ঈদের ভালবাসা ২০১৮
লিখেছেন লিখেছেন ড: মনজুর আশরাফ ১৭ জুন, ২০১৮, ০৬:৪৫:০৩ সকাল
নদীর বুকে নৌকা ভাসে। সে সাথে স্বপ্ন ভাসে। দূরে লঞ্চের সিঁড়ি দেখা যাচ্ছে। লোকদের লাইন।লঞ্চে উঠছে। সে লাইনে আব্বু দাড়িয়ে আছে। পাঞ্জাবি পড়া, ঘন কাল চুল। দেশ থেকে ঢাকা ফিরব। ত্রিশ বছরের বেশি আগের কথা! দাদুর ভালবাসা, চাচা-চাচি-দের আদর, কাজিনদের সাথে আড্ডা-খেলাবাজি আর প্রাণবন্ত ভালবাসার স্মৃতি নিয়ে ফিরছি!
ঈদের দিন আমার অন্ধকার ঘরের অন্ধকার মন আলোয় ভরে যায় আত্মার আত্মীয়দের স্মৃতি কে ঘিরে। অনেক দূরের দেশে থেকেও তাদের সবাইকে কাছে নিয়ে বসি। গল্প জমাই। মধুর স্মৃতিচারণ করি।
** **
শেষ রোজার বিকেল থেকেই অনেকের মন খারাপ হওয়া শুরু হয়। মন ভেঙে বৃষ্টি ঝড়ে অন্তঃলোকে। অব্যক্ত বেদনা পরিবর্তিত-লাল-আকাশের সাথে অনুরণিত হতে থাকে। হজ্বের আরাফার দিনের শেষ বিকেলের সাথে এঁর মিল খুঁজে পাই। এই দুই সময় যেন এক যমজ সন্তান! একই রকম। পরম করুণাময়ের কাছে অসহায় বান্দাহদের শেষ মুহূর্তের বেদনাবিধুর প্রত্যাশা!
আমি কিভাবে আনন্দ করব সেই রাতে? তারপরও করুণাময় এক অদ্ভুত আনন্দে হয়ত বান্দাহদের মনকে ভরে দিতে থাকেন যেন সেই রাত থেকেই!
** **
চাচীর সাথে কথা বলছি ফোনে। মাত্র ২২ বছরে বিধবা হওয়া, তারপর ৪০ প্রায় বছর ধরে এক হাতে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠিত ছেলেমেয়ের সফলতায় গর্বিত চাচীর সাথে কথা বলার এক অব্যক্ত আনন্দ অনুভব করি। আমার অনেক ভুলে যাওয়া গল্প তার মুখে শুনে আশ্চর্য হই। ভালবাসার উপাখ্যান খুঁজে পাই। এই যেন আমার ঈদের সফলতা!
** **
আম্মুকে ফোনে বলছি আব্বুকে ফোন দিতে। এখন আব্বু ঘুমিয়ে আছে। বিরক্ত হতে পারে। বকা দিতে পারে।
কিন্তু আমি তার বকা খেতে চাই। আমার অন্তঃকরণ সে বকা শোনার জন্য পাগল হয়ে আছে। আমি জানি সে বকা আমার শুকনো হৃদয়ে ভালবাসার বৃষ্টি ঝরাবে! সিক্ত করবে হৃদয়ের পথঘাট!
আমি ভুলে যাই যখন আব্বু কথা শুরু করে। যা মনে মনে প্রস্তুত ছিল সব ভুলে যাই।
‘আব্বু আমি রোজায় দোয়া করেছি যেন আমরা সবাই একসাথে জান্নাতে থাকতে পারি। এ একটাই দোয়া!’
** **
বৃষ্টির রাতে গাড়ি চলছে দ্রুতবেগে।
আঁধার রাতের চুল বেয়ে ঈদের ভালবাসার রশ্মি নেমে আসে যেন। ব্যাক মিররে আমার মেঝো মেয়ের উদাস মুখ দেখি। আব্বুর সাথে সারাদিন ঘুরে ক্লান্ত সে। এই মেয়েটি মায়ের সামনেই সাহসের সাথে বলতে পারে, ‘আমি আব্বুর মেয়ে, আর কারো না!’
প্রকৃতি সব প্রতিদান দেয়। আব্বুর ঘ্রাণ পাওয়ার জন্য তার শার্ট পরতাম ছোটবেলায়। আর এখন তিন ভাইয়ের মধ্যে একমাত্র আমারই আব্বুর শার্ট ঠিক মত গায়ে লাগে!
হটাত মনে হচ্ছে তারাবীহের তেলাওয়াত খুব মিস করছি এ রাতে!
ওমর হিসাম আল আরাবির সুরেলা তেলাওয়াত ছেড়ে দিলাম।
ছেলেটির এক একটি সুরার তেলাওয়াতের সুর একেক রকম। এরকম ভিন্নতা আর অন্য কোথাও শুনিনি!
ত্রিশ দিন তারাবীহের নামাজে স্রস্টা কথা বলেছেন – তার বান্দাহ রা তা শুনেছে। বুঝুক বা নাই বুঝুক! ভালবাসার মোহে সারাদিনের কাজের কষ্ট শেষে কয়েক ঘণ্টা তাঁরা নামাজে স্রস্টার কথা শুনেছে। আমার মনে হচ্ছে আজ পরম করুণাময় সেই বান্দাহদের মনের কথা শুনবেন! অবশ্যই শুনবেন।
বৃষ্টির বেগ বাড়ছে! গাড়িও হাই ওয়েতে উড়ে চলছে! শক্ত হাতে স্টিয়ারিং ধরে রাখি।
তবু এক অজানা ভালবাসা আর অতীত স্মৃতি চোখকে ঘোলা করে দিচ্ছে বারবার!
বিষয়: বিবিধ
৯৫৬ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন