সুবাসিত প্রদ্বীপ শিখা......
লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া মুকিম ২৮ মার্চ, ২০১৪, ০২:৪৯:১৬ রাত
বিছানায় মেয়েটা অঘোরে ঘুমোচ্ছে! ঘুমন্ত অবস্হায় মেয়েটার দিকে তাকালে আরো বেশি আদর লাগে, মনে হয় রাজ্যের মায়া ভর করেছে ওর ছোট্ট কচি মুখ খানিতে! সারাদিনের দুরন্তপনা আর দুষ্টু মিষ্টি মজার কর্মকান্ডে পুরো বাড়িটা মাতিয়ে রাখে! নাঈমা ঘুমিয়ে থাকলে মনে হয় বিশাল বাড়িটাও বুঝি ঘুমের গহীনে তলিয়ে গিয়েছে! একটু একটু করে মেয়েটা তিন বছরে পদার্পন করলো! ভাবতেই মনের পর্দায় স্মৃতি গুলো একটু একটু করে ভেসে ওঠে ....
মনে পড়লো ওদের প্রথম সন্তানের পৃথিবীতে আসার সোনালী দিনটির কথা! জীবনের অনেক আনন্দময় মুহূর্তগুলোর অনন্য একটি মুহূর্ত ছিলো সেটি! পৃথিবীর সব বাবা মায়ের জন্যই বুঝি এটি খুবি স্পেশাল মোমেন্ট! সমস্ত পৃথিবী আলোকিত করে এক টুকরো আলো ওর ভূবনজুড়ে এসেছিলো। ছোট্র পরীটার মায়াবী স্নিগ্ধতা আর ভালোবাসার কোমল স্পর্শে রিমা ওর সমস্ত দুঃখ কষ্টকে ভুলে গিয়েছিলো! ছোট ছোট হাতের মধ্যে রিমা ওর আঙ্গুল ঢুকিয়ে বলেছিলো, আমার সোনা জাদুমনির জীবনের প্রতিটি ক্ষনেই এভাবেই এক সাথে পথ চলব ইনশা আল্লাহ! আবেগে আপ্লুত হয়ে পাগলের মতো আদর দিয়ে কচি মুখটাতে মাতৃত্বের ছোঁয়া লাগিয়ে দিয়েছিলো !
একটু একটু করে কেটে যায় দিন-মাস-বছর! ওদের ছোট্র পুতুলটিও ধীরে বড় হতে থাকে! ওর প্রথম শোয়া থেকে উপুড় হয়ে যাওয়া, প্রথম বার বসা, হামাগুড়ি দেয়া,প্রথম দাঁত ওঠা হাঁটতে শিখা, দাঁড়ানো, আর এখন তো দৌড় দেয়া থেকে শুরু করে কতো কিছু করে মেয়েটা! মাথা ভর্তি কোকড়া চুলে দুটো ঝুটি করে যখন আধো আধো কন্ঠে আহ্লাদ করে কথা বলে মনে হয়, চারিপাশে জাদুর পরশ ছড়িয়ে দিচ্ছে বুঝি! বাড়ির সমস্ত আদরের মূল কেন্দ্রবিন্দু এই মিষ্টি বুড়ি নাঈমা! পুরো বাড়িতে ওই যে একমাত্র শিশু! ওকে নিয়েই সবার কাড়াকাড়ি, তুমুল হৈ চৈ! দাদা-দাদি, নানা-নানীর আদর, মামা-খালাদের ভালোবাসা, ফুপ্পির স্নেহ মমতা কোন কিছুর অভাব নাই শুধু মেয়েটা তার বাবাকেই পাচ্ছে না কাছ থেকে! ওর জীবনে বাবার অস্তিত্ব কিছু ছবি আর টেলিফোনে কথা বলা!
