এলাহী কান্ড
লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া মুকিম ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০২:৩৩:২১ রাত
সারামনিকে পাঠিয়েছিলাম পাশের বিল্ডিং এর বৃদ্ধা জুলিয়ানার সাথে একটু দেখা করে আসার জন্য! জুলিয়ানার বয়স ৮৮ বছর। বার্ধক্যের শেষ সীমায় এসে শরীর একেবারেই দুর্বল এই মহিলার! কোন রকম হাঁটাচলা করে নিজের কাজকর্ম গুলো সেরে নেয়। আমরা সময় পেলে মাঝ মাঝে ওর সাথে দেখা করতে যাই, একাকী কাটানো নিঃসংগ প্রহরগুলোতে জুলিয়ানা আমাদের সংগ খুব উপভোগ করে। ঠিক বিদায় নিয়ে আসার সময় আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ে এবং বার বার স্মরন করিয়ে দেয় আগামীবার যেন একটু তাড়াতাড়ি এবং বেশি সময়ের জন্য আসি! বারবার কথা দেই আগে যাওয়ার কিন্তু ব্যাস্ততার কারনে অনেক সময় সেটা হয়ে ওঠে না!
সারামনি জুলিয়ানার সাথে দেখা করে বাসায় ফিরছিলো। আমাদের বিল্ডিং এর নিচে আসার পর হঠাৎ খেয়াল করলো একটা বিড়াল- যার গলায় লিখা "আমি হারিয়ে গিয়েছি" । তাকে আর পায় কে? নিজেই মিউ মিউ করে বিড়ালটাকে কাছে ডাকলো। বিড়ালটাও কাছে এসে ওকে বৃত্তের মতো চক্রকারে ঘুরতে লাগলো। সারা যেই হাত বাড়ালো আদর করার জন্য বিড়ালটা বসে চোখ বুজে আদর নিতে শুরু করলো!কন্যা আমার ততোক্ষনে আনন্দে আটখানা!
যেই না সারা উঠলো বাসায় ঢোকার জন্য ওমনি বিড়ালটা ওর পিছু নিলো! সারা এক পা আগায় বিড়াল এক পা আগায়, সারা এক পা পিছায় বিড়াল ঠায় দাড়িয়ে ওকে অনুসরন করে! দ্বিধা দ্বন্দ ঝেরে সারা বিল্ডিং এ ঢুকলো সাথে বিড়াল টাও! সিঁড়ি বেয়ে দোতলা আসলো বিড়াল ও তার পিছু ছাড়ে না!
কলিং বেল বাজলে আফনান এসে দরজা খুললো! সাথের বিড়াল দেখে ওর নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিলো! আঁ্য্য্য্য্্য্য্য্য করে চিৎকার দিলে সারা ওকে সতর্ক করলো আম্মু কোথায় ? আম্মু আসলে খবর আছে! চির বিদ্রোহী ছোট ভাই মুহূর্তে বাধ্যগত হয়ে গেলো! দু ভাইবোন মিলে ততক্ষনে রান্নাঘরে সন্মানিত অতিথির যথার্থ আপ্যায়নে ব্যস্ত হয়ে গেলো! একজন বলে দুধ দেই, একজন বলে পানি আবার ভাবলো টুনাফিশ দিলে কেমন হয়!
রান্নাঘরের কার্পেট টেনে অতিথিকে বসতে দিলো, সারামনি নিজের দুধ খাওয়ার বাটিতে দুধ ঢাললো! পান করতে দিলো ওদের অতিথিকে! আফনান কি আর এতক্ষন চুপ থাকতে পারে? সে চুপি চুপি এসে আমার গলা জড়িয়ে ধরে বললো- আম্মু আমরা কেনো একটা বিড়াল আনি না আমাদের বাসায়?
