নিঃশব্দে রেখে যাওয়া স্মৃতিটুকু...
লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া মুকিম ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০১:১১:২৩ রাত
প্রতি বছর ক্রিসমাস ভ্যাকেসন উপলক্ষে স্কুল ছুটির আগে আফনানদের স্কুলে পার্টি হয়। মূলত এই প্রোগ্রামে ওদের পুরো ক্লাসের সব বাচ্চারা মিলে সম্পূর্ন প্রোগ্রামটি পরিচালনা করে। গত বছর ওরা Pinocchio অভিনয় করেছিলো! ছোট ছোট বাচ্চারা মিলে মজার মজার কথায় অসাধারন অভিনয় করেছিলো! এ বছর আমি যখন আমার পুত্রকে জিজ্ঞেস করলাম, এ বছর তোমরা কি অভিনয় করতে যাচ্ছো? সে দুষ্টু হাসি হেসে বলেছিলো, এটা টপ সিক্রেট, বলা যাবেনা, শুধু অনুষ্ঠানেই এসে দেখতে পারবে! আমিও অপেক্ষার প্রহর গুনছিলাম কি হয় দেখার জন্য!
যথাসময়ে অনুষ্ঠান শুরু হলো! সব বাচ্চারা সাদা শার্ট আর জিন্স পরা ছিলো! ঝকঝকে আলোয় সাদা শার্টে বাচ্চাগুলোকে অদ্ভুত সুন্দর লাগছিলো!
প্রথম পর্বে ছিলো রেসিপি তৈরি! ওরা অভিনয় করে দেখিয়েছিলো কিভাবে কেক বানাতে হয়! যখন বলল ময়দা, অনেক গুলো বাচ্চা হুরমুড় করে এসে ময়দা ময়দা স্লোগান দিয়ে এবং নির্দিষ্ট জায়গায় বসে পড়লো, যখন বলল ডিম- মেয়েরা সুন্দর করে ঘুরে ঘুরে গোলকার ভাবে ড্যান্স করলো, যখন বললো বাটার- একটা স্লো মোশনে ব্রেক ড্যান্স দিলো কিছু বাচ্চা, যখন বলল চিনি- কিছু বাচ্চারা এসে ডিগবাজি দিলো( মিস্টি খেলে কি আসলেই ডিগবাজি আসে? ?) তারপর বেকিং পাউডার বললে- কিছু বাচ্চারা জাম্পিং শুরু করলো! তারপর মিক্সচার প্রক্রিয়ায় সবাই মিলে ফুলকলির মতোন ফুটে উঠে কেক বানানো দেখালো! এক কথায় দৃশ্যটি চমৎকার!
২য় পর্ব ছিলো সারপ্রাইজ কুইজ!
এ বছর বাচ্চারা ক্লাসে পুষ্টিকর খাবার সম্পর্কে পড়াশোনা করেছে। সব বাচ্চাদের বলা হয়েছিলো ওদের ফেভারেট ডিশ এর নাম বলতে, তারপর সবাই বেশ বড় করে বিভিন্ন কালার ব্যবহারের মাধ্যমে সবার পছন্দের খাবারের ডিজাইন করেছিলো এবং ছন্দে ছন্দে সেই খাবারে বর্ননা তৈরি করেছিলো! আমরা অভিভাবকরা এর কিছুই জানতাম না! ওদের ক্লাসের একটি মেয়ে উপস্হাপনা করে ছন্দে ছন্দে যখন খাবারটির কথা বর্ননা করছিলো, আমাদের অভিভাবকদের দায়িত্ব ছিলো সঠিক খাবারটির নাম বলা! যখন সঠিক নাম বলা হতো মূল স্টেজে পছন্দের খাবারওয়ালা তার ডিজাইন করা পছন্দের খাবার নিয়ে হাজির হতো! ছোট ছোট বাচ্চরা যখন মাথার উপর ডিজাইন করা খাবার নিয়ে আসছিলো খাবারের ডিজাইনের চাইতে বাচ্চাদেরকেই লোভনীয় খাবার মনে হচ্ছিলো! এক অসাধারন আবেগময় অনুভূতির সঞ্চারন ঘটে যাচ্ছিলো উপস্হিত প্রতিটি মানুষের মাঝে!
অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার সময় ছিলো বিকাল ৪:৩০মিনিট! যেহেতু আমাদের মাগরিব হয় ৪:৩৬ মিনিটে তাই সালাত আদায় করে যেতে হয়েছিলো আমাকে। ফলাফল যা হলো গিয়ে দেখি সামনের দিকের বেন্চ গুলো আর একটাও খালি নেই! আর ভীড় ঠেলে সামনে দাঁড়ামোর ইচ্ছে করেনি! পিছনের সারিতে বসে বকের মতোন গলা উঁচু করেও অনুষ্ঠানের অনেক কিছুই দেখতে পারিনি কারন আমার সামনে এরকম বহু গলা উঁচু করা অভিভাবক ছিলেন! আফনানকে যখন দেখলাম ওর মাথায় ছিলো স্যামন ফিস ডিজাইন! সামন্য ভাবনায় পড়ে গিয়েছিলাম, কারন আমার পুত্র কখনোই মাছ খায় না! ওর পছন্দের সব খাবার হলো পিজ্জা, চিকেন ফ্রাই, লাসানিয়া, মাংস! মনে মনে ভাবলাম হয়ত টিচাররা ঠিক করে দিয়েছিলেন ওরটা! অনুষ্ঠান শেষে সব অভিভাবকদের পক্ষ থেকে হালাকা খাবারের আয়োজন করা হয়! এ সময় যখন আমি ওর টিচারকে দেখলাম তখন জিজ্ঞাস করতেই উনি বললেন, সব বাচ্চাদের যখন বলা হলো পছন্দের খাবারের নাম বলতে, তখন আফনান বলেছিলো, ও কি ওর বোনের ফেভারট ডিশের নাম দিতে পারবে কিনা? আর শুধু আফনানই একমাত্র ছেলে যে নিজের ফেভারট ডিশের নাম না দিয়ে বোনের ফেভারট ডিশের নাম উল্লেখ করেছিলো! আমি যখন শুনলাম, জানি না কেনো , কোথা থেকে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতোন চোখ থেকে পানি বের হওয়া শুরু হলো! ছোট ছেলেটাকে অনেক বড় মনে হলো! মনে হোল ওর ভালোবাসার গভীরতায় হয়তো আমি, আমরা এমনকি ওর বোনও পৌঁছতে পারেনি!
আমার ছেলেটা ওর বোনকে এতই ভালোবাসে ওর নিজের এত গুরুত্বপূর্ন অনুষ্ঠানে অসংখ্য মানুষকে সে তা নিরবে জানিয়ে দিয়েছে, ভালোবাসার অনুভূতি কি জোড় করে আদায় করা যায়? কাউকে বলে কয়ে করানো যায়?
এ যে এক নিঃস্বার্থ ভালোবাসা!
ছবি কৃতজ্ঞতা- আফরোজা হাসান।
বিষয়: বিবিধ
১৫১৬ বার পঠিত, ৩৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আফনান আর সারার জন্য অন্নেক আদর, দোয়া ও ভালোবাসা রইলো। আমার নিজের মনের ভেতরও ছলকে উঠেছে আবেগের ঢেউ। মনে চলে গিয়েছে অতীতে! আমার গলার অপারেশনের পর এক সপ্তাহ সলিড কিছুই খেতে পারিনি। সেই এক সপ্তাহ আমার পাঁচ ভাইয়াও আমার সাথে শুধু লিকুইড খাবার খেয়েছিলেন!
তোমার চমৎকার অনুভূতির জন্য আন্তরিক শুকরিয়া আপু!তোমাদর সব ভাইয়া আপুদের জন্য দোআ ও শুভকামনা রইলো!
আমাকে যে কাঁদিয়েই ছাড়লে আপুজি !! তাও এ আবেগের, সুখের কান্না যার ঢেউয়ে ঢেউয়ে মন পরিষ্কার হয়ে যায়!
আল্লাহ্ তা'আলা আমার আপুনি এবং তার পরিবারকে হিফাজয় করুক.। আমিন আমিন আমিন
তোমার সুন্দর দোআটিতে আমীন! এবং তোমাদর জন্যও অনুরুপ দোআ আপিয়া! ফি আমানিল্লাহ!
ইশ কেন যে ব্লগে ফেসবুকের মতন বানান ঠিক করার এডিটিং সিস্টেম নাই !!
আপু এত খাওয়া দাওয়ার নাম শুনলাম এখন অন্য বিষয় চিন্তা করার টাইম নাই।
আমার খাওয়াতো ভাইটা কই গেলোরে?