দিন কয়েক ধরে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে রিমার টেনশন হচ্ছে! বড় ভাইয়ার ছেলে হয়েছে, তাই সারাবাড়িতেই নতুন অতিথিকে অভ্যর্থনা জানানোর আনন্দঘন পরিবেশ! বাসা ভর্তি মেহমান কেউ আসছেন কেউ বা যাচ্ছেন! বংশের প্রথম বড় ছেলের ঘরে নাতি একটু অন্যরকম আমেজ তো আছেই! নাঈমা, রিমা ওরাও দুজনে মিলে সারাক্ষন নতুন অতিথির সেবায় নিয়োজিত! কিন্তু ছোট মেয়ে নাঈমা সব কিছুর পাশাপাশি এমন একটি বিষয় ওর ছোট্র মনের রাডারে নোটিশ করেছে যা রিমা কল্পনাতেও ভাবেনি এরকম কিছু ঘটতে পারে!
প্রতি রাতে নাঈমা যখন মাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমোতে যায় সেসময় ওর মা ছোট ছোট সূরা, দোআ, ছড়া, শিক্ষামূলক ঘটনা বা গল্প শোনান! হঠাৎ সে রাতে নাঈমা তার মাকে বললো-
- মা, আমাদের ছোটবাবুটার আব্বু মামা তো আমাদের বাসায় থাকে। তাহলে আমার আব্বুটা কেনো টলিফোনের ভিতর থাকে? আব্বুটা কি একটু টেলিফোনের ভিতর থেকে বের হয়ে আসতে পারে না আমার কাছে?
মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লেও এতোখানি চমকে উঠতো না নাঈমার কথায় যতখানি চমকে উঠেছে রিমা! হতবিহবল রিমা মুহূর্তের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলো! নিজেকে কোনরকমে সামলে নিয়ে বললো, কে বলেছে মা, তোমার আব্বু টেলিফোনের ভিতর থাকে? তোমার আব্বু এমন একটি জায়গায় থাকে যা আমাদের থেকে বেশ কিছুটা দূর! অনেক সময় লাগে যাওয়া আসা করতে কিন্তু আব্বু কখনোই চায় না একটা দিনের জন্যও নাঈমা আম্মুটার সাথে কথা বলা মিস করতে তাইতো আব্বু প্রতিদিন তোমার আর আমার সাথে কথা বলে টেলিফোনে! তুমি যখন আরো একটু ছোট ছিলে তখন আব্বু এসেছিলো শুধু তোমাকে দেখার জন্য! কতো আদর দিয়েছে তোমায়! তোমার জন্য এত্ত এত্ত খেলনা আর মজার মজার সব চকলেট নিয়ে এসেছিলো! হুম, আমরা একটি কাজ করতে পারি তোমার আব্বুকে বলি আবার যেনো নাঈমা আম্মুটার কাছে চলে আসে! ঠিক আছে মা?
মা-মেয়ের কথোপকথন চলাকালীন সময়ে বেডসাইড টেবিলে রাখা ফোন সেটটি ঝংকার দিয়ে বেজে উঠলো! এই সময় শাহীনই ফোন করে!
রিমা ফোন রিসিভ করে শাহীনের খোজ খবর নিলো! আড় চোখে তাকিয়ে দেখলো মেয়েটা তখনো কি এক চিন্তায় আচ্ছন্ন! রিমা কিছুই জানাবেনা শাহীনকে এমন সিদ্ধান্ত নিলো, এমনিতেই বেচারা দূর প্রবাসে বউ বাচ্চা-স্বজনকে ছেড়ে যথেষ্ট একাকীত্বে সময় কাটায়! এই সব শুনলে মানসিকভাবে আরো ভেঙ্গে পড়বে!ভাবতে ভাবতে কথা বলে চলছিলো আচমকা নাঈমা উঠে এসে মায়ের কাছ থেকে রিসিভারটি নিয়ে বাবাকে প্রশ্ন করে, বাবা তুমি কি টেলিফোনের ভিতর থাকো ?
না তো মা আমি এখন বাসায় বসে তোমার সাথে কথা বলছি!
তুমি কেনো আসো না আমার কাছে?
আমার মা টার বুঝি খুব বাবাকে কাছে পেতে ইচ্ছে করছে! ইনশা আল্লাহ তুমি আমার জন্য দোআ করো আমি সোঁ করে পাখির মতো উড়ে চলে আসব তোমার কাছে। ঠিকআছে মা?
তুমি না আসলে আমি কিন্তু ... কথা শেষ করার আাগেই নাইমা শুরু করলো কান্না!
রিমার বুঝতে বাকি রইলো না এটা মেয়ের তার বাবার জন্য ধীরে ধীরে তৈরি হওয়া সুপ্ত আবেগের বহিঃপ্রকাশ!রিমা মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিজের চোখের পানি মুছার মিছে চেষ্টা করলো! কিন্তু এ যে শ্রাবনের বাঁধনহারা ধারা! আর শাহীন?
বুকের ভিতর কালবৈশাখীর ঝড়ের মতো মুহূর্তের মধ্যেই তছনছ করে দিচ্ছিলো ওর মন প্রান ! বেদনার নোনা জলে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো ওকে ওর সমস্ত আশা আকাংখাকে জলাঞ্জলি দিয়ে! হু হু করে বুকের গভীর থেকে ছেড়ে আসা দীর্ঘশ্বাস একসময় নিজেও নিজেকে আর ঠিক রাখতে না পেরে অবুঝ শিশুর মতো সেও ফুপিয়ে কেঁদে ওঠলো! যে দুঃসহ স্মৃতি গুলো দূর সীমানায় মিশে গিয়েছিল আজ হঠাৎ বেদনার করুন সুরের ঝংকার গুড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে মনকে... ফোনটা রেখে দিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে রইলো একাকী চোখের জলকে সঙ্গী করে.........
মেয়েকে শান্ত করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো রিমা। ধীরে ধীরে ওকে বুঝিয়ে বললো বাবা সময় হলেই আসবে। ওদের আরো একটু অপেক্ষা করতে হবে।মেয়ের মাথায় হাত বুলোতে থাকলে নাঈমা এক সময় ঘুমিয়ে পড়লো। রিমা আস্তে করে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলে মেয়েটা ঘুমের ঘোরে ওর হাত দুটো দিয়ে আরো জোরে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে! ঘুমের মাঝেও ওর শংকা বুঝতে পারে রিমা! পৃথিবীর বুকে মায়ের কোলএর চেয়ে মোলায়েম, নিরাপদ বিছানা আর যে নাই! একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে ওর বুকের গহীন থেকে! কিছুক্ষন পর নাঈমার ঘুম গাঢ় হলে রিমা নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে বসে। জট পাকাতে থাকা ভাবনাগুলো মনকে টেনে নিয়ে চোরাবালির ফাঁদে ফেলতে চায়.....
ভাবতে থাকে প্রতিটি শিশু এতোটুকু অধিকার নিয়ে পৃথিবীতে আসে যে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর সে প্রথম পরশটুকু বাবা-মার কাছ থেকেই পাবে। তার বাবা-মা তাকে ভালোবাসার প্রথম আলিংগনে জড়িয়ে রাখবে, স্নেহের বন্ধনে আঁকড়ে ধরবে! নিবিড়তার উষ্ণ ছোঁয়া দিবে! হাঁটি হাঁটি পা পা করে যখন জীবনের প্রথম পদযাত্রা শুরু করবে তখন পড়ে যেতে যেতে মা-বাবার শক্ত হাতে হাত রেখেই উঠে দাঁড়ানো শিখবে, পথ চলা শিখব! আশেপাশের সকল বন্ধন গড়ে ওঠার আগে বাবা- মা এর ঘনিষ্ঠ বন্ধনের পরম তৃপ্তি আস্বাদন করবে!
