প্রীতিময় দিনগুলো..............।

লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া মুকিম ২৫ জুলাই, ২০১৩, ০৮:৪০:৩৯ রাত



ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টিয়ে দিন গুনছিলাম, প্রতিটি দিন পার হওয়ার সাথে মনের মনি কোঠায় আনন্দের ঝর্নাধারা বইছিলো! অবশেষে বহু প্রতিক্ষীত দিন এবং ক্ষন যেনো দুয়ারে এলো।

আফরোজা সপরিবারে আমাদের বাসায় আসছে! নিজের কাছেই অবিশ্বাস্য মনে হতো আবার নিজেই খুশীতে আপনমনে হাসতাম,সেই হাসি আর আনন্দ ছড়িয়ে ছিলো আমাদের সবার অন্তরে মনে প্রানে!

আমি এয়ারপোর্ট যাইনি, সারা'র আব্বু গিয়েছিলো। আমি তো একটু পর পর ফোন দিয়ে জিগ্গেষ করছিলাম, প্লেন ল্যান্ড করেছে কিনা?মনে হচ্ছিলো এস, এস, সি পরীক্ষার রেজাল্টের জন্য অপেক্ষা করছি! কি যে অস্হির লাগছিলো! অত:পর আমাকে জানানো হলো ওরা সুন্দর ভাবেই নেমেছে, সবাই বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো!

আফরোজাকে যখন প্রথম দেখলাম? জড়িয়ে ধরেছিলাম আর জানিনা কেনো আমার ছোট বোনটার প্রতি সমস্ত ভালোবাসার বহি:প্রকাশ ততক্ষনে আনন্দাশ্রুতে পরিনত হয়েছে!!!

আমি আর রোজা যেহেতু নিয়মিত কথা বলতাম তাই ওর পছন্দ- অপছন্দ, রুচিবোধের সাথে পরিচিত ছিলাম আর সমস্যা হলো গিয়ে সেটাই! আসার আগে থেকেই বাজনার মতো আমাকে মুখস্হ করিয়েছে টেবিল ভর্তি খাবার দেখলে খুশি হয়ে খাওয়া দূরের কথা উনাদের শ্বাষ কষ্ট হয়! অতিরিক্ত রান্না দেখলে আফ্রিকার না খেয়ে থাকা মানুষের কথা মনে পড়ে! ওকে জোর করে খাওয়ালে ও এমন অসুস্হ হয় যে হাসপাতালেও যেতে হতে পারে! আরো কতো কিছু! আচ্ছা এগুলো জানার পর আমি কি আর পারি মেহমানের সঠিক আপ্যায়ন করতে?

আচ্ছা পাঠক আপনাদের বলি, যদি আপনাদের কাউকে বলা হয়, রান্না করো তোমার সামনে থাকবে সিদ্দিকা কবীর বা টমি মিয়া! আপনাদের রান্না কেমন হবে বলেন দেখি? আমারটা যা হয়েছে তা কি আর বলবো! কোনটায় হলুদ বেশি তো কোনটায় কম, কোনটায় লবন দেইনি আর কোনটার চেহারার দিকে এমনিতেই তাকানো যায় না! বেচারারা কষ্ট করে যে গলাধ:করন করেছে এই তো শুকরিয়া!

কিভাবে সময় কাটিয়েছি? সময় গুলো মনে হচ্ছিলো এতো দ্রুত কেটে যাচ্ছিলো! আমরা দুজন সারা দিন রাত বাসায় থেকেছি, হাসান ভাই, নাকিব, আ:মুকিম ভাই আর আফনান ওরা সকালের নাস্তার পর বের হতো দুপুরে আসতো। এই ফাকে আমরা রান্না আর গল্প করতাম! এমনি গল্প, গল্প করতে করতে ভাত বসিয়েছি, গল্প করতে করতে ভাত নামিয়েছি খেয়াল করিনি, ভাত বেড়ে দেয়ার সময়ও ননস্টপ গল্প! আমরা নামাজ শেষে বসে আছি উনাদের খাওয়া শেষ হলে আমরা খাব! একটু পর সারা'র আব্বু পর্দর আড়ালে এসে ডেকে বললো, তোমরা কি আগে খেয়ে আমাদের খেতে দিয়েছো? আমরা হতবাক হয়েই জবাব দিলাম জ্বি না, আপনাদের খাওয়া হলেই আমরা খাব! উনি শুধু বললেন ভাত তো নাই!!!(আমি মাত্র এক পট চালের ভাত রান্না করেছিলাম!)

আসলেই মানুষ যখন আনন্দে থাকে সময় গুলো তখন দ্রুত কাটে, আর আমাদের সময়গুলো কাটছিলো কোন রংগিন প্রজাপতির মতো কখনো এই গল্প, কখনো সেই গল্প, কখনো ব্লগ প্রসংগ,কখনো নিজের কোন কথা, হাসি, আনন্দ, খুনসুটি, কথা বলতে বলতে আবেগে কান্না চলে আসা সবই হয়েছিলো! আর এভাবেই বিদায়ের ঘন্টাধ্বনি সময় জানান দিচ্ছিলো!

রোজা'রা যেদিন ফিরে আসবে তার আগের দিন! খুব্বি স্পেশাল একটি দিন! বুঝতে পারছিলাম আগামীকাল ওকে বিদায় দিতে হবে! রোজা ঠিক করলো ও আজ আমাদের সবাইকে আইসক্রিম খাওয়াবে! আমার ঘরকুনো মেয়েটা ঘর থেকে বেরই হতে চায় না শুধুমাত্র রোজা বলাতে সারা আমাদের সাথে এলো, আমরা বিশাল বাহিনী, সামনে হাসান ভাই, আ:মুকিম ভাই, নাকিব আর আফনান আর পিছনে আমরা-উদ্দেশ্য আইসক্রিম খাওয়া! মনে হচ্সছিলো কোন পিকনিকে যাচ্ছি ! আইসক্রিম খেয়ে সবাই মিলে বাসায় ফিরে আসছি, হাসান ভাই আর আ: মুকিম ভাইয়ের মজার মজার কথায় সারাটা রাস্তা বেশ আনন্দেই কাটলো!

সেই কবে ছোট বেলায় বান্ধবীর হাতে হাত রেখে হেটেছি এখন মনেই পড়ে না ঠিক মতো! আবার অনেক অনেক দিন পর আমি আর রোজা দুজন দুজনের হাতে হাত রেখে হেটেছি দুই বান্ধবী হয়ে! সেই ফুটপাতের উপর দিয়ে আবার কবে আমাদের পথচলা হবে জানি না!



ওর আর আমার কতো স্মৃতি! সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়া থেকে শুরু করে নাস্তা বানানো, দুজনে একসাথে রান্না করেছি, ও পেঁয়াজ কেটেছে, হাড়ি-পাতিলও ধুয়েছে! আবার কখনো দুজনে পাশপাশি দাঁড়িয়ে রান্নাঘরের বারান্দায় রাতের আকাশের তারা দেখেছি, গভীর রাত পর্যন্ত গল্প করে তৃপ্তিময় আবেশ নিয়ে ঘুমাতে গিয়েছি! এখনো যখন আমি আমার বেড রুমের জানালার কাছে দাড়াই ওর কথাই মনে পড়ে! ঠিক ঐ জায়গাটাতে ও দাড়িয়ে বলতো, সকালে ঘুম থেকে উঠে সবুজ দেখা চোখের জন্য খুব ভালো, মনের উপর সতেজ প্রভাব ফেলে! সেই বিশাল সবুজ গাছ গুলো এখন নিথর দাড়িয়ে আছে!

শত আনন্দের পর এখন বিদায়ের পালা! আমার মনে হচ্ছিলো শরীরের সব শক্তি নি:শেষ হয়ে গেছে! বিদায় এতো কষ্টের! মনে হচ্ছিলো আমাকে না দেখিয়ে ওরা চলে যেতো! ওর মুখোমুখি হতে যেতেই আমার বুকের ভিতরটা ফেটে যেতে চাচ্ছিলো! আমি জানালার বাইরে তাকিয়ে চোখের অশ্রু সংবরনের ব্যর্থ চেস্টায় ওর দেখা সেই সবুজের দিকে চেয়ে রইলাম! বোনটিকে, প্রিয় বান্ধবীকে শেষ আলিংগন, অজস্র আনন্দঘন স্মৃতি আর প্রীতিময় সময়গুলো দিয়ে আমার ভুবন কে রাংগিয়ে দিয়েছে....

পরমকরুনাময় আমাকে কল্যানকামী একজন বন্ধু দিয়েছেন, দ্বীনি বোন দিয়েছেন-আলহামদুলিল্লাহ !আল্লাহ রব্বুলআ'লামীন এই বন্ধুত্বের কল্যানকামিতা আর সহমর্মিতার মাধ্যমে আমাদের বন্ধুত্বের পথ অটুট রাখুন!



বিষয়: বিবিধ

২৩১৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File