তাই যেন মোরা তোমারে না ভুলি
লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া মুকিম ১৬ এপ্রিল, ২০১৪, ০৯:৩০:১৩ রাত
রাস্তার ট্রাফিক সিগন্যালে দাঁড়িয়ে ছিলাম। রাস্তার পাশেই একটা দোতলা বাড়ি, সামনের ছোট লনে বাহারি রকমের ফুল! ইতালিয়ানরা খুব সৌন্দর্য বিলাসী! প্রত্যেকের বাড়ির সামনে হরেক রকমের ফুল গাছ, ঘরে, বারান্দায়, করিডোরে, ফুল আর ফুল! বসন্তের আমেজে নতুন ফুলের সমাহার অন্য রকম সৌন্দর্য্যের আহবান জানায়! সিগন্যাল এখনো লাল। দাঁড়িয়ে আছি। একটা চকচকে কালো মার্সিডিজ চোখের সামনে দিয়ে শোঁ করে খুব দ্রত গতিতে চলে গেলো! আরাম আয়েশ বিলাসিতার সর্বোচ্চ নমুনার ছোঁয়া এই সমাজের আনাচে কানাচে !
সিগন্যাল সবুজ হতেই হাঁটতে শুরু করলে খেয়াল করলাম আমার পাশে হুইল চেয়ারে একজন মহিলা। বয়স তেমন বেশি না। বেশ সুন্দরী। আমি হাঁটছিলাম একটু দ্রুত গতিতেই কিন্তু আমার হাঁটার গতি নিজের অজান্তেই মন্হর হয়ে এলো! সবইতো আছে মহিলার। পা দুটো ছাড়া! প্রতিদিন এরকম কতো মানুষ দেখি! কারো গায়ের রং সাদা কারো কালো, কারো সোনালী চুল, কারো নীল- সবুজ চোখ, কেউ লম্বা কেউ খাটো একই মানুষ কতো রকমের পার্থক্য! একই শারীরিক গঠন আবার এর মাঝেই কতোরকমের শারীরিক সমস্যা!
আল্লাহ সুবহানাহু তা'য়ালা আমাদের অসংখ্য নিয়ামত দিয়েছন, অগনিত নিয়ামতে ডুবে থেকে এতোটাই অভ্যস্হ হয়ে পড়েছি যে এগুলোর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেও বুঝি ভুলে যাই!
একজন অসুস্হ মানুষ দেখলে আমরা প্রত্যেকেই আমাদের নিজ নিজ জীবনের অসংখ্য নিয়ামতগুলোর গুরুত্ব বুঝতে পারি। আমাদের সুস্হ শরীর, সুন্দর অবয়ব, অংগপ্রত্যংগ, আমাদের পিতামাতা, বাসস্হানের জন্য ঘর, প্রয়োজনীয় রিজিক সমস্ত কিছু আলহামদুলিল্লাহ!
আমাদের মহান প্রভু যিনি আল-খলিক্ব, আমাদের সৃষ্টি করেছেন কিছুই না (শূন্য) থেকে, তিনি আর রাযযাক যিনি আমাদের রিজিক দিয়েছেন মাতৃগর্ভ থাকা অবস্হা থেকে পৃথিবীতে আসার পর পর্যন্ত, তিনি তো আল-মুহাইমিন যিনি আমাদের প্রতিপালন করছেন, তিনি তো আর রহমান যিনি আমাদের এতো করুণা করেছেন, অনুগ্রহ করেছেন, অসংখ্য নিয়ামত দান করেছেন যার ফলে প্রভাতের সূর্যের আলো দেখি, প্রচন্ড গরমে পিপাসার্ত হয়ে শীতল ডাবের পানি দিয়ে পিপাসা পূরন করি, সারাদিনের ব্যস্ততা ক্লান্তির পর পরিবার পরিজনদের কাছে ফিরে আসি শান্তি খুঁজে পাই!
এতোসব নিয়ামতের মধ্যে সবচাইতে বড় নিয়ামত হলো হিদায়েতের নিয়ামত! যিনি আমাদের আল ইসলামের মতোন নিয়ামত দিয়েছেন, মুসলিম পিতামাতার ঘরে জন্ম দিয়েছেন, আদর্শ জীবন পরিচালনার জন্য আল কোরআন দিয়েছেন,সঠিক পথের অনুসারী হওয়ার জন্য মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে পথ প্রদর্শক হিসেবে দিয়েছেন....আলহামদুলিল্লাহ!
যখন আমাদের কেউ কোন গিফট দেয় আমরা তার কতো প্রশংসা করি, তাকে খুশি করতে কতো সুন্দর সুন্দর কথা বলি, সবসময় তার কথা মনে রাখি পক্ষান্তরে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা যিনি আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যানকর হওয়ার সমস্ত নিয়ামত দিলেন তাঁর জন্য আমরা কি করি?
