সন্ধ্যাবাতির সন্ধানে
লিখেছেন লিখেছেন গন্ধসুধা ০৬ জানুয়ারি, ২০১৪, ১১:০৯:১৭ রাত
চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান ধরে থাকলেও কানটা পুরোই সজাগ নয় বছরের আসিফের।একটুও ঘুমাতে ইচ্ছে করছেনা আসিফের!মনটা পড়ে আছে পুকুরের ওপাশে বহু পুরনো তালগাছটার মাথায়।আম্মুটা যে কিনা!শুধু ঘুমাও,পড়ো,খাও,দুষ্টামি কোরনা..এছাড়া আর কোন কথাই জানেনা!এখনি আলাল আসবে..তারপর চুপিচুপি তারা একটা কাজ করবে।খুব ইম্পর্ট্যান্ট একটা কাজের প্ল্যান আছে আসিফের।তাই সকালেই আলালকে বলে রেখেছে দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পরে আসতে।
আলাল ওদের কাজের বুয়ার ছেলে।আসিফের ছাত্র!আলালের বয়স দশ বছর,যদিও দেখলে আসিফের চেয়ে ছোট বৈ বড় মনে হবেনা!ক্লাস ওয়ানের পর পড়াশোনা শিকেয় তুলে টো টো করে ঘুরে বেড়ায়!প্রথম শুনে আসিফের কি মনখারাপ!বারবার আম্মুর পিছনে ঘুরেছে আর বলেছে আচ্ছা আম্মু আমি পড়ি আলাল পড়েনা কেন?ওর মা বুয়াকে জিজ্ঞেস করলো কি ব্যাপার তোমার ছেলেকে পড়াওনা কেন?বুয়া পান চিবুতে চিবুতে বললো আর বলবেননা আপা!আমিতো পড়াইতেই চাই!একি আমার পড়ালেখা করার ছেলে!কোথায় কোন গাছে উঠবে!কোন পুকুরে কতক্ষন ডুবাবে তার কাজই এসব নিয়ে থাকা!তখন আসিফ বিজ্ঞের মত মাথা দুলিয়ে ঘোষনা দিল আমাদের বাসায় আসতে হলে পড়তে হবে!এখন থেকে আমি ওকে পড়াব,না পড়ে যাবে কোথায়?আলালও সাথে সাথে রাজী!আলালের নজর আসিফের নিত্যনতুন খেলনাগুলোর দিকে!পড়ার নাম করে যদি আসিফের কাছাকাছি থাকা যায় তাহলে সেও নিশ্চয়ই খেলনাগুলোর ভাগ পাবে!
সেই থেকে শুরু আলালের পড়ালেখা।আসিফ আম্মুকে দিয়ে আলালের জন্য বই খাতা পেন্সিল ইরেজার সব কিনিয়ে নিয়েছে।প্রতিদিন স্কুল থেকে আসার পর ফ্রেস হয়েই আসিফ আলালকে নিয়ে বসে।আর আলালের কাছ থেকে শিখছে অন্যরকম পড়া,কোথায় কোন গাছে কিভাবে উঠা যায়,কিভাবে তীর বানাতে হয়,কোন গাছে কোন পাখি বাসা বাঁধে!কিন্তু আজ অন্যরকম কাজ আছে!
হঠা্ৎ জানালায় ঠকাস করে একটা শব্দ হলো!লাফ দিয়ে উঠে বসলো আসিফ।পাশের রুমে আম্মু ঘটঘট করে সেলাই মেশিন চালাচ্ছে।শুনেনিতো!আরেকবার ঠকাস!তারাতারি করে নিঃশব্দে উঠানে বের হয়ে দেখলো আলাল আরেকটা ইটের টুকরো মাত্র হাতে নিয়েছে জানালায় মারবে বলে!তারাতারি হাত দিয়ে নিষেধ করলো আসিফ। তারপর আলালের হাত ধরে একদৌড়ে বিরাট বাড়িটার পিছনদিকের পুকুর পারে তাল গাছ তলায় চলে এল।
কি খবর?হঠাৎ এতো জরুরী তলব?আগে বোস!একটা জায়গা বাছাই করে তাতে বসলো ওরা!শোন কালরাতে দাদুমনির কাছে এক গল্প শুনেছি!কি গল্প?দারুন এক গল্প!ওইযে গাছের মাথায় বাবুই পাখির বাসা দেখতে পাচ্ছিস?হা পাচ্ছিতো!শোন বাবুই পাখি কি করে জানিস?যখন বাবুইয়ের বাবু হয় তখন তার ঘর যেন অন্ধকার না থাকে তাই পুকুর পার থেকে কাদামাটি নিয়ে ঘরের দেয়ালে সেই কাদামাটিতে জোনাকি পোকা আটকে রাখে!জোনাকি পোকা জ্বলে-নিভে ঘর আলোকিত করে রাখে আর এটা নাকি ওরা করে সন্ধ্যাবেলা!তাই দাদু ডাকে সন্ধ্যাবাতি!আরিব্বাস!তাই নাকি?হু!মাথা উপর-নীচ করলো আসিফ।বাচ্চার জন্য কি বুদ্ধিরে!বলতে বলতে আলালের সুন্দর চোখজোড়া ভেজা ভেজা সপ্নালু হয়ে উঠলো জানো আমার মাও আমাদের জন্য অনেক কষ্ট করে!মাঝে মাঝে এমন হয় ঘরে অল্প খাবার মা শুধু আমাদের খাইয়ে নিজে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে!নিস্তব্ধ হয়ে শুনলো আসিফ,এ জীবনের সাথে তার খুব বেশী পরিচয় নেই!আমার একটা প্ল্যান আছে!কি?তুইতো গাছ বাইতে পারিস,ওঠনা গাছটায়!একটা বাসা পেড়ে আন!আমরা অপারেশন করে দেখি কেমন করে জোনাকিগুলো ওরা আটকে রাখে!কি বলো আঁতকে উঠলো আলাল!চার-পাঁচ তলা সমান গাছটার দিকে তাকিয়ে বললো আমি কখনো এতো বড় গাছে উঠিনি!মা জানলে বকবে!কেউ জানবেনা!উহু!গাইগুই করতে লাগলো আলাল।প্লিজ আলাল প্লিজ আচ্ছা তুই যদি আমাকে একটা বাবুই পাখির বাসা পেড়ে এনে দিস তাহলে আমি তোকে আমার কুঝিঁকঝিঁক করে চলে ওই ট্রেনটা দিব!সত্যি!চকচক করে উঠে আলালের দুচোখ!হা সত্যি!
লাফ দিয়ে উঠলো আলাল গাছটার চারদিকে কয়েকপাক ঘুরে বললো ঠিক আছে এক্ষুনি উঠছি।কিন্তু আলাল উঠছি বলার সাথে সাথে আসিফের ভিতরটা কেন যেন ধরাস করে উঠলো কিন্তু সে কিছু বলার আগেই তরতর করে ওঠা শুরু কললো আলাল!অনেক লম্বা গাছটায় উঠতে উঠতে দম ফুরিয়ে আসল যেন আলালের!একেবারে মাথায় উঠে দেখল বাবুই পাখির বাসা ওর হাতের সীমার বাহিরে!একটু ঝুকে খপ করে ধরল একটা বাসা!কিন্তু তারপর যে কি হল বুঝতে পারলোনা!
নীচে থেকে আলালকে পড়তে দেখে দিগবিদিগ জ্ঞানশূন্য হয়ে চীৎকার করতে করতে বাড়ির দিকে ছুটলো আসিফ!
আলালের ছোট্ট দেহটা যখন ধরাস করে পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়লো তখনো তার হাতে ধরা ছিল বাবুইয়ের বাসা,যার অন্ধকার প্রকোষ্ঠ জ্বলে-নিভে আলোকিত করছিল সন্ধ্যাবাতির দল...
[ উৎসর্গঃ আমার প্রথম লেখা গল্প।একবার ভাবছিলাম কাগজ ছুড়ে ট্রাস্টবিনে ফেলার মত সব ডিলিট করে আবার লেখি!কিন্তু এত্তো মায়া লাগল পারলামনা!জানি অনেক পঁচা হয়েছে তবুওতো প্রথম !এতো মায়ার লেখাটা আমার আরেক মায়াকাড়া বোন আফরোজা আপুকে ]
বিষয়: বিবিধ
৩৩৮৩ বার পঠিত, ৪৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যিনি লিখেছেন আর যাকে ডেডিকেট করেছেন দুজনের জন্য শুভকামনা.....
লেখার জন্য ধন্যবাদ থাকল আপা ---
শেষ টুকু পড়ে কিছুটা খারাপ লেগেছে আলালের জন্য ।
এটা যে প্রথম গল্প সেটা কিন্তু একদম বুঝা যায়নি ।
আপুমণিদের জন্য রইলো অনেক ভালোবাসা এবং দোয়া
ঐ ত বাড়ির পিছনে পুকুর
তারপর আম গাছ যদিও আমি গাছে উঠতে পারি তবে ভাইয়া উঠলেন।
একটা ডালে পা দেওয়ার সঙ্গে ভেঙ্গে গেল ডালটি আর ঠুস করে পড়ে গেলেন নিচে।
কিচ্ছু হয়নি কাদামাটি ছিল উঠেই দৌড়।
তবে এ গল্পটা কষ্টের।
আপনার মিনিগল্পটাও অনেক সুন্দর হয়েছে
চলো দিকে দিকে সবে সন্ধ্যাবাতি জ্বেলে যাই.........
মাশা আল্লাহ! অনেক সুন্দর হয়েছে তোমার গল্প আপু। শেষটা যদিও সিক্ত করে দিয়ে গিয়েছে আঁখিদ্বয়কে...
এত সুন্দর উপহারের জন্য তোমাকে নাকীবের আঁকা পেইন্টিং। আমার সারা ঘরে দেয়ালে দেয়ালে নাকীবের আঁকা এমন চমৎকার সব পেইন্টিং ঝুলছে। যখন আসবে তোমাকে ঘুরে ঘুরে দেখাবে ওর গ্যালারী।
জোনাক আপুটাকে জোনাকি জোনাকি গল্প উপহার দিয়েছো চমৎকার ! তোমাদের দুজনকেই জোনাকি ভালোবাসা!
আল্লাহ গো কত দাওয়াত খায় রে...
আপুনি অনেকদিন পর আপনাকে দেখে ব্যাপক আনন্দ অনুভব করিতেছি।
একেবারে ঠিক কথা বলেছো,দেখোনা একেবারে স্পেন পর্যন্ত ধাওয়া করেছে
তোমাদের দেখে দেখে আমিও একসময় এমন সুইট সুইট গল্প লিখতে শিখে যাবো, ইনশাআল্লাহ।
অনেক ধন্যবাদ
অসাধারন সুন্দর হয়েছে গল্পটা, এটা যেন হয় অনেক অনেক গল্পের প্রথমটা
এই জোনাকিগুলোর মত জ্বলজ্বল করে যেন তোমার লেখালেখি
ভাবতেই স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছে আপু সুন্দর দোয়া আর সাথে ঝিলমিলে ছবির জন্য শুকরিয়া আপু
নিশি অবসান প্রায়,ঐ পুরাতন বর্ষ হয় গত. . আমি আজি ধূলিতলে জীর্ণ জীবন করিলাম নত।
বন্ধু হও শত্রু হও, যেখানে যে রও
ক্ষমা করো আজিকার মত
পুরাতন বর্ষের সাথে পুরাতন অপরাধ যত. . .
মন্তব্য করতে লগইন করুন