মারিয়াম সেন্টার-বৃটেনের মুসলিম নারীদের স্বপ্নযাত্রা

লিখেছেন লিখেছেন গন্ধসুধা ২২ আগস্ট, ২০১৩, ০৮:০৭:৫২ রাত

এক কাজিনের সাথে দেখা করার কথা ছিল।কিন্তু হাজার হাজার বাংলাদেশী.পাকিস্হানী,সোমালিয়ান,আফ্রিকান আরো বিভিন্ন দেশী মুসলিমার ভীড়ে এমনভাবে হারিয়ে গেলাম দুজনে, আমাদের আর দেখাই হলনা সেদিন!৫ জুলাইয়ের সেই ওপেনিং জুমায় হাজার হাজার নারী-পুরুষের জুমার সালাত আদায়ের মধ্য দিয়ে খুলে দেয়া হয় য়্যুরোপের বিগেস্ট মাসজিদ ইস্ট লন্ডন মাসজিদের এক্সটেনশন প্রজেক্ট মারিয়াম সেন্টার।



(মারিয়াম সেন্টার)

বিয়ের পর আশে-পাশের মুরুব্বী স্হানীয় কিছু মানুষের তীর্যক চাহনিতে বিব্রত বোধ করতাম!মুখে না বললেও সে চাহনিতে থাকতো 'দ্যাখো বাপু,ওই দেশে গিয়ে আবার আধা ইংলিশ, আধা বাংলিশ হয়ে আমাদের ইজ্জত নষ্ট কোরনা' টাইপের নিরব ধমক!সেদিন চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি,ধরে রাখার কোন চেষ্টাও করিনি!মনে হচ্ছিল একবার যদি একটা ম্যাজিক কার্পেট পেতাম!সবাইকে ধরে ধরে এনে দেখাতাম 'দ্যাখো! স্রষ্টা কি ঝিনুকের গন্ধময় গর্ভেই দ্যুতিময় মুক্তার সৃষ্টি করেননা?তবে কেন এতো আত্নবিশ্বাসহীনতা?'



(উমেন্স এন্ট্রান্স)

যে ৯০% মুসলিমের দেশ নিয়ে এতো গর্ব আমাদের,সে দেশে এমন হাজার হাজার হিজাবীর মিলনমেলাতো দুরের কথা হাতে গোনা কয়েকটা ছাড়া কোন মাসজিদে ১০ জন মহিলাদের জন্যও সালাতের ব্যবস্হা নেই!



(নীচ তলার মেইন প্রেয়ার হল,পুরুষদের জন্য)

অথচ..হযরত ইসার (আঃ) মায়ের নামে নামকরণ করা নয় তলা বিশিষ্ট মারিয়াম সেন্টার সিস্টারদের জন্যই বিশেষভাবে তৈরী!স্বাভাবিক অবস্হায় ২০০০ নারী মুসল্লি আর বিভিন্ন অকেশনে (রমাদান,ঈদ) আরো ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন এ বিল্ডিংয়ে আছে একটি পূর্ন গার্লস স্কুল,মহিলাদের জন্য হেলথ ও ফিটনেস সুবিধা,নন-মুসলিমদের জন্য ভিজিটর সেন্টার,গ্রাউন্ড ফ্লোরে পুরুষদের জন্য আরো নামাজের স্হান এবং বড় পরিসরে ফিনারেল সার্ভিস!

(সেকেন্ড ফ্লোর,আসর নামাজের প্রস্তুতিতে বোনেরা)

আর বৃটেনের বোনগুলো যেন চারটি বছর ধরেই অপেক্ষায় ছিল কবে খুলে দেয়া হবে মারিয়াম সেন্টার!রমাদানের ২৭ তারিখে তারাবির জামাতের আধা ঘন্টা আগে গিয়েও বোনেদের ভীড়ে কিছুতেই গেটটা যেন পেরোতে পারছিলামনা!পিপড়া গতিতে আগাতে আগাতে কোন রকমে উপরে উঠলেও প্রতিটি ফ্লোরের মেইন গেটে নোটিশ 'This floor is full,please go above' এভাবে চলতে চলতে অবশেষে ঠাঁই হলো সাত তলায়,তাও আবার করিডোরে!!এমনকি সেদিন বেজমেন্টেও ছিল মহিলারা !শুধু মহিলারাই যদি এতো হয় তাহলে সেদিন লন্ডন মুসলিম সেন্টার আর ইস্ট লন্ডন মস্কে পুরুষ মুসল্লি কতো ছিল চিন্তা করে দেখুন!!প্রতিটি বেতের সালাতের তৃতীয় রাকআতে রুকুর পরের সেই মুনাজাতগুলোর কথা আমি আজো ভুলতে পারিনা!ইংল্যান্ডের মতো একটি বিধর্মী দেশের বুকে হাজার হাজার মুসল্লির ঝরঝর চোখের পানিতে মধ্যরাতে থর-থর করে কাঁপতো যেন এলএমসির প্রতিটি বিল্ডিং!মুক্তি দাও প্রভূ!রক্ষা করো মিশর,সিরিয়া,বাংলাদেশ,সমস্ত জাতিকে!কবুল কর এই উঠানো হাতগুলোকে!আল্লাহই ভালো জানেন,ইমাম মাহদির সাথে মিলিত হওয়ার জন্য এখান হতেই হয়তো পদযাত্রা শুরু করবে তাঁর য়্যুরোপিয়ান সৈন্যরা!



(মায়ের সাথে স্রষ্টার দরবারে হাত তুলেছে শিশুটি)

ইস্ট লন্ডন মাসজিদকে ঘিরে কম্যুনিটি অধিবাসিদের আকাংখা চোখে পড়ার মতো।সাড়ে নয় পাউন্ড মিলিয়ন ব্যয়ে নির্মিত মারিয়াম সেন্টারের চার মিলিয়ন পাউন্ড ক্বরদে হাসানা (সুদ মুক্ত ঋণ) এখনও বাকী।কম্যুনিটির লোকজন নিজেদের সাধ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করে যাচ্ছে এ ব্যাপারে।আর এ ব্যাপারে মুসলিমদের উৎসাহিত করতে মাসজিদ কর্তৃপক্ষ নিয়েছে একটি মজার প্রজেক্ট,যার নাম 'ALHAMBRA DONORS WALL'।



(আলহামরা টাইলস)

স্পেনের গ্রানাডার আল-হামবরা প্যালেসের ইসলামিক আর্ট এবং স্হাপত্যের আদলে তৈরী আল-হামবরা টাইলস,যা ধারন করে রাখবে দাতাদের নাম।আল-হামরা টাইলসের ফুলটির মধ্যের স্পেস কিনতে লাগবে ৫০০০ পাউন্ড আর বাহিরের পাপড়ির স্পেস কিনতে দিতে হবে ১৫০০ পাউন্ড।আল্লাহর দরবারেতো বটেই, যতদিন মাসজিদ থাকবে ততোদিন মাসজিদের দেয়ালেও খচিত থাকবে এইসব উদার ভাইবোনদের নাম।

বিষয়: বিবিধ

৩৭৭৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File