চন্দ্রীয় পরশে
লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া মুকিম ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৫:১০:২৭ সকাল
রান্নাঘর সংলগ্ন বারান্দা থেকে আকাশটা পরিষ্কার দেখা যায়! বাসার পিছন দিকটা এমনিতেই বেশ নিরিবিলি! আর বাগানের বিশাল বড় বড় গাছগুলো পাঁচিলের মতো আড়াল করে রেখেছে বাহির থেকে।গত দুদিন ধরে অঝোরে বৃষ্টি হওয়াতে চারিপাশে সতেজতার ছোঁয়া!
মাগরিবের সালাতের পর বারান্দায় এসে দাঁড়ানো একটা রুটিনে পরিনত হয়েছে ফাতিমার। আজো তার ব্যতিক্রম হয় নি, রেলিংএ ভর দিয়ে মুগ্ধ নয়নে সূর্যাস্তের বিদায়ের পরের মুহূর্ত গুলো উপভোগ করছিলেন। ধোঁয়াশা ধূষর -রক্তাভ বর্নের আকাশটা ধীরে ধীরে কালচে বর্ন ধারন করলো,মেঘেদের ছোটোছোটি , তারাদের লোকোচুরি এর মাঝেই ভেসে উঠলো প্রায় ক্ষয়ে যাওয়া আধখানা চাঁদখানি!
মনে পড়লো ছোটবেলায় চাঁদ নিয়ে বান্ধবীদের কাছ থেকে জেনেছিলো চাঁদের বুড়ির সুতোকাটার অদৃশ্য মিশন সম্পর্কে! সেই দিনগুলো আর আজকের দিনে কতো বিস্তর ব্যাবধান! আনমনা হয়ে ভাবতে হঠাৎ পিছন থেকে হাতের স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠলে মিনহাজ (ফাতিমার হাজব্যান্ড ) সালাম দিয়ে তার পাশে এসে দাঁড়ালো।
আবারো গবেষনায় নিমগ্ন হয়ে আছো?
মৃদু হেসে ফাতিমা বললো-গবেষনা কোথায়, সৃষ্টিজগত নিয়ে চিন্তাশীলতা বলতে পারো!
তা আজ চিন্তাশীলতায় নতুন কোন আবিষ্কার যোগ হলো তোমার ভাবনায়?
আহামরি কিছু না, আজকের চাঁদ আমায় আবারো মনে করিয়ে দিলো ইব্রাহীম (আঃ) এর ঘটনা! ইব্রাহীম আঃ তো এই চাঁদের সৌন্দর্য দেখেই একবার ভাবেছিলেন এই চাঁদই বুঝি উনার প্রভু, আবার চাঁদ যখন বিদায় নিলো সূর্য এলো ভাবলেন সূর্য ই হবে উনার প্রভু! ক্ষনস্থায়ী উদীয়মান চাঁদ- সূর্য কোনটাই যে উনার মহান রব নন উনার পবিত্র বক্ষ সহজেই তা বুঝে গিয়েছিলো! অথচ আজকের আমাদের দিকে তাকালে আমরা হতাশ হতে বাধ্য হই আমাদের কর্মকান্ডের জন্য! ছোটবেলায় আমরা চাঁদ সম্পর্কে জেনেছি সেখানেএক সুতো কাটা বুড়ি আছে আর আজকালকের ছেলেমেয়েদের চাঁদের দিকে তাকানোর সময় কই? আর থাকলেও তারা চাঁদ দেখে আর তুলনা করে অশররী ভাম্পায়ার এর সাদৃশ্য নিয়ে!
আমাদের দেশের সমাজব্যবস্থাটা যদি একটু ইসলামীক মানে উন্নত হতো তাহলে শিশু কিশোররা ছোট থেকেই নবী রাসুলদের জীবনী, উনাদের দৃষ্টিভংগি, উনারা কিভাবে প্রভুকে চিনেছেন তা জানতে পারত! অলীক কাহিনী দিয়ে মস্তিষ্ক ভরপুর না থেকে বরং প্রকৃত সৃষ্টিশীলতাই তাদের আচরনে প্রকাশ পেত!
হুম, কিন্তু শুধু সমাজের মানুষদের একতরফা দোষ দিয়ে লাভ নেই, আমাদের সমাজে কিছু মানুষতো আছি,আমরা যারা চাই ইসলামী অনুশাষনে ছেলেমেয়েদের গড়ে তুলব আমরাই যদি চেস্টা চালিয়ে যাই অন্তত আমাদের ছেলেমেয়েরা সঠিক আদর্শে বড় হতে সাহায্য করতে পারব, আমাদের পরিচিত বন্ধু মহলে যারা ইসলামকে ভালোবাসে তাদের নিয়ে একটু পরিকল্পনা করা যায় তারা একটু একটু এগিয়ে এগিয়ে এলে এভাবেই তো সমাজের পরিবর্তন হবে তাইনা? চিন্তিত কন্ঠে জবাব দিলো মিনহাজ!
আমি তোমার কথার সাথে সম্পূর্ন একমত, শুধু এটুকু বলতে চাই দেখো আজ কজন মুসলিম চন্দ্রীয় ক্যালন্ডার এর হিসেব রাখি, কয়জন আরবী মাসের দিন ,তারিখ মনে রাখি , আরবী মাসগুলো ঠিকভাবে বলতে গেলেও অনেকেই আটকে যাবো, আমাদের মুসলিমদের অবস্থা এই হলে ছেলেমেয়েরা শিখবে কোথা থেকে?
তোমার কথায় যুক্তি আছে আসলে কি আর বলব, আমাদের সমাজের অনেক মানুষ এটাই জানেনা ব্যাংক থেকে যে ইন্টারেস্ট নেয়া হয় তা হারাম! |এই জরুরী বিষয় নিয়েই যেখানে অজ্ঞতা সেখানে এ ধরনের বিষয়ে অজুহাত তো থাকবেই!
আমি সমাজের মানুষদের দিকে অংগুলিনির্দেশের আগে নিজের ও নিজের পরিবারের মাঝেই ইসলামী সচেতনতা বাড়াতে চাই! আমাদের কর্তব্যগুলো আরো সঠিকভাবে পালন করা হচ্ছে কিনা মনোযোগী হতে চাই, নিজেকে গড়লেই সন্তান, পরিবার অতঃপর সমাজ গড়া সম্ভব! দেখো এই ক্ষয়ে যাওয়া চাঁদখানি শুধু ক্ষয়ে ক্ষয়ে তার সৌন্দর্যই বিতড়ন করছে না আমাদের ক্রমাগত মেসেজ দিয়ে যাচ্ছে! আজো কত মানুষ চা্ঁদ নিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে থেকে শুধু কবিতা আর কাব্যই রচনা করে যায় আর আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে আল্লাহর অবধ্যতায় নিমগ্ন হয় আবার অনেকেই চাঁদ দেখে , দেখে মহান রবের কথাই স্মরন করে। বারোটি মাসের মাঝে চারটি সন্মানিত যে মাসগুলো আছে তার খোঁজ করে! নিজেদের আমলনামাকে সুন্দর করার চেস্টা করে!
আচ্ছা, বাচ্চাদের সাথে যে জিলহজ্ব মাসের প্রথম ১০ দিনের আলোচনা করার কথা ছিলো সেটা কি করেছো?
হুম, করেছি আলহামদুলিল্লাহ! শুধু জিলহজ্ব মাস না বরং ইবরাহীম আঃ এর জন্ম, বেড়ে ওঠা, উনার শৈশব, হিজরত, ঈমানের অগ্নি পরীক্ষা, সন্তানলাভ, হাজেরা আঃ এর তাওয়াক্কুল, সন্তান কোরাবানীর পরীক্ষা, সাফা- মারওয়া, জমজম কুপ, হজ্ব মোটামোটি সব কিছু নিয়েই আলোচনা করেছি প্রতিবারের মতোন, তবে শুধু আলোচনা নয় এর শিক্ষা যেনো সবাই ধারন করতে পারি সেই দোয়া আর প্রচেস্টাই তো কাম্য!
ওদেরকে শুধু আলোচনা শোনানো নয় বরং পাশাপাশি আলোচনার প্রেক্ষিতে আমাদের বাস্তব জীবনে কিভাবে এই শিক্ষা কাজে লাগবে সেটার ব্যাপারে ওদের কাছ থেকে জিজ্ঞাসা করে জেনে নিতে হবে যেনো জীবনের পদে পদে ছড়িয়ে থাকা পরীক্ষায় ওরা উত্তীর্ন হতে পারে, ওয়াসওয়াসা দানকারী শয়তানকে পিছে ফেলে সামনে এগিয়ে যেতে পারে!
তোমার মেয়ে কি করেছে জানো? তার প্রথম কলেজের ক্লাসে উপস্থিত হওয়া নিয়ে তার দুশ্চিন্তার অন্ত নাই, ক্লাসে যাওয়ার আগের দিন রাতে অস্থির ভাবে পায়চারী করছিলো আর বলছিলো আম্মু, ইব্রাহীম আঃকে আগুনে ফেলে দিলে উনি যেনো কোন দোআ পড়েছিলেন? আমার মনে হচ্ছে আমিও ভীশন কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে যাচ্ছি আগামী কাল ,আমি বেশি বেশি ঐ দোআটা পড়ি যেনো আমার বিপদটাও ঠিক হয়ে যায়! বোঝ কান্ড তোমার মেয়ের!
ভালো কথা, আজ ভাইয়া ফোন দিয়েছিলেন, কোরবানীর ব্যাপারে কথা ফাইনাল করলেন!
আমার কি ইচ্ছে হয় জানো? প্রতি বছর এই যে পশু কোরবানী দেই সওয়াব অর্জনের নেক উদ্দেশ্য নিয়ে ঠিক এভাবেই যদি নিজেদের ভিতর লালন করা বিভিন্ন গুনাহ, অহংকার, হাসাদ, রিয়া, আল্লাহর অপছন্দনীয় কাজগুলোকে একটা একটা করে কোরবানী করতে পারতাম, তবেই ইব্রাহীম আঃ, মুহাম্মদ সাঃ এর সুন্দর আদর্শে গড়া সঠিক মুসলিম হতে পারতাম সবাই মিলে বলতে বলতে গলা ভিজে আসে ফাতিমার.....
(আজ ২৭ জিলক্বদ, ইনশা আল্লাহ আর কিছুদিন পরেই আসছে বছরের শ্রেষ্ঠ দশদিন এবং শ্রেস্ঠ ইবাদাহ হজ্ব এবং কোরবানী! আসুন সবাই মিলে উত্তম আর তাকওয়ার কাজে তৎপর হই! সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গড়ে তুলি এক রুহানী পরিবেশ! আল্লাহ আমাদের সকল কাজগুলোকেই কবুল করে নিন আমীন)
বিষয়: বিবিধ
১৫৮২ বার পঠিত, ৩৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
"নিজ ও পরিবার কে সংশোধিত করে জাহান্নামের ভয়াবহতা থেকে বাচাও।"
ঐশী নির্দেশনায় প্রথমে নিজের ভেতর ও নিজের পরিবারে মাঝেই ইসলামী সচেতনতা বাড়াতে হবে,এ ভাবে সমাজ-রাষ্ট্র-বিশ্বে বিস্তার ঘটবে ইসলামী মূল্যবোধের।
সুন্দর একটি প্রয়োজনীয় বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণে অনেক ধন্যবাদ ও জাযাকাল্লহু খাইরান....।
বারাকাল্লাহু ফিক! শুভকামনা ও দোআ রইলো! ইবাদতে তৎপরতা অর্জনে আল্লাহ আমাদের সবাইকে সাহায্য করুন!
চ্যারিটি বিগান ফ্রম হোম।
ইনশাল্লাহ হবে শিগ্রই
আসলে আমিও আমার ছেলেবেলা থেকেই ইংরেজী শিক্ষার গুরুত্ব পেয়ে এসেছি, জীবনে চলার পথে আমাকে কেউ নামাজ, রোজা সহ যতটুকুই না হলে নয়- এরবেশী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তাও কেউ বলেনি, তাগিদ দেয়নি, স্কুল-কলেজেও বাধ্য করেনি; তাই আমার হৃদয়ের উপরে একটি ভ্রান্তির কালো পর্দা পড়ে গেছে। যা আজ শত চেষ্টা করেও আমি ছিন্ন করে আলোর মুখ দেখতে পারছি না।
অনেক ধন্যবাদ এমন পথনির্দেশমূলক লিখাটির জন্য।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
অনেক অনেক শুভকামনা ও দোআ রইলো আপনার ও আপনাদের পরিবারের সকলের প্রতি!
সময়োপযোগী শিক্ষণীয় লেখাটির জন্য ধন্যবাদ।
সময় করে পড়ার জন্য আপনাকেও এতোগুলো
আপনাকে নিয়মিত পেয়ে খুব ভালো লাগছে সত্যি আপু<:-P আপু লিখে ফেলেন গেট টুগেদার এর ঘটনা
হৃদয় ছোয় কথা গুলো হচ্ছে এই অংশটি। আল্লাহ আমাদেরকে বোঝার তাওফিক দিন আমিন।
জাজাকাল্লাহু খায়রান।
বারাকাল্লাহু ফিক! শুভকামনা ও দোআ রইলো। ইবাদতে তৎপরতা অর্জনে আল্লাহ আমাদের সবাইকে সাহায্য করুন
শুকরিয়া আপুনি সুন্দর প্রানছোঁয়া মন্তব্যখানির জন্য! ইবাদতে তৎপরতা অর্জনে আল্লাহ আমাদের সবাইকে সাহায্য করুন
ইবাদতে তৎপরতা অর্জনে আল্লাহ আমাদের সবাইকে সাহায্য করুন
শ্রেষ্ঠদিনগুলোতে আপনাদের দোআয় আমাদের শামিল রাখার আবেদন রইলো!
আল্লাহ্ এই প্রচেষ্টা সফল করুক, জাযাহ দিয়ে আরও বেশী বেশী লিখার সুযোগ দিক।
মন্তব্য করতে লগইন করুন