আমাদের তো আমাদের প্রভুর সমস্ত নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা উচিত! আমাদের কর্তব্য তাঁর সমস্ত আদেশ -নিষেধ, হুকুম -আহকাম মেনে চলা। তাঁর অবাধ্যতা থেকে, নাফরমানী থেকে দূরে থাকা।
কিন্তু আমরা কি তা করি? না বরং এই সুস্হ শরীর, অংগ প্রত্যংগগুলোকে নিজের ইচ্ছামাফিক ব্যবহার করি! এগুলোকে নিজের যোগ্যতা, নিজের কৃতিত্ব মনে করে আল্লাহর স্মরন থেকে গাফিল হয়ে যাই!
যিনি আমাদের এই সুন্দর পৃথিবীতে অস্তিত্বদান করেছেন, পিতা মাতার আদর ভালোবাসা পাওয়ার ব্যবস্হা করে দিয়েছেন, সবচাইতে বড় নিয়ামত ইসলামের মতোন আদর্শ ও সুন্দর জীবনব্যবস্হার অন্তর্ভুক্ত করে মুসলিম পরিচয় দান করেছেন, এতো নিয়ামত লাভ করার পর আল্লাহর প্রতিটি অনুগ্রহের স্বীকৃতি দিতে কেনো এতো অবহেলা আমাদের?
এরকমও হতে পারতো আমরা আমাদের প্রভুর সন্ধানে পথ হাঁতড়ে খুঁজে ফিরতাম, কিন্তু সঠিক পথের দিশা পেতাম না! ইসলামের নিয়ামত থেকে বঞ্চিত থাকতাম! কিন্তু তা হয় নি! আল্লাহ কতো মেহেরবান তিনি আমাদের সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছেন! এই সঠিক পথ আমাদের সামনে উন্মুক্ত থাকার পরও আমরা বাঁকা পথে চলে যাই, অন্যায় করি, ভুল করে যাচ্ছি ক্রমাগত অথচ আমাদের প্রভু তিনি আমাদের পক্ষাঘাতে আক্রান্ত করে বিকলাংগ করে দেননি! আমাদের চোখের নিয়ামত কেড়ে নিয়ে অন্ধ করে দেননি! তারপরো এতো অনুগ্রহ পাওয়ার পরেও আল্লাহর মেহেরবানীকে, রহমাহকে ভূলে যাই!
তবে কি আল্লাহর এতো অনুগ্রহ পাওয়ার কারনেই আমরা আল্লাহকে ভুলে যাই? নাকি আমাদের অজ্ঞতা আমাদের গাফিল করে রেখেছে? নাকি আমাদের চোখের সামনে পর্দা পড়ে আছে?
হে মানুষ ! কোন জিনিস তোমাকে তোমার মহান রবের ব্যাপারে ধোঁকায় ফেলে রেখেছে ,
যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন , তোমাকে সুঠাম ও সুসামঞ্জস্য করে গড়েছেন
এবং যে আকৃতিতে চেয়েছেন তোমাকে গঠন করেছেন ৷ (আল ইনফিতার ৬-৭-৮)
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর যিনি আমাদেরকে এ পথ দেখিয়েছেন, আমরা কিছুতেই পথ পেতাম না, যদি আল্লাহ আমাদেরকে পথ না দেখাতেন। (সূরা আল আ’রাফঃ৪৩)
'হে আল্লাহ আপনি আমাদের আপনার নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারী করুন, ঐ নিয়ামতের কারনে আমাদেরকে আপনার প্রশংসাকারী করুন, ঐ নিয়ামত স্বীকারকারী করুন, এবং পরিপূর্নভাবে ঐ নিয়ামত আমাদেরকে দান করুন।"
“হে আল্লাহ! আপনার যিক্র করতে, আপনার শুকরিয়া জ্ঞাপন করতে এবং সুন্দরভাবে আপনার ইবাদত করতে আমাকে সাহায্য করুন”।
বিষয়: বিবিধ
১৩৬৪ বার পঠিত, ৩১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আল্লাহ সুবহানাহু তা'য়ালা আমাদের অসংখ্য নিয়ামত দিয়েছন, অগনিত নিয়ামতে ডুবে থেকে এতোটাই অভ্যস্হ হয়ে পড়েছি যে এগুলোর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেও বুঝি ভুলে যাই!
হে আল্লাহ তুমি মাফ করে দাও আমাকে.
আল্লাহ আমাদের সবাইকে ক্ষমা করে দিন...।
'হে আল্লাহ আপনি আমাদের আপনার নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারী করুন, ঐ নিয়ামতের কারনে আমাদেরকে আপনার প্রশংসাকারী করুন, ঐ নিয়ামত স্বীকারকারী করুন, এবং পরিপূর্নভাবে ঐ নিয়ামত আমাদেরকে দান করুন। আমীন।
“হেআল্লাহ! আপনার যিক্র করতে, আপনার শুকরিয়া জ্ঞাপন করতে এবং সুন্দরভাবে আপনার ইবাদত করতে আমাকে সাহায্য করুন”। আমীন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন