তোমার প্রতীক্ষায় উন্মুক্ত মনের বাতায়ন

লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া মুকিম ২০ অক্টোবর, ২০১৩, ০৭:৩৫:৫৫ সন্ধ্যা



অনেক কাজ পড়ে আছে জেনেও দীপার করতে ইচ্ছে করছে না। সামনে পরীক্ষা সে বিষয়েও মনোযোগ নেই তেমন একটা। শরীর মন সব ক্লান্ত, ভীষন রকমের ক্লান্ত! নিজের সাথে যুদ্ধ করতেও যে পরিমান শক্তি প্রয়োজন সেটুকু শক্তি বা ইচ্ছা সবটুকুই হারিয়ে ফেলেছে! সময় থমকে দাঁড়ায়নি বরং সময়ের সাথে করা হিসেবগুলো যেনো বড্ড অভিমান করে আছে!

বারবার পড়ায় মনোযোগ দিতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো সে প্রচেষ্টা। রসায়নের রস-অধ্যয়ন শুধুই তাত্ত্বীক জীবনের জটিলতার জৈব যৌগের সংকেত জানায়! বইয়ের পৃষ্ঠা কিছুক্ষন উলটে পালটে নিতান্ত অবহেলায় একপাশে ফেলে রাখে। বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ গড়াগড়ি করেও অশান্ত মনটার স্হিরতার লক্ষন মিলে না। চোখ দুটি বুজলেই প্রিয় সেই মুখটাই বারবার তার সামনে ভেসে আসে।

এক স্বপ্ন সুখের স্বর্নালী দিনে মনের মাঝে হাজারটা সুর তুলে যে মানুষটা হাতে হাত রেখে তার চলার পথের সাথী হওয়ার অংগীকার করেছিলো সেই মানুষটা তাকে খুব নিঃসংগ করে দূর প্রবাসে পাড়ি জমিয়েছে। চারপাশে এতো আপনজনদের মাঝে থেকেও নিজেকে কেনো এত একা একা লাগে, কেনো এতো অসহায় মনে হয় জানে না দীপা!

সবচাইতে বড় তেঁতুলগাছের পুরোনো ভূতটাই মনে হয় আসিফের মাথায় চেপেছিলো না হলে কেনো সে এমন সিদ্ধান্ত নিলো? কত সুন্দর সময় কাটতো দুজনার! কখনো নৌকা চড়বে বলে সারাদিনের জন্য বেড়িয়ে যেত, কূল কূল করে বয়ে যাওয়া নদীর স্রোত আর গোধূলী বেলার সূর্যাস্তে নীড়ে ফেরা পাখিদের কুহ কাকলির সাথে নিজেদের ভালোবাসার জাল বুনেছিলো দুজনে, রাত দুপুরে চুপি চুপি যাওয়া হতো ছাদে জোস্নারাত পোহাবে বলে, মেঘমুক্ত তারাভরা রাত কিংবা উজ্জল পূর্নিমা, নির্মল নীল আকাশ বা সবুজ দুর্বাঘাষের অনাবিল মাঠ, শ্রাবনের অঝোর বৃস্টি অথবা ফাল্গুনের তপ্ত আগুন এমনি প্রকৃতির কাছে বারবার ছুটে ছুটে গিয়েছে তারা, সময় গুলো কেটেছে এক পলকে ঠিক যেনো সুখের সাগরে এক স্বপ্নীল অবগাহনের মতোন।

চোখ বুজেই ছিলো, ধীর মোশনে পুরনো স্মৃতি গুলো একে একে ভেসে ওঠে! বুকের ভিতরটা হাজারটা কাঁচ টুকরো টুকরো হয়ে ভেংগে যাওয়া আহত, রক্তাক্ত ভালোবাসার আকুতি জানায়! চোখের কোনটা একটু একটু করে ভিজে আসে দীপার!

আজ কেনো এতো কষ্ট পাচ্ছে নিজেও জানে না, দীপার ভালো থাকার জন্য আসিফ তো সবকিছুই করছে, সবদিক থেকে খেয়াল রাখছে, সময়মতো ফোনে যোগাযোগ করা, ওর পড়াশোনা, শরীর স্বাস্হের খোঁজ নেয়া সব কিছু নিয়মিত ভাবেই করে আসছে অথচ আসিফ দূর প্রবাসে একা থাকে, দীপা তো আসিফের খবর সেভাবে রাখতে পারেনা, কথাটা মনে হতেই নিজেকে একটু স্বার্থপর মনে হলো। এভাবে আসিফকে একতরফা ভাবে এই বিরহী জীবনের জন্য দায়ী করে নিজের মধ্যে একটু অপরাধবোধ কাজ করলো! দীপা যেভাবে আসিফের জন্য কষ্ট অনুভব করছে আসিফও তো সেভাবেই কষ্ট পাচ্ছে! আসিফতো কখনোই ওকে দায়ী করেনি!

সবসময়তো আসিফই ফোন করে, দীপা ঠিক করলো আজ ও ফোন করবে, চমকে দিবে আসিফকে! নাম্বারটা মুখস্তই ছিলো, গুনে গুনে ডিজিট করে কল বাটনে প্রেস করার সময় আচমকা মোবাইল টা বেজে উঠলো, নাহ্ দীপার আর ফোন করা হয়নি, আসিফ নিজেই ফোন দিয়েছে।

মুঠো ফোনটা হাতে নিয়ে শুরু হয় দুজনার আলাপন-

-আবারো মন খারাপ? কান্না করেছো না? দীপা তোমাকে না বলেছি এরকম করলে আমার কষ্ট শুধু বাড়ে? তুমি কি বোঝ না?

-শোন, আজ নিজের জন্য নয়, মন খারাপ হচ্ছে তোমার কস্টের কথা ভেবে ? ওখানে তোমার খুব কষ্ট হয় তাই না?

-জীবনের তাগিদেই তো করছি দীপা! আমাদের ভবিষ্যতক সুন্দর করার জন্য এটুকু ত্যাগ স্বীকার করতে হবে যে! আমার শুধু কষ্ট হয় তখন যখন ভাবি তোমাকেও জড়িয়ে ফেলেছি আমার এই কষ্টের জীবনের সাথে!

-আমরা জীবনের কষ্টগুলোকে যদি সুখের মতোই ভাগাভাগি করে নেই, এর মাঝেই সুখ খুঁজে পাব ঠিক ঠিক একদিন দেখো! প্রতিটি সূর্যাস্তের পর নতুন সূর্যোদয় হয়, আমাদের কষ্টের পর আবার সুখ আসবে এই আশাই তো আমাদের রাখতে হবে আসিফ!

-বেশি কিছু আশা করি না দীপা, যখন থেকে তোমার সাথে প্রাণে প্রান বেঁধেছি তখন থেকে একটা স্বপ্নই শুধু দেখেছি , দুজন দুজনার হাতে হাত রেখে জীবনের বাকি পথটা একসাথে হেঁটে যেতে চাই! ফিরে পেতে চাই আমাদের সেই চাঁদনী রাতগুলো,ডানা মেলে উড়তে চাই মুক্ত বিহংগের মতো, হারিয়ে যেতে চাই .....................বলতে বলতে আসিফের গলা ভারী হয়ে আসে!

- আসিফ শোন, প্রতীক্ষার প্রহরগুলো ভালোবাসার বাঁধন কে আরো খাঁটি করে, এভাবেই আমরা আমাদের ভালোবাসাকে নিখাদ করে তুলছি, আমাদের স্বপ্ন সত্যি হবে ইনশা আল্লাহ।

-জানি দীপা, সেই আশায় তো সামনের পথে এগিয়ে চলা তবু মাঝে মাঝে এমন দিশেহারা হয়ে যাই, অবুঝ মনটাকে কোনভাবেই মানাতে পারি না, তখন ইচ্ছে হয় সবকিছু ছেড়ে দিয়ে তোমাদের কাছে ছুটে চলে আসি!

-প্লিজ তুমি ওমন পাগলোমো করে সব কিছু ভন্ডুল করে দিও না। আচ্ছা বলতো আজ এই সময় ফোন করলে যে?

-তোমার সাথে খুব কথা বলতে ইচ্ছা করছিলো, ফোন দিবো কি দিবো না তুমি কি ঘুমোচ্ছ কি না ভাবছিলাম! তোমার রুমে লাইট জ্বালানো...

- জেগে ছিলাম, আমার রুম লাইট জ্বালানো জানলে কিভাবে?

-মনের চোখ দিয়ে দেখতে পারছিলাম!

- জানো আজ তোমাকে ফোন করে চমক দিতে চেয়েছিলাম! পারলাম না তুমিই দিয়ে দিলে !

- শোন দীপা, তুমি কোথায় কি করছো এখন?

- আমার রুমে বন্ধ দরজার সামনে হেলান দিয়ে বসে আছি বাংলা সিনেমার বিরহী নায়িকার মতো, কেনো বলতো?

- থাক্ তোমাকে আর বিরহী নায়িকা হতে হবে না, উঠে দাঁড়াও, জানালার সামনে আসো, জানালাটা খুলে দাও..........

-খুললাম, রাতের অন্ধকারে কি তুমি আমাকে সাত সাগর তেরো নদী পার করিয়ে তোমার কাছে নিয়ে যাবে?

-দেখো না কি করি! আকাশের দিকে তাকাও দেখো কি বিশাল পূর্নিমা!

-হুম, মুগ্ধ হয়ে চাঁদের পানে তাকিয়ে থাকে দীপা। এই চাঁদনী রাতে জোস্নার আলোয় দুজন মিলে ভিজতে পারতো! এই আধো রাত, নীরব চাঁদ, নীল জোনাকি অসম্ভব স্বপ্নীল ভূবনের হাতছানি কবে হবে দীপার স্বপ্ন পূরন!

-চুপ করে আছো যে, দীপা! আছো? মন খারাপ করছো? আমার জন্য আজকের পর থেকে আর কোনদিন মন খারাপ করতে দিবনা তোমাকে দীপা! চোখ খোল প্রিয়া, বাড়িয়ে দাও হাত দুখানি ...............

-অবিশ্বাস্য রকমের বিষ্ফোরিত দৃষ্টি মেলে নিচে তাকায় দীপা, শ্বাষ প্রশ্বাষ এত দ্রুত উঠানামা করতে থাকে ফুসফুসটা বুঝি ফেটেই যাবে, আসিফ তুমি কি করে এলে..........

-তোমায় নিতে এসেছি দীপা!

দীপার সমস্ত শক্তি ফুরিয়ে আসছিলো,মনের আকাশ জুড়ে এক পশলা ভালোবাসার রিম ঝিম বৃষ্টি, বুকের ভিতর ঝাঁক ঝাঁক রংগিন প্রজাপতি হঠাৎ ডানা ঝাপটায়, তারি ঝলকানি লেগে চিত্ত ঝলমল করে ওঠে দীপার..................।



বিষয়: বিবিধ

৩১৭০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File