বিশুদ্ধ অন্তর চাই
লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া মুকিম ১৬ মে, ২০১৩, ০৭:০০:১৬ সন্ধ্যা
একজন মানুষ কতখনি সুস্হ তার অনেকখানি নির্ভর করে তার হার্ট কতখানি সুস্হ তার উপর। আর হার্টের কার্যকরিতা কমবেশি সবাই জানি- সিস্টোল আর ডায়াস্টোল সিস্টেমের মাধ্যমে সর্বক্ষন চালু থেকে যে অংগ রক্ত সন্চালন করে, বিশুদ্ধ রক্ত সরবরাহ করে, দূষিত রক্ত বের করে দেয় এবং আমাদের সারা শরীরকে সচল রাখে। আমাদের অনেকেরই আশে পাশে হার্টের রোগী আছে, আমরা জানি তাদের প্রতি কি পরিমান খেয়াল রাখা প্রয়োজন! সর্বক্ষন ডাক্তারদের আলাপ- পরামর্শ, ডায়েট, ঔষধ, অপরিসীম যত্নের মাধ্যমে চলে তাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষন।
আমাদের কেউ যখন অসুস্হ হয়ে পড়ে কত দ্রুত তাকে ডাক্তারের কাছে নেয়া হয়,ডায়াগনোসিস, যাবতীয় চিকিত্ৎসা, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়! আমাদের সবার কাছেই শারীরিক সুস্হতার গুরুত্ব অনেক বেশী কিন্তু এর মাঝে আমরা অনেক বেশী গুরুত্বের বিষয় ভুলে যাই! আর এভাবে শারীরিক মৃত্যুর আগেই আমাদের অন্তরের মৃত্যু হয়ে যায়!
আমরা সুস্হ হার্ট ছাড়া যেমন সুস্হ ভাবে বেচে থাকতে পারিনা তেমনি বিশুদ্ধ অন্তর ছাড়াও মুসলিমের জীবন পরিপূর্নতা লাভ করতে পারে না! স্বাস্হ সচেতন ব্যক্তি বছরে একবার হার্ট পরীক্ষা করান কিন্তু আমারা কয়জন মুসলিম আমাদের অন্তরের প্রকৃত অবস্হা জানার চেস্টা করি?
আমরা প্রতিদিন পাঁচ বার সালাত আদায় করছি কিন্তু সালাত আমাদের মনের ময়ালাগুলি পরিস্কার করে না, আমাদের মন কে
নরম করে না, কোরআন তিলাওয়াত- অধ্যয়ন করছি কিন্তু আমাদের নয়নযুগল অশ্রুসিক্ত হয়না, আমাদের জীবনকে পরিশুদ্ধ করে না! সুন্নাহ আর মাসনুন দোআ গুলি পড়া হয় অথচ এগুলো আমাদেরকে আমাদের প্রিয় রাসুল (সা) এর আদর্শ ও শিক্ষার আলোকে গড়ে তোলে না! সাহাবীদের জীবনী পড়ি, উনাদের জীবনী আমাদের অন্তরকে আলোড়িত করে তথাপি আমরা উনাদের মতোন আমলে সালেহ করতে পারিনা! চোখের সামনে কতো অভাবী দরিদ্রক্লিষ্ট মানুষকে দেখি, তাদের কষ্টের কথা শুনি কিন্তু আমরা তাদের দুঃখ কষ্টে সঠিক সহানুভূতি প্রকাশের হক বা দাবী আদায় করার অন্তরের অবস্হা আমাদের নেই!
যদি পকেট থেকে ১০০টাকা হারিয়ে যায়, অথবা কোন সুপার ডিসকাউন্ট মিস হয়ে যায় মনটা কতো খারাপ হয়ে যায়! তুলনা করা হয় যদি ১ ওয়াক্ত সালাত সঠিক সময়ে পড়া হয় নি বা একদিন কোরআন তিলাওয়াত মিস হয়েছে মনটা ততোখানি খারাপ হয় না যতখানি হয় টাকা হারিয়ে গেলে !
