স্মৃতির পাতায় মায়ার বন্ধন...
লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া মুকিম ২৪ জানুয়ারি, ২০১৪, ১০:৪১:২৭ রাত
সবুজ জমীন থেকে হাজার হাজার মাইল উপরে প্লেনে বসে আছি! আমার মনের অবস্হা তখন দুরু দুরু! বহু প্রতীক্ষিত প্রহর আজ বাস্তবে রুপ নিতে যাচ্ছে! নীল আকাশের শুভ্র মেঘেদের ভেলায় ভেসে ভেসে যাচ্ছি আর কল্পনার চোখে ষ্মৃতির জানালায় প্রিয় বোনটির মুখখানি দেখছি! সাত সকালেই আফরোজা ফোন দিয়েছিলো , কোন ভাবেই যেন ফ্লাইট মিস না হয় সেজন্যই ওর ফোন করা । অনেক অনেক আনন্দ উচ্ছাসে আপ্লুত আপুটি তবু বুঝতে পেরেছিলাম ওর লুকায়িত অসুস্হতার গোপন আভাস! এতক্ষনে আমি মুসাফির, প্রান উজাড় করে দোআ করলাম আমাদের সবার জন্য! স্পেশালি আমার এই বোনটির জন্য!
দুই ঘন্টার সফর শেষে প্লেনের চাকা যখন রানওয়ে ছুঁই ছুঁই, মনের মাঝের স্বপ্ন গুলি সূর্যের আলোর মতোই সত্য হয়ে উদ্ভাসিত হচ্ছিলো! যখন বুঝতে পারলাম মাদ্রিদে এসে পৌঁছেছি, জানিনা কোথা থেকে এক অজানা অনুভূতি এসে আমাকে গ্রাস করে নিচ্ছিলো! দুচোখ জুড়ে তখন অঝোর অশ্রু বর্ষন! অবশেষে আমি এসেছি আমার প্রিয় বোনটির কাছে আলহামদুলিল্লাহ !
যখন বাসার কাছাকাছি আসলাম, দূর থেকেই বুঝেছি হিজাব পরিহিতা বোনটি আর নাকিব সোনা পাখি অধীর আগ্রহে আমাদের গাড়িটিকেই খুঁজছে! নেমে দৌড়ে বোনটিকে যখন জড়িয়ে ধরলাম, আমার মেয়ে তখন চিৎকার করছিলো, তোমারা কান্না কাটি করো না প্লিজ!
আমাদের সফর ছিলো সাতদিনের। ভেবেছিলাম মোটামোটি অনেক সময়! কিন্তু আমাদের ভাবনাকে মিথ্যে প্রমান করে দিয়ে কিভাবে যে চোখের পলকে কেটে যেতে লাগলো সময় গুলো! এখনো কষ্ট লাগে ভাবতে!
প্রতিদিন সকালে আমি যখন ঘুম থেকে উঠতাম, উঠার সময় ইচ্ছে করে সারা আর আফরোজার কম্বল টেনে ফলে দিতাম! দুইটা মিলে তখন করতো চিৎকার! উফ! কি যে মজা লাগতো তখন!
হাসান ভাই আর আব্দুল মুকিম ভাইয়ের সকালের নাস্তা নিয়ে যে কথোপকথন হতো তা সত্যি খুব্বি মজার! উনাদের এই মজার খুনসুটি দিয়েই আমারা উপভোগ করতাম সকালের নাস্তা!
মধুর মধুর দিনগুলি কি যে আনন্দানুভূতিতে কাটিয়েছে সবাই মিলে তা হাজার চাইলেও লিখে প্রকাশ করতে পারব না! আফরোজা আর আমার সকালটা শুরু হতো চিনি ছাড়া লাল চা দিয়ে আর অলস দুপুরে কাপুচিনো পান করা আসলেই এই মুহুর্ত গুলি ছিলো ভীষন রকম স্পেশ্যাল ! এখনো আমার চোখ ভিজে আসছে!
নাকিব আর আফনানের ইটালিয়ান-বাংলা -স্প্যানিশ ভাষায় ক্ষনে ক্ষনে দুষ্টুমি মাখা ঝগড়া আবার জানের জান বন্ধুত্বে পরিনত হওয়া অনেক প্রানবন্ত বিনোদন ছিলো আমাদের জন্য!
সারা আর আফরোজার বন্ধুত্বের কথা কি বলব! দুজনে মিলে কি যে ভাব! মাঝে মাঝে মনে হতো আমি কিছ্ছু না! ওরাই বুঝি সব! একসাথে বসে "ডোমিনো" খেলে, ইশারা ইংগিতে কানে কানে কথা বলে, ফুসুর ফুসুর করে, এমনকি সুসি রাইস খাবে এই রেসিপিও দেখেছে দুজনে মিলে! আবার আমাকে ফেলে রেখে দুজনে মিলে বাইরেও ঘুরে এসেছে, ফিরে এসেছে দু হাত ভর্তি করে পছন্দের জিনিষ নিয়ে!
মন ভোলানো কোন রংগিন প্রজাপতির মতোই স্বপ্নিল দিনগুলি কাটছিলো আমাদের! আফোজার সে কি প্ল্যান আমাদের নিয়ে! রীতিমত ডায়েরী নিয়ে নোট করতে বসে গেলো মেন্যু ঠিক করার জন্য , ওর নিপুন হাতের সুস্বাদু রান্নাতো খেয়েছিই, এছাড়াও দাওয়াত খেয়েছি ওর প্রতিবেশী বোনদের বাসায়, ঘুরে বেড়িয়েছি মাদ্রিদের অলিগলি, বাসার আশে পাশের পার্কে, গল্প করতে করতে বাসায় ফিরে এসেছি, নাকিবে স্কুল, ওর মাছ-স্বজি-গৃহঃস্হালি জিনিষ কেনাকাটার দোকান গুলি, বাসার ছাদে বসে রাতের অন্ধকারে জোছনা দেখা, শহরের বাইরে দূরের শপিং সেন্টার গুলোতে ঘোরা, হাঁটতে হাঁটতে পা ব্যথা নিয়ে বাসায় ফেরা, ননস্টপ গল্প, হাসি-আনন্দে মেতে থাকা মুহূর্তগুলো, মাঝে মাঝে খাওয়া শেষ করে ওর চিৎকার শোনার জন্য ইচ্ছে করেই ওর ওড়নাতে হাত মুছতাম! আসলেই অনুভূতিগুলো অধরা, অস্পৃশ্য! থাকুক না হয় এগুলো মনের খাতায় বন্দী হয়ে!
বুঝতে পারছিলাম সময় ঘনিয়ে আসছে, বিদায়ের সুর তখন সকলের মনকেই বিরহে আচ্ছন্ন করে রেখেছিলো!শুধু মনে হতো ওদের কিছু না বলে চুপচাপ চলে আসতে পারতাম! বিদায়ের আলিংগন যে বড্ড কষ্টের! মনটাকে শক্ত করে বাঁধলাম, অনেক বোঝালাম কোন ভাবেই ভেংগে পড়তে চাইনা! কিন্তু সে কি কথা শোনে?
খুব ভোরেই ছিলো ফিরতি ফ্লাইট! রাতের মাদ্রিদ তখনো ঘুমের কোলে আচ্ছন্ন! চোখে শুধু ভাসছিলো মমতাময়ী বোনের বিদায়ের দৃশ্য, নাকিবের আদরমাখা মুখখানি! অনেক অনেক স্মৃতির হাতছানি! গাড়ি ছুটছিলো সামনের দিকে সবকিছু পিছনে ফেলে! তবু মন বলছিলো আমরা কিছুই ফেলে আসিনি, সাথে করে নিয়ে এসেছি আমাদের বন্ধুত্বের পরশখানি ! এই হদয়ে ধারন করে! চোখ দুটি তখনো অশ্রু সজল! ব্যাথাতুর অন্তর শুধু প্রভুকে বলছিলাম এই বন্ধুত্ব যেনো হয় শুধুই তাঁকে খুশি করার জন্য! তবেই এই বন্ধন জান্নাত পর্যন্ত চিরস্হায়ী হবে ইনশা আল্লাহ!
(আপাততঃ এইটুকু লিখলাম! ইচ্ছে আছে পরে আবার মজার ঘটনা গুলো উল্লেখ করে ছোট পোস্ট দিব ইনশা আল্লাহ! আর রোজা তো আছেই! ও লিখবে।)
আরোহী আর নিঝুম দ্বীপের রাজকন্যাকে ভীষন ভাবে মিস করেছি! আমার আর আফরোজার এতো সুন্দর বন্ধুত্ব এই পর্যায়ে কখনোই আসতো না ওদের দুজনের অবদান ছাড়া!
বিষয়: বিবিধ
১৭৭৭ বার পঠিত, ৫৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক ভালো লাগলো আপু।
অনেক দিন পর।
ধন্যবাদ।
মনের আকাশে ভাসে স্মৃতির মেঘ...
দিয়ে যায় মম হাতছানি তব স্মরণ...
আঁখিদ্বয় সিক্ত হয় বারংবার আনন্দাশ্রুতে...
পিছু ডাকের সুর বাজে মোর হিয়ারও মাঝে...
আনন্দঘন সেই দিনরাত্রি ফিরে যেন আবারো আসে...
অনুভূতির লুকোচুরি সারাক্ষন
চির অম্লান থাকুক এই বন্ধন!
ত ছুটছে তাকে যাচ্ছে না ধরা।
একটা গানের লাইন
মনে পড়ে গেল পড়তে পড়তে লেখাটি আমিও অনুভব করলাম।
অসাধারণ চমত্কার।যুগ যুগ ধরে এ রূপ বন্ধন যেন অটুট থাকে।
আমিন
কেন লাগে জানিনা।
আপনাদের দুবোনের বন্ধুত্ব অটুট থাকুক আজীবন। শুধু এই দুয়া রইল।
শুকরিয়া ভাইটিকে! তোমার আর রাহবার এর আহবানে সাড়া দিয়েই এই পোষ্ট লিখা!
তোমারা দোআয় আমীন!
অনেক শুভকামনা রইলো!
ভালো আর সুন্দর ভিডিও দেখবে কিন্তু!
তোমার পোস্টের অপেক্ষায়!
লাগ্লো...
অন্নেক শুকরিয়া ভাইটিকে!
আমিতো সাহিত্য জানিনা তাই সবার মতো দারুন দারুন মন্তব্যও করতে পারিনা
আচ্ছা যাক, তোমাদের দুজনের জন্য গোলাপ ফুল
এই প্রথম আপনার কোন লেখা পড়লাম। সহজ সাবলীল ভাষায় কী সুন্দর করে সাজিয়েছেন অনুভূতি গুলো। সবাই এই কাজটি পারে না। যারে পারে তারাই সফল।সত্যি সুখের সময় গুলো অতি দ্রুত চলে যায়। আর বিদায় সে তো বড় বেদনাতুর।যাইহোক আপনাদের বন্ধুত্ত্ব জীবনভর অটুট থাকুক। ভালো থাকুন আপনারা। আমাদের জন্যও দোয়া করবেন। ধন্যবাদ।
আপনি স্পেন বেড়াতে চলে যান আর আফরজার মজার রান্না খেয়ে আসেন! কি খেতে চান? চাইনিজ, জাপানিজ, স্পেনিশ, ম্যাক্সিকান, মরোক্কান, বাংগালি, ইন্দিয়ান....সব পারে !!!!
ভালো থাকুন! ভালো খাবার খান! সুস্হ থাকুন! শুভকামনা রইলো
চমৎকার কয়েকটি দিন কেটেছে সবার একসাথে। ফিরে ফিরে আসুক এমন দিন বার বার এই কামনা করি। শুকরিয়া আপনাদের সবাইকে। অনেক অনেক অনেক শুকরিয়া......
আশাকরি আমাদের আবার দেখা হবে একসাথে হবো আমরা ইনশা আল্লাহ!
দোআ করবেন আমাদের জন্য! আপনার ভাইয়ের পক্ষ থেকে সালাম ও শুভকামনা রইলো
আমি চিন্তা করছি অনেক গুলো পকেট বানিয়ে রাখবো। যাতে বেশি বেশি করে ভালোবাসা রাখা যায় !
ইনশাল্লাহ ইউরো ট্রিপের ইচ্ছা আছে !!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন