শত্রু ১
লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া মুকিম ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৩:০৬:৪৪ রাত
একটি মেয়েকে অতি মূল্যবান একটি থলে দিয়ে বলা হলো,
"এই থলেটি সুরক্ষিত স্হানে পৌঁছে দেয়ার মাঝেই তোমার জীবনের স্বার্থকতা লুকিয়ে রয়েছে। সুতরাং যেভাবে পারো সময় নষ্ট না করে এই থলেটি যথাস্হানে পৌঁছানোর ব্যবস্হা করো!"
সুরক্ষিত স্হানটি একটি দুর্ভেদ্য দূর্গ! সেখানে পৌঁছতে হলে প্রয়োজন সঠিক দিক নির্দেশনা জানা এবং সেই বিপদসংকুল পরিবেশ পাড়ি দেয়ার জন্য নিখাদ অধ্যবসায়, ধৈর্য ও সাহস রাখা! যেহেতু মেয়েটির জীবনের প্রশ্ন এই মূল্যবান থলের সাথে নিহিত তাই যেভাবেই হোক থলেটি তাঁকে দূর্গে পৌঁছে দিতে হবে! কিন্তু পথে পথে ওঁত পেতে থাকা শত্রুবাহিনীর কথা তাঁকে ভাবিয়ে তোলে! কিভাবে সে এই ভয়াবহ পথ পাড়ি দিয়ে নিজেকে রক্ষা করবে? সে কি আদৌ পারবে শত্রু বাহিনীর মোকাবলা করে সুরক্ষিত দুর্গে পৌঁছতে?
এই টুকু বলে সামনে বসা মেয়েদের দিকে তাকিয়ে দেখি, বিষ্ফোরিত নেত্রে ভয়ে ভীত হয়ে সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে! চোখে চোখ পড়তেই সবার একযোগে প্রশ্ন, তারপর কি হলো? মেয়েটি কি করলো?
আমি মৃদু হসে বললাম, সেই রহস্য উদঘাটনের দায়িত্ব তোমাদের! এখন বলো কি করল মেয়েটি নিজের জীবনও বাঁচাতে পারবে আবার সেই সুরক্ষিত দূর্গেও নিরাপদে পৌঁছতে পারবে? তোমাদের সময় ৫ মিনিট।
শুরু হলো হলো ওদের গবেষনা! এখানে প্রতিটি মেয়েই টিন এজ বয়সী! তাই কৌতুহলের পাশাপাশি আ্যডভন্চারের ঘ্রানে আচ্ছন্ন হয়ে রহস্যের সমাধানে শলা পরামর্শ করতে থাকা মেয়েগুলোর দিকে তাকিয়ে আমি নিজেও বেশ মজা পাচ্ছিলাম!
ওদের ৫ মিনিট সময়ও লাগে নি! সবাই সমস্বরে বললো, শত্রুকে চিহ্নিত করতে হবে এবং শত্রুর পরিচয়, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, গতিবিধি, দুর্বলতা সবকিছু জানতে হবে! তারপর শত্রুর ফাঁদে পা না দিয়ে বরং শত্রুকে কুপোকাত করে সেই দূর্গে পৌঁছতে হবে মেয়েটিকে! তবেই মেয়েটি বাঁচতে পারবে এবং ওর মিশনও সফল হবে!
আমি বললাম, এই মেয়েটি এখানকার আমরা সবাই। আমাদের সবার কাছে আছে এই মূল্যবান সম্পদ - এই সম্পদ হলো আমাদের ঈমান! এখন এই মূল্যবান সম্পদ রক্ষা করে আমাদের পৃথিবীর দুর্গম পথ পাড়ি দিতে হবে!এই পৃথিবীতে আমাদের শত্রু শয়তান। তাই শয়তানের সাথে লড়াই করে টিকে থাকতে হলে আমাদের অবশ্যই শক্তি অর্জন করতে হবে। আমাদের জানতে হবে সঠিক কলাকৌশল, চিনতে হবে আমাদের শত্রুদের! আমরা যদি শয়তানের সাথে লড়াই করে জিততে পারি তবেই ঈমান ও আমল নিয়ে নিরাপদ দূর্গ তথা জান্নাতুল ফেরদৌস এ পৌঁছতে পারব ইনশাআল্লাহ!
এখন কে আমাদের এই সত্যিকার শত্রু? রিয়েল এনিমি? ভেরো নেমিকো?
অবাক হওয়ার সুযোগ ওরা আমাকে দেয় নি! মাশাআল্লাহ! শয়তান আমাদের সত্যিকার শত্রু- এটাই ছিলো সবার উত্তর!
যেহেতু শয়তান আমাদের শত্রু তাই আমাদের প্রথম দায়িত্ব আমাদের শত্রু -শয়তান সম্পর্কে সঠিক ধারনা রাখা। শয়তানের আক্রমন, ফাঁদ থেকে রক্ষার উপায় জানা! এখন তোমরাই আমাকে বলো এই শত্রু শয়তান সম্পর্কে আমরা কি জানি? এক এক করে সবাইকে শয়তান সম্পর্কে যার যা জানা আছে তা বলতে বলা হলে, ওরা যা বলল তা শুনে এবার আমি একেবারে হতভম্ব হলাম!
কেউ বলল শয়তানের আদি পরিচয় হলো সে একটা ফেরেশতা, সে জন্ম নিয়েছিলো জাহান্নামে, সেখানে সে যুগ যুগ ধরে ইবাদাত করে যার ফলে আল্লাহ আটকে পছন্দ করে জান্নাতে নিয়ে গিয়েছিলেন তারপর সে সকল ফেরশতাদের নেতা হয়েগিয়েছিলো! শয়তান মেয়েদের খুব পছন্দ করে তাই সে হাওয়া আলাইহিসসালামকে সহজেই ভুল পথে নিয়ে গিয়েছিলো! আদম আলাইহিসসালাম জান্নাত থেকে বিতাড়িত হন কারন শয়তান হাওয়া আলাইহিসসালাম কে বশ করেছিলো! আর বিতাড়িত হওয়ার সব দোষ হাওয়া আলাইহিসসালাম এর!
আর শুনতে চাইলাম না ! এতটুকু শোনা এবং হজম করাই আমার জন্য যথেষ্ঠ কষ্টদায়ক মনে হচ্ছিলো!
আসলে আমাদের মেয়েদের কতটুকুইবা দোষ? যেখানে আমাদের বড়দের অনেকেরই সঠিক জ্ঞান নেই শয়তান সম্পর্কে! অনেকে হয়তো হেসেই বলবেন এটা কি জানার কোন বিষয় হলো?
আমাদের সমাজের একটি বিশেষ অংশ ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনে ভীশন অনাগ্রহী, আর কিছু অংশ জ্ঞান অর্জনে আগ্রহী হলেও উনারা সঠিক তথ্যমৃদ্ধ বই থেকে জ্ঞান অর্জনের সুযোগ পাননি, কিছু অংশ বংশ পরম্পরায় শোনা আগের দিনের কিচ্ছাকাহিনী থেকেই ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করেন, এবং যে অংশটি সঠিক উৎসস্হল থেকে জ্ঞান অর্জন করেন, তাদের অনেকেই সেটা ছড়িয়ে দেন না বা সুযোগ পান না! যার ফলে আমরা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করছি, এ ক্ষতি শুধু দুনিয়াবী নয় আখিরাতেরও.....
[b]নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের শত্রু ; সুতারাং তাকে শত্রু হিসেবেই গণ্য করো। সে কেবলমাত্র তার অনুগতদের আহ্বান করে, যেনো তারা জ্বলন্ত আগুনের সঙ্গী হতে পারে।( ফাতির ৬)[/b
(লিখাটি কন্টিনিউ করার ইচ্ছে আছে ইনশা আল্লাহ! এভাবে অসমাপ্ত রাখা সঠিক হচ্ছে না তথাপি অনিচ্ছাসত্তেও বাধ্য হচ্ছি ! আশাকরি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন !)
বিষয়: বিবিধ
১৫৩৯ বার পঠিত, ২৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেকদিন পর তোমাকে ব্লগে দেখলাম। ভালো আছ তো আপু?
আলহামদুলিল্লাহ! শুকরিয়া আপুজ্বি!
আউজুবিল্লাহিমিনাশ শাইতনির রাজিম।
চরম ভাবে একমত , যাজাকাল্লাহ খায়ের
আমার তো এখন পোষ্ট লিখতে ইচ্ছে করছে " শয়তান Vs আমার ক্ষুদে শিষ্যকুল "। যখন ওদেরকে শয়তান সম্পর্কে জানিয়েছিলাম এত্তো মজার মজার সব কান্ড করেছিল। কিন্তু ওদের সেই ছেলেমানুষি প্রতিটি কান্ডই ছিল বেশ শিক্ষনীয়।
লেখাটি কন্টিনিউ করবেন অর্ডার দিচ্ছি(হাতুড়ি ঠুকে কলম ভেঙে )! পরের পর্ব পড়ার অপেক্ষায়! অনেক অনেক ভালোবাসা দোয়া ও শুভকামনা রইলো। জাযাকিল্লাহ......
অর্ডার না রিকোয়েস্ট?
ফি আমানিল্লাহ!
তোমার জন্যও অনক অনক দোআ ও ভালোবাসা রইলো
হাহাহা... অর্ডারও না রিকোয়েস্টও না! আপুনির কাছে আবদার!
আমরা শিক্ষিত হওয়ার যে ভুল অর্থ করছি সেটাই আমাদের মধ্যে সৃষ্টি করছে অসাবধানতার।
তোমার সুন্দর মন্তব্য ও উপস্হিতির জন্য আন্তরিক শুভেচ্ছা, দোআ ও ভালোবাসা রইলো!
রুপকতার মেয়েটির সাথে পার্থক্য হলঃ শয়তান নামীয় শত্রুর ক্ষমতা-কলা কৌশল,তার থেকে সুরক্ষা পেয়ে স্বীয় ঈমান-আমল সঠিক রাখার পথ-পদ্ধতি আমরা পুর্ণ জানা সত্বেও অবহেলায় তা করতি না,ফলশ্রুতিতে আমরা শয়তানের পাল্লায় পড়ে যাচ্ছি!!
০ ঐ প্যারার ২য় অংশটা যে সঠিক নয় তা পবিত্র ক্বুরআনে আল্লাহর এক বানীতেই বুঝা যায় যা এমন - ''অতঃপর শয়তান তাদের উভয়কেই প্রলুব্ধ করলো ।''
প্রথম অংশটা সম্পর্কে এরকমই জানতাম । তবে এটা খুব জানতে ইচ্ছে করে যে , জ্বীনদের একজন কিভাবে আল্লাহর এত নৈকট্য লাভ করলো ? শয়তানের পূর্ব নাম না কি আযাযিল ছিল ?
(আল্লাহ আমায় মাফ করুন , আল্লাহই সর্বজ্ঞানী)
প্রথম প্যারার উত্তরটুকু আমি ২য় পর্বে দিয়ে দিয়েছি একটু যদি মেহেরবানী করে নজর বুলাতেন!
জ্বীনদের একজন কিভাবে আল্লাহর এত নৈকট্য লাভ করলো ? শয়তানের পূর্ব নাম না কি আযাযিল ছিল ?আমি তাফসীর থকে যতটুকু বুঝত পরেছি তা হলো-
সেই সময়ের কথা একটু স্মরণ কর যখন তোমাদের রব ফেরেশতাদের বলেছিলেন , “আমি পৃথিবীতে একজন খলীফা- প্রতিনিধি নিযুক্ত করতে চাই ৷” তারা বললো , “আপনি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে নিযুক্ত করতে চান যে সেখানকার ব্যবস্থাপনাকে বিপর্যস্থ করবে এবং রক্তপাত করবে?(বাকারা ৩০)এখানে ফেরশতাগন যে উত্তর দিয়ছেন তার তাফসীরে জানা যায়, আদম আলালাইহিসসালামর বহু পূ্র্বেই জ্বীন জাতীদের সৃষ্টি করা হয়েছিল পৃথিবীতেও পাঠানো হয়েছিলো। কিন্তু তারা পৃথিবীতে এসে ফিতনা ফাসাদে মত্ত রইলো, তারপর তাদের উচ্ছেদ করা হলো ফেরেশতাদের দ্বারা। এখান থেকেই একটি জ্বীন ফেরেশতাদের সংগি হয়েছিল। পরবর্তীতে এই জ্বীন এর নাম হলো ইবলিস! স্বয়ং কোরআনে ইবলিস হিসেবেই তার পরিচয় দেয়া হয়েছে।
আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু এর একটি বর্ননায় পাওয়া যায় তাঁর নাম আযাযিল ছিল! আমি হাদীসটির সঠিক সনদ খুঁজে পাই নি! আর কোরআনে আযাযিল নামে আসে নি!
আল্লাহু আ'লাম -আল্লাহ সর্বজ্ঞানী!
আপনি নবীদের কাহিনী-আসাদুল্লাহ গালিব এর লিখা বইটি পড়তে পারেন। অনেক অনেক শুকরিয়া ভাই আপনাকে! আমাদের জন্য দো আ করবেন! আমরা বিভ্রান্ত না হই, সয়হিক পথে অবিচল থাকতে পারি। জাযাকাল্লাহু খাইর।
আপনারা সবাই ভালো আছেনতো? আমার জন্য দোআ করবেন আপু।
আল্লাহ'র অশেষ মহেরবানী আলহামদুলিল্লাহ আমরা সবাই ভালো আছি! আল্লাহ তোমাদেরো ভালো রাখুন! ফি আমানিল্লাহ!দোআ ও শুভকামনা রইলো
মন্তব্য করতে লগইন করুন