ঈদের আনন্দঘন দিনগুলি

লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া মুকিম ২৭ আগস্ট, ২০১৩, ১২:৫৬:০৯ রাত



"ঈদ "ছোট্ট এই শব্দটি মাঝে বুঝি সব আনন্দ আর খুশীর বার্তা জড়িয়ে থাকে! আর এই আনন্দ জোয়ার হয়ে বইতে ছোট -বড় সবার মনে -প্রানে! প্রবাসে যদিও ঈদের আনন্দ একটু অন্যরকম আমাদের স্বদেশ থেকে তথাপি কিছু পরিকল্পনার আর উদ্যোগের কারনে এবার খুব্বি মজার ঈদ উদাপন করেছি আলহামদুলিল্লাহ!

ঈদের সংবাদটা প্রথম ফোন করে জেনে নিয়েছিলা ছিলাম জেদ্দাবাসিনী প্রিয় নূর আয়েশা আপুর কাছ থেকে। আর প্রথম ঈদের শুভেচ্ছা আমাকে জানিয়েছিলো সুপ্রিয় বোন আফরোজা স্কাইপে, ব্যাসএখান থেকেই ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় শুরু হয় আর চলতে থাকে মাঝ রাত পর্যন্ত! সবাই রান্নাবান্না নিয়ে ব্যস্ত থাকার পরও সুন্দরভাবে ঈদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছিলো, কে কি রান্না করছি সেই খবরও নেয়া হচ্ছিলো। যতই ভাবছিলাম আইটেম লিমিটেড রাখবো এক বাঁধভাংগা আনণ্দ কোথা থেকে এতো শক্তির জোগান দিলো একটার পর একটা আইটেম শুধু যোগই হচ্ছিলো!

ঈদের দিন সকাল বেলাটার যেনো অন্য রকম পবিত্র একটা ভাব থাকে। সবাই মিলে সকালে একসাথে খেজুর আর লাচ্ছি সেমাই খাওয়া! তারপর ঈদের সালাতের উদ্দেশ্যে বের হওয়া। আগের দিন রাতেই সব কাজ গুছিয়ে রেখেছিলাম তাই সকালে কোন ঝামেলা ছিলো না!



ঈদের দিন দুপুরে আমরা সব সময় আমাদের পরিচিত এমন সব ভাইদের বলি যাদের এখানে ফ্যামিলি নেই -অনেকেই বিয়েও করেন নি! তাদের নিয়েই চলে আমাদের দুপুরের আয়োজন! উনাদের একটা গ্রুপ তৈরী হয়ে গেছে এখন তাই উনারা ঈদের দিন দুপুরে আমাদের বাসা ছাড়া অন্য কোথাও দাওয়াত রাখেন না আলহামদুলিল্লাহ। তবে এবার ঈদে আমাদের কিছু মেহমান রাষ্তায় হাইজ্যাক হয়ে গেছেন কি আর করা আমরা অন্যান্য ভাইবোনদের অতিথি পরায়নতাকে সম্মান প্রদর্শন করে যারা এসেছিলেন তাদের নিয়েই সন্তুষ্ট রইলাম!

বিকেল বেলায় আমাদের পাড়ার সব ভাবীরা এলেন দল বেঁধে একসাথে! কেউ মিষ্টি খাবে না, কারো ঝাল চাই আবার কারো সব আইটেম টেস্ট করা চাই কোনটা কেমন হয়েছে! উনারা আমাদের বাসায় বেড়ানোর পর আমরা সবাই মিলে আবার বের হলাম, আমাদের সবার বাসা প্রায় কাছাকাছি হেঁটেই যাওয়া যায়! হাঁটতে হাঁটতে সবার বাসায় গেলাম আর প্রায় পদ -জুগল ব্যথিত অবস্হায় বাসায় ফিরে এলাম। নানান রকমের গল্প আর হাসি কথায়(?) এভাবেই ঈদের ১মদিন পার করেছি আমরা!

ঈদের পরবর্তী দিনগুলো আরো লোভনীয় ছিলো। সংগী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে রাসুল(সাHappyসতর্কতা মূলক হাদীসগুলোকে সামনে রেখে অনেক আগে থেকেই প্রচেষ্টা ছিলো একদল উত্তম বন্ধুত্বের ছায়াতলে থাকা। আলহামদুলিল্লাহ আমাদের এই সার্কেলটি এখন সুখে দু:খে আপনজনদের মতো একসাথে চলতে পারি। ঈদের পরদিন সবাই বাচ্চাদের সহ আমাদের বাসায় একত্রিত হলে আমরা পরের দিনগুলোর প্রোগ্রাম করে ফেললাম। অনেক বোনেরাই বার বার কঠিন আন্তরিক রিকোয়েস্ট করে রেখেছেন যেভাবেই হোক উনাদের বাসায় যেতেই হবে! প্রায়োরিটি দিলাম যে সমস্ত বোনেরা অসুস্হ, ইসলামের দিকে আকৃষ্ট, অনেক দিন যাদের সাথে যোগাযোগ হচ্ছে না তাদের প্রতি! আমরা ৫ জন ভাবী আর ১১জন বাচ্চা আলহামদুলিল্লাহ একসাথে বাসে উঠা, নামা, বেড়ানো আসলেই দিনগুলো অমূল্য রত্নের মতো পার করেছি !

বাচ্চারা যেনো আরো বেশি আনন্দ করতে পারে সেজন্য এর মাঝে একদিন নিয়ে গিয়েছিলাম আমাদের শহরের সবচেয়ে বড় পার্ক "মাছের পার্কে" । পানির মধ্যে লাফাতে থাকা বড় বড় মাছ গুলো আর মনের আনন্দে ভেসে বেড়ানো হংসগুলো দেখে সবার আনন্দই যেনো উপছে পড়ছিলো। আর কিছু ভাবীর হাত নিশ পিশ করছিলো কোনভাবে যদি একখান মৎস ধরিয়া উনারা রন্ধন করিতে পারিতেন.....





সবার বাসায় যাওয়া আসার ফলে একে অন্যের খোঁজখব নেয়া, পারস্পরিক সুখ দুঃখের আলাপন , আমাদের সন্তানদের সঠিকভাবে গড়ে তোলা এই বিষয়গুলি বেশি আলোচনা করা হয়েছে! প্রতি বাসায় গিয়ে যেনো রোষ্ট-পোলাও খেতে না হয় তাই আমরাই মেনু ঠিক করতাম কোনদিন খিচুড়ি স্পেশাল,রকমারি ভেজিটেবলস আর কোন দিন ভর্তা! আহ সবাই মিলে একসাথে খাওয়ার মজাই আলাদা! অবশ্য আমরা বোনেরা কখনোই কোন বাসায় মেহমান সুলভ আচরন করিনা বরং নিজেরা যথাসম্ভব সহযোগিতা করি রান্না, টেবিল সাজানো, প্লেট ধোয়া পর্যন্ত!



একটানা পাঁচ দিন ব্যাপী সবাই মিলে এমন আনন্দ করেছি যা আমাদের সবার মনের মনিকোঠায় চির অম্লান হয়ে থাকবে। আমার ছেলেটা প্রতি রাতেই প্রশ্ন করতো আম্মু আগামী কাল কাদের বাসায় যাব? আর আমার ঘরকুনো মেয়েটাও ঈদের আমেজে এতোটাই বিমোহিত ছিলো সেও প্রতি রাতেই বাসায় ফিরে পরের দিন কোন জামা পড়বে সেটা গুছিয়ে রাখতো!

দাওয়াত শেষে বাসায় ফিরছিলাম আমরা! তখন প্রায় মধ্যরাত, চারদিকে নিস্তব্ধতার আয়োজন, রাস্তায় কেউ নেই, শুধু ল্যাম্প পোস্ট গুলো অসহায়ের মতো ভোঁতা আলো বিতরন করছিলো, মাথার উপর দিয়ে মেঘের আবরন সরে গেলে স্পষ্ট চোখে পড়লো শাওয়ালের চাঁদ! মনটা অদ্ভুত এক ভালোবাসার আবেশে ভরে উঠলো!

একমাস রমাদানের সিয়াম সাধনার পর যে আনন্দের সওগাত নিয়ে ঈদ এসেছিলো আমাদের দুয়ারে সে বিদায় নিয়েছে কিন্তু সংযম সাধনার যে প্রশিক্ষন আমরা নিয়েছি তার শিক্ষা বাকি দিনগুলোতে যেন কাজে লাগাতে পারি তার নিরব সাক্ষ্য বুঝি ঐ চাঁদ তার উপস্হিতি দিয়ে আমাদের জানান দিচ্ছিলো!



অস্পষ্ট স্বরে মনের মাঝে বেজে উঠলো- প্রভু সময়কে আমাদের জন্য কল্যানকর করে দিও! সকল আনন্দ-দুঃখের মাঝেও যেনো তোমার স্মরন থেকে বিমুখ না হই সেই শক্তি দিও! যে অনাবিল আনন্দের মাঝে দিনগুলো সবাই মিলে একসাথে পার করেছি আমাদের সবাইকে তোমার রহমতে ছায়াতলে আশ্রয় দিও!

বিষয়: বিবিধ

৩০৬৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File