বিষাদ বসন্ত

লিখেছেন লিখেছেন গন্ধসুধা ০৫ মার্চ, ২০১৩, ১০:১৩:০৯ রাত

আমাদের বাসার আশে-পাশে বাউন্ডারির ভিতর প্রায় একশত-দেড়শত আম গাছ।গাছগুলোয় মুকুল এসেছে।প্রতিবছর আমি অবাক হয়ে দেখি এই বাড়ন্ত জীবনের স্পন্দন!!কাঠাঁল গাছগুলোতেও ছোট্ট ছোট্ট কাঠাঁল।একটি কাঠাঁল গাছ ব্যলকনি ছুঁয়ে দাড়ানো।তার সজিব ডাল-পাতা ফাগুনের বাতাসে দোল খেতে খেতে ব্যলকনির গ্রীলহীন খোলা পথে ঢুকে পড়তে চায়।এই গাছটার কাঠাঁল এতো মজা যে চরম কাঠাঁলবিরাগী আমার বড় ভাইয়াও এই গাছের কাঠাঁলের পরম ভক্ত!এই সময়ে কাঠাঁল গাছের মুচি দিয়ে তেতুঁল মাখা আমার খুব প্রিয় ,কিন্তু এবার আমি একদম ভুলে গেছি এই প্রিয় ভর্তাটার কথা!!

ব্যলকনির সামনের ফজলি আমগাছ আর এই কাঠাঁল গাছটার ডালে দোল খেয়ে ব্যলকনিতে প্রতিদিনই ফুড়ুত ফুড়ুত করে ঢোকে দোয়েল পাখি!এমনকি আমরা কেউ না থাকলেই ওরা ডাইনিং স্পেসে এসে খাবারের জিনিস যা পায় খাওয়া শুরু করে!!আম্মু প্রতিদিনই বাচ্চাদের নষ্ট করা খাবার ডাস্টবিনে না ফেলে ব্যলকনির টবে রাখে আর ওরা এসে খেয়ে যায়!এটাও এক ধরনের সাদাকাহ!এই সময়ে প্রতিদিন শোনা যায় কোকিলের কুহু কুহু আর চড়ুইয়ের চুঁই চুঁই ডাক!আর কদিন পরে শোনা যাবে চোখগেল পাখির চোখ হারানোর সেই করুন আর্তনাদ।

সদর পথের সামনেই একটা করমচা গাছ ছিল,এখন কেটে ফেলা হয়েছে।তবে আরেকটা গাছ আছে কিছু দুরে সাউদার্ন ওর্কশপের সামনে।ওখানে আমাদের যাওয়া হয়না বেশী।কাঁচা করমচা অনেকেই দেখে থাকবে কিন্তু টসটসে পাকা করমচার সৌন্দর্য্য কেউ না দেখলে বুঝবেনা।পাকা করমচার আচারের রং সম্ভবত পৃথিবীর তাবৎ আচারের রংকে পিছনে ফেলে দিবে।আমি বলি গোলাপি আচার।বাসার পূর্বদিকে কয়েকটি জলপাই গাছ।শীতকালে জলপাই গাছের টুকটুকে লাল ঝরাপাতা যখন সিরামিকের লালইটের পথের উপর বিছিয়ে থাকে তখন অপূর্ব লাগে সেই দৃশ্য!মারিয়া বলে ওগুলো নাকি লালশাক!!

বাসার পশ্চিম পাশে একটি বিলম্বি গাছ!কেউ কি চেনেন এই ফলটিকে?কামরাঙা প্রজাতির এই ফলটি স্বাদে কামরাঙার চেয়েও অনেক অনেক টক!বিলম্বি দিয়ে কৈ মাছের ঝোল যে খাবে সে কখনো ভুলবেনা,ভুলবেনা এটার আচারের স্বাদও!!আম ,জলপাই,লেবু সমস্ত কিছুর আচারকে হারিয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে বিলম্বির আচার!!

পূবের লাল সিরামিকের ইটের পথের ওপাশেই সেগুন আর মেহগনি গাছের পার্ক।শীতে সমস্ত সেগুনের পাতা ঝরে একেবারে ন্যাড়া হয়ে গেছে,বর্ষাকালের আগে আর হবেনা পাতা।পার্কের একপাশে মেহগনি আর একপাশে সেগুনগাছ। মাঝে মাঝে যখন আমি আসরের পরে পার্কটা পার হয়ে তারওপরে লেকটা পার হয়ে পশ্চিমমুখী হয়ে বনটার দিকে তাকাই তখন পশ্চিমের লালিমামাখা আকাশটার বুকে দেখি উত্তরদিকে সেগুন বনের কংকাল আর দক্ষিনদিকে মেহগনি বনের ঘনকালো আধাঁর!স্রষ্টার বৈচিত্রময় সৃষ্টি!

সিরামিকের লালইটে বাধাঁনো এই লেকটা আমার খুব প্রিয়।সকাল-বিকাল এমনকি রাত বারোটায়ও এর পাশের ফুটপাথে বসে থাকতে খুব ভালো লাগে!নিয়ন সাইনের আলোয় লাল ইটগুলোকে মেরুন মনে হয়,কিছু দুরে দেখা যায় মিনারের উপর আরবিতে আল্লাহু লেখা সাইন,নিস্তব্ধ রাতের নির্জনে ভেসে আসে আরো দুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপর দিয়ে হুঁস হুঁস করে চলে যাওয়া ট্রাকের শব্দগুলো!

আমি জানি যখন এখান থেকে চলে যাব এগুলো আমাকে কাঁদাবে,খুব কাঁদাবে!!

লেকটা পার হলেই মহাসড়কের দিকে চলে যাওয়া দীর্ঘ পথটার একদিকে সুবিন্যস্ত পামগাছের সারি ঘেরা খেলার মাঠ আর একদিকে শুধু ফুলের অরন্য!ডালিয়া,জিনিয়া,রঙ্গন,কসমস,নয়নতারা,গাঁদা আরো যে কতো ফুল সবগুলোর নাম আমি জানিনা!

খুব ইচ্ছে ছিল এগুলোর ছবি দিয়ে একটা পোস্ট দিব!কিন্তু এবারের বসন্ত অন্যরকম! আমের মুকুলের আনন্দ নয়,কোন ফুলের গন্ধ নয় এবারের ফাগুনের মাতাল হাওয়ায় কেবলই রক্তের গন্ধ!

বিষয়: বিবিধ

২২৬৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File