সব কিছু কি মনের মতোন করে পাওয়া যায়? রিমাও মেনে নিয়েছিলো ওদের ভাগ্যকে! শাহীনর প্রবাসী হওয়া, পরিবার থেকে দূরে থেকে জীবন যাপন করা ওদের পুরো পরিবারের জন্যই এটাকে একটা কঠিন পরীক্ষা হিসেবেই গ্রহন করেছিলো সে! আর ভালোভাবেই বুঝে নিয়েছিলো এই পরীক্ষায় পাশ করার একমাত্র উপায় পরিপূর্নভাবে সবর করা! সবরের প্রতিযোগিতা করে যাওয়া। সবর তো সেই ক্লান্তিহীন ঘোড়া যে কখনো থেমে যায় না! সবর মনের জন্য এমন এক লড়াকু সৈনিক যা মনকে টেনে নিয়ে যায় চির সফলতা ও মুক্তির এক ভুবনে!
নিত্য আশেপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো থেকে বেশ অভিজ্ঞতা হয়েছে রিমার! কতো বাবাই তো আছেন একসাথে বসবাস করেও স্ত্রী-সন্তানকে দেয়ার মতো সময় তাদের নেই, কতো স্বামী নিজ স্ত্রীকে প্রতিমুহূর্তেই প্রতারনা করে চলছেন, কতো পরিবারের ছেলে মেয়েরা বাবা-মায়ের যথেষ্ট সংগ না পেয়ে নানারকম অনৈতিক কাজের সাথে জড়িযে পড়ছে, কতো বাবা-মা আর্থিক সংকটের দরুন ছেলে মেয়ের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরন করতে পারছে না, কতো সন্তান পারছে না নিজ স্ত্রী-সন্তান,বাবা -মা ভাই-বোনের হক আদায় করতে! এমন কতো শত শিশুও জন্ম নিচ্ছে যারা পৃথিবীতে আসার আগেই তাদের বাবারা, মায়েরা না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছেন! কতো অসংখ্য ঘটনাই তো চোখের সামনে অহরহ ঘটতে দেখা যায়!
কেউ চায় না তাদের জীবনে নেমে আসুক এমন অন্ধকারের কালো অধ্যায়! কালো মেঘে ঢাকা পড়ুক জীবনের নীল আকাশ! কেউ চায় না নিঃসঙ্গতা আর হাহাকারকে সাথী করে জীবনের পথটুকু পাড়ি দিতে! তারপরও জীবন সেতো বহতা নদীর মতো এভাবেই চলতে থাকে কখনো জোয়ার কখনো বা ভাটায়...
রিমা ভাবে ওদের এই বিচ্ছিন্ন জীবনের জন্য ও কি কাউকে দায়ী করতে পারে? সেটা কি তার মানসিক শান্তি ফিরিয় আনবে? ভুলে যাবে সব কষ্ট? সময়ের চক্রে ওদের জীবনের চলার পথটা একটু জটিল হয়ে পড়েছে এই তো! আর প্রতিটি মানুষের জীবনের বাঁকে বাঁকেই তো রয়েছে নানান পরীক্ষা! একেক জন একেক ভাবে পরীক্ষীত হচ্ছে তাদের জীবন-সংসার-সন্তান-সম্পদ দিয়ে!
সেদিন রিমার মা এই বিষয়টি বুঝতে পেরে রিমাকে বলেছিলেন, একজন মুমিনের গুনাবলী হলো সে সবরকারী হবে, সবর শব্দটি শুনতে ছোট কিন্তু এর পরিধি অনেক ব্যাপক! প্রতিটি ব্যাক্তিকে নিজ জীবনের পরীক্ষা অনুযায়ী সবর করতে হয়। সবর করে যাও আর সালাতের মাধ্যমে আল্লাহ'র কাছেই সাহায্য চাও! দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ!
রিমা বুঝতে পারে বাঁধা বিপত্তির পথ মোকাবেলা করে শান্ত চিত্তে লক্ষ্য অর্জনের জন্য সকল দুঃখ কষ্ট হজম করে যেতে হবে। সাহস হারিয়ে ফেললে চলবে না! ইনশা আল্লাহ শাহীন, রিমা আর নাঈমা ও পারবে এরকম সবর করতে। রিমা দৃড় প্রত্যয়ী হয় আর কখনো সে হতাশ হবে না, ভেংগে পড়বে না, সালাত আর সবর মাধ্যমে প্রার্থনা করেই সে পরম করুনাময়ের নিকট জীবনের সফলতার পথে উত্তীর্ন হবে।
সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে উঠে দাঁড়ায় রিমা। ওযু কর এসে মনোযোগ দিয়ে সালাত আদায় করে। মনের সব দুঃখ, কষ্ট যেনো একে একে লাঘব হতে থাকে। সালাত শেষে ধীর পায়ে জানালার কাছ এসে দাঁড়ায় চারিদিকে তখনো নিঝুম অন্ধকার, নিবিড় শান্ত প্রকৃতি, আকাশ জুড়ে যেন তারার মেলা বসেছে!
হতাশার ক্লান্তি যেন তাকে কোনভাবেই ছুঁতে না পারে, জীবনযুদ্ধে সে যেন কোনভাবেই হেরে না যায়! ওর কেনো জানি মনে হোল শাহীনও ঠিক এভাবেই ভাবছে! তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেলে রিমা! রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি জ্বলা তারাদের দেখে আবারো শক্তির সন্চার করে! বাইরে থেকে হাসনা হেনা ফুলের সুবাস বাতাসে ভেসে আসে, চোখ বন্ধ করে বিশুদ্ধ ফুলের সুবাস নিয়ে নব উদ্যোমে সতেজ হয়ে ওঠে রিমা.........
বিষয়: বিবিধ
১৫২২ বার পঠিত, ২১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেকদিন পর সুন্দর একখানা গল্প নিয়ে হাজির হইবার জন্য এক ঝুড়ি ঘাসফুলের শুভেচ্ছা...
আমাদের সমাজের যে অংশ প্রবাস জীবনের পথে পা বাড়ান তা কিন্তু এই কারনে যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাদের উপর পুরো পরিবারের ভরন পোষনের দায়িত্ব থাকে, তারা জায়গা জমি বিক্রি বা ধার দেনা করেও বিদেশ আসেন শুধু আর্থিক সচ্ছলতা বা পরিবারের দায়িত্বপালনের জন্য! উনাদের এই দেশত্যাগ (হিজরত) এটা কি উনারা ধর্মীয় বা শরীয়তের কারনে করেন? বেশির ভাগই করেন না! বেশিরভাগ প্রবাসীরা ডকুমেন্টস বা আয়জনিত সীমাবদ্ধতার কারনে ইচ্ছা থাকলেও পরিবার কাছে রাখতে সমর্থ হন না, আবার অনেকেই শুধু আর্থিক সংগতি বাড়ানোর জন্য বা ছেলে মেয়ে দেশে পড়াতে চান, বৃদ্ধ বাবা-মা একা হয়ে যাবেন এই কারনে ফ্যামিলি দূরে রাখেন !
আমার ক্ষুদ্র উপলব্ধুটুকু হলো আমরা জীবনের উপায় উপার্জনে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ মনে রাখিনা, পাত্রী দেখার সময় ও না, বিয়ে করার সময় ও না শুধু প্রবাসী ফ্যামিলি দেশে রাখে তখন মহানবী সাঃ এর আদর্শ দেখব?
তাহলে তো আমাদের জীবিকার টানে দেশ ত্যাগ না করে অল্পে সন্তুষ্ট হয়ে জীবন নির্বাহ করাটাই আদর্শ হিসেবে গ্রহন করাটা অধিক ন্যায়সংগত হতো!
