ভাইয়ার সফর
লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া মুকিম ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৪:০৭:০৮ রাত
বেশ কিছু দিন আগে জানলাম বাংলাদেশ থেকে আমাদের অতি সুপরিচিত এক জন বড় ভাইয়া অফিসিয়াল সফরে ইটালি আসবেন। উনাদের পাঁচজন ইন্জিনিয়ারদের নিয়ে একটি গ্রুপ বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এখানে ফ্যাক্টরি ভিজিটে আসছেন। উনাদের কর্মক্ষেত্র আমাদের শহরের আশে পাশেই ! ভাইয়াটি বাংলাদেশ থেকে আসার আগেই আমাদের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন সেই সুবাদে যখনই শুনেছি উনি ইটালি আসছেন এতো বেশি ভালো লাগা ছুঁয়ে গিয়ছিলো এককথায় সেটা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়!
আমরা যে কলোনীতে বড় হয়েছি, সেই কলোনীর একজন অন্যতম ইসলামিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন এই ভাইয়াটি। উনি যখন বিয়ে করলেন, আমাদের সে কি খুশি! আমরা কয়েকজন আপু মিলে নিয়মিত ভাবীর সাথে দেখা করার জন্য যেতাম। ইসলামিক শিষ্টাচার থেকে শুরু করে রান্নাবান্না,সংসার গুছানো প্রতিটি বিষয় এতো কাছ থেকে উনাকে করতে দেখেছিলাম যে আজো তা অনুভব করি! আমার সংসারজীবনে এখনো আমি অনেক কাজে-কর্মে ভাবীর ছোঁয়া খুঁজে পাই আলহামদুলিল্লাহ!
আমি যখন রান্না করি প্রায় মনে হয় ইশ একটু আম্মা -আব্বা, ভাইয়া-আপাকে, আত্নীয়-স্বজনদের নিয়ে একসাথে খেতে পারতাম! একটু বলতেন উনারা কেমন রেঁধেছে উনাদের সেই ছোট্রবেলার ভীশন (রান্নায় অবহেলা করতাম) আদরের মেয়েটি! আমি জানিনা কখনো আমাদের পরিবারের কারো আমার প্রবাসের এই ছোট্র কুটিরে অতিথি হয়ে আসার সুযোগ হবে কি না! তবে আমি কায়মনো বাক্যে পরম করুনাময়ের নিকট প্রার্থনা করি তিনি আমার এই দোয়া কবুল করুন! আমীন!
আজ যখন ভাইয়া এতো অল্প সময়ের জন্য (মাত্র দেড় ঘন্টার জন্য) স্বল্প সময়র সিদ্ধান্তে, অনেক পথ পাড়ি দিয়ে সীমাহীন কষ্ট করে শেষ পর্যন্ত এসে পৌঁছলেন ,আমার প্রতি মুহূর্তেই মনে হচ্ছিলো সুদূর মাতৃভূমি থকে আমার আপন বড় ভাইয়াই বুঝি এসেছেন! রান্নার জন্য এতো কম সময় পয়েছি কিন্তু কি যে প্রবল অনুভূতি সিক্ত ছিলো আমার প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি পরিবেশনা!
ছোটবেলা থেকে এই পর্যন্ত কখনই এই ভাইয়াটিকে দেখি নি কিন্তু ভাইয়া আব্বা আর ভাইয়াদের মাধ্যমে ঠিকই আমার পড়াশোনা থেকে শুরু করে যাবতীয় খোঁজখবর রেখেছেন, অকাতরে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে গেছেন! কখনও ভাবিনি সেই ভাইয়াটি আমার বাসায় আসবেন,বারবার শুধু মনে হচ্ছিলো আজ উনাকে আতিথিয়তা করার যে সুযোগ পেয়েছি এটা আল্লাহ'র অশেষ মেহেরবানী! শুকরিয়া আদায় করছি বারবার কিন্তু অতৃপ্তই থেকেই যাচ্ছি!
কিছুক্ষন হলো ভাইয়া চলে গিয়েছেন! যাওয়ার আগে আমার হাসব্যান্ডকে বারবার সতর্ক করে দিচ্ছিলেন ইসলামের এই বৈরী পরিবেশে থেকে আমরা যেনো সিরাতুল মুস্তাকীম থেকে দূরে সরে না যাই! আমার ছেলেকে অনেক দোআ করে দিলেন, মেয়েকেও পরদার আড়াল থেকে নসীহা করলেন! সত্যি এখনো অন্তরজুড়ে কল্যানকামিতার সৌরভ অনুভব করছি, প্রভুর নিকট আর্জি এটাই যেনো হয় "আল আহাব্বু ফিল্লাহ"! আল্লাহ সুবহানু তা'য়ালা ভাইটিকে সেই মর্যাদায় ভূষিত করুন যারা শুধু আল্লহকে সন্তুষ্ট করার জন্য পরষ্পরের সাথে সাক্ষাত করে এবং ফেরেশতাগন সুসংবাদ দেন "যারা শুধু আল্লাহ'র জন্য কাউকে ভালোবাসে আল্লাহ ও তাদের ভালোবাসেন"! সুবহানাল্লাহ! আমরা সবাই যেনো এই কাতারে থাকতে পারি! আমীন!
(স্বল্প সময়ে করা কিছু রান্নার ছবি)
(তান্দুরি চিকেন)
(মিক্সড ভজিটেবলস)
(গরুর গোশত )
(বেগুন ভর্তা ও ঝুক্কিনি ভর্তা সাথে ঢেঁড়শ ভাজি)
(খাওয়া শেষে রসমালাই)
"বি:দ্র- আফরোজার সহযোগিতা ছাড়া ছবি গুলো পোস্ট করা সম্ভব হতো না! ওর জন্যও "আল আহাব্বু ফিল্লাহ""! শুকরান আপুতা!"
বিষয়: বিবিধ
১৯৮৭ বার পঠিত, ৫২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
লেখাটা খুব ভালো লেগেছে আর খাওয়ার গুলো অনেকক মজা হইয়েছে
অনেক অনেক শুকরিয়া আপু!
ভালো কথা ইতালিয়ান বিখ্যাত পাস্তা কই
শেষেরটা আমার বেশি পছন্দের...
সাদা সাদা লাগে ................
আর কারো নয়।
বোমা মেরে কিচেন উড়াবে ইমন।
আমার ধড়ে আছে নাহয়
কয়েকখানা কল্লা
তা নিয়ে তুমি
কেন কর হল্লা
চমৎকার লাগলো লেখাটি। অতিথি আপ্যায়নে সাদিয়ার জুড়ি নেই। ধন্যবাদ
অনেক অনেক শুকরিয়া!
আমি তো মনে মনে প্রায় ঘুরে বেড়াই তোমার বাসাটিতে! ভাবি এখন আমি কিচেনের জানালার সামনে মেঘ দেখছি, এখন দুজনে মিলে কাপ্পুচিনো খাচ্ছি, ড্রয়িংরুমে কার্পেটে বসে গল্প করছি আরো কতোকিছু! চোখ বন্ধ করলেই সব কমন জানি জীবন্ত হয়ে উঠে!
ভালো থেকো আপু!
আপনার রান্নাগুলো অনেক মজা হয়েছে। ঝুক্কিনী ভর্তা ছাড়া সবভাবেই খেয়েছি। যাক নতুন একটা আইটেম শিখলাম। তবে মিষ্টি বানানোর চেষ্টা করবোনা। এটা আমার কেন জানি হয়না
ভালো লাগলো || ধন্যবাদ || পিলাচ || মাইনাস || অনেক ধন্যবাদ || স্বাগতম ||
কুইক কমেন্ট তৈরি করুন
অনেক শুকরিয়া আপনাকে আপুনি!
আমি তো মনে হয় কিচ্ছু না খাইয়ে বিদায় করে দিতাম, বুঝতেই পারছ কাজে কর্মে কত দক্ষ আমি!
শুকরিয়া আপুনি!
উহিব্বুকি ফিল্লাহ ইয়া উখতী।
রসমালাইয়ের রেসিপিটা আমাকে দিয়ো কিন্তু!
রসমালাই বানানো খুবি সহজ! মাত্র আধা ঘন্টা! ইচ্ছে আছে রেসিপি দিব! ইনশা আল্লাহ!
শুকরিয়া আপুনি!
অনেক ধন্যবাদ আপু।
খাওয়া দাওয়ায় দ্যা স্লেভ ভাইয়ার পড়েই আমি
আপনাকে শুকরিয়া।
মন্তব্য করতে লগইন করুন