শত্রু ২
লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া মুকিম ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১১:৫৮:৪৪ রাত
বলছিলাম, শয়তান হচ্ছে আমাদের সত্যিকার শত্রু। এই শয়তান কখনোই প্রকাশ্য কোন অবয়বে তাঁর সামনে বা পিছনে সাইনবোর্ডে এটা লিখে রাখে না-
" সাবধান !আমি শয়তান! আমি তোমাদের শত্রু"। বরং সে লুকিয়ে , অতি সন্তর্পনে আমাদের ধোকায় ফেলে দিয়ে তার হামলার শিকার করে নেয়।
আমাদের যদি শত্রুর ক্ষমতা ও ক্ষিপ্রতা জানা থাকে তাহলে শত্রু থেকে রক্ষা পাওয়া অনেকটাই সহজ হবে। আর এর জন্য সঠিকভাবে শত্রু সংক্রান্ত নির্ভুল তথ্য জানা থাকা চাই, আমরা ই জিতব এরকম দৃঢ় মনোবাসনা থাকা চাই! আর এখানেই আমাদের দুর্বলতা কাজ করে। আমরা অনেকেই আসল শত্রুকে সনাক্ত করতে পারি না অথবা শত্রু সম্পর্কে সঠিক তথ্যটাই জানি না!
আমি একবার আমার কিছু পরিচিত বোনদের প্রশ্ন করেছিলাম, শয়তান কি ফেরেশতা ছিল? সবাইকে দোদুল্যমান অবস্হায় পেয়েছিলাম, কেউ গ্যারান্টি দিয়েই বললো ফেরেশতা ছিল, আবার কেউ ফিফটি ফিফটি অবস্হান নিলো! আবার কেউ বলল জ্বিন ও না ফেরেশতাও না, শয়তানপ্রজাতি ই ওদের আলাদা বৈশিষ্ট্য!
কিছুটা কষ্টলাগলেও বুঝতে না দিয়ে বললাম, আমাদের এই বিষয়টা অজানা থাকর পিছনে কারন হয়তো এটা যে,আমরা ছোট বেলায় ঠিকই সুর করে পড়েছি -আমানতু বিল্লাহি, ওমালাইকাতিহী, ওয়াকুতুবিহী..... মুখস্হ করেছি কিন্তু কোনদিন হয়তো অর্থ পড়িনি, বুঝে এর সঠিক মর্ম বা ব্যাখ্যা পড়িনি! ঈমানের যে গুরুত্বপূর্ন বিষয়গুলোর উপর জ্ঞান অর্জন করা জরুরি তা করলে এই চরম বিভ্রান্তি থেকে অনেকটাই বের হওয়া সম্ভব হত আমাদের!
ফেরেশতা, জ্বিন এবং মানুষ এই তিনটি সৃষ্টি নিয়ে যদি আমরা একটু ভাবি সহজেই আমাদের এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর পেয়ে যাব।
ফেরেশতাগন আল্লাহর এক অপূর্ব সৃষ্টি।উনাদের সৃষ্টি করা হয়েছে নূর থেকে। অসংখ্য ফেরেশতা নিয়োজিত আছেন আল্লাহর আদেশ পালনে উনারা কখনোই আল্লাহর অবাধ্যতা করেন না। অবাধ্যতা কি সেটাই উনারা জানেন না! সকল সময়ই উনারা আল্লাহর অনুগত। মানবিকচাহিদাগুলো থেকে ফেরেশতাগন মুক্ত!
জ্বিনজাতিদের আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন আগুন থেকে। এরা একদিকে মুসলিমজ্বিন অপরদিকে অমুসলিম জ্বিন হয়ে থাকে। এদের মানুষের তুলনায় এটুকু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য যে এরা অপ্রকাশ্য, যেকোন অবয়বে এরা রুপ ধারন করতে পারে, যেকোন স্হানে মুহূর্তেই চলে যেতে পারে। কিয়ামতের দিন এদের জবাবদিহিতা হবে , এদের জন্য জান্নাত ও জাহান্নাম রয়েছে।
অপর দিকে আমরা মানুষ, আমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে মাটি থেকে। আমাদের দেয়া হয়েছে সমস্ত সৃষ্টির মাঝে সর্বোচ্চ মর্যাদা। একটি অমূল্য নিয়ামত দেয়া হয়েছে সেটি হলো বিবেক! পৃথিবীতে মানুষ এবং জ্বিনজাতি কে পাঠানোই হয়েছে একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করতে। আমাদের ভাল মন্দের হিসাব আছে, পরকাল আছে, জান্নাত ও জাহান্নাম আছে।
এখন এই তিন সৃষ্টির দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলেই আমরা বুঝতে পারি শয়তান কোন প্রাজাতির তাইনা? শয়তানের ফেরেশতা দের দলভুক্ত হওয়ার প্রশ্নই আসে না, কেননা শয়তান যদি ফেরেশতাদের কেউ হতো , আল্লাহ যখন সকল ফেরেশতাগন দের বললেন আদম আলাইহিসসালামকে সিজদা করতে তখন শয়তান ও সিজদা করত, কিন্তু কোরআন থেকে আমরা জানি, সমস্ত ফেরেশতাগন সিজদা করলেও শয়তান সিজদা করেনি! ফেরেশতাগন কখনোই অবাধ্য হন না! অথচ শয়তান অবাধ্য হয়েছিল! এখন নিশ্চয়ই আমাদের মনে প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে কেন আমরা শয়তান বলছি জ্বিন বলছি না? যে বিশেষ জ্বিনটি আদম আলাইহিসসালামকে কে সিজদা করেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলো ঠিক তখন থেকেই একে শয়তান( ইবলিস) নামে অভিহিত করা হয়েছে। আর শয়তান মানেই হলো অবাধ্যকারী, সীমালংঘনকারী! আশাকরি আর কখনো আমরা এমন ভুল আমাদের আকিদায় বাঁচিয়ে রাখবো না , সবসময় মনে রাখবো শয়তান জ্বিনজাতিদের অন্তর্ভুক্ত। আর এই জ্বিনজাতিদের একটা বিশেষ অংশ -শয়তান ও তাঁর বাহিনী আমাদের চির শত্রু। শয়তানের চ্যালেন্জ সে বনী আদমের বংশধরদের আল্লাহর অবাধ্যকারী হিসেবে কুমন্ত্রনা দিবে, সঠিক পথচ্যুত করবে, জাহান্নামে তার সাথে দলভারী করবে! এখানেই শয়তানের সাথে বনীআদমের চূড়ান্ত সংঘর্ষ!
এটুকু বলার পর মেয়েদের দিকে তাকালাম, ওরা ওদের উত্তর পেয়ে সন্তুষ্ট নেত্রে লজ্জামিশ্রিত মৃদুমন্দ হাসির হাওয়া বইয়ে দিলো আলহামদুলিল্লাহ!
তো আদরের মেয়েরা, আমরা তো আমাদের শত্রুর পরিচয় জানলাম, এখন আমাদের জানতে হবে,কিভাবে শয়তান আমাদের ওয়াসওয়াসা দেয়, শয়তানের গতিবিধি, ফাঁদ, চক্র এবং ছড়িয়ে রাখা বিস্তীর্ন জাল সম্পর্কে।
হঠাৎ তাজরি বলে উঠলো, শয়তানের যেহেতু এমন কিছু ক্ষমতা আছে -অদৃশ্য হওয়া, উড়ে যাওয়া আমরা কিভাবে ওদের সাথে লড়াই করব?
লড়াই কিন্তু হাতে পিস্তল, তীর, বল্লম নিয়ে হবে না মায়েরা! লড়াই হবে নফসের সাথে, বিবেকের সাথে, ঈমানের সাথে কুফরের সাথে! আর এটা কি জানো আমাদের প্রত্যেকের সাথেই একটি করে জ্বিন আছে?
একটা ছোটখাট ভূমিকম্পের বিষ্ফোরন ঘটে গেলো! সবাই যার যার শরীরের দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করলো ঠিক কোথায় আছে জ্বিনটি!
এবার ফারিয়া বলল,আমাদের সাথেই যেহেতু জ্বিন আছে তাই আমাদের আর কি দোষ,আমাদের দিয়ে যেসব গুনাহ হয়ে যায় সব দোষ ঐ জ্বিনের!
কোনরকম হাসি চেপে বললাম, সিদ্ধান্ত টা তোমাকে নিতে হবে,তুমি কি তোমার সত্বাকে বিনা মোকাবেলায় শত্রুর হাতে তুলে দিবে?
সবাই সমস্বরে বলে উঠলো, না এটা আমরা অবশ্যই করতে চাইনা!
সবচাইতে মনোযোগী ছাত্রী নুজহাত গম্ভীর ভাবে বললো,তাহলে আমাদের এই কঠিন লড়াইয়ে টিকে থাকার অস্ত্র কি ?
কোরআন এবং সুন্নাহর উপর আমল করে যাওয়াই একমাত্র রক্ষাকবচ! আমরা সামনের ক্লাসে এটা নিয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ!
বিষয়: বিবিধ
১৩৪২ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
শয়তান সারাক্ষণ নানান ধরণের মানসিক রোগের ভাইরাস নিয়ে সদা প্রস্তুত থাকে! বার বার রোগাক্রান্ত হবার পেছনে কারণ তো আসলে এটাই তাই না? মনের মধ্যে সারাক্ষণ অসুখ ছড়াতে তৈরি শয়তান! তাই মনেরও চাই ভ্যাকসিন! আর মনের বিরুদ্ধে সার্বক্ষণিক এক যুদ্ধে একমাত্র ভ্যাকসিন বা রক্ষাকবজ হচ্ছে শরীয়ত!
আমাদের অভিভাবকদের উচিত সন্তানদেরকে মনের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ যাতে লড়ে যেতে পারে সেই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় রসদ সংগ্রহ করা!
আবদার রাখার জন্য এত্তোগুলা লাভ ইউ......
কি যে করি আমার বানান আর ভুল শব্দ প্রয়োগ নিয়ে!!!
তোমাদর দুজনার উপস্হিতি সত্যি অনেক অনেক ভালোলাগা রেখে গেলো !
অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এটি। আপনার সুন্দর লেখনীর ছোঁয়ায় বিষয়টিকে চমৎকার করে ফুটিয়ে তুলবেন এই দোয়া করছি।
ভাইয়ার কাছ থেকে আশাব্যান্জক মন্তব্যের পাশাপাশি সুন্দরভাবে মানসম্মত লিখার পরামর্শও আশা করছি!
আল্লাহ আপানাদের সবাইকে উত্তম অবস্হায় রাখুন!জাযাকাল্লাহু খাইর!
আমার ধারাবাহিক এই শব্দের সাথে প্রচন্ডরকম অ্যালার্জি কাজ করে !এখনো ভয়ে আছি কখন লিখার ইচ্ছা উবে যায় ! প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম সেই ধারাবাহিকের কথা!
ইনশা আল্লাহ! দোআ করবেন বেশীইইই করে আমার জন্য!
বারাকাল্লাহু ফিক! শুকরিয়া ও শুভকামনা রইলো
শয়তান আসে বন্ধু বেশে কিন্তু যে চরম শত্রু।
এবং সে তাদের উভয়ের নিকট শপথ করেছিলো যে, সে তাদের শুভাকাঙ্খী পরামর্শদাতা।( আরাফ ২০)
কোরআনের পাতায় পাতায় আদম আলাইহিসসালামের কথা বর্ননা এসেছে ১০টি সূরায় ৫০টির মতো আয়াতে,এছাড়াও শয়তানের প্রতারনার কথা এসেছে অসংখ্যবার যেন আমরা সাবধান হই কিন্তু তারপরেও আমরা ধোকায় পড়ে যাই!
অসংখ্য শুকরিয়া আপনাকে
মন্তব্য করতে লগইন করুন