ভাই, আমি বুঝি কতো কষ্ট প্রোষিতভর্তৃকাদের! তবে তারা বা তাদের অভিভাবকগন জেনে বুঝেই কিন্তু রাজি হন!আমি নিজেও জানিনা এই সমস্যা থেকে আমরা কিভাব বের হতে পারি!!!
সঠিক বলেছেন- "একদিন অর্থ-বৈভব, সৌখিন জীবন হয়তো পাওয়া যায়, তবে সেইদিনগুলো কিন্তু আর ফিরে পাওয়ার নয়"!
পরিশেষে বলব পার্থিব জীবনের কারনে আখিরাত যেন ভুলে না যাই আমরা, আমাদের প্রত্যেকের উপর অর্পিত দায়িত্ব সম্পর্কে যে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে সেই কথা স্মরন রাখি, স্বামী- স্ত্রী-সন্তান- বাবা-মা প্রত্যেকের যথাযথ হক আদায় করতে সচেষ্ট হই, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ অনুযায়ী চলতে চেষ্টা করি তবেই দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ই সুন্দর করতে পারব ইনশা আল্লাহ!
আমার বিশাল কাঠখোট্রা মন্তব্যের জন্য আবারো ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি শ্রদ্ধেয় ভাই! শুভ কামনা রইলো
((( আমার পুত্র তালহার মনের কথা)))
বাবা আমার ডানা দেখ উড়বে আকাঁশে
তোমায় ছাড়া একলা আমি থাকি কি করে
সকাল হলে ডাকবে আমায়
লক্ষি বাবা বলে।
থাকবে আমার পাশে বসে একটু
অসুখ হলে।
ঝাপটি মেরে ধরব আমি তোমার
কোলে বসে।
স্নেহের ছোঁয়া দিয়ে তুমি
বুকে জড়াবে।
আমার চোখে পানি দেখলে
মুছে দেবে তুমি।
লাগবে না আর জামা -জুতু
তোমায় কাছে পেলে।
আগলে আমায় রাখবে তুমি
আদর সোহাগ দিয়ে।
বাবা তুমি ভালো থেকো দুর প্রবাসে
তাঁর সকাশে করব দোয়া
যিনি অন্তর্জামী। —
অসম্ভব সুন্দর গল্পটির জন্য অসংখ্য
ধন্যবাদ।
আপু দোআ করি সকলের কষ্টকে আল্লাহ সহজ করে দিন!
শুকরিয়া আপনাকে! শুভকামনা রইলো
জাজাকাল্লাহু খাইরান আপুনি
আরেকটা অসাধারন লেখা উপহার দেয়ার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন আপু
শুকরিয়া আপু ! শুভকামনা রইলো!
তবে প্রিয় সঙ্গিনীকে ফেলে পরবাসী হওয়াটাকে আমি সমর্থন করতে পারিনা। জীবনের প্রায় অর্ধেক সময় একাকীত্বে কাটানোর পর যখন বিবাহের মাধ্যমে একজন সঙ্গী পাই, তখন তাকে একলা রেখে আবার পরবাসী হতে হয় কেন?
হয়ত বলবেন বাস্তব জীবন অনেক কঠিন। কিন্তু এই কঠিন জীবনের অর্থবহটা কোথায়? আমি বুঝিনা ।
নাঈমাদের মাঝে বাবাদের জন্য শুধু আবেগ নয়, ভালবাসা থাকুক। বাবা মা দুজনের সান্নিধ্যে বেড়ে উঠুক নাঈমারা।
[আপু, আবেগাপ্লুত হয়েছিলাম। মন্তব্যের শেষ দিকে এসে মনে হল, আমাকেও যদি বউকে ফেলে পরবাসী হতে হয়, তখন? তবে বউটা যেন রিমার মত হয় ]
আল্লাহ আমাদের জীবনের সব সিদ্ধান্ত সঠিক ভাবে নেয়ার তৌফিক দিন আমীন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন