সোনামনিদের রমাদান প্রিপারেশন
লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া মুকিম ২১ জুন, ২০১৪, ০১:১৪:২৪ রাত
সুপ্রিয় আপু ভাইয়ারা, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ!
আলহামদুলিল্লাহ, রমাদানকে সামনে রেখে আমাদের প্ল্যান এবং প্রিপারেশন এগিয়ে চলছে! আমরা কি আমাদের ফুলকলিদের কথা, আমাদের সোনামনিদের কথা মনে রেখেছি? আসুন এবার ওদের জন্য কিছু পরিকল্পনা করি!
আমরা বড়রা আমাদের রমাদানকে তাৎপর্যময় করে তুলতে গিয়ে অনেক সময় পরিবারের সোনামনিদের ভুলে যাই বা আমাদের প্ল্যান আমাদের কাছে এত মুখ্য থাকে যে ওদের জন্য তেমন কোন কিছুই করার থাকে না! এতে যা হয় , আমরা ইবাদতে মগ্ন থাকতে চেস্টা করি অথচ ওরা সারাদিন হয় গেইমস, খেলাধূলা বা কোন গঠনমূলক কাজ ছাড়াই সময় অতিবাহিত করে। আবার ওদের যেহেতু রমাদান এর গুরুত্ব সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকে না তাই তারাও অজ্ঞতা বশত নানাভাবে আমাদের বিরক্ত করে! এরজন্য কিন্তু আমারাই অনেকাংশে দায়ী!
আমাদের আজকের সোনামনিরা আগামীদিনের ভবিষ্যত প্রজন্ম। তাই ওদের ঈমান- আকিদা -আমলের পরিশুদ্ধকরনের জন্য আমাদের সর্বোচ্চ প্রচেস্টা চালাতে হবে। বিশেষ করে আমরা যারা প্রবাসে থাকি( ওয়েস্ট) আমাদের সন্তানরা আমাদের ইসলামী আচার- অনুস্ঠান- ইবাদাহ গুলোর সঠিক রুপরেখা অনুধাবন করতে সক্ষম হয় না! এখানে ইসলাম বিপরীত পরিবেশে বাস করাই হোক বা আমাদের সঠিক সচেতনার অভাব হোক আমাদের এই পরিস্হিতি থেকে বের হওয়ার জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ করা আজ জরুরী হয়ে পড়েছে!
#করনীয়#
১) বাচ্চাদের সাথে ফ্যামিলি মিটিং করা: রমাদানের পূর্বেই বাচ্চাদের নিয়ে ফ্যামিলি মিটিং এ বসার আয়োজন করা। গতানুগতিক মিটিং না করে বরং একটু বৈচিত্রময় করার চেস্টা করা উচিত। লক্ষ্যনীয় যে বাচ্চাদের বয়স কেমন, ওদের গ্রহন ক্ষমতা কেমন? কেননা একেকটা বাচ্চা একেক রকম এবং বয়স ও যোগ্যতার কারনেও ওদের মধ্যে মেধাগত ও আচরনের ভিন্নতা দেখা যায়! হুট করে মিটিংএ না বসে বরং ওদের দু একদিন আগে জানিয়ে দিন বসার দিন ,সময় এবং আলোচ্য বিষয় এতে বাচ্চারা নিজেরাও মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিবে এবং ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।
২) মিটিং বাচ্চাদের কাছে আকর্ষনীয় করে তোলার চেস্টা করা। ওদেরকে দিয়ে মিটিং পরিচলানা করলে অনেক সময় ওরা উৎসাহবোধ করে এবং দায়িত্বাঅনুভূতি বাড়াতে সাহায্য করে।
৩) বাচ্চাদের বয়স অনুযায়ী দায়িত্ব দেয়া, কাউকে সালাম দিয়ে মিটিং শুরু করার দায়িত্ব আবার কাউকে কোরআন তিলাওয়াতের দায়িত্ব দেয়া। বাচ্চারা দায়িত্ব পালনে স্বতস্ফূর্ত ভাবে দায়িত্ব পালনে অগ্রগামী হলে এক জনকেই একের অধিক দায়িত্ব দেয়া।
৫)আমরা অভিভাবকগন আগে থেকেই ওদের সামনে আলোচনা করার জন্য কোরআন ও হাদিসের আলোকে আলোচনা তৈরি রাখব। এখানে আমরা যে বিষয়গুলো সামনে রাখতে পারি-
৬) সূরা বাকারা-১৮৩ আয়াত। এই আয়াতের আলোকে খুব সহজ সরল ভাবে ওদের সামনে রমাদানের সিয়াম ফরজ হওয়ার বিষয়, ফরজ বলতে ইসলামের মূল্যবোধ, ফরজে কাজ না করার পরিনতি, সিয়াম পালনের সুন্দর সুন্দর যে প্রতিদানমূলক হাদিস আছে এগুলো আলোচনায় নিয়ে আসা।খুব গুরু গম্ভীর আলোচনা না করে খুব সহজ সরল ভাষায় ওদের সামনে আলোচনা করা। মনে রাখতে হবে ওরা যেন কোন ভাবেই সিয়ামপালনকে কঠিন বা বোঝার মত মনে না করে!সঠিক ও বুদ্ধিমান উস্হাপনাই পারে একে সহজতর করতে!
৭) সিয়াম পালন করে কি কি কাজ থেকে আমাদের বিরত থাকা উচিত- এমন বিষয়- টেলিভিশন, ইন্টারনেট, গেইমস, খুব খেলাধূলা করা এগুলো থেকে বেঁচে থাকার জন্য খুব কৌশলে আলোচনা করা!
৮) বাচ্চাদের দিয়েই ওদের কিছু কাজ করিয়ে নেয়া যেমন ওদের নিজ নিজ কাপড়-চোপড় গুছানো, বই খাতা গুছানো, বাসার অন্যান্য কাজে ওদের সাহায্য চাওয়া এভাবে ওরাও সক্রিয় হবে।
৯)আমরা অভিভাবকরা আমাদের প্ল্যান ওদের কাছে প্রকাশ করে ওদের মতামত এবং সহযোগিতা চাইব। এক্ষেত্রে বাচ্চারা জিজ্ঞেস করে কিভাবে তোমাদের সাহায্য করব? এই সুযোগে ওদের জানিয়ে দিন আপনি কি কি আশা করেন ওদের কাছে? ( নিয়মিত মসজিদে গিয়ে সালাত আদায়, সাহরি -ইফতারে অংশগ্রহন, ভাই বোন একে ওপরের সাথে ঝগড়া না করা, সহযোগিতার মনোভাব..।)
১০) বাচ্চারা যেন গঠনমূলক কাজে ব্যস্ত থাকতে পারে ওদের দিয়ে কিছু রমাদান ডিজাইন, বিভিন্ন কার্ড, ডেকোরশান ডিজাইন এর ব্যাপারে ব্যস্ত রাখা যেতে পারে। যেমন প্রথম রমাদানেই "রমাদান", "রমাদান কারিম" এভাবে লিখে ডিজাইন করে , কালার করে ওদের বলুন ওদের পছন্দমত জায়গায় টানিয়ে দিতে! খুব কার্যকরী এবং উৎসাহব্যন্জক!
১১) বাচ্চারা যার যে বয়স সে অনুযায়ী কায়দা, আমপারা বা কোরআন যে যেটা পড়ার উপযোগী ওদেরকেও ওদের পাঠ্য বেশি বেশি করে পড়তে উৎসাহিত করা।ওদের কে সহজ রমাদান বিষয়ক কোন ইসলামি বই পড়তে দিন যাতে ওরাও কিছুটা জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হয়!
