মিথ্যাবাদী জাতি আর বধির প্রজাতি
লিখেছেন লিখেছেন ড: মনজুর আশরাফ ২৬ মার্চ, ২০১৩, ০৭:০১:২২ সকাল
-১-
আমরা ৪২ বছরে ধীরে ধীরে মিথ্যাবাদী জাতিতে পরিনত হয়েছি। এর জন্য সর্বতভাবে দায়ী আমাদের 'শাসকশ্রেণী'।
যারাই দেশ শাসনের চাবিকাঠি পেয়েছেন - তারাই মিথ্যা কথা বলেছে - জাতিকে প্রতারিত করছে।
ব্রিটিশরা আমাদের প্রতারিত করেছিল, পাকিস্তানিরা করেছিল, 'বাংলাদেশী' শাসক রাও প্রতারণা করেই যাচ্ছে। মজার ব্যপার হলো: এদের প্রতারণা ভয়ঙ্কর; ভিনদেশিদের প্রতারণার থেকেও মারাত্মক ক্ষেত্রবিশেষে!
মিথ্যাবাদী শাসক আমাদের ইতিহাস বিকৃত করেছে নিজেদের উচু স্থানে বসিয়ে - অথচ এদের কার্যকলাপ দেখলে এদের অনুসারীরাই অকপটে বলে উঠে - 'শাসকরা এত নিচু কেন?' সম্রাজ্যবাদের কাছে বিক্রিত ও বিকৃতরা ইতিহাস বিকৃত করেই যাচ্ছে - একেবারে শিক্ষা-ব্যবস্থার পাঠ্যক্রম থেকে!
শুধু জিঘাংসাই নয় - বুদ্ধির মহা-কমতি শাসকদের এসব অর্বাচীন কাজে বাধ্য করছে।
আমাদের মিথ্যা কথা এখন বিশ্বে সুপরিচিত। বিশ্ব-ব্যাঙ্ক এরই মধ্যে তা ঘটা করে জানিয়ে দিয়েছে।
'দা ইকনমিস্ট' পত্রিকা প্রমান সহ আমাদের শেষ আশ্রয়স্থল 'বিচারালয়ের' বিচারকদের 'মহা-প্রতারক' আর 'মিথ্যাবাদী' প্রমান করেছে।
এর জন্য বাংলাদেশী সাধারণ মানুষের কোনো যুক্তি-প্রমান দিতে হয় নাই - পরিশ্রম করে কলমের কালি শেষ করতে হয় নাই।
-২-
আরেক শ্রেণী দেখা যায় - যারা ভয়াবহ! যুক্তির ধার ধারে না। বিরুদ্ধ মতকে (যেমন জামায়াতে ইসলামীর মত) নিস্পেষণ আর হত্যা করা হলে হত্যাকারী শাসক আর মিডিয়ার মতই হত্যার পক্ষে যুক্তি খুঁজে ফেরার মত বিকৃত কাজ করে।
আপনি যতই যুক্তি দেন- প্রমান দেন - আজন্ম শুনে আসা প্রচলিত বিশ্বাসের বিরুদ্ধ বিষয়কে সহজে এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে আরেক কান দিয়ে বের করে দেয়।
শাসক-বৃন্দ আর তার অন্ধ ভক্তরা যারা সর্বত ভাবে 'মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে' সাধারনদের অত্যাচার করছে তারা এই গোত্রের অন্তর্ভুক্ত।
এরা দুই ধরনের -
(i) ইসলাম থেকে যোজন যোজন দুরে অবস্থিত একদলের জীবন-প্রণালী:
এদের জন্য আল্লাহ-তায়ালার বার্তা: "মারা পড়েছে গর্তওয়ালারা যে গর্তে দাউ দাউ করে জ্বলা জ্বালানীর আগুন ছিল , যখন তারা সেই গর্তের কিনারে বসেছিল, এবং ঈমানদারদের সাথে , তারা সবকিছু করছিল তা দেখছিল৷ ওই ঈমানদারদের সাথে তাদের শত্রুতার এ ছাড়া আর কোন কারণ ছিল না যে তারা সেই আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছিল .... যারা মু’মিন পুরুষ ও নারীদের ওপর জুলুম - নিপীড়ন চালিয়েছে , তারপর তা থেকে তওবা করেনি , নিশ্চিতভাবেই তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আযাব এবং জ্বালা - পোড়ার শাস্তি৷"
(সুরা বুরুজ থেকে নির্বাচিত আয়াত)
(ii) ইসলামী জীবন-যাপন অনুসরণের দাবিদার:
এদের জন্য আল্লাহর নির্দেশ - যা মেনে চলা ফরজে আইন (অবশ্য পালনীয়):
"যারা এ মিথ্যা অপবাদ তৈরী করে এনেছে - তারা তোমাদেরই ভিতরের একটি অংশ ৷ এ ঘটনাকে নিজেদের পক্ষে খারাপ মনে করো না বরং এও তোমাদের জন্য ভালই৷ যে এর মধ্যে যতটা অংশ নিয়েছে সে ততটাই গোনাহ কামাই করেছে আর যে ব্যক্তি এর দায়দায়িত্বের বড় অংশ নিজের মাথায় নিয়েছে তার জন্য তো রয়েছে মহাশাস্তি ৷ যখন তোমরা এটা শুনেছিলে তখনই কেন মু’মিন পুরুষ ও মু’মিন নারীরা নিজেদের সম্পর্কে সুধারণা করেনি এবং কেন বলে দাওনি এটা সুস্পষ্ট মিথ্যা দোষারোপ? তারা (নিজেদের অপবাদের প্রমাণ স্বরূপ) চারজন সাক্ষী আনেনি কেন? এখন যখন তারা সাক্ষী আনেনি তখন আল্লাহর কাছে তারাই মিথ্যুক৷ যদি তোমাদের প্রতি দুনিয়ায় ও আখেরাতে আল্লাহর অনুগ্রহ ও করুণা না হতো তাহলে যেসব কথায় তোমরা লিপ্ত হয়ে গিয়েছিলে সেগুলোর কারণে তোমাদের ওপরে মহাশাস্তি নেমে আসতো৷ (একটু ভেবে দেখো তো¸ সে সময় তোমরা কেমন মারাত্মক ভুল করেছিলে) যখন তোমরা এক মুখ থেকে আর এক মুখে এ মিথ্যা ছড়িয়ে বেড়াচ্ছিলে এবং তোমরা নিজেদের মুখে এমন সব কথা বলে যাচ্ছিলে যা সম্পর্কে তোমাদের কিছুই জানা ছিল না ৷ তোমরা একে একটা মামুলি কথা মনে করেছিলে অথচ আল্লাহর কাছে এটা ছিল্ গুরুতর বিষয়৷ একথা শোনার সাথে সাথেই তোমরা বলে দিলে না কেন, ‘‘এমন কথা মুখ দিয়ে বের করা আমাদের শোভা পায় না , সুব্হানাল্লাহ! এ তো একটি জঘন্য অপবাদ৷’আল্লাহ তোমাদের উপদেশ দেন, যদি তোমরা মু’মিন হয়ে থাকো। তাহলে ভবিষ্যতে কখনো এ ধরনের কাজ করো না ৷ আল্লাহ তোমাদের পরিষ্কার নির্দেশ দেন এবং তিনি সবজ্ঞ ও বিজ্ঞানময়৷** ( নুর: ১১-১৮)
"হে ঈমান গ্রহণকারীগণ, যদি কোন ফাসেক তোমাদের কাছে কোন খবর নিয়ে আসে তাহলে তা অনুসন্ধান করে দেখ৷ এমন যেন না হয় যে, না জেনে শুনেই তোমরা কোন গোষ্ঠীর ক্ষতি করে বসবে এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হবে।*"
(*লেখকের মতামত: প্রথম আলোর মত ইসলাম-বিদ্বেসী পত্রিকার সত্যপন্থীদের বিরুদ্ধে খবর অথবা অত্যাচারী শাসকবৃন্দের মিথ্যাচার এর মাঝে অন্তর্গত)
.... হে ঈমানদাগণ, বেশী ধারণা ও অনুমান করা থেকে বিরত থাকো কারণ কোন কোন ধারণা ও অনুমান গোনাহ৷ দোষ অন্বেষন করো না৷ আর তোমাদের কেউ যেন কারো গীবত না করে৷ এমন কেউ কি তোমাদের মধ্যে আছে, যে তার নিজের মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করবে ? দেখো, তা খেতে তোমাদের ঘৃণা হয়৷ আল্লাহকে ভয় করো৷ আল্লাহ অধিক পরিমাণে তাওবা কবুলকারী এবং দয়ালু৷**
(সুরা হুজরাত - নির্বাচিত আয়াত)
(**লেখকের মতামত: যেমন: নিখুত প্রমান ছাড়া - কারো অপপ্রচারে ইসলামপন্থীদের '৭১ এর হত্যাকারী, ধর্ষক, লুটকারী, ইত্যাদি অপনাম অনুমান করে বিশ্বাস করা - এর অন্তর্ভুক্ত! অবশ্য যুগে যুগে ইসলামপন্থীদের উপর আল্লাহর শত্রুদের অপপ্রচারের খরগহস্ত নেমে এসেছিল!
দেখুন:
Click this link
)
মজার ব্যপার, এসব বধির লোকদের উদাহরণ মহানবী (দ) এর সময়েও ছিল (সূত্র: ইমাম সালাবি, লাইফ অফ প্রফেট) !
একবার মহানবী (দ) কোরায়েশদের বিশিস্ট লোকদের ইসলামের দাওআত দিলেন এবং তারা সব যুক্তি প্রত্যাখান করে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর 'আব্দুল্লাহ ইবনে উমাইয়া' একা ফিরে এলো। মহানবী (দ) প্রথমে বেশ খুশি হলেন। কিন্তু পরক্ষনেই ঐ লোক এক আশ্চর্য কথা বলল:
" আপনি যদি আসমান থেকে চারজন ফেরেস্তা নামাতে পারেন - তাদের নিয়ে যদি আপনি আমার চোখের সামনে আপনি আসমানে যেতে পারেন - অতপর আল্লাহ থেকে যদি স্বাক্ষর নিয়ে আসেন যে 'আপনি তার প্রেরিত পুরুষ' - এবং তারপর তা আমাকে যদি দেখান ও -- তবুও আমি আপনাকে বিশ্বাস করব না - তবুও আপনাকে বিশ্বাস করব না ।"
এরা হলো 'বধির'! মিথ্যাবাদী জাতির মাঝে অবস্থিত এক প্রজাতি! সকল সময় ও অঞ্চলে এদের বিচরণ! আপনি কি আপনার চারপাশে 'বধিরদের' দেখেন না? বিভিন্ন রকম বধির দেখা যায়।
তবে এতে করে মানুষের বুঝানো ছেড়ে দিব - তা কিন্তু নয়।
মানুষ মাত্রই আপনার সত্য-যুক্তি তুলে ধরতে হবে। করুনাময়ের সাহায্য কামনা করতে হবে যেন শ্রোতার 'বোধ-শক্তি' খুলে যায়। অন্তকরণ সত্তালোকে উদ্ভাসিত হয়। নুহ (আ) দীর্ঘ সময় মানুষের অন্তকরণ আলোতে উজ্জীবিত করতে পরিশ্রম করে গিয়েছেন -- সুদীর্ঘ ৯৫০ বছর! কে 'বধির' বা কে নয় - তিনি বিচার করেননি -- নিরত যুক্তি দিয়েই গিয়েছিলেন আর প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন।
... আর তাই এত কিছুর ভিড়েও ভালো মানুষ ও ছিটেফোটা আকারে দেখা যায়। যারা মিথ্যার বেড়াজাল ভাঙ্গতে দিন-রাত প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়। এদের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়াশীল হয় - মিথ্যাশ্রয়ী শাসক, তাদের গৃহপালিত বুদ্ধিজীবী আর প্রচার-মাধ্যম। আর কিছু বধির প্রজাতি! অত্যাচার চালায় - মিথ্যা অপবাদে জর্জরিত করে। তবু এরা মিথ্যার প্রতিবাদ জানায়। আশার আলো খুঁজে বেড়ায়!
বিষয়: বিবিধ
১৫০৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন