক পরিচ্ছদ,লাইফস্টাইল সবকিছুই এর অন্তর্ভুক্ত।আর এর সমাধান হলো পড়া আর অবিরত পড়া।

আমরা প্রবাসে অনেক কিছুই খেতে পারি না,সবার মতো পোষাক ও পড়িনা আর আমাদের জীবন যাপন চিন্তা ভাবনা আমাদের মতো ওদের থেকে অনেক আলাদা।

মানুষ সামাজিক জীব তাই নিজ প্রয়োজনেই সমাজের অণ্য মানুষের সাথে আমাদের বসবাস। তার সূত্র ধরে ই বন্ধুত্ব।দেশী বন্ধু বান্ধব দের পাশাপাশি এই দেশী অনেক পরিচিত,শুভাকাংখী আর সুজন মানুষদের সাথে উঠাবসার সুযোগ হয়।

ইতালি এসে বুঝতে পারলাম ঈমান কেন এতো মূল্যবান!এই অমূল্য নিয়ামত উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি বলেই ঈমানের প্রতি আমাদের এতো অবহেলা!

পাঁচ বার সালাত আদায় করা নতুন করে আল্লাহ কে আনুগত্য করতে,ভালবাসতে শিখিয়েছে ।রমাদানের সিয়াম আত্বশুদ্ধি আর ঈমানে ইবাদতে নতুন বীজ বপন করিয়েছে।ইসলামের প্রতিটি বিধানকে নতুন করে উপলব্ধি করেছি অনুভব করেছি ভালোবেসেছি !যা আমি এমনভাবে আমার জন্মভূমিতে মুসলিমপ্রধান দেশে বসবাস করেও মুসলিম হওয়ার এমন আত্বতৃপ্তি পাইনি!

ইতালিয়ানদের কাছ থেকে আমার আপাদমস্তক ঢেকে রাখা লম্বা পোষাক টাকেও কখনো বিব্রত হতে হয়নি বরং সম্মানের চোখেই দেখেছে ওরা।আর আমাদের খাবারের নিয়মকানুন শুনে ওরা আমাদের প্রতি শ্রদ্ধার ধাপ একটু বাড়িয়ে দিয়েছিলো !অবাক হয়ে ওরা বলতো তোমাদের সৃষ্টিকর্তা তোমাদের নিয়ে অনেক গর্ববোধ করেন নিশ্চয় ই কারন তোমরা এতো দূর দেশে এসেও পংখানুপুংখরুপে প্রতিটা বিষয় মেনে চলার চেস্টা করো!

যখন ডাক্তার এর কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হয় তখন ওদের বললেই হয় আমরা মহিলা ডাক্তার গ্রহন করতে ইচ্ছুক ওরা বিনা দ্বিধায় ই আমাদের ইচ্ছা পূরন করে!

ওদের এতো সহানুভূতি আর মহানুভবতার পিছনে একটাই কারন ওরা মানুষের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী।ওরা মত প্রকাশের স্বাধীনতা থেকে চিন্তার স্বাধীনতা এবং ধর্মীয় ও সংষ্কৃতির স্বাধীনতায় বিশ্বাসী!আর কখনোই এমন শুনিনি কাউকে জোর করে ধর্মীয় স্বাধীনতায় বাঁধা দেয়া হয়েছে বা হস্তক্ষেপ করা হয়েছে!!

গত ১৭ ই ডিসেম্বর ২০১২ বাংলাদেশে মগবাজার থেকে ২১ জন মুসলিম পর্দানশীন বোনদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।পরবর্তীতে গ্রেফতার কৃত বোনদের তালিকা আরো দীর্ঘায়িত হয়েছে। অথচ আটককৃত বোন দের বিরুদ্ধে সঠিক কোন অভিযোগ নেই!বরং শুধুই সন্দেহের বশবর্তীতে ৫৪ ধারায় বোনদের আটক করে কারাবন্দী করা হয়েছে।যদিও ৫৪ ধারায় আটককৃতদের সর্বোচ্চ ২৪ ঘন্টা আটক রাখার অনুমতি আছে!প্রায় মাস হতে চললো অথচ মুসলিম বোনেরা এখনো কারারুদ্ধ!আইনের জন্ম হয়েছে মানুষের অধিকার সংরক্ষন করার সুষ্ঠু ব্যবস্হা নিতে কিন্তু বিষ্ময়ে হতবাক হতে হয় আইন এখন ব্যবহার করা হচ্ছে দাবী পূরন নয় দাবী হরনে!নির্যাতনে আর নিষ্পেষনে !

সেদিন যখন দেখলাম এই পর্দানশীন বোনদের কোর্টে আনা হয়েছে এবং তাদের কাছ থেকে জোর করে তাদের সতর ঢাকার একমাত্র অবলম্বন বোরকা ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে তখন সত্যি নিজের বিবেক কে প্রশ্ন করছিলাম এ কোন অসভ্য বর্বর দেশের মানুষ আমরা?এ সমস্ত কর্মকান্ড দেখে বোধকরি শয়তান ও লজ্জা পায়!

ইসলামিক ইতিহাসে এমন অনেক মহিয়সী নারীর ত্যাগ আর অবদান এর কথা জেনেছি যা আজো স্বর্নাক্ষরে ইতিহাসে পাতায় লিখা আছে।কঠোর আর

বর্বর স্বভাব ফিরাউনের স্ত্রী আছিয়া,ফিরাউনের কন্যার গৃহপরিচারিকা মাশিতা,আম্মার এর মাতা সূমাইয়া উনাদের জীবনী যখন পড়ি তখন বুঝতে পারি কত মজবুত ঈমান ছিলো উনাদের!অন্যায়ের বিপক্ষে লড়েছেন সত্যের জন্য জীবন দিয়েছেন!ধৈর্যের চূড়ান্ত কঠিন পাহাড় পাড়ি দিয়েছেন !!

আজ আফসোসের সাথে বলতে হয় তখন কাফির আর মুশরিকদের সাথে মুসলিমদের বিরোধ হতো আজ মুসলমানের সাথে মুসলমানের বিরোধ!এ কোন নব্য জাহিলিয়াতের পরীক্ষার সম্মুখে আজ মুসলিমরা?

৯০%মুসলিমপ্রধান দেশে মুসলিম দের আজ পোষাকের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়,অসহায় নির্যাতিত বোনদের কোন সংবাদ পত্রিকায় ছাপা হয়না,মিডিয়াতে আমাদের বোনদের করুন আর্তনাদ আসার সুযোগ টুকু ও নাই !আমরা আজ কোথায় চলেছি? জনসাধারনের বিবেক আর কতোকাল ঘুমিয়ে থাকবে?কোন মুখ কি এগিয়ে আসবেনা ?কোন হাত কি সচল হয়ে লিখা শুরু করবে না?

বিষয়: বিবিধ

১১৯৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File