দু ভাইবোনের ফিসফাস আর নিরবতা এমনিতেই আমার কাছে সন্দেহজনক লাগছিলো! এতক্ষনে সন্দেহ তীব্র থেকে তীব্রতর হতে লাগলো! আমি যেই না দাঁড়ালাম আফনান ভো দৌড় বোনের কাছে ! সংকেত দিলো আম্মু আসছে! তাড়াতড়ি দু ভাইবোন মিলে বিড়ালকে মিউ মিউ করে আবার দরজা পর্যন্ত টেনে আনলো! কোনরকমে বিদায় দিয়ে আমার কাছে এসে শুরু হলো কান্না! কেনো আমরা একটা বিড়াল আনবো না আমাদের বাসায়!!!!!!!আম্মু প্লিজ প্লিজ প্লিজ....
মাথায় হাত বুলিয়ে আশ্বস্হ করে ঘটনা কি খুলে বলতে বলায় সে সমস্ত ঘটনার বিস্তারিত বিবরন দিলো- আনন্দ, দুঃখ, রোমাঞ্চ, আ্যাডভেঞ্চার এর উত্তজনায় মুখটা চিকচিক করছিলো!
একজনের প্রশ্ন আম্মু বিড়াল থাকলে কি গুনাহ হয়? আরেকজন আম্মু বিড়াল কি খেতে বেশি পছন্দ করে? আম্মু কেন এই বিড়ালটা আমাদের বাসায় নিয়ে আসি না?
একপর্যায়ে সারামনি বললো, আম্মু তুমি না বলেছিলে আল্লাহ হুকুমে সব হয়, বিড়ালটা আল্লাহর হুকুমেই আমাদের বাসায় এসেছিলো, ওকে বিদায় দিয়ে আমরা গুনাহ করছি না তো? পরক্ষনেই আম্মু তুমি না বলেছিলে বিড়ালকে পানি খাইয়ে একজন জাহান্নামী জান্নাতী হয়েছিলো! আমরাতো জান্নাতে যেতে পারবো এই বিড়ালটার উপকার করে! আম্মু বিড়ালটা অনেক ভালো আমাকে একটাও আঁচড় দেয় নি! আরো কতকিছু....। m/
এতক্ষন আমি ছিলাম নীরব দর্শকের ভূমিকায়! এবার মুখে কৃত্রিম রাগ ফুটিয়ে বললাম, তোমরা দুজনে মিলে বিড়ালকে আদর করছো? তোমাদের খাওয়ার বাটিতে দুধ দিয়ছো খেতে? আম্মুকে জিজ্ঞেস না করে বাসায় ঢুকিয়েছো জানো যে আম্মুর আ্যালার্জি আছে পশমে!
দুজনে ততক্ষনে কাঁচুমাচু হয় অপরাধীর মত মাথা নিচু করে থাকলো! বললাম যাও দুজনে গিয়ে আ্যান্টিসেপটিক দিয়ে সাতবার করে হাত পা ধুতে যাও। বিড়ালের গায়ে অনেক জীবানু থাকে এগুলো তোমরা ধরেছো! যে বাটিতে খেতে দিয়েছো ওটাও সাতবার ধুয়ে অন্যজায়গায় সরিয়ে রাখো!
আফনান প্রচন্ড সাহস অর্জন করে বললো কেনো সাতবার?
আমি গম্ভীরমুখে বললাম কারন, বিড়ালটা সারাদিন বাইরে বাইরে ঘুরে, ময়লায় থেকে খাবার খেয়েছে ওর গায়ে অনেক জীবানু! এ জীবানু পরিষ্কার করতে সাতবার করে ধুতে হবে!
হাত- পা ধুতে ধুতে দু ভাই বোনের অঝোরে অশ্রু ঝরছিলো! কারো চেহারার দিকে তাকানো যাচ্ছে না! আমি মনে মনে ভাবছিলাম বেশি কঠোর হয়ে গেলো নাতো?
মাগরিবের সালাতের পর সবাই মিলে বসলাম, ওদের বুঝিয়ে বললাম আমাদের জন্য বিড়াল পালার সৌখিনতা করা সাজে না! আমাদের দেশের অসংখ্য গরীবমানুষদের কথা বললাম, একটা বিড়ালকে পালতে যে পরিমান খরচ হবে তা দিয়ে দেশে একটা অভাবী শিশুর পোশাক এবং খাবারের ব্যবস্হা করা যেতে পারে অনায়াসে! এই বিড়ালটির মালিক তাকে খুঁজছে , তাকে ফিরে পেলেই তার পূর্বের ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। সুতরাং বিড়ালটির জন্য কোন দুঃশ্চিন্তা নেই! বরং আমরা মুসলিম হিসেবে আমাদের প্রকৃত দায়িত্ব অসংখ্য অভাবীদের পাশে একটুখানি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া এর মাধ্যমেই আমরা জান্নাতে যাওয়ার পথ সহজ করতে পারি! এতক্ষনে হাসি ফুটলো আমার কন্যা আর পুত্রের মুখে! সানন্দে মেনে নিলো তারা এই প্রস্তাব! কন্যার তার মাঝেও একটু খানি আবেদন ছিলো যতদিন বিড়ালটির মালিক না পাওয়া যাবে ও বিড়ালটিকে একটু খাবার দিয়ে আসবে! আমিও সানন্দে কন্যার আবেদন মেনে নিলাম!
শিশুদের মন অনেক নরম-কোমল, বুঝিয়ে বললে অনেক কঠিন কাজও ওদের দিয়ে করানো সম্ভব হয়! আরেকবার প্রমান পেলাম.....
বিষয়: বিবিধ
১৭৮৮ বার পঠিত, ৪৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমি মনে মনে ভাবছিলাম বেশে(বেশী) কঠোর হয়ে গেলো নাতো? এখানেই অনেক মা ফেল করেন এবং সন্তানের সর্বনাশ হয়
শেষটা খুব ভালো লাগলো- জাযাকুমুল্লাহ
সারা আর আফনানের জন্য অনেক আদর আর শুভেচ্ছা রইলো !
এখানে বেড়ে ওঠা আমাদের সব বাচ্চারাই পোষা পাখি বা পশুর জন্য খুব আকুল আবেদন করে কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে অপারগতা বুঝিয়ে ওদের তৃপ্ত রাখা আসলেই দুরহ কাজ! আলহামদুলিল্লাহ আমরা বোনেরা আমাদের সন্তানদের একি চেতনায় বড় করতে পারছি
আপনার বাবুসোনাদের জন্যও রইলো প্রানঢালা ভালোবাসা
শুকরিয়া আপু!
হি হি হি হি
আমাদের হারিকেন হলো আত্মস্বিকৃত একটা বিলাই।
হারিকেন বিলাইটা কইরে?
আবার ভাবিয়েননা আপু হারিকেন বিড়াল আসলে হারিকেন হলো বিলাই।
যে বিলাই হারিকেনের আলোতে মাছ ধরে সূর্যের তাপে মাছ ঝলসিয়ে খায়।
হামমমমমমম বিড়াল নিয়ে ঘটনা খুব ভালো লাগলো।
আর আফসোস লাগছে বৃদ্ধা যদি শেষ বয়সে এস মুসলমান হতো।
দোয়া করি আল্লাহ হৃদয়ের চাহাতকে পূরণ করুন।
আমিন
সূর্যকে দেখছি না পোস্টে কোথাও
বৃদ্ধাকে সময় দেয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য ওকে একটু ইসলামের দাওয়াত দেয়া! আল্লাহ কবুল করে নিন জুলিয়ানাকে!
