আকন্দ ফুলের গুঞ্জরন......
লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া মুকিম ০৭ মার্চ, ২০১৪, ০৩:৩৭:০০ রাত
প্রায় মনে পড়ে ছোটবেলার বান্ধবীদের কথা! স্কুল শেষে গল্প করতে করতে বাসায় ফেরার পথে কতোনা পরিকল্পনা করতাম! বিকেলে কি খলবো বরফপানি নাকি চোরপুলিশ? শুক্রুবারে পুতুলের বিয়ে দিতাম! সেখানে ভোজসভাও হতো বিস্কিট আর চানাচুর দিয়ে! সেই স্বপ্নীল দিনগুলো এখন ধরাছোঁয়ার বাইরে! বন্ধুত্ব সম্পর্কটাই এতো মধুর, কখনো বা কিছুটা টক ঝাল ঠিক বড়ইয়ের আচারের মতো!!!
এখন ভাবি বড় বেলার বান্ধবীদের কথা! কাজ শেষ করেই ফোনে বা স্কাইপে মেসেজ বিনিময় বা কথা বলা! খোঁজ নেয়া, কে কি খেয়েছি, কি রেঁধেছি বা কি পরিকল্পনা আছে সারা দিনের? এখানেও সম্পর্কটা খুব্বি মধুর, কখনো শিউলি ফুল জর্দা কখনো বা রস মালাই!!
বন্ধুত্বের শিকল লম্বা হচ্ছে দিনের পর দিন! এই ভার্চুয়াল জগতের মাধ্যমেই পরিচিত হয়েছি অনেক প্রিয় কিছু মানুষের সাথে! মাঝে মাঝে ভাবি এসব কি শুধুই অলৌকিক নাকি উদ্দেশ্যমূলক? আল্লাহ চেয়েছেন বলেই সুন্দর বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হতে পেরেছি আলহামদুলিল্লাহ! এটা অনেক বড় একটা রহমাহ মনে করি সত্যি বলছি!
এবার শুনুন আমি আমার এক বন্ধুর কথা আপনাদের বলি! চোখ বড় বড় করে পড়ার দরকার নেই শুধু আপনার কোমল মনটাকে একটু প্রশস্হ করুন!
এক পশলা রিমঝিম বৃষ্টির পর ঐ দূর আকাশে কখনো চোখ মেলেছেন? দীঘল সূর্য্যের বিপরীত দিকে কি দেখতে পান? হুম পুরো আকাশ জুড়ে যে সাতটি রং এর সমাহারে মনকাড়া রংধনুর মেলা! প্রথম রং টি কি ভাবুন তো ??? এটি তার প্রিয় রং!
কখনো চোখ মেলেছেন কি সুবিস্তৃত সবুজ মাঠে? সবুজ সবুজ কচি কচি দুর্বাঘাষ যা স্নিগ্ধ হাওয়ায় দুলতে থাকে? খেয়াল করেছেন কি বাহারি রং এর নাম না জানা বৈচিত্রময় ঘাষফুল গুলো মনহারা হাসি দিয়ে কেড়ে নেয় আপনার অন্তর? এই ঘাষফুল তার অসম্ভব প্রিয়!
ঝিলের ধারে দাঁড়িয়ে ছুড়েছেন কি ঢিল? তারপর দূরে বহুদূরে ছড়িয়ে পড়া পানিতে তরংগধ্বনীর অদ্ভুত নৃত্যে কি হারিয়েছেন প্রান? সচকিত হয়ে আবিষ্কার করলেন মায়াবী কচুরীপানায় জলময়ূরীর আবেশ! এই জলময়ূরি তার ভাললাগা!
উনুনের সামনে হাঁড়িতে রান্না হচ্ছে ডেলিশাস কোন খাবার! তাতে বারবার চেখে দেখে নেয়া হচ্ছে স্বাদ, রং আর সুঘ্রান ঠিক আছে তো? লোভনীয় খাবার আর চমকপ্রদ ডেকোরেশন! সুখময় মায়াবী পরিবেশন! এটা তার শখ!
বিশাল এক লাইব্রেরীর সামনে আপনি দাঁড়িয়ে! সারি সারি বই সমস্ত তাক জুড়ে! এত বই কত শত লেখক! মূল্যবান সব তথ্য যা জীবনকে করে সমৃদ্ধ! লুক্কায়িত সত্বা জ্ঞানের মূল্যায়ন উপলব্ধিতে আনচান করে ওঠে! জীবনটাকে জানার আর বুঝার জন্য পাড়ি দেয় বিজ্ঞদের মনোজগতে!!! লিখনীতে ফুটিয়ে তোলে মনের সমস্ত আবেগ আর ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি! হ্রদয়ের গহীনে ছোট্র পাখির নীড়ের মতো বাসা বাঁধে! সৃজনশীলতা দিয়ে মুক্তো আহরন করে মালা বুনন করে, শক্ত করে বেঁধে নেয় তাতে সমস্ত ভালোবাসার বন্ধন!!!! এখানেই খুঁজে পাই আকন্দ ফুলের গুঞ্জরন!আর এটা তার স্বপ্ন!!
হুম এভাবেই আমি চিনেছিলাম আমার বন্ধুটিকে! পাঠক আশাকরি বুঝে গেছেন কার কথা বলছি?
মেঘেদের ভেলায় ভেসে পাড়ি দিয়েছিলাম বহূদূরের স্পেনের রাজধানীতে! বান্ধবীর ভালোবাসা আর কল্যানকামিতায় সাড়া না দিয়ে উপায় ছিল না আমার! কিন্তু ফলাফল কি হলো জানেন?
আমি হলাম চ্ক্ষুশূল!!!! আমার সাথে সমস্ত খাতির ছিন্ন করা হলো!!! ও আমাকে ভুলে গেলো! ওর সমস্ত আদর, ভালোবাসা আর মায়া দখল করলো আমার কন্যা! আমি পরিনত হলাম গিয়ে ওর বান্ধবীর আম্মা!!!!!
জ্বি পাঠক! সত্যি বলছি! বড়ো দুঃখে আজ আমার এই পোস্টের অবতারনা!
আমার সামনে বসে দুজনে প্ল্যান করে নেক্সট কোথায় বেড়াতে যাবে? কোন কার্টুন ভালো লাগে? কি বলে বকা দিয়েছি? কয় বার চা বানাতে বলেছি???? সব খাতির ওদের দুজনের! আমি কিচ্ছু না!!!!!!
আমি মনে মনে আলহামদুলিল্লাহ বলি । কেনো জানেন? প্রত্যেকের বন্ধু প্রয়োজন! যার কাছে মনের কথা খুলে বলা যায়! যার সাথে দুষ্টুমি করা যায়! যখন পড়তে পড়তে ক্লান্ত লাগে একটু খানি চ্যাট করে আনন্দানুভূতি গ্রহন করা যায়! স্কাইপ ওপেন করে চিতকার করে সালাম বিনিময় করে ভালোলাগা প্রকাশ করা যায়! মা কে জেলাস করার জন্য বলা যায় আমি অর্ধেক তোমার আর অর্ধেক আফরু আন্টির! কখনো বা মায়ের সাথে মিছেমিছি খুনসুটি করে এসে বলা যায় আমার আম্মু আমাকে ভালোবাসেনা! তুমি কি বাসবে আমায় ভালো?
আসলেই আমাদের বন্ধুত্বটা শুরু হয়ছিলো দুজনকে ঘিরে! সময়ের সাথে আমরা পারিবারিকভাবেই আত্নার বাঁধনে আটকে পড়েছি! আমার হাসব্যান্ড আর আফরোজার হাসব্যান্ড দুইভাইয়ের মাঝেও সুন্দর ভাতৃত্ব দেখতে পাই! যখন আমার হাসব্যান্ড আমাকে জিজ্ঞেস করেন-আজ আফরোজা আপুর সাথে কথা বলেছো? নাকিব সোনাপাখিটা যখন অসুস্হ ছিল উনার সে কি টেনশন! আমরা একে অপরকে সত্যিকার ভ্রাত্বত্বের বন্ধনেই খুঁজে পাই আলহামদুলিল্লাহ! এ যে মহামহিম আল্লাহ'র এক রহমাহ! সত্যি শুকরিয়া আদায় করার ভাষা হারিয়ে ফেলি যতবার ভাবি!
আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা আমাদের হৃদয় জুড়ে যে ভ্রাত্বত্বর বন্ধনে পরস্পরকে বেঁধে দিলেন প্রার্থনা করি এই ভ্রাতৃত্ব আমাদের সদা পূণ্যের পথে পরিচালিত করুক! ‘
কিয়ামতের দিন যখন আল্লাহ তায়ালা বলবেন, যারা আমার শ্রেষ্ঠত্বের জন্যে পরস্পরকে ভালোবাসতো, তারা আজ কোথায়! আজকে আমি নিজের ছায়াতলে আশ্রয় দান করবো। আজকে আমার ছায়া ছাড়া আর কারো ছায়া নেই। (মুসলিম-আবু হুরায়রা রা.) সেদিন আমাদের কে সেই স্হানে দাখিল করান! আমীন!
(বহুদিন ধরেই ভাবছিলাম লিখব! কিন্তু সময় করে উঠতে পারছিলাম না! আলহামদুলিল্লাহ আজ সুযোগ হলো! লিখাটি আমার সুইট আপু আফরোজা আর আমার কন্যার জন্য। ওদের ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ! আসলেই বন্ধুত্ব বয়স দেখে হয়না! প্রয়োজন বিশুদ্ধ মন!)
বিষয়: বিবিধ
১৭৮৮ বার পঠিত, ৩৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমাদের সবার জন্য দোআ করবেন ভিশু ভাই!
মন ছুঁয়ে গেলো আপুনি প্রতিটা শব্দ। আমি সত্যি মনের ভাব প্রকাশ করতে পারছি না। এখন বাইরে আছি। বাসায় ফিরে লিখবো, ইনশাআল্লাহ।
অনেক অনেক ভালোবাসা রইলো আপুনি।
মেকাপ কি বেশি নষ্ট হয়েছে
অনেক অনেক ভালোবাসা রইলো আপু
আমাদর সকলের ভালোবাসা হোক আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য! তোমাকেও ভালোবাসি আপু !
আমি তো সারাক্ষণ আল্লাহর কাছে দোয়া করছি আমার বেবিটা যেন একদম রোজা ভাবীর মত হয়। আপনিও এই দোয়া করবেন আমার বেবির জন্য। লাভ ইউ আপুনি।
সে আমারে এখনও সালাম ও ভালোবাসা পৌঁছে দেয় নাই
আপুনি নুহেরি ও সারামণি আমার জন্য...
সূর্যের সুবাস ছড়ানো ফুলেল মুগ্ধ সকাল
প্রচণ্ড তপ্ত দাহে পিপাসা নিভানো দ্বিপ্রহর
নরম রোদের আলো বিলানো মুগ্ধ বিকেল
গোধূলীর বর্ণিল আভা নামিয়ে যাওয়া সন্ধ্যা
পূর্ণিমার স্বিগ্ধ পরশ জড়ানো আকাঙ্ক্ষিত রাত
অতঃপর প্রতীক্ষা আবার কখন আসবে প্রভাত.....
আরু আর আপনি হচ্ছেন...
গুঞ্জন তোলা মিষ্টি দুটি মৌমাছি
সর্বদা যাদেরকে চাই কাছাকাছি
শব্দে শব্দ মিলিয়ে করতে খুনসুটি
সকল ব্যস্ততাকে জানিয়ে যেতে ছুটি....
আপুনি ভালোবাসার অসাধারণ ক্ষমতা আল্লাহ সুবহানাহুওয়াতায়ালা আপনাকে দিয়েছেন বলেই এমন করে ভালোবাসতে পারেন আপনি। আলহামদুলিল্লাহ।
আমাদের এই বন্ধন ও ভালোবাসা শুধু হোক আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। কবুল করে নিন আল্লাহ সুবহানাহুওয়াতায়ালা আমাদেরকে উভয় জীবনের জন্য। আমীন।
আমাদের এই বন্ধন ও ভালোবাসা শুধু হোক আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। কবুল করে নিন আল্লাহ সুবহানাহুওয়াতায়ালা আমাদেরকে উভয় জীবনের জন্য। আমীন।
আমাদের এই বন্ধন ও ভালোবাসা শুধু হোক আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। কবুল করে নিন আল্লাহ সুবহানাহুওয়াতায়ালা আমাদেরকে উভয় জীবনের জন্য। আমীন।
সুন্দর মন্তব্য ও দোআর জন্য আন্তরিক শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো!
ভাইরা দূর হইতে চাহিয়া দীর্ঘশ্বাস ছাড়িতেছে
অনেকদিন পর তোমাকে দেখে ভালো লাগলো! শুকরিয়া তোমাকে সুন্দর মন্তব্যো দোআর জন্য!
মন্তব্য করতে লগইন করুন