আপু আপনার বাসায় আমার মামাটার প্রিয় খাবার গুলো সাবার করার দাওয়াত রইলো কিন্তু
অবশ্যই দাওয়াত কবুল করা হইলো!ভাগ্নে আবার পাশে কাউকে নিয়ে খেতেই ভালবাসে!
অনেক দোআ ও শুভকামনা রইলো
খালামনির পক্ষ থেকে আফনানের গিফট। বলা যাবেনা কি আছে....সিক্রেট
এত চমৎকার দোআয় আন্তরিক আমীন!
আফনানকে ডেকে দেখিয়েছি গিফট, আপনাকে জাযাকিল্লাহ বলেছে এবং সে বলেছে ভিতরে চকলেট আছে
আন্তরিক দোআ ও শুভকামনা রইলো আপনার জন্য!
যখন থেকে এখানকার স্কুলে যাওয়া আসা শুরু করেছি ওদের প্রায় প্রতিটি জিনিষ আকর্ষনীয় লেগেছে যা একদিকে শিক্ষনীয় অন্যদিকে বিনোদনের যথেষ্ট খোরাক যুগিয়েছে! আমাদের দেশে এভাব শিক্ষনীয় কাজ গুলো করলে পারলে খুব ভালো হতো! শুনেছি কিছু প্রাইভট স্কুলগুলোতে নাকি একটু একটু করে শুরু হচ্ছে কাজ!
ওহ, ভাইয়া! আফনান ছোট! ওর বোন ওর থেকে ৬ বছরের বড় ! এজন্যই আমাকে খুব বেশি নাড়া দিলো, কারন ওর পাজি বোনটা ভালোবাসা প্রদর্শনে খুব্বি হাড় কিপ্টুস
অসংখ্য শুকরিয়া আপনাকে! শুভকামনা ও দোআ রইলো! আল্লাহ আপনাকে অন্নেক ভালো রাখুন, হিফাজত করুন!
ভালো লাগলো নিরব ভালোবাসার অনুভুতি।
আন্তরিক শুকরিয়া অনুভূতি ও উপস্হিতির জন্য! শুভকামনা ও দোআ রইলো আপুর জন্য
অনেক দোআ ও শুভকামনা তোমাদের জন্য, খেয়াল রেখো নিজের দিকে! ব্যস্ততার মাঝেও উপস্হিতির জন্য আবারো শুকরিয়া
সোনামণি আফনান ও সারার জন্য অন্নেক অন্নেক আদর, দোয়া, ভালোবাসা আর শুভেচ্ছা রইলো। পরম দয়াময় ওদেরকে দু’জনকেই পরিপূর্ণ এলেম দান করুণ এবং দুনো জগতের কামিয়াবি অর্জনের তৌফিক দিন। আমীন।
আপুজ্বি আপনি ভালো আছেন তো?
আপনার সুন্দর অনুভূতিমাখা লিখাটির জন্য জাজাকাল্ললাহু খাইর।
আলহামদুলিল্লাহ! আমরা সবাই ভালো আছি!
আপনাদের সবার জন্য দোআ ও শুভকামনা রইলো!
একটু আগে আমি একটা পোস্ট দিলাম, ঘটনা প্রায় একই রকম ?
এখন মনে হচ্ছে আমরা মায়েরা মনে হয় আমাদের বাচ্চাদের নিয়েই বেশী ভাবি। তাই অন্যকিছু লিখতে বসেও এইসব খুঁটিনাটিই মনের মাঝে উথলে ওঠে
দিন যতই যাচ্ছে ওদের নিয়ে চিন্তাভাবনা ততই ঘনীভূত হচ্ছে আপু! তবে আমার কন্য বলেছে ওদের নিয় ভাব জনসমক্ষে লিখে আমি নাকি ওদের প্রাইভেসী নষ্ট করছি
রাদিয়া রিহামের জন্য অনেক দোআ, আদর ও শুভকামনা রইলো!
আপু সামনের লম্বা ছুটিতে আপনার লম্বা লম্বা লিখা চাই কিন্তু
আমার কন্যারও ধারণা ওদের প্রাইভেসী নষ্ট করা হচ্ছে
অপেক্ষায় আছি সেই সময়ের যখন ওরা ওদের বাচ্চাদের নিয়ে লিখবে। তখন ধরব খপ করে
মন্তব্য করতে লগইন করুন