সাইকো (পর্ব ৪)

লিখেছেন লিখেছেন ড: মনজুর আশরাফ ০৫ নভেম্বর, ২০২৪, ০৭:৪৫:০৬ সন্ধ্যা

-১-



শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে এসেছে বউ। পরিপাটি শাড়ি পরা, সুন্দর চেহারা—কিন্তু আর কোনো গুণ আছে কিনা কেউ জানে না। অহংকারে ভরা মনোভাব। প্রফেশনালি কোনো কাজে যুক্ত নয়, তবে স্বামীকে চাকরের মতো খাটাতে বেশ পারদর্শী। টাকা, টাকা, আর টাকা—এই একমাত্র জীবনের উদ্দেশ্য। শো-অফ আর অহংকারই যেন একমাত্র সম্বল।

অহংকার করা তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে; অন্যকে তুচ্ছ করা আর নামাজ পড়া তার কাছে সমার্থক। বোঝেই না, এই শো-অফ যে শিরকের পর্যায়ে পড়ে, আর মানুষকে তুচ্ছ করা যে এক বড় অহংকার।

আর শিরক যার মধ্যে থাকে, তার অন্য ভালো কাজের কোনো মূল্য থাকে না।

ছেলের মা খাবার রান্না শেষ করেছে, খাবার বেড়ে দিচ্ছে, আর বউ পরিপাটি হয়ে বসে আছে, যেন কোনো শো-পিস।

'কি বউ মা, খেতে আসো!'

ননদের দিকে তাকিয়ে বউ বলল, 'মাটির ফ্লোরের ঘরে আমি খেতে পারব না। টিউবওয়েলের পানিও ভরসা করতে পারি না।'

মা অনেক পদের রান্না করেছে।

বউয়ের স্বামী তথা ছেলে বলল, 'মা, আমরা কিন্তু হোটেলে থাকব।'

'তাহলে বাবা, ঘরটা পাকা করে দিলেই তো পারো।'

বউ তখনই চোখের ইশারা করল।

ছেলে অন্য প্রসঙ্গ টেনে বলল, 'মা, আমি তো তোমাকে ঢাকাতেই নিয়ে যাব।'

মা ভাবছেন, ছেলে গত বিশ বছর ধরে বলে আসছে, 'মা, আমি তোমাকে ঢাকার বড় বাড়িতে নিয়ে যাব,' কিন্তু তা আর হয়ে ওঠে না।

নদীর পানি গড়িয়ে গেছে বিশ বছর ধরে।

মায়ের চোখের কোণ বেয়েও পানি গড়িয়ে পড়ল।

- ২ -

মেয়েটি গান শুনছে:

"প্রেম নদীতে ঝাঁপ দিও না সই গো সাঁতার না জেনে ও তুমি

প্রানে নাহি বাঁচিবা ডুবিয়া মরিবা

ভাসিয়া যাইবা শেষে স্রোতের টানে

প্রেম নদীতে ঝাঁপ দিও না"

আজ তার বিয়ের দিন।

সে জানে না এই বিয়ের পর কোথায় যাবে জীবন।

বাবা-মায়ের কথায় রাজি হয়েছে, বিয়ের পথ ধরে চলেছে সে।

কিছুদিন পর মেয়েটি আবিষ্কার করে:

সে এমন এক স্বামীর কাছে বন্দী, যার প্রশ্রয়ে শ্বশুরবাড়ির সবাই তার উপর চালায় অত্যাচার।

ভয়ংকর কালো রাত নামে—মেয়েটি একা একা লড়াই করে।

তার চারপাশে ভয়ংকর মানুষের ভিড়—

ধর্মের নামে অধর্মের কারবার!

ধর্ম ও অধর্ম যেন একাকার, প্রকৃত মানুষ সেখানে নেই।

মেয়েটির মনে প্রশ্ন জাগে—

সে কি নিজেও 'সাইকো' হয়ে যাচ্ছে এই সাইকোদের মাঝে থাকতে থাকতে?

গাড়ি ছুটে চলে। মেয়েটি গাড়িতে গান ছেড়ে দেয়:

"শোনায়ে লোভের বুলি

নেবে না কেউ কাঁধের ঝুলি

ইতর আতরাফ বলি

দূরে ঠেলে নাহি দেবে।

আমির-ফকির হয়ে এক ঠাঁই

সবার পাওনা পাবে সবাই

আশরাফ বলিয়া রেহাই

ভবে কেহ নাহি পাবে।

ধর্ম কুল গোত্র জাতির

তুলবে না গো কেহ জিগির।

কেঁদে বলে লালন ফকির

কে মোরে দেখায় দেবে।

এমন মানব সমাজ কবে গো সৃজন হবে...!!"



বিষয়: বিবিধ

৪২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File