অনেক অনেক শুকরিয়া ভাইটিকে
ভাই আমাদর সবার জন্য দোআ করবেন ইসলামের বহির্ভুত এই পরিবেশে নিজেরা এবং সন্তানদের ইসলামী আদর্শে গড়ে তুলতে পারি!বারাকাল্লাহু ফিক
ইউরোপের মানুষেরা বিড়াল ভক্ত, তারা নিজেদের সময় কাটানোর জন্য বিড়াল কুকুর পোষে। তবে সেখানে বিড়াল-কুকুর পোষতে গেলে অবশ্যই মাসিক একটা বাজেট হাতে রাখতে হয়। শপিং মল গুলোতে তো বিড়াল কুকুরের প্রসাধনী সহ খাদ্য সামগ্রীর একটি আলাদা ব্যবস্থাই থাকে। এসব প্রাণী পচা-বাসী খাদ্য খায়না, ফাষ্টফুড খেতে বেশী পছন্দ করে বলে, গৃহস্বামীর অর্থ গচ্ছা যায়।
তবে ছোট কালে যে সব বাচ্চা, জিবীত বিড়াল-কুকুর পালন করতে আগ্রহ দেখায় বুঝতে হবে বড় বয়সে তারা দয়া-মায়াশীল হবে। সৃষ্টির প্রতি যাদের আগ্রহ আছে, তারা বাস্তব জীবনে সংযমী হয়। কপট ও মিথ্যুক বন্ধুরা কখনও তাদের সাথে মানিয়ে উঠতে পারেনা। অনেক ধন্যবাদ।
আপনার মন্তব্যের শেষটুকু পড়ে সত্যি মনটা ভালো হয়ে গেলো! আল্লাহ আমাদের সবার সন্তানদের দরদী ,মায়াশীল ও সংযমী হয়ে গড়ে ওঠার তৌফিক দান করুন! আমীন
যে কথাটা ন আবলে পারছি না, আল্লাহ আপনাকে সুন্দর লিখার যোগ্যতা যেমন দিয়েছেন একই সাথে গঠনমূলক মন্তব্য করার অসাধারন ক্ষমতা ও দিয়েছেন!অনেক অনেক দোআ ও শুভকামনা রইলো আপনাদের সবার জন্যা
তোমার জন্য অনেক শুভকামনা রইলো ছোটাপুনি !
@সাদিয়াপু, কয়েকদিন আগেও তিন চারটা বিড়ালছানা আমাদের বাসার সামনে এসে বসে থাকতো। আর আমি এগুলোকে খাওয়াইতাম। দুধ আর চিকেন বেশ পছন্দ এদের। কিন্তু কেনো জানি না এখন আর আসে না। বের হলে দেখি এদিক সেদিক, খুজে পাই না।
সারামণি ও আফনানের জন্য অনেক অনেক আদর ও ভালোবাসা রইল!
সারা এবং আফনানের জন্য দোয়া এবং আদর রইল জাযাকাল্লাহ আপু
আপনাদের বাসার বাবুদের জন্যও অনেক অনেক দোআ আর শুভকামনা রইলো আপনার উপস্হিতি আনন্দের বারিধারা বয়ে দিয়ে গেলো Music
খুশিতে আমি তা ধিন তা
কত্তদিন পর তুমি আমাকে আমার সারামনিকে দেখতে এলে
অধীর আগ্রহে বসে আছি কত দিন ধরে তোমার লিখা পড়ার জন্য, দোআ করলাম সেদিনও তোমার লেখিকা মন যেন ঘুম, শীত নিদ্রা থেকে জাগ্রত হয়ে ওঠে! আারুকেও কাল বলছিলাম কবে যে তোমার একটু সুমতি হবে!
আলহামদুলিল্লাহ তুমি আসলে
তোমার কমেন্ট খুব্বি সুন্দর হয়েছে, মাই ফেভ ফর এভার! যাই লিখ তুমি সেটাই আমার কাছে নোবেলের সাহিত্যমানের চাইতেও বেশি মুল্যবান লাগে সুতরাং অপেক্ষায় রইলাম তোমার কাছ থেকে আসা কোন লিখা পড়ার
দেরি করো না কিন্তু!
সারামনি আফ্রুকে ওর দলে নিয়েছে,খুব্বি খুশি সে ওর মতোন কাউকে পাওয়া গেলো তাই:
মন্তব্য করতে লগইন করুন