সময় তার নির্ধারিত গতি অনুযায়ী বয়ে চলছে, প্রতিদিন আমরা ঘুম থেকে উঠে সকালের সূর্য উদয় দেখছি, গোধূলি বেলায় সূর্যাস্ত দেখছি কিন্তু আমাদের যে পরিবর্তন আসা দরকার সেই পরিবর্তন আর আসে না! অথচ মুমিনের আজকের দিন গতকালের থেকে উত্তম হওয়ার কথা, আজকের থেকে আগামী কাল আরো সুন্দর হবে এই প্রত্যয় অন্তরে থাকার কথা! কোন একটা জায়গায় এসে আমরা অন্ধ হয়ে যাই, আমাদের চোখ অন্ধ হয় না বরং অন্ধ হয়ে গেছে আমাদের অন্তরের চোখ!
আমাদের অন্তর আজ বন্দী, কারারুদ্ধ, শৃঙ্খলিত হয়ে আছে কেমন করে তা আল্লাহ ও আখিরাতের আবাসের দিকে ধাবিত হবে? কেমন করে আমরা অগ্রসর হবো যখন আমাদের অন্তর অবরুদ্ধ এবং চারদিক থেকে প্রতিমুহূর্তে ক্ষতিকর বিষয়সমূহ নিকটবর্তী হচ্ছে? কিন্তু আমরা সত্যকে গ্রহন করি না মন্দকে বর্জন করি না!
অন্তরের উপমা একটি বিহঙ্গের ন্যায়। সে যত উপরে আরোহন করতে থাকে ততই ক্ষতিকর বিষয়সমূহ থেকে দূরবর্তী হয়। আর যত সে নীচে অবতরণ করতে থাকে ততই তাকে আঘাত করতে পারে এমন ক্ষতিকর বিষয়ের নিকটবর্তী হয়।
আমরা শারীরবৃত্তীয় হার্টের ব্যাপারে যতটাই উদ্বিগ্ন বা পেরেশান হই তার একটুও যদি অন্তরের ব্যাপারে হতাম আজকে আমাদের অবস্হা অনেক ভালো হতো!
একটি হাদীসে তো এমনই বর্ণনা করা হয়েছে যে, শয়তান হল মানুষের জন্য নেকড়ে স্বরূপ। যে মুহূর্তে ভেড়ার কোন রক্ষক নেই আর সে নেকড়ে দ্বারা পরিবেষ্টিত, ঠিক তখনই নেকড়ে ক্ষিপ্রগতিতে তার উপর আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়ে। অনুরূপভাবে যে বান্দার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন প্রতিরক্ষা নেই, তার নেকড়ে (অর্থাৎ তার কামনা-বাসনা, প্রবৃত্তি ইত্যাদি) তার উপর শিকারী পশুর মত (ঝাঁপিয়ে পড়ে)। সুতরাং বান্দার জন্যে আল্লাহর নিরাপত্তা ব্যতীত কোন পরিত্রাণ, কোন নিষ্কৃতি নেই।
ভেড়া রাখালের যত কাছাকাছি অবস্হান করে, ততই সে নেকড়ে হতে থাকে নিরাপদ। আর রাখাল থেকে সে যত দূরবর্তী হয়, ধ্বংস তার ততই নিকটবর্তী হতে থাকে। সুতরাং তার অভয়ারণ্য হল রাখালের নিকটে অবস্হানের মাঝে। কারণ নেকড়ে তো সেই নিঃসঙ্গ ভেড়াটিকেই নেবে যে তার দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে, যে ভেড়া রাখাল থেকে সবচেয়ে দূরে। যখনই অন্তর আল্লাহ থেকে দূরবর্তী হয়, ক্ষতিকর জিনিসসমূহ দ্রুত তার দিক ধাবিত হতে থাকে। আর যত তা (অন্তর) আল্লাহর নিকটবর্তী হয়, ক্ষতিকর জিনিসসমূহ ততই তার থেকে ব্যবধানে থাকে।
আজ আমাদের অন্তর আমাদের প্রভুর নিকট হতে অনেক দূরে আর আমারা এই বিষয়ে অনেক উদাসীন! আজ নিজের জন্য যা জরুরী মনে করি তা হলো একটি বিশুদ্ধ অন্তর! যা আমাদের প্রভুর সন্তুষ্টি আর ভালোবাসায় আবৃত থাকবে, প্রভুর অসন্তুষ্টি আর ক্রোধের ভয়ে সচেতন থাকবে! অন্যায় অসত্য থেকে দূরে থাকবে, সত্য সঠিক পথে এগিয়ে আসবে! একটাই প্রার্থনা "হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী ! আমাদের অন্তরসমূহকে দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখুন”
বিষয়: বিবিধ
২৩১৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন