চোখের মনি, অন্তরের টুকরো, প্রানের ঔজ্জ্বল্য!

লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া মুকিম ৩১ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৬:১৯:২৯ সন্ধ্যা

সন্তান সন্ততি চোখের মনি, অন্তরের টুকরো, প্রানের ঔজ্জ্বল্য!সব বাবা মা'ই সন্তানদের সঠিক ভাবে গড়ে তুলতে চান! সন্তানদের যে আদর্শের ছাচে তৈরী করতে চাই সর্বপ্রথম নিজেদের তা মেনে চলতে হবে অক্ষরে অক্ষরে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় বাবা মা সন্তানদের কোন শিক্ষা না দিয়েই অনেক কিছু পাওয়ার মিছে আশা করে বসে থাকেন! আবার অনেক সময় এতো দেরী করে ফেলেন ততোদিনে সন্তান সেই শিক্ষাগ্রহনে একেবারেই প্রস্তুত নয়! প্রশ্ন উঠতে পারে কোন বয়সটি উত্তম? আমি আমর ক্ষুদ্র জ্ঞান থেকে বলব আমাদের কোল জুড়ে যেদিন প্রথম নিয়ামত হিসেবে সন্তান কে কোলে নেই ঠিক সেই মুহূর্ত থেকেই শুরু হয় আমাদের একসাথে আদর্শের পথ চলা! দুনিয়াতে আসা নবজাতকের আনন্দে সবাই আনন্দিত! মুসলিম সমাজে সন্তান জন্মের পর আযান দেয়ার মাধ্যমে আমরা সন্তানদের আল্লাহ'র সার্বভৌমত্বের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই। এই বিধানটির হিকমাহ দু সন্তানের মা হয়ে সেদিন মাত্র উপলব্ধি করেছি তাও একজন মৃত মানুষ কে গোসল দেয়ার সময়!

সেদিন এক ভাবীর ফোন আসলো, রিসিভ করেই উনার কান্না শুনতে পেলাম! ধরে নিয়েছিলাম কোনো দুঃসংবাদ আছে! কোন ভাবেই মহিলা থামছিলেন না! অনেকক্ষন পর বহু কস্টে নিজেকে থামিয়ে যে কথা গুলো উনি বলেছিলেন তার সারমর্ম হলো - উনার হাইস্কুল পড়ুয়া ছেলে কারো ক্ষপ্পরে পড়ে নিষিদ্ধ পানীয় পান করেছে!ধকল সহ্য করতে না পেরে বাসায় এসে বমি করে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ায় হাসপাতালে আনার পর উনারা বিষয়টা জানতে পেরেছেন!

সেই মা আমাকে আমাকে ফোন করেছিলেন এমন কোন দোআ আছে কিনা জানার জন্য যা পড়লে ছেলে আর নষ্ট পথে পা বাড়াবে না!

আমাদের ছোট একটা প্রতিস্ঠানে আমি যেখানে স্টুডেন্টদের পড়াই এক স্টুডেন্টের মা এসে আমাকে বললেন, আমি যেনো মেয়েকে বলে দেই সে যেনো নিয়মিত বাসায় নামায পড়ে,কোরআন পড়ে! মেয়ে নাকি অসম্ভব ফাঁকি দেয়! আমি উনাকে বললাম, আপনি নিজে যে সময়টায় নামায পড়বেন ওকে ডেকে নিবেন, অপেক্ষা করবেন ওর জন্য, একই সময়ে কোরআন পড়বেন তাহলে আস্তে আস্তে মেয়ের অভ্যাস হয়ে যাবে, আর ফাঁকি দিবে না! উনি আমাকে জবাব দিয়েছিলো- আমি সকালে বের হই রাতে বাসায় ফিরি! আমার হাতে তো একেবারেই সময় নেই!!! আপনি যদি বলে দেন ও আপনার কথা শুনবে!

আমার এক বাংগালী প্রতিবেশীর মেয়ে আছে ওর এখানেই জন্ম ও বড় হওয়া! যার ফলে এখনকার কালচারে চলাফেরা করেই তারা অভ্যস্হ! ও একদিন সারাকে বললো,সে সারার কাছ থেকে একটা হিজাব নিতে চায়! সারা আর আমি দুজনেই খুবি খুশি! বলাবাহুল্য ওর মা নিজেই হিজাব করেন না! ও আরো জানালো সে হাইস্কুলের প্রথম দিন থেকেই হিজাব পরে যেতে ইচ্ছুক! আমাদের খুশির মাত্রা বেড়ে দ্বিগুন ততোক্ষনে!!!সারা ওর সবচাইতে সুন্দর হিজাবটা ওকে দিলো! হিজাবের ফলে মেয়েটাকে দেখতে এতো নিষ্পাপ লাগছিলো! দুদিন পর এক বিকালে আমি বাসায় ফিরছি ,গাড়িতে ও আর ওর মা, মেয়েটা যেই আমাকে দেখেছে, চট করে মাথা নামিয়ে নিয়েছে! কারন সে ছিলো হিজাব বিহীন! ও আমাকে দেখে লজ্জা পাক তা চাইনি, পরে ওদের বাসায় গেলে ওর মা আমাকে বললো- মেয়ে বড় হয়েছে,ইটালিয়ান ছেলেদের সাথে পড়াশোনা করতে হয়, ইটালিয়ানরা হিজাব দেখে বুঝে নিবে এই মেয়ের সাথে অন্য কিছু করা যাবে না ! হিজাব পড়ানোর উদ্দেশ্য হলো ইটালিয়ান ছেলেদের কাছ থেকে মেয়েকে রক্ষা করা!!!

আমাদের বাসায় এক ভাবী আসলেন,এ কথা সে কথায় ছেলে মেয়েদের প্রসংগ আসলো! উনি উনার কলেজ পড়ুয়া ছেলে নিয়ে যারপরনাই চিন্তিত! ছেলে পড়াশোনায় খুবই ভালো! সমস্যা হলো ছেলের ভালো কোন বন্ধু বান্ধব নাই। উনি বলছিলেন বন্ধুদের অভাব নাই,কিন্তু ওদের সাথে মিশতে দিলে আমার ছেলে গার্ল ফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরবে, কানে মাইক লাগিয়ে সারা দিন গান শুনবে! আমি চাই এমন কোন সংগের সাথে ও মিশুক যাদের সাথে মিশলে আমার ছেলে নামায পড়বে! খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকবে!

আমরা এক বাসায় দাওয়াত খেতে গিয়েছিলাম, সেখানে আরো কিছু ভাবীদের ছেলেরা সবাই মোটামোটি একই বয়স! ৪-৬ এর মধ্যে! দুপুরের খানাদানার পর আমরা বসে গল্প করছিলাম, করিডোরে চোখ পড়তে দেখালাম, আমাদের ছেলেরা নিচে একটা চাদর বিছিয়ে তার ওপর বসে আছে, আর ওদের সামনে মাহদি ঠিক ইমাম সাহেবের ভংগিতে খুতবা দিচ্ছিলো! মাহদির আলোচনা চলছিলো, স্কুলে গিয়ে ওরা কোন গোশত খেতে পারবে না,কারন তা হারাম! হারাম খেলে আল্লাহ পেটে আগুন দিবে! শুনে আমরা হতভম্ব! ইমাম সাহেবের বক্তব্য কি হবে তা আমরা কেউ ওদের শিখিয়ে না দিলেও ওরা শিখে নিয়েছে আলহামদুলিল্লাহ ।

অনেক বাবা মা আছেন সারাদিন হাড়খাটুনি পরিশ্রম করেন ছেলেমেয়েদের আরো ভালো রাখার জন্য, জায়গা জমি,প্লট, ফ্লাট, ব্যাংক ডিপোসিট কি করা হয় না আজকের দিনে! কথায় কথায় বলেন নিজের জন্য কিচ্ছু করিনি, সব করেছি আদরের সন্তানের জন্য, ওদের ভবিষ্যতের মংগলের জন্য! অথচ আমরা যেই সন্তানকে দুনিয়ায় আসার প্রথমেই আযানের মাধ্যমে ইসলামের জানান দেই ,সেই আমরা এক বছরের পূর্তি পালন করি বিশাল জন্মদিনের কেক সহ ঘটা করে বার্থ ডে পার্টি করার মাধ্যমে! সন্তানের প্রথম বুলি ফুটলে কালিমা শিক্ষা দিতে ভুল হলেও বাংলা স্বরবর্ন ,ব্যান্জনবর্ন আর ছড়া কবিতা শিখাতে ভুল হয়না! ৫ না ৬ ,৭ হলে আরো ভাল, কম্পিটিশনে ইজি হবে আর স্কুলে ভর্তির সঠিক বয়স নিয়ে টেনশন থাকলেও ৭ বছরে নামাজের শিক্ষা দিতে হবে এই জ্ঞান আমাদের নেই বললেই চলে! এরকম কতো চিত্র অহরহ আমরা দেখি!!!

আমরা আমাদের সন্তানদের যদি ইসলামের আদর্শে বড় করতে চাই সবার আগে বাবা মাকে সেই আদর্শের মডেল হতে হবে। আমরা নিজেরা পালন করে, প্রতিটা বিষয় ওদের সাথে শেয়ার করে, ভাল দিক ও মন্দদিক গুলোর ব্যাখ্যা করলে, আমদের দুনিয়াতে আসার লক্ষ্য আর উদ্দেশ্য বাচ্চাদের ধীরে ধীরে জানিয়ে দেয়ার মাধ্যমে ইসলামের প্রতিটা বিষয় সহজ করে তুলে ধরতে পারি। যে সন্তান বড় হওয়া পর্যন্ত দেখে বাবা মা কেউ নামায পড়েনি, আর সেই বাবা মা সন্তানদের নামাযের কথা বললে কনফিউজড হবেই! অনেক দেখেছি বাবা মা প্রাকটিসিং হওয়ার পরও সন্তানদের বুঝাতে হিমশিম খাচ্ছেন! ছাত্রী জীবনে ইংরেজী ট্রান্সলেশন লিখতে হয়েছিলো- ঘোড়াকে জোর করে পানিতে টেনে নেয়া সম্ভব। কিন্তু তাকে জোর করে পানি পান করানো সম্ভব নয়। কেনো জানিনা বাচ্চাদের ক্ষেত্রে আমার একি কথা মনে হয়, আমাদের সন্তানদের মাঝে ইসলামিক জীবনব্যাবস্হার পিপাসা সৃষ্টি করে দিতে হবে, তবেই ওরা ইসলামের সুপেয় পানীয়ের স্বাদ আস্বাদন করতে পারবে আজীবন!!

বিষয়: বিবিধ

১৩১৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File