দুটি নিদর্শন!
লিখেছেন লিখেছেন গন্ধসুধা ৩০ নভেম্বর, ২০১৩, ০৪:৫২:১৭ বিকাল
সুরা আল-ইমরানের ২৬ এবং ২৭ নং আয়াত-
قُلْ اللَّهُمَّ مَالِكَ الْمُلْكِ تُؤْتِي الْمُلْكَ مَنْ تَشَاءُ وَتَنْزِعُ الْمُلْكَ مِمَّنْ تَشَاءُ وَتُعِزُّ مَنْ تَشَاءُ وَتُذِلُّ مَنْ تَشَاءُ بِيَدِكَ الْخَيْرُ إِنَّكَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ (آل عمران: 26).
تُولِجُ اللَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَتُولِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِ وَتُخْرِجُ الْحَيَّ مِنْ الْمَيِّتِ وَتُخْرِجُ الْمَيِّتَ مِنْ الْحَيِّ وَتَرْزُقُ مَنْ تَشَاءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ (آل عمران: 27).
'বলুন ইয়া আল্লাহ!তুমিই সার্বভৌম শক্তির অধিকারী।তুমি যাকে ইচ্ছা রাজ্য দান কর এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজ্য ছিনিয়ে নাও।যাকে ইচ্ছা সম্মান দান কর এবং যাকে ইচ্ছা অপমানে পতিত কর।তোমারই হাতে রয়েছে যাবতীয় কল্যান।নিশ্চয়ই তুমি সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল।(২৬)তুমি রাতকে দিনের ভিতর প্রবেশ করাও এবং দিনকে রাতের ভিতর প্রবেশ করিয়ে দাও।আর তুমিই জীবিতকে মৃতের ভিতর থেকে বের করে আনো এবং মৃতকে জীবিতের ভিতর থেকে বের করে আনো।আর তুমিই যাকে ইচ্ছা বেহিসাব রিযিক দান কর।(২৭)
আয়াতদ্বয়ের শানে নুযুল-তাফসীরে মা'আরেফূল কোরআরে যা বলা হয়েছে তার সার সংক্ষেপ হলো-মুসলিমদের অব্যাহত উন্নতি আর ইসলামের ক্রমবর্ধমান প্রসার দেখে বদর-উহুদ যুদ্ধে পরাজিত মুশরিক ও অন্যান্য অমুসলিম ইহুদী-খ্রীষ্টান সম্প্রদায় সম্মিলিতভাবে মুসলিমদের বিনাশ করার মানসে মদীনার চারদিকে অবরোধ করে বসলো।কুরআনে এ যুদ্ধকে 'গাযওয়ায়ে আহযাব' বা 'সম্মিলিত বাহিনীর যুদ্ধ' আর ইতিহাসে 'গজওয়ায়ে খন্দক' নামে উল্লেখিত আছে।রাসুলুল্লাহ (সঃ) সাহাবাদের সাথে পরামর্শ করে মদীনার বাহিরে শত্র্রু সৈন্য আসার পথে পরিখা খননের সিদ্ধান্ত নিলেন।এখানকার সময়ে চিন্তা করলেও ব্যাপারটা খুব সহজ ছিলনা!প্রতি দশজন সাহাবীর উপর দায়িত্ব ছিল চল্লিশ হাত পরিখা,কয়েক মাইল লম্বা,যথেষ্ট গভীর আর প্রশস্ত হওয়া জরুরী যাতে শত্রুরা পার না হতে পারে সহজে।দ্রুত কাজ শেষ করতে হবে তাই সাহাবীদের প্রাকৃতিক কাজ-কর্ম পানাহারের জন্য কাজ বন্ধ রাখাও কঠিন ছিল।তাঁরা রীতিমত ক্ষুধার্ত অবস্হাতেই কাজ করে যেতে লাগলো ।ইমানী শক্তিবলে কঠিন কাজটি অতি সহজে সমাধাও হলো।এ সময় এক স্হানে একটি বিরাট পাথর বের হল যা ঐ স্হানে কাজে নিয়োজিত সাহাবীরা কিছুতেই অপসারন করতে পারছিলেননা।নবী (সঃ) এর কাছে খবর গেলে তিনি তক্ষুনি সেখানে উপস্হিত হলেন এবং কোদাল দিয়ে পাথরটিতে আঘাত করতেই তা খন্ড বিখন্ড হয়ে পরলো এবং একটি আলোকছটা বেশ দুর পর্যন্ত ছড়িয়ে পরলো।তিনি বললেন 'এ আলোকচ্ছটায় আমাকে হীরা ও পারস্য সাম্রাজ্যের রাজপ্রাসাদ দেখানো হয়েছে।'নবী (সঃ) দ্বিতীয়বার আঘাত করতেই আরেকটি অগ্নিস্ফুলিঙ্গ বিচ্ছুরিত হলো তিনি বললেন 'এ আলোকচ্ছটায় আমাকে রোম সাম্রাজ্যের লাল বর্ণের রাজপ্রাসাদ আর দালান-কোঠা দেখানো হয়েছে।'তারপর তৃতীয়বার আঘাত করতেই আবার আলোকচ্ছটা ছড়িয়ে পড়লো।তিনি বললেন 'এতে আমাকে সানআ ইয়ামনের সুউচ্চ রাজপ্রাসাদ দেখানো হয়েছে।'তিনি আরো বললেন 'আমি তোমাদের সুসংবাদ দিচ্ছি জিবরাঈল (আঃ) আমাকে বলেছেন যে,আমার উম্মত অদূর ভবিষ্যতে এসব দেশ জয় করবে।'
এ খবর শুনে মদীনার মুনাফিকরা উপহাস করে বলতে লাগলো দেখো যারা শত্রুর ভয়ে দিনরাত খেয়ে-না খেয়ে পরিখা খননে ব্যস্ত তারাই কিনা পারস্য,রোম ও ইয়ামন জয়ের দিবাস্বপ্ন দেখছে।আল্লাহ তায়ালা এসব জালিমদের উত্তরে আলোচ্য আয়াত নাযিল করেন-''বলুন ইয়া আল্লাহ!তুমিই সার্বভৌম শক্তির অধিকারী।তুমি যাকে ইচ্ছা রাজ্য দান কর এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজ্য ছিনিয়ে নাও।যাকে ইচ্ছা সম্মান দান কর এবং যাকে ইচ্ছা অপমানে পতিত কর।''
এতে পারস্য ও রোম বিজয় সম্পর্কে রসূলুল্লাহ (সঃ)এর ভবিষ্যতবানী পূর্ন হওয়ার প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে। আদি থেকে আজ পর্যন্ত সমগ্র মানবজাতির উথ্থান ,পতন এবং সাম্রাজ্যের পটপরিবর্তনের দিকে তাকালেই আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালার অপ্রতিহত শক্তির কিছুটা আন্দাজ করা যায়। কওমে নূহ,আদ, সামুদ প্রভৃতি জাতি তাদের সময়ে পরাশক্তি ছিল কিন্তু ধ্বংস হয়েছে আল্লাহর অবাধ্যতার ফলেই।কোথায় আজ হাজার বছর শাসন করা মিশরের ফারাও বাদশাহরা।বরং একজন চরম অবাধ্য মমি হয়ে পৃথিবীর মানুষদের চোখের সামনে নিদর্শন হয়ে আছে,থাকবে কেয়ামত পর্যন্ত!মাত্র কিছুদিন আগেও যদি দেখি, যে মুঘলরা শক্তি ক্ষমতা ঐতিহ্যে স্হাপত্যে প্রবল প্রতাপে উপমহাদেশ শাসন করেছে কোথায় আজ তারা?কয়েক বছর আগে পত্রিকায় পড়েছিলাম মুঘল সম্রাটদের শেষ বংশধরের জীবন কাটছে এক বস্তিতে!টুকরো টুকরো সোভিয়েত রাশিয়া কি কোন ম্যাসেজ দেয়না বর্তমান মোড়ল আমেরিকাকে?তিনি দরিদ্র আর পথের ভিখারীকে যেমন রাজমুকুট পড়াতে পারেন তেমনি প্রবল প্রতাপশালীকেও টেনে-হিচড়ে নামাতে পারেন ক্ষমতার পদ থেকে!তবুও শিক্ষিত হয়না এ জাতি!যে জিরো কে হিরো আর হিরো কে জিরো করার ক্ষমতা রাখে সেই আল্লাহর ক্ষমতাকে অস্বীকার করে দিব্যি নিজেদেরকেই মনে করে ক্ষমতার অধিপতি!তাইতো এক রাস্ট্রপ্রধানের ক্ষমতার অপপ্রয়োগে রাজপথে বয়ে যায় রক্তগঙ্গা আর সামান্য গৃহকর্ত্রীর ক্ষমতার অপপ্রয়োগে কাজের মেয়ে ভাসে রক্তস্রোতে!
আয়াতের শেষাংশে এসেছে بِيَدِكَ الْخَيْرُ অর্থাৎ সমস্ত কল্যান আল্লাহর হাতে।সাদা চোখে যাকে অকল্যান মনে হয় সামগ্রিক বিচারে তাই একজন মানুষের জন্য কিংবা মানবজাতির জন্য কখনো হয় অনেক ভালো ।আমরা যদি আমাদের অতীতের দিকে ফিরে তাকাই তাহলে দেখতে পাব ছোট থেকে বড় এমন জিনিসের অভাব নেই যা সেই সময় দুঃখ বেদনার কারন হলেও পরবর্তীতে নিয়ে এসেছে স্বর্নময় ফলাফল!তাই একজন মুমিনের সবসময় এই বিশ্বাস রাখা উচিত তিনি যা করেন তাই কল্যান এবং তাতেই লুকিয়ে আছে কোন বিরাট প্রাপ্তি।
(চলবে)
বিষয়: বিবিধ
১৭৭১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন