ইডিএল,চা-বিস্কিট এবং ইসলাম

লিখেছেন লিখেছেন গন্ধসুধা ০৯ জুন, ২০১৩, ০৩:০৯:৫৪ দুপুর

সেই বুধবার আমরা উলউইচ হয়ে যাচ্ছিলাম একটি শপিংমলে।হঠাৎ একটি ব্যস্ত রাস্তা পুলিশ ব্যরিকেডে ব্লক দেখে অন্য রোড হয়ে ঘুরপথে যেতে যেতে জোড় গবেষনা করছিলাম রোড অ্যাক্সিডেন্ট না হয়ে যায়ইনা নয়তো এতো ব্যস্ত রাস্তা ব্লক করার আর কোন কারন দেখিনা!কিন্তু এক ঘন্টা পর বাসায় এসে বিবিসিতে আবিষ্কার করলাম লন্ডনের ইতিহাসের অন্যতম ঘটনা!উলউইচ আর্টিলারি ব্যারাকের এক সেনা সদস্য প্রকাশ্য দিবালোকে মাংস কাটার ছুরি দিয়ে নৃশংস হত্যাকান্ডের শিকার দুই সন্ত্রাসী দ্বারা!'মাত্র একটি হত্যাকান্ড'!!আমার বাংলাদেশে ঘটে যাচ্ছে যে হাজার হাজার হত্যাকান্ডের সিরিয়াল তার সামনে যেন মাত্র একটি এপিসোড!!কিন্তু তার জন্য রাজনীতিবিদদের জবাবদিহির আয়োজন নতুন করে কাঁদালো আমাকে আমার অসহায় বাংলাদেশের জন্য!

ডেভিড ক্যামেরনের ফ্রান্স সফর সংক্ষিপ্ত করে তক্ষুনি ঘরে ফেরা,হোম সেক্রেটারীর তাৎক্ষনিক ভাষন,আর ঘটনাস্পটে পুলিশ গুলি করে সন্ত্রাসীদ্বয়কে আহত ও আটক করাতো আছেই!উল্লেখ্য,উক্ত দুই সন্ত্রাসী নাইজেরিয়া বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক এবং তারা কনভার্টেড মুসলিম।হাইলাইটেড, ঘটনার সময় তারা পালিয়ে না গিয়ে নিজেদের মুসলিম বলে দাবী করছিল!!!!

একজন সন্ত্রাসীর ধর্মীয় পরিচয় যখন হয় ইসলাম তখন সেই সন্ত্রাসের লেবেল হয় 'ইসলামী টেরোরিজম' যদিও ইহুদী হিন্দু বা খ্রিষ্টান সন্ত্রাসীর ক্ষেত্রে ইহিুদী টেরোরিজম,হিন্দু টিরোরিজম বা খ্রিশ্চিয়ান টেরোরিজম কখনো শুনেছি বলে মনে পড়েনা!ঘটনার পরপরই প্রভাবশালী সংঘঠন মুসলিম কাউন্সিল অব বৃটেন এ হামলার তীব্র নিন্দা জানায় এবং পরবর্তি শুক্রবারেই ইষ্ট লন্ডন মসজিদে জুমআর নামাজের পর বিশেষ এক প্রার্থনায় যোগ দেন ক্রিশ্চিয়ান,বৌদ্ধ,জুইশ ধর্মালম্বিসহ প্রায় ৫০০০ লোক।উল্লেখ্য এ প্রার্থনা সভায় ইস্ট লন্ডন সেন্ট্রাল সিনাগগের লিওন সিলভার,বিশপ অব স্টেপরি রাইট বিভারেন্ড এড্রিয়ান নিউম্যানও যোগ দেন।



তবে এ ঘটনা দিয়ে ইংল্যান্ডে নবাগতা আমি প্রথম চিনলাম English Defence League তথা ইডিএলকে।

ইডিএলের ওয়েবসাইটে যদিও বলা আছে-চরমপন্থী ইসলামিস্টদের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ন প্রতিবাদেই ইংলিশ ডিফেন্স লীগের আন্দোলন কিন্তু দেখলাম পুরো উল্টো চিত্র!বরং শান্তিবাদী মুসলিমদের উপর হিংস্র আক্রমনই এদের প্রধান লক্ষ্য!উলউইচ মার্ডারের পর এ পর্যন্ত সমগ্র বৃটেন জুড়ে মসজিদ সহ মুসলিমদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ২২২টিরও বেশী আক্রমন হয়েছে!তার মধ্যে আছে বৃটেনের বিভিন্ন স্হানের মসজিদে হামলা,কোন কোন মসজিদে পেট্রোল বোমার আক্রমন,মুসলিম পরিবার দ্বারা পরিচালিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আক্রমন,হিজাবী মহিলাদের উপর হামলা এবং হিজাব কেড়ে নেয়া।লেটেস্ট খবরে গত বুধবার গভীর রাতে নর্থ লন্ডনের মাসওয়েল হিল এলাকার আল-রাহমা ইসলামিক সেন্টার পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া,যার অভ্যন্তর ভাগের একটি দেয়ালে স্প্রে দিয়ে 'ইডিএল' লেখা পাওয়া গেছে!যেহেতু ইসলামফোবিক ও জাতিবিদ্বেষী এই দলটির বিরুদ্ধে দাড়িয়ে আছে বৃটিশ গর্ভমেন্ট থেকে শুরু করে বহু রাজনীতিবিদ,সমাজকর্মী আর ইউনিট অ্যাগেইন্স ফ্যাসিস্ট ও অ্যানোনিমাসের মতো গ্রুপ,তাই তারা বেশী দুর আগাতে পারেনা।এ সকল ঘটনায় ইডিএলের বেশ কিছু কর্মী গ্রেফতার এবং কয়েকজনকে বিচারের আওতায় নেয়া হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বৃটেনের মুসলিম এবং নন-মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিদ্বেষ ছড়ানো ইডিএলকে তীব্র তিরস্কার করে বলেছেন উলউইচ মার্ডার হচ্ছে 'বিট্রেয়াল অব ইসলাম'।

তিনি ২০১০ সালের তার নির্বাচনী ইশতেহারে বলেছিলেন 'ইডিএল ভয়ংকর,আমরা সবসময় এ ধরনের গ্রুপকে নিরীক্ষনের উপর রাখবো এবং যদি প্রয়োজন মনে করি তবে তাদের অথবা তাদের মতো ঘৃনা ছড়ানো যেকোন দলকে নিষিদ্ধ করবো'।



যে ইসলামের বিরুদ্ধে ওদের এই অনর্থক যুদ্ধ সে ইসলাম কিন্তু অন্য কথা বলে!ইসলামের তরবারি কখনো অন্যায়ভাবে কারো উপর উঠেনা.কখনোই না!এবং ইসলামের এ সৌন্দর্য্যের জ্বলজ্বলে প্রমান হয়ে আছে ইংল্যান্ডের ইয়র্ক শহরের মাসজিদটি!মুসলিমদের উপর হামলার উদ্দেশ্যে সেদিন ইডিএলের প্রায় ৫০জনের বেশী কর্মী ইয়র্কের বুল লেনের মাসজিদের সামনে জড়ো হয় এবং তারা ফেইজবুকের মাধ্যমে তাদের সদস্যদের মাসজিদের সামনে সমবেত হওয়ার আহবান জানায়।কিন্তু স্হানীয় শতাধিক মুসল্লি আগে থেকেই উদ্বিগ্ন হয়ে মাসজিদ প্রাঙ্গনে অপেক্ষা করছিলেন।ইডিএল সদস্যদের একটি অংশ মাসজিদের দিকে এগিয়ে গেলেই মুসল্লিরা তাদের জন্য চা-বিস্কিট নিয়ে এগিয়ে আসেন।এই অনাকাঙি্ক্ষত আপ্যায়নে অনেকটা হতভম্ব হয়েই তারা তা গ্রহন করেন!মজার ব্যাপার হচ্ছে যদিও ২০জনকে দিয়ে আপ্যায়নটা শুরু হয় তবে শেষ হয় ১৫০ থেকে ২০০জনে গিয়ে।তবে তারা সবাই ইডিএলের সদস্য ছিলনা,কেউ বলছিল 'আমরা সাদা,আমরা বৃটিশ, আমরা চাইনা ইডিএল আমাদের প্রতিনিধি হয়ে কথা বলুক'!এমনকি চা-বিস্কিট খাওয়া শেষে ইডিএলের সাথে মুসল্লিদের একটি প্রীতি ফুটবল ম্যাচও অনুষ্ঠিত হয়!এভাবে একটি অসুন্দরকে সুন্দরে পরিনত করা বুঝি ইসলামেই সম্ভব!স্হানীয় কাউন্সিলার নীল বার্নেস বলেন,এটি ছিল ইয়র্কবাসীর জন্য একটি গর্বের মুহুর্ত।তিনি আরো বলেন,ইডিএল সদস্যদের ক্ষোভ ও ঘৃনা মুসলমানরা যেভাবে শান্তি ও ভালোবাসার উষ্নতায় মোকাবেলা করলেন তা আমি কোনদিনও ভুলতে পারবোনা।আক্রমনের উদ্দেশ্যে আগতদের এভাবে চা-বিস্কিট দিয়ে আপ্যায়নের দৃশ্য আমার মন থেকে কোনদিন মুছে যাবেনা।

বিষয়: বিবিধ

৩৩৭৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File