১২) বয়স অনুযায়ী কিছু হিফজের দায়িত্ব দেয়া। কিছু সূরা, রমাদানের বাকারার ১৮৩ নং আয়াত অর্থ সহ, রমাদানের প্রতিদান সংক্রন্ত ছোট ছোট হাদিস হিফজের মাধ্যমে ওদের ব্যস্ত রাখা!
১৩) যে সব বাচ্চারা সিয়াম পালনের উপযুক্ত হয় নি তাদের রমাদানে দিনের বেলায় বাসা গুছানোর দায়িত্ব দেয়া। আর যারা সিয়াম করবে তাদের একটু বেশি বেশি কেয়ার নেয়া, স্বাস্থ সম্মত সেহরি ও ইফতার মেনু তৈরিতে ওদের সাহায্য নেয়া।
১৪) ওদেরকে আল্লাহর পথে ব্যয়ের গুরুত্ব বোঝানো, ওদের যার যার জমানো টাকা থেকে দুর্বল, গরিব, দুঃস্থ শিশুদের সাহায্যে এগিয়ে আসার তাগিদ দেয়া।
১৫) রমাদান সংক্রান্ত কুইজের ব্যবস্থা করা! আকর্ষনীয় পুরুষ্কারের মাধ্যমে ঈদ উদাযাপন পরিকল্পনা করা।
আলোচ্য বিষয়ের টিপস
#সূরা বাকারা-১৮৩
হে ইমানদারগণ ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার। (সূরা বাকারা : ১৮৩)
আবু সাইদ খুদরি রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় একদিন রোজা রাখবে, আল্লাহ তার মুখমন্ডলকে জাহান্নাম হতে সত্তুর বছর দূরে রাখবেন (বুখারি,মুসলিম)
আব্দুল্লাহ বিন আমর রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সিয়াম ও কোরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। সিয়াম বলবে : হে প্রতিপালক ! দিবসে আমি তাকে পানাহার ও প্রবৃত্তি হতে বাধা দিয়েছি, সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। কোরআন বলবে : রাতে আমি তাকে নিদ্রা হতে বিরত রেখেছি, সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন ; তাদের উভয়ের সুপারিশ কবুল করা হবে।(বায়হাকি)
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর থেকে বর্ণনা করেন সাওম হচ্ছে আমার জন্য, আমি তার প্রতিদান দেব”(বুখারি)
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ইমান ও ইহতেসাবের সাথে রমজান মাসে রোজা রাখবে, তার ইতিপূর্বের যাবতীয় পাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে।(মুসলিম)
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে মিথ্যা কথা ও তদনুরূপ কাজ এবং মূর্খতা পরিত্যাগ করল না, তার পানাহার বর্জনে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই।(বুখারি, আবুদাউদ)
কায়াব বিন্ উজরা (রাঃ) হইতে বর্ণিত, একদা নবী করীম (সঃ) ইরশাদ করিলেন, তোমরা মিম্বরের নিকটবর্তী হও। আমরা হাজির হইলাম। অতঃপর হুযুর (সঃ) যখন মিম্বরের প্রথম সিঁড়িতে পা মোবারক রাখিলেন বলিলেন,আমিন। অর্থাৎ আল্লাহ তুমি কবুল কর। আবার যখন দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা মোবারক রাখিলেন বলিলেন,আমিন। অর্থাৎ আল্লাহ তুমি কবুল কর।পুনরায় তৃতীয় সিঁড়িতে উঠিয়া বলিলেন, আমিন।
খোৎবা শেষে হুযুর (সঃ) যখন মিম্বার হইতে অবতরণ করেন, আমরা জিজ্ঞাসা করিলাম, ইয়া রাসুল(সঃ) ! অদ্য মিম্বরে উঠিবার সময় যাহা কিছু শুনিলাম, ইতিপূর্বে তাহা কখনো শুনি নাই। হুযুর (সঃ) বললেন, এইমাত্র হযরত জিব্রাঈল (আঃ) আসিয়া বলিলেন, ধ্বংস হোক ঐ ব্যক্তি, যে রমজান পাইল অথচ তাহার গোনাহ মাফ হইল না, আমি বলিলাম ‘আমিন’। দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখিবার সময় হযরত জিব্রাঈল (আঃ) বলিলেন, ধ্বংস হোক ঐ ব্যক্তি, যাহার সামনে আপনার নাম লওয়া সত্বেও সে আপনার উপর দরুদ পড়িল না। আমি বলিলাম ‘আমিন’। আবার তৃতীয় সিঁড়িতে পা রাখিলেই জিব্রাঈল (আঃ) বলিলেন, ধ্বংস হোক ঐ ব্যক্তি, যাহার সম্মুখে তাহার মাতা-পিতা অথবা উভয়ের একজন বার্দ্ধ্যকে পৌছিয়াছে অথচ তাহারা তাহাকে জান্নাতে পৌছাইতে পারিল না।তদুত্তরে আমি বলিলাম, আমিন।
রমাদান আমাদের নৈতকতা ও আত্নিক উৎকর্ষ সাধনে খুব বেশি কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করে! আমরা চেস্টা করলে ইনশাআল্লাহ আল্লাহ আমাদের সাহায্য করবেন! অধিক দুআর মাধ্যমে আসুন আমাদের কলিজার টুকরাদের জন্য আল্লাহর নিকট সাহায্য চাই তিনি যেন নয়নমনিদের সিরাত্বল মুস্তাকিমে রাখেন! আদর্শ মুসলিম উম্মাহ তে পরিনত করেন! আমীন!
বিষয়: বিবিধ
১৮৩০ বার পঠিত, ৪৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমাকেও নিতে হবে :D/
কী মজা !!
সুন্দর প্রস্তাবনার জন্য মোবারকবাদ!!
জাযাকিল্লাহ..
আশা করি রমাদান নিয়ে 'ভীষণ' ততপর ভিশনওয়ালা 'ভিশু' আপনার প্রস্তাবটিও চক্রবদ্ধ করে নিবেন
এখানে আমার দেখা যে কয়জন বয়স্ক চাচা-খালাম্মা পেয়েছি তাদের প্রায়ই সবাই এখনো ইসলামের প্রকৃত আলোর দেখা পাননি। সহীহ করে কুরআন পড়তে পারেন না, নামাজ আদায় করতে পারেন না, জানেন না কি বলেছেন আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে।
সীরাত, সাহাবাদের জীবনী সম্পর্কেও তাদের ধারণা ভাসা ভাসা, বাবা-দাদাদের কাছ থেকে শোনা। সেভাবেই আমল করে আসছেন বছরের পর বছর।
আমরা নিজেদেরকে আর সন্তানদেরকে নিয়ে পরিকল্পনা আর বাস্তবায়ন করতে গিয়ে উনাদের কথা ভুলে যাই বেশির ভাগ সময়।
আপনাদের বয়স্কদের নিয়ে কোন পরিকল্পনা থাকলে সেটা নিয়েও লিখুন আপু।
আর তোমার যদি কিছু সংগ্রহে থাকে সেটাও শেয়ার করার জন্য অনুরোধ রইলো আপুনি!
জাযাকিল্লাহু খাইর
আলহামদুলিল্লাহ অনেক গুরুর্ত্বপূর্ণ প্রিয়তে যত্ন করে রেখে দিচ্ছি ।মাহে রমজানে ইফতারের আগের দুয়ায় আমাকে স্বরণ করতে ভুলবেন না ।
আশাকরি পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভালো আছো!আমাদেরকেও দোআয় শরীক রাখতে ভুলো না যেন!
সুবহানআল্লাহ!
পড়াশোনা শুরু হয়েছো তো????
শুকরিয়া
শুকরিয়া
তবে আপনার উদ্যোগ সুন্দর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন