নৈঃশব্দ অনুভূতির আলোড়ন
লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া মুকিম ৩০ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৮:০৩:৪৬ রাত
বহমান নদীর স্রোতের মতোই বয়ে চলেছে সময়, আমরা যেনো এই সময়ের নিরব সাক্ষী। যে সময় চলে গিয়েছে তা আর ফিরে আসবে না। সেই বরফ বিক্রেতার কথা মনে পড়ে, যে চিৎকার করে বলছিলো দয়া করো এমন এক ব্যাক্তির প্রতি যার পুঁজি গলে যাচ্ছে...। আমরা কি এমন প্রতিটি ব্যাক্তি নই?
জীবনের ঠিক আজকের এই মুহূর্তে আসতে কতো পথ পাড়ি দিয়েছি! কতো স্মৃতি বিজরিত মায়াভরা সেইসব দিন, হাসি --কান্না-আনন্দে ভরা মুহূর্তগুলো পার করেছি! পথ চলতে গিয়ে কত ভুলের সাথেই না হয়েছে দ্বন্দ্ব! ঠিক এভাবে চলতে চলতে একদিন আমরা মিলিত হবো সেই জীবন সায়াহ্নের শেষ প্রহর পানে.....
শুধুমাত্র বসবাসের কারনেই যদি আমাদের পৃথিবীতে আগমনের উদ্দেশ্য হতো তাহলে চিন্তার কোন কারন থাকতো না। সুন্দর একটি বাসস্হান, উন্নত জীবিকা, দ্রুতগামী যানবাহন, মনের মতোন স্বামী , আদরের সন্তান এই নিয়ে নিশ্চিন্তে থাকা যেত। অথচ শুধু এসব আমাদের জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য নয়। বরং যিনি আমাদের এই সকল নিয়ামত দিয়েছেন তাঁর অধীনে গোটা জীবন পরিচালনা করে জান্নাত লাভ করাটাই আমাদের গন্তব্য। আমরা ভুলে যাই আমাদের গন্তব্যের কথা তাই তো ভুল পথে পা বাড়াই।
পরিবারের যে কর্তা জানেন সারা মাস পরিশ্রম না করলে সংসার চলবে না, যে ছাত্র জানেন ভালোভাবে পড়াশোনা না করলে পাশ করা যাবে না তারা নিজের উপার্জন এবং পড়াশোনার প্রতি নিরন্তর আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যান!
যে কৃষক জানেন বছর শেষে তাকে গোলা ভর্তি ধান উৎপাদন করতে হবে, উনি কখনো অনর্থক কাজে সময় ব্যয় করেন না। কৃষক যখন চায় জমিতে ভালো ফসল ফলুক তখন সে তার সর্বোচ্চ সময়টুকু সেই জমিতেই ব্যয় করে। জমিকে সে আগাছা মুক্ত করে, তারপর বীজ বপন করে। আমরা যদি পরকালে আমাদের আবাস জান্নাতে নিশ্চিত করতে চাই আমাদের মনের আগাছাগুলোও উপড়ে ফেলতে হবে, বপন করতে হবে ঈমানের বীজ । তবেই এখান থেকে সৎ আমলের চারাগাছ জন্মাবে। সেজন্য অযথা সময় অন্য কাজে ব্যয় না করে নিজেদের সৎ আমলের প্রচেষ্টাকে বাড়ানো উচিত।
আজকের দুনিয়ায় পার্থিব সুখ সাচ্ছন্দ লাভ করার উপায় উপকরন কাউকে বলে না দিলেও ব্যক্তি তার নিজ গরজেই তা শিখে নেয়! কোন চাকরি করলে বেতন আশানুরোপ হবে, কোন স্কুলে ছেলে মেয়ে পড়ালে রেজাল্ট আকর্ষনীয় হবে, কোন ব্যবসায় পুঁজি খাটালে রাতারাতি দ্বিগুন মুনাফা উপার্জন করা যায় এগুলো আমরা নিজেই নিজের প্রচেষ্টায় করি! এগুলোর জন্য আমাদের কাউকে উপদেশ বা স্মরন করিয়ে দিতে হয় না! শুধু আখিরাতের বিষয়ে আমাদের যতো উদাসীনতা কাজ করতে দেখা যায়!
বর্তমানে আমরা এমন একটা সমাজে বাস করি ইসলামের সঠিক জ্ঞানের অভাব লক্ষ্যনীয় মাত্রায় রয়েছে। আবার জ্ঞান থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই সঠিক ভাবে তা প্রয়োগের অভাব দেখা যায়! ইসলামকে কিছু বাহ্যিক কার্যাবলীর মাঝেই সীমাবদ্ধ রেখে অনেক মুসলিম সালাহ , সিয়াম, যাকাহ আদায় করেন আবার ব্যাংকে সুদী লেনদেন করা, আত্ননীয়ের বা প্রতিবেশীর হকের ব্যাপারে জুলুম করেন বা হালাল হারামের ব্যাপারে সচেতন থাকেন না! আবার কেউ কবর বা মাজার পূজা করছেন , তাবিজ নির্ভর জীবন যাপন করছেন বা বিশ্বাস ও কর্মে শিরক ও বিদা'আ এর সাথে জড়িয়ে পড়ছেন। এটা এজন্যই এতো কষ্টকর বিষয় আমাদের মুসলিমদের জন্য প্রতিদিন এভাবেই কতো শত ব্যক্তি নিজের জীবনের ভুল সংশোধন না করিয়েই পাড়ি দেন পরপারের যাত্রায়!
আজ বাসায় ফেরার পথে হেঁটে আসছিলাম, খুব বৃষ্টি ছিল বাইরে! একেবারে কনকনে শীত !রাস্তার পাশের বড় বড় গাছগুলো পত্রপল্লব হীন নিঃস্ব অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে আছে। অথচ কিছুদিন আগেও কতো রংগিন ফুল পাতাতে সাজানো ছিল প্রকৃতি! প্রকৃতি নীরবে কতো উপদেশ, কতো শিক্ষাই না আমাদের দিয়ে যাচ্ছে! গ্রীষ্ম কাল বিদায় নেয় আবার শীত কাল আসে এভাবেই পরিবর্তন চলতে থাকে ঋতুচক্রের। ঋতুর পরিবর্তন ঘটে, ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে বিভিন্ন রং এর সমারোহে ভরে যায়। পাতা ঝরার মেলায় বৃক্ষের এক রং, নূতন পাতায় আবার অন্য রং ; ফুলের সৌন্দর্য , রং গন্ধ এক কথায় বিশ্ব প্রকৃতির এই পরিবর্তন!
ঋতুর পরিবর্তন চলতে থাকে চক্রাকারে সে ফিরে আসে নতুন করে কিন্তু মানুষ যারা এই পৃথিবী থেকে একবার বিদায় নিয়েছে তারা কেউ ফিরে আসে না! যারা চলে গিয়েছেন উনারা কি আর এসেছেন ফিরে?
পরম করুনাময় আমাদের পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন সাথে আমাদের দিকনির্দেশনার জন্য আল- কোরআন দিয়েছেন। কোরআন এর পাতায় পাতায় বিবরন এসেছে মুমিনের করনীয় এবং বর্জনীয় বিষয়গুলো। আমরা এত ব্যস্ত থাকি পার্থিব বিষয়গুলো নিয়ে কোরআন পড়ার সময় পাওয়া যায় না! পড়লেও অনেকেই শুধু রমাদানে পড়েন, অনেকে অর্থ বুঝে পড়েন না, অনেকে পড়েন ই না! কেউ শুধু নির্দিষ্ট কিছু সূরা পড়ে বারাকাহ নিতে চান, কেউ আবার মৃত মানুষের ঈসালে সওয়াবের জন্যই পড়েন! কেউ বা শুধু তাবিজ হিসেবে ব্যবহার করেই সন্তুষ্ট থাকেন!
উবুদিয়্যা - আল্লাহ'র পরিপূর্ন দাসত্ব করা আমাদের সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য। উবুদিয়্যার পথে বাধা দেয় এমন প্রতিটি বিষয় কুফর, শিরক, বিদাআ' হাসাদ,রিয়া, কার্পন্য, আলস্য, সঠিক, জ্ঞান অর্জনে বিমুখতা, অর্জিত জ্ঞান অপ্রয়োগ, কাপুরুষতা, দুনিয়ার লোভ, সন্দেহ, সংশয়, ক্রোধ, গুনাহে অভ্যস্হ হয়ে যাওয়া এমন সব বর্জনীয় অসৎগুনাবলী থেকে আমাদের প্রতিটি মুসলিমের বেঁচে থাকার চেষ্টা করে যাওয়া উচিত।
এই সুন্দর পৃথিবী একটা পরীক্ষা ক্ষেত্র । অনেকটা সময় পিছনে ফেলে এসেছি! হাতে সময় বড় স্বল্প! অতীতের ভুল সংশোধন করে যদি উত্তীর্ন হতে চাই এখনি জেগে উঠতে হবে! সময়ের যথাযথ ব্যাবহার করতে হবে। প্রতিটি মুহূর্ত যে আমাদের অনেক মূল্যবান! টাকার চাইতেও বেশি মূল্যবান। আজকের এই সময়কে সঠিক ভাবে ব্যবহার না করার ফলে জাহান্নামে একদল লোকের কঠিন আযাবের কথা এসেছে কোরআনে! আমরা কেউ যেনো এর অন্তর্ভুক্ত না হই!
সেখানে তারা আর্তনাদ করে বলবে, " হে আমাদের প্রভু! আমাদের [এখান থেকে ] বের করে নাও । পূর্বে যে [ কাজ ] করতাম তা করবো না। " [আল্লাহ্ বলবেন ] , " আমি কি তোমাদের যথেষ্ট দীর্ঘ জীবন দান করি নাই , যেনো তোমরা উপদেশ গ্রহণ করতে পার ? [উপরন্তু ] তোমাদের নিকট একজন সর্তককারীও এসেছিলো। সুতরাং [ তোমাদের কৃতকর্মের ফল ] আস্বাদন কর । পাপীদের জন্য কোন সাহায্যকারী নাই। (সূরা ফাতির- ৩৭)
বিষয়: বিবিধ
১৫০৩ বার পঠিত, ৫৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক চমত্কার পোস্টের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
কুরআনের জ্ঞান অর্জনের সকল আয়োজন সকলের খুব কাছেই বিদ্যমান। এর নাজিলকারী সকলপ্রকারে পুরো মানবজাতিকে উদ্ভুদ্ধ করেছেন, কুরআনের কাছে আসতে, এই গ্রন্থখানা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ফিকির করেত, এর থেকে উপদেশ গ্রহণ করতে – সর্বোপরি এর সংস্পর্শে এসে আরোগ্য লাভ করতে (১০.৫৭, ১৭.৮২, ৪১.৪৪)। যে যেই ভাষা বা জাতি গোষ্ঠিরই হোকনা কেন কুরআনের শিক্ষাগ্রহণ যে সহজ করা হয়েছে তা পুনঃ পুনঃ উচ্চারিত হয়েছে। আমরা যেন কাউকে সাবিলিল্লাহ বা আল্লাহর পথ থেকে প্রতিরুদ্ধ না করি (অ-ইয়াছুদ্দুনা আংছাবিলিল্লাহি-৩.৯৯, ৭.৪৫, ৭.৮৬, ৮.৪৭, ৯.৩৪, ১১.১৯, ১৪.৩, ২২.২৫/ ৪.১৬৭, ১৬.৮৮, ৪৭.১, ৪৭.৩২, ৪৭.৩৪, ৫৮.১৬, ৬৩.২)। আর আল্লাহ পাক আমাদের কার্যকলাপ সম্বন্ধে মোটেই অনবহিত নন (অমাল্লাহু বিগফিলিন ‘আম্মা তা’মালুন-২.৭৪, ২.৮৫, ২.১৪০, ২.১৪৪, ২.১৪৯, ৩.৯৯)।
আমরা অনেকেই কল্যাণের জন্য ছুটোছুটি করি, কিন্তু সুস্থির হয়ে এই আলো প্রক্ষেপনের কাজটি করিনা। অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট করে আল্লাহ তা’আলা জানিয়ে দেন যে, “হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেদের চিন্তা কর (ইয়া আইয়্যুহাল্লাজিনা আমানু ‘আলাইকুম আংফুসাকুম)। যখন তোমরা সৎপথের উপর রয়েছ, তখন কেউ পথভ্রষ্ট হলে তোমাদের কোন ক্ষতি নেই। তোমাদের সকলকে আল্লাহরই সমীপে ফিরে যেতে হবে। অতপর তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে দেবেন যা কিছু তোমরা করতে”- ৫.১০৫। “কেউ কারো বোঝা বহন করবে না” (৬.১৬৪, ১৭.১৫, ৩৫.১৮, ৩৯.৭, ৫৩.৩৮)- অলা তাঝিরু অঝিরতুও বিঝরা উখরা। আল্লাহ তাঁর রাসূলকে বলেন: “ওরা যা বলে তা আমি সম্যক অবগত আছি। তুমি তাদের উপর জোরজবরদস্তিকারী নহ (অমা আংতা আলাইহিম বিজব্বার); অতএব যে আমার শাস্তিকে ভয় করে তাকে কুরআন দ্বারা উপদেশ দাও (ফাজাক্কির বিল কুরআন)”-৫০.৪৫।
এখন সময় এসেছে সবাই মিলে কুরআনের সবটাকে ভালভাবে গ্রহণ ও ধারণ করার। সময় এসেছে এই অবহেলিত, পরিত্যক্ত মহাগ্রন্থকে গভীর মমতায় বুকে তুলে নেবার। সময় এসেছে এর মধ্যে গভীর অন্তর্দৃষ্টি প্রক্ষেপনের। আমরা কি কিছুক্ষণ ভেবে দেখব, এমন একটি সমাজের কথা – যার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ নিবিড় নিষ্ঠা আর অত্যন্ত ভালবাসা নিয়ে প্রতিনিয়ত সকাল-সন্ধা কুরআন চর্চা করে, জীবনাচরণে তার প্রকাশ ঘটায় ভারসাম্য ও মধ্যপন্থার মাধ্যমে, নির্ধারিত সীমারেখার মধ্যে থেকে তা পৌঁছে দেয় স্বীয় পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন আর আল্লাহর অন্যান্য বান্দার কাছে, কুরআনের ভাষায় যারা কথা বলে, যাদের শারিরীক ভাষাকে কুরআন এক যথাযথ আদল দিয়ে দেয়, তাহলে কতইনা সন্তুষ্ট হবেন আল্লাহ সেই সত্তাগুলোর প্রতি, আর সমষ্টিগতভাবে সেই সমাজের প্রতি – যারা আল্লাহর শেখানো ভাষায় কথা বলে – যাদের ভয়েস আল্লাহর ভয়েস হয়ে যায়।
আমরা নিজেকে আল্লাহওয়ালা বলে ভাবব, কিন্তু আল্লাহর মধুর বাণী কুরআন আমাদের টানবে না, তা কি কখনো হয়? প্রতিটি সন্দিগ্ধ মন ভেবে দেখুক, কেন কুরআন তাকে টানেনা। ‘শোনা ইসলাম’ আর ‘দেখা ইসলাম’কে কুরআনের কষ্টিপাথরে যাচাই করার তাগিদ কেন আমাদের নেই? পুরো মানবজাতি সংস্কারহীন মনে এই মহান গ্রন্থখানা আদ্যোপান্ত পড়ে দেখুক কী নেয়ামত থেকে মানবজাতির কমন ও স্বঘোষিত দুষমন শয়তান আর তার দোসররা তাদেরকে বঞ্চিত করছে।
খাতামুন্নাবিয়্যিন হযরত মুহম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম)-এর ওফাতের অব্যবহিত পরে হযরত উম্মে আয়মন বারাকাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহা) প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন এই বলে যে, “আসমান থেকে আসা অহীর দরজা বন্ধ হয়ে গেল”। হযরত উম্মে আয়মন ছিলেন আব্দুল্লাহ ইবনে মুত্তালিবের কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাসী, শেষনবীর ধাত্রীমাতা। আরবের মরুপথে যখন মা আমেনার মৃত্যু হয়, তখন শিশু মুহম্মদকে (দ এই উম্মে আয়মন বারাকাহই কোলে করে আগলে মক্কায় ফেরত এসেছিলেন। শৈশব, কৈশোর, যৌবন এবং নবুওয়াতী জিন্দেগীর প্রায় পুরোটা সময় জুড়েই তিনি আল্লাহর রাসূলের নিকট সান্নিধ্যে ছিলেন। নবীকে কুরাইশী গোত্রবাদী অপবিত্রতা থেকে মুক্ত রেখে আসমানী সওগাত প্রদানের এ যেন দোজাহানের বাদশাহর অভূতপূর্ব এক আয়োজন। বস্তুতঃ শেষনবীর ইন্তেকালের পর আরো বেশ কবছর বেঁচে ছিলেন তিনি – যাকে নবীজি আমেনার পর তাঁর মা বলে ডাকতেন। স্বীয় রব্ব আল্লাহর প্রতি নিষ্কলুষ ঈমান, রাসূলের সার্বক্ষণিক সাহচর্য, নিবিড় পর্যবেক্ষণ, আজীবন অপার নিষ্ঠাপূর্ণ খেদমত থেকে রাসূলের ওফাত সম্পর্কিত তাঁর এই যে অভিব্যক্তি, তা সবিশেষ তাত্পর্যপূর্ণ, গভীর অন্তর্দৃষ্টির পরিচয়বহ। এই প্রতিক্রিয়া মানবসৃষ্টির সূচনাকালকে ছুঁয়ে প্রতিঘাত হতে হতে ক্বিয়ামত পর্যন্ত পৌঁছে যায়।
এই সেই অহী যা মানব ইতিহাসের এক অভূতপূর্ব ক্ষণে দীর্ঘ ২৩ বছর মেয়াদে যখন যেমন প্রয়োজন আল্লাহর তরফ থেকে মানুষের কল্যাণে নাযিল হয়েছে। এই সেই অহী যা সীমাহীন যাতনা-লাঞ্ছনা, দুঃসহ কষ্টভোগের মধ্য দিয়ে আল্লাহর শেষনবী পুরো মানবজাতির জন্য রেখে গিয়েছেন – যে যন্ত্রণার ব্যাপ্তি, গভীরতা আমাদের পক্ষে কস্মিনকালেও অনুভবে বা বোধের জগতে আনা সম্ভব নয়। ইহকাল পরকালে মানবজাতিকে মহিমা দান করতে, অকল্যাণ থেকে বাঁচাতে, আর চিরস্থায়ী কল্যাণ দিতে অহীর মাধ্যমে প্রাপ্ত চূড়ান্ত ফয়সালাকারী সেই বাণীর সংকলন পবিত্র আল-কুরআন। সেই মহিমান্বিত কুরআন পরিত্যক্ত, পরিত্যজ্য, অবজ্ঞাত, বর্জিত (২৫.৩০)– আমাদের দৈনন্দিন হিসাবের একেবারেই বাইরে।
পৃথিবীতে মানব সভ্যতার সামগ্রিক বয়স অনেক। হয়ত ক্বিয়ামত খুবই সন্নিকটে (১৬.৭৭, ২১.১, ৪২.১৭) যেমনটি আসমান-যমিন ও তার মধ্যস্থিত সকল কিছুর মালিক বলেছেন। চারিদিকে তাকালে, একটু ভাবলে কেমন যেন স্পষ্ট হয়ে যায়, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সকল দিক থেকে সৃষ্টিটাকে গুটিয়ে আনছেন। পশ্চাতে আয়োজন চলছে এই সাময়িক-পর্বটি চুকিয়ে ফেলার। কত শত সহস্র নবী-রাসূল আর তাঁদের মাধ্যমে আসমানী কিতাব পাঠিয়ে আল্লাহর একত্ব, তাওহীদের শিক্ষা, স্বীকৃতি ও তার উপর দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত থাকতে মানব সম্প্রদায়ের প্রতি তাঁর অপার করুনার ধারা অহীর মাধ্যমে জারী রেখেছিলেন এই সেদিন পর্যন্ত। আজ সেই ধারাটি বন্ধ হয়ে গেল ‘মুহম্মাদুর রাসূলুল্লাহর’ ইন্তেকালের মধ্য দিয়ে। এরচে’ বড় সংবাদ বা তার শিরোনাম আর কী হতে পারে? তাবৎ পৃথিবীর মানুষের পক্ষে হাজার বছর সেজদায় লুটিয়ে পড়ে থেকেও আর কোন আসমানি বাণী আণয়ন সম্ভবপর হবে না। তার প্রয়োজনও নেই। কেননা শেষনবী আর মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের মাধ্যমে আল্লাহ মানবকূলের প্রতি তাঁর প্রদত্ত নেয়ামতকে পূর্ণ করে দিয়েছেন। আল্লাহর রাসূলের ওফাতের পর থেকে এ পর্যন্ত আমরা ইসলামের নামে অনেক কথা-কাহিনী, টার্ম-টার্মিনোলজী তৈরি করেছি আমাদের খেয়াল খুশিমতো, কখনো উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে – কুরআন পড়লে যা আপনাআপনি অসাড় বলে প্রতিয়মান হয়। কাজেই কুরআনের গুরুত্ব অনুধাবন করে আমাদের জীবনকে সেই অনুযায়ী পরিচালিত করা প্রত্যক মুমিন মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য।
দুনিয়ার অন্ধকার পথে যাতে আমরা মুখ থুবড়ে পড়ে না যাই, ভুল পথে চলে না যাই সেজন্য যে আলো আল্লাহ প্রেরণ করেছেন আমাদের জন্য, আমরা যদি সেই আলোতে পথ চলতে চেষ্টা করি তাহলে কোন মরীচিকা আমাদেরকে সঠিক পথ থেকে বিপথে নিয়ে যেতে পারবে না, ইনশাআল্লাহ।
কুরআন ও হাদীসের আলোতে যেন আমরা ত্যাগ করতে পারি অন্ধকারের সকল ভুল পথ।আল্লাহ সুবহানাহুওয়াতায়ালা আমাদেরকে তাঁর নির্দেশিত পথকে চিনে নিয়ে সে পথে চলার তাওফীক দান করুন। আমীন।
হৃদয় ছোঁয়া সুন্দর লেখাটির জন্য জাযাকিল্লাহ আপুমণি।
ইয়া আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন! দ্রুত ধাবমান এই ক্ষনিক সময়ের স্রোতে ভাসমান হয়ে যেন আমরা আপনাকে ভুলে না যাই !
আল্লাহ তায়ালা আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। আমীন
সুন্দর লেখাটির জন্য জাযাকিল্লাহ
আপনার সুন্দর মন্তব্যটির জন্য শুকরিয়া আপি!
আল্লাহ্ আমাদের সঠিক পথে চলার এবং সময়ের যথাযথ ব্যাবহার করার তাওফিক দিন আমীন
জাযাকাল্লাহু খাইরান আপুনি
।
চমৎকার লিখা। মহান আল্লাহ আমাদেরকে কবুল করে নিন। আমীন
এমন উপহার দেয়ার জন্য আপনাকে শুকরিয়া জানানো আমাদের সবার জন্য একান্ত জরুরী।
কি বলে শুকরিয়া জানাব?
আল্লাহ তায়ালা এ কাজ আপনার জন্য কিয়ামতের দিন নাজাতের ওসীলা করুন। আমীন
তাগিদের জন্য যাজ্জাকিল্লাহ আপু
আপু একটি নির্মম সত্য হচ্ছে আমার দেখা শতকরা ৯৬% মানুষও ঠিকমত শুদ্ধ উচ্চারণ এ কালিমা বলতে পারেনা। আর জামাতে নামাজিতো ০.৫০% এর নিচে।
মুসলমানের ভালোর জন্য মানুষকে ভালোবাসতে হবে । ঐ শিরক করা মাজারপূজারী মুসলিমকে ভালোবাসতে হবে। [আমি মানুষকে ভালোবাসার কথা বলছি গুণাহকে অবশ্যই ঘৃনা করতে হবে]
আমি ওদের দোষগুলোকেই দেখছি কিন্তু নিজেকে প্রশ্ন করি আমি কি সত্য দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে ঐ মাজারপূজারী রিক্সাওয়ালার বস্তিতে তার ঘড়ে গিয়েছি? আমি কি হৃদয়ের দরদ দিয়ে তার উপর মেহনত করেছি? আমি কি ভালোবেসে তাকে বলেছি যে ভাই এ কাজটি ঠিকনা?
সে যেনো সঠিক বুঝ পায় তার জন্য সঠিক দ্বীন শিক্ষার জন্য কোন ব্যাবস্থা করেছি? তাহলে কি করেছি?
ব্লগে/ফেসবুক/অনলাইন এ তাকে নিয়ে ধ্বংসকর সমালোচনায় মেতে উঠেছি। এটাই করেছি। [আপু আপনার লিখায় দরদগুলো কিন্তু ফুঁটে ওঠে। মুসলমানদের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা ফুঁটে উঠে শুকরিয়া আল্লাহকে]
হা হা হা বড়ই আফসোস সমালোচনা করেই সূখ পাই। শোন হে উম্মতের দরদী বন্ধুরা এই ব্লগ নামটিও সেই মাজারপূজারী শোনেনাই কখনও। যদি তুমি সত্যিকারের দরদী হও ঐ রিক্সাওয়ালা মাজারপূজারীকে ঘৃনা না করে বুকে টেনে নাও ঐ ফকিরটা যে কালিমা পড়ে ভিক্ষা করছে তাকে তোমার হৃদয়ের তলে আশ্রয় দাও। হৃদয়ে উম্মতের প্রতি ভালোবাসা বাড়াও যে ভালোবাসার নূর হেরা থেকে এসেছে। ছড়িয়ে পড় ময়দানে যেখানে এখন পর্যন্তও শিরক বেদায়াত ঢুকেনাই। তুমি যদি ইমানের আলো হাতে নিয়ে ছড়িয়ে না পড়ো তবে অন্ধকার কিন্তু বসে থাকবেনা সেও শিরক হাতে নিয়ে ছড়িয়ে পড়বে।
আর যদি ঐ গরীব ফকিরটা অথবা ঐ গরীব মুচির ঘড়ে যেতে নাও পারো তবে সাদিয়া আপুর মত দরদের সাথে লিখো যাতে করে তোমার লেখায়ও দরদ থাকে উম্মতের প্রতি ভালোবাসা থাকে।
জাজাকাল্লাহু খাইরান আপু অসাধারণ একটি পোষ্টের জন্য
কিছু মানুষ যদি আপনার লিখার দরদ অনুযায়ী চলতো তবে আমাদের অবস্থা অনেক উঁচু মাকামে থাকতো।
আল্লাহ আপনার লিখনীতে আরো বারাকাহ্ দান করেন। আমিন।
আপনি লিখে যান আমরা সবাই উপকৃত হব!
অনেক অনেক শুভকামনা রইলো!
মন্তব্য করতে লগইন করুন