মূল্যবান সম্পদ

লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া মুকিম ১৭ মে, ২০১৩, ০৭:৩৬:২৩ সন্ধ্যা



বেশ কিছু দিন আগে একজন চাইল্ড স্পেশলিস্ট এবং চাইল্ড সাইকোলজিস্ট ভাইয়ার কিছু পারামর্শ গ্রহন করার সুযোগ হয়েছিলো, বিষয়টা ছিলো বাচ্চাদের টাইম মেইন্টেইন নিয়ে। হিতাকাংখী ভাইয়ার কাছ থেকে একটি বেসিক রুটিন পেয়েছিলাম, রুটিনটি ছিল আমার মেয়ের জন্য। স্কুলের হোমওয়ার্ক, নামায, কোরআন পড়া, হাদীস পড়া,বিনোদন, নিজের পছন্দমতো কাজ করার পাশাপাশি সম্পূর্ন রুটিনটির মধ্যে আমার সবচাইতে ভালো লেগেছিলো যে বিষয়টি সেটা হলো ফ্যামিলিকে সময় দেয়া!

কিন্তু বিষয়টা ছিলো আমরা আমাদের সমস্ত কাজের পাশাপাশি না বরং শুধুমাত্র আমরা পরিবারের সবাই মিলে প্রতিদিন নিয়মিত নির্ধারিত কিছু সময় একসাথে দিব।

রুটিন দেখে আমি নিজেও ভাবলাম আসলেই সংসারের সব কাজের মতো আমাদের উচিত বাচ্চাদের জন্য নিয়মিত কিছু সময় ঠিক রাখা। স্কুল, জব এগুলো ছাড়া তো বেশীরভাগ সময় সবাই মিলে বাসাতেই কাটাতে হয় আর এজন্য আমারা মনে করে থাকি বাচ্চাদের তো আমরা সবটুকু সময় দিচ্ছি তারপরো বাচ্চারা আমাদের বোঝে না কেনো? আমাদের মনের মতো গড়ে ওঠে না কেনো? কতো প্রশ্ন জমে কতো বিরক্ত হই!

কিন্তু আমরা অভিভাবকরা যদি একটু চিন্তা করি আমরা কয় জন আলাদা সময় শুধু ছেলে মেয়েদের নিয়ে কাটাচ্ছি ? আমি নিজেও নিজেকে প্রশ্ন করেছি আমি কতো খানি সময় এভাবে আমার বাচ্চাদের দেই? মন থেকে হতাশার লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস আসতেই আশার সুর তুললাম, বললাম সময় এখনো আছে, এখন থেকেই শুরু করব ইনশা আল্লাহ!

গতানুগতিক ভাবে আমাদের সময় যেভাবে কাটছিলো তা হলো আমার মেয়ে স্কুল থেকে আসার পর সারাক্ষন আমার সাথেই থাকে, আমি হয়ত আমার রুম গুছাই, ওর রুম গুছায়, আমি রান্না করি ও ডিজাইন করে, আমি আমার ফ্রেন্ডদের সাথে কথা বলি ও হয়ত গেইম খেলে! নামাজের সময় হলে একসাথে নামাজ পড়ি, ওকে কোরআন পড়তে বলি, সপ্তাহে একটা ফ্যামিলি মিটিং এর চেস্টা করি......।!

বাচ্চাদের স্কুলের টিচারদের সাথে কথা বলা, ডায়েরি চেক করা, হোম ওয়ার্কে হেল্প করা এগুলো তো আছেই......

আবার কখনো চা খেতে ইচ্ছে করলো বললাম মামনি তোমার মিস্টি মিস্টি হাত দুটো দিয়ে আমাকে একটু চা খাওয়াবে? ও আমার জন্য চা নিয়ে আসতো, কখনো বলতাম আজ আমার একদম শরীর ভালো লাগছে না আমাকে ডিস্টার্ব করো না, আমি একটু রেস্ট নেই ! এভাবেই কাটছিলো আমাদের সময় আর আমার মতে এটাই ছিলো বাচ্চাদের সময় দেয়া!

যাইহোক আমি নিজেও রুটিনের আওতায় চলে এলাম, নিজের সব কাজ গুছিয়ে নির্ধারিত সময়ে সবাই মিলে, কখনো কখনো মা- মেয়ে একসাথে সময় কাটাতে লাগলাম। এ সময়টুকুতে আমরা যা করি তা হলো বিভিন্ন রকম গল্প করি, ওর স্কুলে কি কি হয়েছে তা জানি, আমার (আমাদের বাসার) খোঁজ খবর ওকে দেই, আজ রাতে কি খেতে চায়, ওর চুল বেঁধে দেই, বেনী করে দেই,ঝুটি করে দেই, ওর সাথে ইচ্ছে করে ঝগড়া করি, ওর কোরআন তিলাওয়াত শুনি, হাদিস পড়ে শোনাই, মাঝে মাঝে ব্লগের গল্প করি, আবার কখনো কিছু বলতে না করলে আমি চুপ করে ওর কথা শুনি, শুধু পাশে বসে থাকি।

আমি এ কাজ গুলো আগেও করতাম কিন্তু তা ঠিক রুটিন মোতাবেক, নিয়মিত বা সময় মতো হতো না এখন তা রুটিন অনুযায়ী এবং নিয়মিত হওয়ায় আমাদের স্পেশালি দুজনের দুজনকে অনেক সময় দেয়া হয় যেটা আগে আমি এভাবে খেয়াল করিনি বা গুরুত্বটা বুঝিনি!

প্রতিটা বাবা- মায়ের জন্য সন্তান নয়ন মনি, চোখের জ্যোতি। সব মুসলিম বাবা - মা চান সন্তান গড়ে উঠুক আদর্শ মুসলিম রুপে, কিন্তু অনেকসময় সন্তানদের আদর্শের উপকরনগুলো না দিয়েই আমরা আদর্শ সন্তান আশা করি! মনে করি সন্তানরা নিজে নিজেই গড়ে উঠবে!

আমাদের সন্তানরা সেভাবেই গড়ে উঠবে আমারা যা শিক্ষা দিব আর এর জন্য সময় দেয়ার বিকল্প নেই। ছোটবেলা থেকেই রুটিন অনুযায়ী চলে পরিবারের সাথে সুন্দরভাবে সময় কাটানোর মাধ্যমে, গল্পে- কথায়, স্নেহ- ভালোবাসায় আদরে- অভিমানে ওদের কাছে আদর্শ পৌঁছিয়ে দিবার দায়িত্ব পালন করা যায়। সবাই জানি আমাদের সন্তানরা আমাদের সবচাইতে মূল্যবান সম্পদ! আর যিনি আমাদের সন্তানগুলোর প্রকৃত মালিক তাঁর কাছে দুআ করা তিনি যেনো আমাদের কলিজার টুকরোদের সঠিক পথে পরিচালিত করেন।

বিষয়: বিবিধ

২২৫২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File