সাইকো (৩)

লিখেছেন লিখেছেন ড: মনজুর আশরাফ ৩০ অক্টোবর, ২০২৪, ০৬:৪৬:৪৯ সন্ধ্যা

-১-



লোকটি সরু চোখে তাকিয়ে আছে।

তার বউয়ের দিকে।

হাতে বেল্ট।

মা বলেছে বৌকে শাসন করতে।

তাই হাতে বেল্ট।

ছেলের মায়ের সাথে বৌয়ের হালকা তর্ক - সেখান থেকে মায়ের শাসন।

লোকটি মা ভক্ত তা কিন্তু না।

লোকটি নির্বোধ।

লোকটির নিজস্ব ভাল মন্দ যাচাই করার গুণ নেই।

লোকটির সাথে তার ছোট বাচ্চার (ক্লাস ৭) কোন কথা নাই - আব্বু বলে সম্বোধন নাই.

কারন বাচ্চার সামনে মা কে অনেক মেরেছে আগে লোকটি।

একবার অজ্ঞান ও করেছে মেরে।

তাই বাচ্চা বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে দু:খে।

লোকটি সাথে পশুর কোন তফাৎ আছে কি?

লোকটি কোন প্রফেশনাল কাজ করে তা কিন্তু না.

লোকটি মায়ের ভক্ত।

কিন্তু মা যে লোকটিকে ভালবাসে তা না।

মা লোকটিকে কি পোষা কুকুরের মত ই ব্যবহার করে?

হয়ত মা লোকটিকে ফার্মের মুরগি বানিয়েছে ৩০ বছর

তারপর বিয়ে দিয়েছে।

বৌ টিও বুঝে উঠতে না উঠতে বাচ্চা নিয়ে নিয়েছে।

বৌটি এখন পশুরূপী লোকটির সাথে সংসার করছে।

"আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতর অবয়বে।

অতঃপর তাকে নামিয়েছি নীচ থেকে নীচে" (সূরা ত্বীন)

-২-

বৃদ্ধ লোকটির তিন ছেলে।

কঠিন মানুষ তিনি।

এ বাসায় তার আদেশ চলে কেবল।

তার দুই বাচ্চাকে একেবারে অনুগত বাচ্চা বলতে পারলেও একজনকে পারেনি।

তার মেঝো ছেলেটি ড্রাগস্ নেয় দুই দিন পর পর.

দুই ভাই আর বাবা মিলে কড়া শাসন চালায় ওই মেঝো ছেলের উপর।

কয়েকবার রিহ্যাব থেকেও নিয়ে আসা হইসে ছেলেকে।

বৃদ্ধ মানুষটি একটি ইসলামী দলের বিশিষ্ট নেতা।

রূঢ় আচরণের জন্য টপ পজিশন না পেলেও ধান্দাবাজি বিষয়ক কাজে ও লিয়াজোঁ জাতীয় কাজে দক্ষতার জন্য সে আবার ওই দলের আমিরের বিশিষ্ট ডান হাত সে।

অনেকে পছন্দ না করলেও কিছু যায় আসে না।

সবাই আমীরের অন্ধ ভক্ত।

সেই সুবাদে সেও দলের বিশিষ্ট সন্মান-ভোগী ব্যক্তিত্ব।

লোকটি আজ রাতে প্ল্যান করছে মেঝো ছেলেকে কড়া শাসন করবেন।

গাড়িতে ফিরতে ফিরতে ড্রাইভারকে বলল: 'সালাম, ইনজেকশন নিয়েছো তো -- ছেলেকে শক্ত করে ধরে রাতে ইনজেকশন পুশ করতে হবে - তারপর রুম তালাবদ্ধ রাখতে হবে.

"স্যার, রিহ্যাবে নেন। এ কাজ কইরেন না' - ভয়ার্ত কন্ঠে সালাম বলল।

'আমি যা বলছি তাই হবে."

** ** **

তিনি বাথরুমে মুখ ধুচ্ছেন।

আর এক ঘন্টা পরে ছেলের রুমে যাবেন সবাইকে নিয়ে।

শাসন চালাবেন - ইনজেকশন পুশ করবেন।

আধো আলো আধো অন্ধকার পাশের বেড রুম।

বৃদ্ধ বউ থাকে নিচ তলায় ছোট একটি রুমে।

উপরে কদাচিৎ আসার অনুমতি পায় বউ।

হটাৎ তিনি অনুভব করলেন কেউ তার বেড রুমে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছে।

নিঃশব্দ।

চমকে উঠলেন।

তার মেঝোছেলে!

'বাবা তুমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে কেন?'

ছেলে নিরুত্তর।

ছেলের হাতে কি?

আলোর চিলিক উঠল হাতের ধারালো অস্ত্রে।

বৃদ্ধ লোকটির হটাৎ মনে পড়ছে প্রায় ৩০ বছর আগের কথা.

নিজের বাবার গলায় চাপ দিয়ে ধরে বলেছিল - 'সাইন দে! আমাকে সব লিখে দে!'

জোর করে আদায় করেছিল বাবার থেকে সব কিছু!

সম্পত্তি নিজের নাম লিখে নেয়ার দিন-শেষে রাতের ঘটনা।

অনেক ঝক্কি নিয়ে অনেক যুদ্ধের পর সম্পত্তি নিজের নাম লিখে নিয়েছিল লোকটি।

সব ভাইবোন দের চির-বঞ্চিত করে।

আজ ৩০ বছর পর কি একই রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে যাচ্ছে?

অথবা আরও কঠোরতর প্রকৃতির কোন প্রতিশোধ?

তার মেঝো ছেলে ধারালো অস্ত্র হাতে বাবার দিকে এগিয়ে আসছে।

"আমার পালনকর্তা ভুল করেন না এবং ভূলেও যান না" (কাসাস: ৫২)



-৩-

মহিলাটি ওঝার মাধ্যমে বান করেছে।

একটি পরিবারের স্বামী আর স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ ঘটানোর ইচ্ছায়।

মহিলাটি র নামাজের ওয়াক্ত মিস হয়ে যাচ্ছিল ওঝার বেশি সময় লাগাতে!

একটি চিরকুট ছেলের বালিশে ভরে দিতে হবে।

খাবারও ওঝার থেকে পড়ে নিয়েছে।

সে খাবার খাওয়াতে হবে।

খাবার খেলে পেট খারাপ হবে নিশ্চিত - তাতেই কাজ হয় শুরু হবে।

অধার্মিক ছেলে হওয়ায় রক্ষা - ব্ল্যাক ম্যাজিক দ্রুত কাযে করবে।

এ নিয়ে ওই মহিলার তৃতীয় বান মারার প্রক্রিয়া।

উদ্দেশ্য সম্পত্তি নিজের লোকদের আয়ত্বে আনা।

লিফ্ট বেয়ে ফ্লোরে ওই মহিলা ঢুকতে ই দেখে হাতে বেল্ট নিয়ে লোকটি তার বৌয়ের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে প্রায়।

মহিলাটি মনে মনে খুশি ই হল।

চিৎকার দিয়ে বলল -

'কি অসভ্য মেয়ে আজকাল। এটি খারাপ আচরণ করে যে স্বামী মারতে বাধ্য হয়।

চিৎকার দিয়ে বলল -

'থাক বাবা ওকে বেশি মেরোনা' --

.... মারপিট চলতে থাকে।

** ** ** ** **

মহিলাটি ছাদে চলে যায়।

চাঁদের বাগানে বেলি ফুল ফুটেছে - দারুন গন্ধ।

কি সুন্দর বাতাস।

এত শান্তি।

গুন্ গুন্ করে গান ধরেছে মহিলাটি।

মোবাইলে তখনই একটি মেসেজ এলো --

তার স্বামীর ম্যাসেজ।

'আমি তোমাকে ডিভোর্স দিয়েছি -

ডিভোর্স লেটার পোস্ট করেছি -

আমি একজনকে বিয়ে ও করেছি;

আমার বাসায় আসায় তোমার নিষেধ এখন থেকে -

জিডি করেছি ইতোমধ্যে!'

সূর্য ডুবে যাচ্ছে।

সাদা মেঘেরা একদিকে ভয়ংকর কালো রং ধারণ করেছে।

থমথমে পরিবেশে রাতের আগমনী বার্তা!



** ** ** ** ** **

"তোমাদের উপর যেসব বিপদ-আপদ পতিত হয়, তা তোমাদের কর্মেরই ফল.." (৪২:৩০)

-৪-

তিনি সুন্দর তোপ পড়েছেন - দুধ-সাদা রংয়ের - চমৎকার টুপি - দামি পারফিউম।

তিনি নিজেকে ইসলামী আন্দোলনের নগন্য কর্মী বলেন -

যদিও একেবারে টপ পদে তার অবস্থান।

হয়ত এটা তার অমায়িকতা। এভাবেই কথা বলেন - মধুময় হাসির সাথে।

তিনি আমাকে বললেন: "ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ) বলেছেন,

.

"যেকোনো যুগে তুমি যদি সঠিক ইসলামপন্থী দলটি খুঁজে না পাও, তাহলে চিহ্নিত ইসলামবিদ্বেষী এবং ইসলামের পরীক্ষিত শত্রুদের দিকে তাকাও। দেখো, তারা কোন দলটির প্রতি সবচেয়ে বেশি ক্ষিপ্ত।""

আমি তাকে বললাম - "আপনাকে একটি কথা বলি কিছু মনে না করলে।"

বলুন।

আমি ইমাম ইবনে তাইমিয়ার বিরাট ফ্যান। কিন্তু তার এই কথায় একটি বিশেষ দৃষ্টিকোণ আছে! হয়ত ব্যাতিক্রমী বিষয়ও আছে।

'আপনার দলের প্রতি যদি বিশ্ব মোড়লরা সবচেয়ে ক্ষিপ্ত থাকত, তাহলে আপনার দলের মানুষেরা কি এরকম হাই ফাই লাইফ কি লিড করতে পারতেন?

লাক্সারি গাড়ি কি চালাতে পারতেন?

লাক্সারি বাড়ি কি করতে পারতেন?

সিকিউরিটি ফোর্স আপনাদের প্রতি মুহূর্ত খুঁজত!'

তিনি সরু চোখে তাকিয়ে আছেন।

বললাম: আরেকটা ফ্যালাসি আছে।

আইসিস তো বিশ্ব মোড়ল দের বানানো ক্রিমিনাল তালিকায় টপে -- তাহলে আপনি কি ঐদিকে যাবেন? সঠিক দল মনে করে?

তিন নম্বর ফ্যালাসি হল: 'দল' করাই তো ইসলামে জায়েজ নয়! এটি বিতর্কিত বিষয়।

তাই আমার কাছে 'দলের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি জিনিস মনে হয় --

দুইটা হাদিস আমার কাছে খুব প্রাসঙ্গিক মনে হয়।

কাব ইবন মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত: আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, "দুইটি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘ একটি ভেড়ার পালকে যা ক্ষতি করতে পারে, তার চেয়েও বেশি ক্ষতি একজন মানুষের ধন-সম্পদ এবং উচ্চ মর্যাদার প্রতি লোভ তার দ্বীনের জন্য করতে পারে।"

সূত্র: সুনান আত-তিরমিযী ২৩৭৬

আর আরেকটি হাদিস হল:

ঈমানদার মানুষ সরল ও ভদ্র হয়। পক্ষান্তরে পাপী মানুষ ধূর্ত ও হীন চরিত্রের হয়’

(তিরমিযী হা/১৯৬৪; মিশকাত হা/৫০৮৫)

এখন চিন্তা করুন:

আপনি ধন-সম্পদ আর ক্ষমতার লোভ মুক্ত, সরল, ভদ্র মানুষ আপনার দলে কয়জন খুঁজে পান?

দল বাদ দিন, আপনি জীবনে খুব ভাল মানুষ কয়জন পেয়েছেন? বিশেষ করে ফিনান্সিয়াল ডিলিংস করার পরও !

অথবা এমন কয়জনকে পেয়েছেন আপনার দলে যারা তাদের সন্তানদের ইসলাম শেখাতে চান একেবারে মাদ্রাসা বা বিশ্ব বিদ্যালয়ে অথবা অন্য কোন ফর্মাল উপায়ে?

নাকি সে তার সন্তান দুনিয়াবী টপ ক্যারিয়ার করুক ও টাকার পাহাড় গড়ুক আর সেটাকে একমাত্র আসল স্বার্থকতা বলেই সন্তুষ্ট থাকতে চায়?

যদি এমন মানুষ না পান, তাহলে এত দলে জনবল নিয়ে কি কোন লাভ হবে?

তিনি বললেন: 'ভাই আপনি রাখুন। আমার দলে ভাল মানুষ অনেক আছে।

আমরা পূর্ণাঙ্গ ইসলাম অনুসরণ করি - অন্যরা খেদমতে দ্বীন করে - যা পূর্ণ ইসলাম নয়!!

যাই হোক আল্লাহ আমাদের সবার মঙ্গল করুন। আসসালামু আলাইকুম।

** ** ** **

তিনি চলে যাচ্ছেন।

আমি ভাবছি - তিনি হয়ত সঠিকও হতে পারেন।

আমি দোয়া করছি - আল্লাহ আমাদের সবাইকে ক্ষমা করুন - সবার ভিন্ন ভিন্ন পথ কবুল করে নিক।

তিনি তো মহীয়ান - তিনি চাইলে সবাইকে ক্ষমা করে দিতে পারেন মুহৃর্তে।

"যদি আপনি তাদেরকে শাস্তি দেন, তবে তারা আপনার দাস এবং যদি আপনি তাদেরকে ক্ষমা করেন, তবে আপনিই পরাক্রান্ত, মহাবিজ্ঞ।

(সূরা মায়িদা: ১১৮)

বিষয়: বিবিধ

২৯৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File