আলোকিত করি
লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া মুকিম ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৭:৫৮:০০ সন্ধ্যা
ইদানিং প্রবাসে কি দেশে যাদের সাথেই কথা হয়েছে, সবার একই কথা মন ভালো নেই! কি আর করা, কিছুক্ষন সবার ভালোমন্দ খোঁজখবর নিয়ে এক পর্যায়ে কথা শেষ করে দিয়ে আমি নিজেও মন খারাপের শিকার হয়েছি!
ভাবছিলাম আপনমনে এই মন জটিল একটা বিষয়! ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না শুধু উপলব্ধি করা যায় ! মন নিয়ে বিজ্ঞজনেরা ও বসে নেই, চলছে একের পর এক গবেষনা!
একটা সুন্দর, পবিত্র আর নিষ্কলুষ মন সবার কাম্য! কিন্তু সবাই কি সেটা অর্জন করতে পারে? ঘর গুছানোর সময় প্রায় খেয়াল করি প্রতিদিনের ব্যাবহার করা আসবাবগুলোর উপর অতিসন্তর্পনে পড়ে যাওয়া ধূলো ময়লার আস্তরন! এভাবে আমাদের নিজের অজান্তে আমাদের মনগুলোতেও ময়লা জমে, পাপ, পংকিলতায় ভরে উঠে! তা থেকে পরিত্রানের উপায় কি?
নিজের মনকে পরিশুদ্ধ করার মূল শর্ত হচ্ছে আত্মসংস্কার। নিজের মধ্য লুকানো কুপ্রবৃত্তিগুলো ধীরে ধীরে বিশ্লেষণ করে তা সমূলে নির্মূল করার নাম আত্মশুদ্ধি। মনের বিশুদ্ধতা না থাকলে ব্যক্তি নিজে সচেতন হতে পারে না। আর নিজে সচেতন না হলে নিজের পরিবার তথা সমাজেও কোন মৌলিক ভূমিকা রাখতে পারে না!
মহান স্রষ্টার সৃষ্টিজগতে মানুষই সর্ব শ্রেষ্ঠ জীব । মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর উপাসনার জন্য এবং উপাসনার সঙ্গে সঙ্গে মানব কল্যাণে নিবেদিত হওয়ার জন্য জোর তাগিদ দিয়েছেন। অন্যান্য সৃস্টির সাথে মানুষের পার্থক্য হলো মানুষকে সর্বোচ্চ জ্ঞান দান করেছেন। মানুষ ইচ্ছা করলে তার মেধা ও মনন দ্বারা নিজের পরিবারকে, সমাজকে গোটা পৃথিবীকে স্বর্গরাজ্যে পরিণত করতে পারে। এ সমস্ত কর্মকাণ্ড সম্পাদন করার মূল দায়িত্ব মানব মনের। আত্মিক সংস্কারের মাধ্যমে মন পরিশুদ্ধ না হলে তা সম্ভব নয়। তাই সবার আগে মনকে পরিশ্রদ্ধ করা খুবই প্রয়োজন।
আমাদের মনের একটি জগৎ আছে যাকে মনোজগত বলা হয়। এই জগৎ ষোলজন সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত যথা দশ ইন্দ্রিয় ও ষড়রিপু। এই জগৎ মন দ্বারা পরিচালিত হয়। যেহেতু মন এই জগতের নির্বাহী পরিচালক সেই হেতু এই জগৎকে সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রণে এনে পরিচালনা করার সার্বিক দায়িত্ব মনের। মানুষের মন এমন এক মূল্যবান বস্তু যা সুনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক জগতে বিচরণ ছাড়াও দৈহিক, মানবিক ও সামাজিক দিক দিয়ে প্রশান্তিতে থাকার এক সামগ্রিক অবস্থা সৃষ্টি করে দিতে পারে, যার ফলে বিশ্বের প্রতিটি মানুষ সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দিক থেকে একটি উৎপাদনশীল জীবন গড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
আর এই মনকে জানতে হলে আত্মসংস্কারের মাধ্যমে আত্মোপলব্ধি সৃষ্টির প্রয়োজন, কারণ আত্মোপলব্ধির দ্বারা মনের ভালো মন্দের গতিকে নির্ণয় করা যায়। তা হলে মনের মন্দ স্বভাবকে পরিহার করে বিশুদ্ধ মন সৃষ্টি করা যায়। আর এর জন্য প্রয়োজন আত্মগবেষণা। আত্মগবেষণার দ্বারা আত্মত্রুটি নির্ণয়ে যে যত বেশি অগ্রগামী হবে তার মন ততই বিশুদ্ধ রূপ ধারণ করবে।
পরম করুনাময় মানুষকে তার নির্দেশিত পথ অবলম্বনের জন্য পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন এবং প্রয়োজনীয় সব রকমের নিয়ামত দান করেছেন, যা কোনোক্রমেই অপচয় করা যাবে না। যেহেতু পারলৌকিক জীবনে তিনি এই সমস্ত নিয়ামতের সূক্ষ্মতিসূক্ষ্ম হিসাব নেবেন যার সদ্ব্যবহার করতে হলে বিশুদ্ধ মনের প্রয়োজন। কাজেই মনকে সংযত রাখা একান্ত প্রয়োজন।
মন বিশুদ্ধ হলে তা বিকশিত হয়ে মানুষকে করে তোলে অসাধারণ প্রজ্ঞাময় ও ইচ্ছাশক্তিধর। যার দ্বারা মানুষ নিজেকে নিজে উপলব্ধি করতে পারে। এই আত্মোপলব্ধি মানুষের মনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এক সুন্দরতম প্রেরণা জোগায়।
সুন্দর পবিত্র মন এক শুভ জীবনীশক্তি। যে শক্তির দ্বারা মানুষ সকল পঙ্কিলতার ঊর্ধ্বে থেকে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের প্রতি মমত্বশীল হয়ে নিঃস্বার্থভাবে মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত হতে পারে!
আমাদের আশে পাশে আজ যে রক্ত ঝরছে, বাতাসে অসহায়ের আর্তনাদ ভেসে উঠছে, লান্ছিত অবহেলিত মানুষ গুলোকে পশুর মতো হত্যা করা হচ্ছে এগুলো কি কোন সভ্য সমাজের কাম্য হতে পারে?
আমাদের সমাজের একশ্রেনীর মানুষরা তালাবদ্ধ বিবেক দ্বারা তাড়িত হচ্ছে! আমরা সবাই মিলে কি পারি না একটা সুস্ঠু, সভ্য, সুন্দর, শৃংখলিত সমাজ উপহার দিতে ? আসুন জ্ঞান অর্জন করি, হক ও বাতিলের পার্থক্য বুঝি, তালাবদ্ধ বিবেকের তালা খুলে ফেলি,মরিচাপড়া মনটাকে পরিশুদ্ধ করি, মনোজগত কে আলোকিত করি! নিজেদের প্রমান করি আমরা সৃস্টির সর্ব শ্রেস্ঠ জীব! ধরনীতে তুলি আনি শান্তির পরশ পাথর!
বিষয়: বিবিধ
১২৬৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন