অতিথি
লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া মুকিম ২৮ জুলাই, ২০১৩, ১০:১৭:৩৯ রাত
রমাদান কে সম্মানিত মেহমান বলা হয়, এমন মর্যাদাপূর্ন অতিথি খুব অল্প সময়ের জন্য আমাদের নিকট আসে, ঠিক যদি আমাদের প্রিয় কোন মেহমান অনেক দিন পর আসে আমরা কি আচরন করি তার সাথে?এ কথাটির তাৎপর্য বুঝতে পেরেছিলাম যখন প্রিয় বোন আফরোজা আমাদের বাসায় আসবে ঠিক হয়েছিলো তখন।
আমার ঘরবাড়ি পরিষ্কারের হুরুস্থুল পড়ে গিয়েছিলো! অপারেশন ক্লিনিং হোম! বাসার প্রতিটি আনাচে কানাচে আমি পরিষ্কার করেছি, কিভাবে সময় কাটাবো, কি কি রান্না করবো, বাসার অপ্রয়োজনীয় আসবাব, জিনিষপত্র অনেক কিছু সরিয়ে ফেলেছি। আমি চেয়েছি আমার বাসাটি যেনো সব দিক থেকে পারফেক্ট হয় এমন কোন অনাকাংখিত ঘটনা যেনো না ঘটে যেটা আমাদের বিব্রত করবে!
রমাদান আসার পূর্বেই মুমিনদের উচিত নিজেদের আত্নিক, মনস্তাত্নিক, পার্থিব সব বিষয়ে পরিচ্ছন্নতার অপারেশন চালানো! নিজেদের গুনাহ গুলি স্মরন করা, বিগত বছরগুলোতে গাফিলতি, যে অন্যায়গুলো আমাদের দিয়ে হয়ে গেছে সেগুলো থেকে ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে পবিত্র হওয়ার বাসনা রাখা! রমাদান যে কয়টি দিনের সমষ্টি এই দিন গুলো থেকে সর্বোচ্চ লাভবান হওয়ার জন্য প্ল্যান রাখা, আল্লাহ সুবহানাহু তা'য়লার নিকট খুব বেশি বেশি দোআ করা।
দেখতে দেখতে রমাদানের শেষ দশকে চলে এসেছি! আসলেই রমাদান আইয়ামুম মা'দুদাত-স্বল্প কিছু দিনের সমষ্টি । আমাদের এখানে প্রচন্ড গরম প্রায় ৪০ডিগ্রী। বার বার গোসল করে , হাত মুখ ধুয়ে , ওযু করছি সবাই। এসি ছেড়ে দিলে কিছুক্ষন পর মনে হয় এসির বাতাসও বুঝি গরম হয়ে যায়! কিছুদিন আগে পড়ছিলাম রাসুল (সাঃ ) মদীনায় হারব নামক স্হানে সিয়াম অবস্হায় ছিলেন, তিনি মাথায় পানি ঢালছিলেন প্রচন্ড গরমের কারনে! মরুভূমির উত্তপ্ত গরম আবহাওয়া কেমন হতে পারে , আমাদের এই আবহাওয়া থেকে তা কতোগুন বেশি প্রখর সহজেই বুঝতে পারি ! সেখানে তো আমাদের মতো শীতল ঠান্ডা পানির শাওয়ার ছিলনা, এসি ছিলনা, ছিলনা এতো প্রটেক্ট দালানকোঠা। অথচ আমরা মনে করি আমরাই মনে হয় সিয়াম অবস্হায় সবচেয়ে বেশি কষ্ট করি!
এই গরমে আমাদের এতো কাহিল অবস্হা জাহান্নামের উত্তপ্ততা কেমন ভয়াবহ হবে? আল্লাহ আমাদের জাহান্নাম এবং জাহান্নামে যাওয়ার উপযোগী সকল কাজ থেকে হিফাজত করুন।
রমাদান যেহেতু আমলের মাস সবাই আমল করি দুঃখের বিষয় হলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমল গুলো হয়ে যায় শুধু রমাদান কেন্দ্রিক। রমাদানে কোরআন তোলাওয়াত করা, খতম করা অনেক খাছ একটি আমল। অনেকেই আছি রমাদানে দুইটি, তিনটি খতম করি অথচ রমাদানের পরে বাকি এগারোটি মাসে একটি খতম ও আর হয় না! অথচ রমাদানে আমরা কোরআন যেভাবে পড়ি বাকি সময় গুলোতে যদি এভাবেই পড়তাম প্রতি মাসেএকটা করে খতম হতো!
শুধু খতম করেই তৃপ্ত হয়ে যাই এমন সংখ্যাও আমাদের মাঝে বিরল নয়। আমি প্রশ্ন করেছিলাম একটা ইসলামিক প্রোগ্রামে যে জীবনে একবার সম্পূর্ন কোরআন অর্থসহ পড়েছি কয়জন? জীবনে একবার তাফসীর সহ কোরাআন পড়েছি কয়জন? দুতিনজন বোনের অর্থ সহ কোরআন পড়া হলেও তাফসীর সহ পড়া হয় নি একজন বোনেরও! অথচ আমরা শুধু রমাদানে অন্তত একবার খতমের জন্য যারপরনাই চেষ্টা করি! অথচ এই আমরা যদি নিয়মিত কোরআন রমাদানে যেভাবে গুরুত্ব দিয়ে পড়ি অন্যসময়ও এভাবেই অর্থসহ পড়তাম আমাদের থেকে বেটার মুসলিম আর কারা হতো?
রমাদানের প্রতিটি দিন, প্রতিটি রাত,প্রতিটি ক্ষনকে যেনো বুদ্ধিমত্তা, উত্তম আমলের সাথে কাটাতে পারি পরম করুনাময় আল্লাহ রব্বুল আ'লামিন এর নিকট এই তোওফিক কামনা করি।
বিষয়: বিবিধ
২০০৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন