"প্রতীক্ষার প্রতিচ্ছবিতে তুমি"
লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া মুকিম ০১ অক্টোবর, ২০১৪, ০৭:৫০:৪৭ সন্ধ্যা
এ্যাই তুই নাকি প্রেমে পড়েছিস? কথাটা কানে আসা মাত্র গরম চা দিয়ে আরেকটুর জন্য জিভটা পুড়েনি সাদাতের! ঘুরে বড় বোন সায়মার দিকে তাকায়-
এই তথ্য তোমাকে কে দিল আপু? বিষ্মিত হয়ে প্রশ্ন করে সাদাত!
কে আর? বাসার তথ্যমন্ত্রী তোর একমাত্র দুলাভাই। হেসে বলেন সায়মা।
তাহলে দুলাভাই একদম ভুল তথ্য দেয় আপু ! আজ এখনো আসছেন না কেনো দুলাভাই ? শালা -দুলাভাইয়ের ভীষন ঝগড়া হবে আজ বলে দিচ্ছি আগেই তোমাকে আপু! কৃত্রিম রাগ দেখায় সাদাত!
শুনলাম ইদানিং নাকি খুব কবিতা লিখছিস, আর ফেবুর ওয়ালে সেগুলো আসা মাত্রই হাজার হাজার মেয়েদের লাইক পড়ছে সেখানে- বলতে বলতে আড় চোখে ভাইয়ের দিকে তাকান সায়মা ।
আপু একটু কবিতা লিখলেই কি কেউ প্রেমে পড়ে নাকি ? আর তোমার ভাইয়ের হৃদয় গলাতে পারে এমন মেয়ের লাইকের জন্ম এখনো হয় নি সুতরাং কোন টনশন করো না তো তুমি!
শোন, সময়ের চাকা ঘুড়ার সাথে সাথে যুগের ধরন পাল্টিয়েছে , বদলিয়ে গেছে মানুষের রুচি। সদা কর্মতৎপর মানুষের জীবনে যোগ হয়েছে নিত্য নতুন চাহিদা। আর শয়তানও কিন্তু থেমে নেই , শয়তানের করা চ্যালেন্জ কে বিজয়ী করতে শয়তানও সদা তৎপর ! সবাইকে পথভ্রষ্ঠ করার নিঁখুত পরিকল্পনা নিয়ে ফাঁদ পেতে আছে শয়তান! কোনদিক দিয়ে যে হামলা করে বসে সেজন্যই বলছিলাম সবসময় সাবধান থাকতে রে ভাই!
শোন, একটা সময় বখাটে ছেলেরা মেয়েদের বিরক্ত করতো, আর এখন কোনটা বখাটে কোনটা ভালো সেটা বোঝার কোন উপায় নেই। এখন শুনি মেয়েরাও নাকি ছেলেদের বিরক্ত করে ..। আর প্রেম ট্রেম না করলে নাকি স্মার্টই বলে না কি যুগ রে! একটু তিরষ্কারের স্বরে বললেন সায়মা!
এইতো যেমন স্কুল, কলেজ ভার্সিটি এগুলো শিক্ষাকেন্দ্র হলেও আজ যেনো এগুলো শুধু উন্মুক্ত প্রেম বিচরন ক্ষেত্র হয়ে পড়েছে! ডিজিটাল যুগতো ছেলেমেয়েদের আরো বেহায়া করে তুলেছে!
আপু, আমি এখন স্কুল গোয়িং কোন শিশু না, অনার্স কমপ্লিট করেছি, পার্টটাইম জব করছি, মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছি আমি এখন বুঝি কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ ! দেখ ওরকম কিছু হবে টবে না আমার! লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বলে সাদাত!
শোন, ভুল গুলি কিন্তু এভাবেই শুরু হয়। পড়াশোনা প্রায় শেষ, চাকরি করছিস হাতে কিছু নগদ টাকা আসছে, হাতে দামী মোবাইল সেখানে ভাইবার- হোয়াআটসাপ, বাসায় ল্যাপটপে ফেসবুক- টুইটার- ব্লগ, অফিসে পাশের ডেস্কে সুন্দরী কলিগ, ভার্সিটিতে পাশের বেন্চে সুন্দরী সহপাঠী এত কিছু যেখানে থাকে কিছুটা ভুলের চান্স থেকেই যায়! কিন্তু সবার জন্য না, সবাই ভুল করে না, করতে পারেনা কারন আমাদের বিবেক। এই বিবেক কে সময়ের স্রোতে হারিয়ে যেতে দেয়া যাবে না বুঝলি?
আচ্ছা দুলাভাই তাহলে আমার ফেবুতে ঘুর ঘুর করে এই পঁচা তথ্য তোমাকে দিয়েছে?
নাহ, তোর দুলাভাই বলেছে এমনিতেই আর আমিই বিষয়টা নিয়ে তোর সাথে কথা বলতে চাচ্ছিলাম এই আর কি!
শোন, শয়তান কিন্তু তোকে বলব না প্রেম করো, শুধু কিছু উপসর্গ তৈরি করে দিবে যেমন ধর,তোকে প্রলোভন দেখাবে জীবনের ২৩টি বসন্ত একা একা পার করে দিচ্ছ? অথচ তোমার চেয়ে মেধায় ও যোগ্যতায় অনেক কম হয়েও তোমার পাশের বন্ধু সুন্দরী গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরছে। আর তুমি? একটা গার্লফ্রেন্ডও নাই তোমার? সবাই কত সুন্দর সময় কাটায়? অবসরে পার্ক ঘুরত যায়, মোবাইলে, ফেবুতে মেসেজ লিখে আরো কতকিছু! আর তুমি? নিঃসংগ একাকী বসে শুধু কবিতা লিখ?
মেয়েদের সাথে সামন্য হাই হ্যালো-একটু আধটু কথা বললে কিছু হয় না, এতো এতো কমেন্ট একটু জবাব দিলেও তো পার! একটু খানি মেসেজ বিনিময় তো সময়ের দাবী হয়ে দাড়িয়ছে বড্ড বেশি সেকেলে তুমি - এভাবেই শয়তান ওয়াসওয়াসা দেয় বুঝলি? ছোট ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলেন সায়মা।
আপু বললাম তো, আমার হৃদয় নামক ঘরের সামনে দিয়ে আজ পর্যন্ত বহু মেয়ে কড়া নেড়ে গেছে দরজা খুলি নি কারন উপযুক্ত চাবি সেই মেয়ের কাছে ছিল না । আমি তো আছি সেই চিরন্তন সময়ের অপেক্ষায় যে কি না আমার মতোনই হৃদয় মন শরীর সবকিছু দিয়েই পবিত্রতা রক্ষা করে চলেছে, শয়তান এর ভয়াবহ ছোবল থেকে নিজকে বাঁচিয়ে রেখেছে। কঠোর সাধনা করেছে উপযুক্ত জীবনসংগী পাওয়ার জন্য আমি এমনি একজনের জন্য আমার সকল বসন্ত গুন গুনে তুলে রাখছি, জমা করে রাখছি সব মেসেজ-সব আনন্দ- বেদনার একাকী প্রহরগুলো!
এবার হাতের কাজটি রেখে ছোট ভাইয়ের পাশে এসে বসলন সায়মা। বললেন, বুদ্ধিমান ভাইয়ের মতোন কথাটি বলেছিস ভাই! মানুষ আজকাল পবিত্রতার ব্যাখ্যা ভুলে গেছে রে! পবিত্রতা শুধু পোষাকে নয় বরংচিন্তায়, কথায় ও কাজে আবেগে যে পবিত্রতা তাই হচ্ছে আত্মিক পবিত্রতা! এটাই অর্জন করা দরকার।
আপু তোমরা শুধু দোআ করো আমি যেনো সঠিক পথে থাকতে পারি! ফিতনার হাওয়া যেনো না লাগে আমার গায়ে!
সেদিন একটা ইসলামিক প্রোগ্রাম দেখছিলাম, জানিসতো শায়খ মাহমুদুল হাসানের ভীশন ভক্ত আমি! উনার করা ইসলামিক প্রশ্ন উত্তর এর অনুষ্ঠানটি সহজে মিস করি না! খুব চমৎকার একটি ঘটনা বর্ননা করলেন শায়খ। তখন থেকেই ভাবছি তোকে বলব-
একবার এক দরিদ্র লোক মক্কায় তাওয়াফ করছিলো, এমন সময় হঠাৎ সে দেখলো সামনে একটি স্বর্নের গলার হার পড়ে রয়েছে। প্রথমে সে নিল না, পরে তার মনে চিন্তা আসলো তুমি নিজেও একজন দরিদ্র, তুমি যদি এটা নাও তোমার খুব উপকার হবে ! নিজের সাথে যুদ্ধ করে একপর্যায়ে লোকটি সেটা তুলে নিলো! এই সময় এক অন্ধ ব্যক্তি এসে জোরে জোরে বলল, তোমরা কি কেউ একটি স্বর্নের গলার হার পেয়েছো? আমি একটি হার হারিয় ফেলেছি! আমাকে একটু সাহায্য করো তা খুঁজে বের করতে...
এবার ঐ লোক ভাবলো, আমি কি তা ফিরিয়ে দিব না নিজের কাছে রাখবো? আমি যদি নিজের কাছেও রাখি ঐ লোক দেখবে না আবার আমার কিছুটা অভাবও মিটবে! কিন্ত তা হারাম হবে! অবশেষে লোকটি গলার হারটি ঐ বৃদ্ধ লোকটিকে ফেরত দিয়ে দিলো! বৃদ্ধ খুব খুশি হলো এবং লোকটির জন্য দোআ করে দিলো!
অনেকদিন পর লোকটি এক গ্রামে আসলো, সেখানের মসজিদে সে ইমামতি করলো, লোকেরা তাকে খুব পছন্দ করলো এবং বলল তুমি যদি রাজী থাকো আমরা তোমাক দ্বীনদার এবং সুন্দরী এক মেয়ের সাথে বিয়ে দিতে পারি ফলে তুমি সবসময় এখানেই থাকতে পারবে। লোকটির বিষয়টি পছন্দ হলো অতঃপর সে বিয়ে করলো!
বিয়ের দিন রাতে লোকটি দেখলো তার অপরুপা স্ত্রী এবং গলায় সেই হারটি যা সে খুঁজ পয়েছিলো! স্বামী জিগ্গেষ করলো এই গলার হার তুমি কোথায় পেয়েছো? স্ত্রী বলল- আমার বাবা অনেক আগে একবার হজের সফরে গিয়েছিলেন তখন তিনি এটা আামার জন্য এনেছিলেন! স্বামীর আর বুঝত বাকি রইলো না মূল ঘটনা! সে শুধু ভাবলো আমি যদি এই হারটি তখন নিতাম সেটা হতো হারাম এবং চুরি আর আমি সেটা করিনি ফলে আজ আমি সেই হারটি তার মালিক সহ হালাল অবস্হায় পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ!
সাদাত অনুগত ভাইয়ের মতোন বড় বোনের কাছে থেক ঘটনাটা শুনছিল, এক অদ্ভুত তৃপ্তিতে তার সমস্ত হৃদয় মন ছুঁয়ে গেলো, সত্যিইতো- সুবহানাল্লাহ! সে ভাবছিলো আমিও অন্যায় বা হারামভাবে কোন সম্পর্ক না গড়লে আল্লাহ এভাবেই আমাকে আমার জীবনসংগীনীকে হালাল সৎ ও পবিত্র উপায়ে আমাকে উপহার দিবেন! নিশ্চয়ই আল্লাহ'র ওায়াদা সত্য তার মনে পড়লো সূরা নূরের সেই আয়াতটি...
(এবং সচ্চরিত্রা নারী সচ্চরিত্র পুরুষের জন্য এবং সচ্চরিত্র পুরুষ সচ্চরিত্রা নারীর জন্য -নূর ২৬)
(উৎসর্গ- অনলাইনজগতের সকল ভাই- বোনদের জন্য স্পেশালি প্রতীক্ষারত ভাই-বোন )
বিষয়: বিবিধ
১৭৭১ বার পঠিত, ৫০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
দারুণ লিখেছেন আপু। আপনার লেখার জজমা আছে বৈকি।
ইস!বেলায় বেলায় অনেক সময় পার হয়ে গেলো! না হলে আপনার কথিত- "স্পেশালি প্রতীক্ষারত ভাই-বোন"- হতে পারলাম না।
শুভেচ্ছা রইলো অনেক অনেক।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
বারাকাল্লাহু ফিক!
সামান্য কিছু বিষয়ে শিথিলতা অনেক বড় বিপদের কারন হতে পারে।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে আত্মিক পবিত্রতা অর্জন করার তৌফিক দান করুক! আমীন!
আপনার কমেন্টএ “আল্লাহ্” শব্দটার বানান একটু অন্যরকম হয়েগেছে।
একটু বুঝিয়ে বললে অনেকের উপকার হতো যেমন আমার "মিউকেন" নামের একটা বিলাই আছে তার খুব উপকার হতো
আল্লাহ আপনাদের ভালো রাখুন! শুভকামনা ও শুকরিয়া রইলো
আজকের এই মূল্যবানদিনে দোআয় শামিল রাখার আবেদন রইলো
আল্লাহ আমার ভাইটিকে উত্তম পাথেয় ইলম, তাকওয়া এবং আখলাকে হামিদাতে ভূষিত করুন! দুনিয়া ও আখিরাতে উত্তম মর্যাদা দান করুন!নিরাপত্তা ও সুস্হতা দান করুন! আমীন ইয়া রব্বুল আলামীন!
নিজের জন্য দোআ করতে ভুলে যেও না ভাই!
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আরাফার দিন অপেক্ষা এমন কোনো দিন নেই, যেদিন আল্লাহ সর্বাধিক বেশী সংখ্যায় বান্দাকে জাহান্নাম-মুক্ত করেন।”
[মুসলিম ১৩৪৮, নাসায়ি ৩০০৩, ইবন মাজাহ ৩০১৫]
ঈদ কেমন কাটলো ভাই? আওন কেমন আছেন? দেখা হয়েছিলো?
Allah apnakeo amon shundor shundor golpo likhar taufiq arro bariye dik.
idaning blog a ashai hoyna.
Alhamdulillah valo achi. Apni?
Apnakeo shuveccha ...
Barakallahufikum
মন্তব্য করতে লগইন করুন