ধর্মান্ধতা
লিখেছেন লিখেছেন ড: মনজুর আশরাফ ০৭ মে, ২০১৮, ০৮:১৮:৩২ রাত
খারেজীরা ছিল ইসলামের দ্বিতীয় প্রজন্মের মানুষ যারা রাসুলুল্লাহ্ র (স) ইন্তেকালের পর ইসলাম গ্রহণ করেছিল। এদের প্রায় সকলেই ছিল যুবক। অত্যন্ত ধার্মিক, নিষ্ঠাবান ও আবেগি। সারারাত তাহাজ্জুদ আদায়, সারাদিন জিকির ও কুরআন পাঠে অভ্যস্ত হওয়ায় এদের 'কুররা' বা কুরাআন পাঠকারি বলা হত।
এদের দাবি ছিল 'একমাত্র কুরআনের আইন ও আল্লাহর হুকুম ছাড়া কিছুই চলবে না।' আল্লাহর আদেশ হল অবাধ্যদের বিরুদ্ধে লড়তে হবে।
তাদের মতে মুয়াবিয়ার দল সীমা লঙ্ঘন কারি, কাজেই তাদের আত্ম সমর্পণ না করা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে সুরা হুজুরাতের আয়াত ৯ কে উল্লেখ করে তারা নিজেদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী।
আবার আরেক আয়াতের উল্লেখ করে (বিধান শুধু আল্লাহরই) আর 'আল্লাহ যা নাজিল করেছেন তা অনুযায়ী যারা বিধান দেয় না তারা কাফির' - এও নিজেদের মত সুবিধাজনক ব্যাখ্যা দিয়ে আলী (রা), মুয়াবিয়া (রা) ও তাদের অনুসারী সবাইকে 'কাফির' আখ্যা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা দেয়।
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) খারেজীদের বুঝাতে থাকেন যে কুরআন ও হাদিস বুঝার ব্যাপারে সবচেয়ে পারঙ্গম হচ্ছেন রাসুলুল্লাহ(স) এঁর আজীবনের সহচর সাহাবীগণ। কুরআন ও হাদিসের যে ব্যাখ্যা তোমরা বুঝেছ বা ধারনা করেছো তা সঠিক নয়। বরং সাহাবীদের ব্যাখ্যাই সঠিক।
এতে অনেকে খারেজী দলত্যাগ করলেও বাকিরা সাহাবীদের দালাল, অন্যায়ের আপোসকারী গালাগাল দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ইসলাম প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে যেতে থাকে।
খারেজীরা আবেগি যুবকদের বুঝাতে থাকে আপোসকামিতার মাঝে হক্ক প্রতিষ্ঠিত হয়না। কাজেই দ্বীন প্রতিষ্ঠায় যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে। ৩৭ হিজরিতে তাদের সংখ্যা ৩/৪ হাজার ছিল মাত্র (আলী (র) এঁর দল ত্যাগের সময়)। আর এক বছরের মাথায় নাহাওয়ান্দের যুদ্ধের সময় তাদের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৫ হাজারে এদের প্রোপাগান্ডা আর আবেগী ভুল ব্যাখ্যায়!!
ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য এদের সংগ্রাম ছিল অত্যন্ত আন্তরিক। আরবি সাহিত্যে এদের কবিতা ইসলামী জজবা ও জিহাদি প্রেরণার অতুলনীয় ভাণ্ডার। এদের বাহ্যিক ধার্মিকতা ও সততা ছিল অতুলনীয়। রাতদিল নফল সালাতে দীর্ঘ সিজদায় এদের কপালে কড়া পড়ে গিয়েছিল। তাদের তাঁবুর পাশ দিয়ে গেলে শুধু কোরআন তেলায়াতই ভেসে আসত। কুরআন পাঠ করলে বা শুনলে তারা আল্লাহর ভয়ে, আখেরাতের ভয়ে ও আবেগে কাঁদতে কাঁদতে বেহুঁশ হয়ে যেত।
পাশাপাশি এদের হিংস্রতা ও সন্ত্রাস ছিল ভয়ঙ্কর। অনেক নিরপরাধ অযোদ্ধা সহ হাজার হাজার মুসলমানের প্রাণ নষ্ট হয় এদের হিংস্রতা ও সন্ত্রাসের কারণে।
** ** **
খারেজী আব্দুর রহমান ইবনু মুলজিম ৪০ হিজরিতে রামাদানের ২১ তারিখে ফজর সালাতের পূর্বে আলী (র) যখন বাড়ি থেকে বের হন, তখন বিষাক্ত তরবারি দ্বারা তাকে আঘাত করে। আলীর (র) শাহাদাতের পর উত্তেজিত সৈন্যরা যখন ইবনু মুলজিমের হস্তপদ কর্তন করে তখন সে মোটেও কষ্ট প্রকাশ করেনি বরং আনন্দ প্রকাশ করছিল। কিন্তু যখন তার জিহ্বা কর্তন করতে চায়, তখন সে অত্যন্ত আপত্তি ও বেদনা প্রকাশ করে বলে, 'আমি চাই যে, আল্লাহর জিকির করতে করতে আমি শহীদ হব!'
তার কিছুদিন পর এক খারেজী কবি ইবনু হিত্তান লিখে, 'কত মহান ছিলেন সেই নেককার মুত্তাকী মানুষটি যিনি মহান আঘাতটি করেছিলেন। তাতে আরশের অধিপতির সন্তুষ্টি ছাড়া আর কিছুই তিনি চান নি। আমই প্রায়ই তাকে স্মরণ করি এবং মনে করি আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি সওয়াবের অধিকারী মানুষ তিনিই' ( অর্থাৎ আলী(র) এঁর হত্যাকারী! )।
** ** **
আলী (রা) ও অন্যান্য সাহাবারা খারেজীদের নিষ্ঠা ও ধার্মিকতার জন্য এদের প্রতি অত্যন্ত দরদ অনুভব করতেন। উগ্রতার পথ থেকে ফিরিয়ে নিতে তাঁরা আপ্রাণ চেষ্টা চালান। কিন্তু সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
আলী(র)কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, 'এরা কি কাফির?'
তিনি বলেন, 'এরা তো কুফরি থেকে বাচার জন্যই পালিয়ে বেড়াচ্ছে।'
প্রশ্ন করা হয়, 'এরা কি মুনাফিক?'
তিনি বলেন, 'মুনাফিকরা খুব কমই আল্লাহর জিকির করে। আর এরা তো দিনরাত আল্লাহর জিকির করছে।'
জিজ্ঞাসা করা হয়, 'তাহলে এরা কি?'
আলী (র) বলেন, 'এরা বিভ্রান্তি ও নিজ-মত পূজার ফিতনায় লিপ্ত হয়ে অন্ধ ও বধির হয়ে গিয়েছে!'
** ** **
একই সময় বারে বারে ভিন্ন মাত্রায় এভাবেই ফিরে আসে!
( মরহুম ডঃ আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরের ইসলামী আকিদা বই অনুসারে লিখিত)
বিষয়: বিবিধ
১০৬৯ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
চমৎকার/
মন্তব্য করতে লগইন করুন