নাস্তিকতা (৯)ঃ কোরআন একটি মিরাকল! [প্রথম পর্ব]

লিখেছেন লিখেছেন ড: মনজুর আশরাফ ০৪ জানুয়ারি, ২০১৫, ০৩:২৩:১০ দুপুর

কোরআন যে একটি মিরাকল, এবং সংশয়বাদীরা এ বিষয়ে যে সন্দেহ পোষন করে তাকে সংক্ষেপে দুই পয়েন্টে ব্যখ্যা করা যায়:

প্রথমত: মিরাকল সমূহ, যা অতি-প্রাকৃত বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত, এ পৃথিবীতে ঘটে থাকে। দ্বিতীয়ত: কোরআন এমনই একটি মিরাকল।

দ্বিতীয় বিষয়টি প্রমান করা গেলে প্রথম বিষয়টি অটোমেটিক প্রমাণিত হবে।

এজন্যই কোরআন বিশ্ববাসীর সম্মুখে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে কোরআনের মত কোন গ্রন্থ উপস্থাপন করতে - যা মূলত উপরের দুইটি বিষয়ই প্রমান করে।

কিভাবে একটি মিরাকল ঘটে? যা মূলত 'কার্যকারন-ফলাফলের' পরিচিত, প্রচলিত ও সকলের কাছে প্রমাণিত প্রকৃতি-ব্যবস্থার বিপক্ষে দাড়িয়ে! কোরআন দুই স্তরে বিষয়টি ব্যখ্যা করে:

প্রথম: মিরাকল একটি বাস্তবতা। কোরআন এমন ই একটি বাস্তবতা যা প্রকারান্তরে মিরাকলের বাস্তবতারই প্রমান দেয়। পরন্তু বিরোধীদের কাছে এ বাস্তবতা মিথ্যা প্রমানের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় - এভাবে সত্যতাই প্রমান করে;

দ্বিতীয়: মিরাকলের বাস্তবতা কি? কিভাবে এ পৃথিবীতে এমন একটি জিনিস সংঘটিত হয় যা প্রকৃতির বিশ্বজনীন নিয়ম তথা 'কার্যকারন-ফলাফলের' নিয়মের বিরুদ্ধে?

কোরআনের মিরাকল:


"নি:সন্দেহে কোরআন একটি নিরত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে কাল, পাত্র, অঞ্চল ছাড়িয়ে - যা প্রকারান্তরে নিজকে মিরাকল হিসেবে ই উপস্থাপন করে।

মাক্কী এবং মাদানী সময়ের অনেক আয়াতে ই এ চ্যালেঞ্জ এসেছে। যা দেখায় যে, এ গ্রন্থ নিজে ই একটি মিরাকল, অতি-প্রাকৃত চিহ্ন।

একটি চ্যালেঞ্জ হল:

"আর যে কিতাবটি আমি আমার বান্দার ওপর নাযিল করেছি সেটি আমার কিনা- এ ব্যাপারে যদি তোমরা সন্দেহ পোষণ করে থাকো তাহলে তার মতো একটি সূরা তৈরি করে আনো এবং নিজেদের সমস্ত সমর্থক গোষ্টীকে ডেকে আনো –এক আল্লাহকে ছাড়া আর যার যার চাও তার সাহায্য নাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও তাহলে এ কাজটি করে দেখাও ৷" (২:২৪)

এটা লক্ষ্যনীয় যে, এ আয়াত মুহাম্মদ (স) এর নবুয়তের প্রমানার্থে কোন বক্তব্য দেয় না; বলে নাই যে, "তোমরা যদি আমার বান্দাহর নবুওতে সন্দেহ পোষন কর। .."এর পরিবর্তে বলে, "আর যে কিতাবটি আমি আমার বান্দার ওপর নাযিল করেছি সেটি আমার কিনা- এ ব্যাপারে যদি তোমরা সন্দেহ পোষণ করে থাকো।.."

এভাবে প্রতিটি চ্যালেঞ্জ-এর লক্ষ্য এটা প্রমান করা যে, কোরআন আল্লাহ প্রদত্ত একটি অতি -প্রাকৃত মিরাকল। যখন এই সত্যটি প্রমাণিত হবে তখন ই নবযুতের প্রমানও অটোমেটিক প্রতিষ্ঠিত হবে।

আয়াতসমূহের চ্যালেঞ্জ অবস্থান ও পাত্রভেদে ভিন্নতর। সাধারনভাবে সবার জন্য যে আয়াতটি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে:

"বলে দাও, যদি মানুষ ও জিন সবাই মিলে কুরআনের মতো কোনো একটি জিনিস আনার চেষ্টা করে তাহলে তারা আনতে পারবে না, তারা পরস্পরের সাহায্যকারী হয়ে গেলেও৷" (১৭:৮৮)

এটি মাক্কী জীবনের আয়াত এবং এটি সবার প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়। অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছন্দ এবং নিখাদ স্টাইল এর মাঝেই এ চ্যালেঞ্জ সীমিত নয়; অন্যথায় তা অনারবদের প্রতি আসত না! এক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ শুধু সেসকল আরবদের জন্য আসত যারা খাটি আরবি সাহিত্য সম্পর্কে জানে (বহিরাগত সাহিত্যের অনুপ্রবেশের পূর্বে) বা জাহিলিয়াতের সময় থেকে ইসলাম অনুপ্রবেশের পূর্ব পর্যন্ত যেসকল আরবদের জীবনের অংশ কেটেছে তাদের জন্য! তত্পরিবর্তে এ আয়াত সমগ্র মানবজাতি ও জিন জাতির বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে!

কোরআন একটি মিরাকল। একজন বাগ্মি ব্যক্তির জন্য এর ছন্দময় মাহাত্ম্য এবং স্টাইল হল চ্যালেঞ্জ; একজন বিচক্ষণ ও প্রাগ্গের জন্য এর পাণ্ডিত্য ও সূক্ষ্মদর্শিতা; একজন স্কলারের জন্য এর জ্ঞান; একজন সমাজবাদীর জন্য এর সামাজিক ব্যবস্থাপনা; একজন আইন্গ্গের জন্য এর আইন; একজন রাজনীতিবিদের জন্য এর রাজনীতি; একজন শাসকের জন্য এর সুবিচার ব্যস্থাপনা; এবং সমগ্র বিশ্বের জন্য এমন বিষয়সমূহ যা কোন মনোজগতের উপলব্ধি বাহিরে - অদেখা গায়েবী বিষয়সমূহ , ভবিষ্যত-বাণী, সর্বোপরি কোন রকম বৈষম্যের বেড়াজাল থেকে স্বাধীন বিচার বা আইন, জ্ঞান এবং অভিব্যক্তি - সবই চ্যালেঞ্জ!

কোরআন মিরাকল সকল সকল মানুষ ও জিনের জন্য। একজন সাধারন মানুষ থেকে শুরু করে বিগ্গ মানুষ; মহিলা বা পুরুষ, সকল স্তরের মানুষের জন্য - ধনী বা গরীব - যার ই এতটুকু বুদ্ধিমত্তা আছে কোরআনের বক্তব্য বুঝার। প্রকৃতিগতভাবেই মানুষের 'পুণ্য' অনুধাবনের এবং পুণ্যের বিভিন্ন স্তর (লেভেল) বা মূল্যমান বুঝার শক্তি বিদ্যমান। প্রত্যেক মানুষের কোন একটি উত্কর্ষ গুন যা তার মাঝে বিদ্যমান তা পর্যবেক্ষন করে নিয়ে সেই আলোকে কোরআনে সেই গুনের মূল্যমান তুলনা করতে অগ্রসর হওয়া উচিত। এরপর সততার এবং সুবিচারের সাথে তার সিদ্ধান্তে আসা উচিত - কোন মানুষের পক্ষে এরূপ ঐশী জ্ঞান এবং লজিক ও যুক্তিবোধ - যা কোরআন এনেছে তা প্রদানের ক্ষমতা আছে কিনা? বাস্তবতার নিরিখে উত্তম চরিত্র তৈরী করার সক্ষমতা কোন মানুষের পক্ষে আছে কিনা যেরূপ চরিত্র তৈরী করার নিখাদ ও উত্তম শিক্ষা কোরআন দেয়? মানবজাতি এমন কোন পারফেক্ট আইন তৈরী করতে পারবে কিনা যার ব্যপ্তি সকল কাল ও অঞ্চলের মানুষের জন্য এবং যে আইন কোন বিশেষ দলের বা গোত্রের জন্য পার্থক্য আনে না; একত্ববাদ এবং ধার্মিকতার স্পিরিট যার প্রতিটি নির্দেশে ও নির্দেশ পালনে অনুপ্রবিস্ট; সর্বপরি বিশুদ্ধতা এবং পরিচ্ছন্নতা যার শেকড়ের খাদ্য স্বরূপ?

এমন ই আশ্চর্জজনক সুবিস্তারিত এবং সর্ব-ব্যপী বিধান একজন অশিক্ষিত মানুষ থেকে কিভাবে আসল? একজন মানুষ যিনি জন্মগ্রহণ করেছেন এবং বড় হয়েছেন এমন পরিবেশে যেখানকার লোকদের একমাত্র গুন ও বৈশিস্ট ছিল এমনি জীবনধারন করা যা অন্য দল বা গোত্রে হানা দেয়া, আক্রমণ, লুটপাট করা এবং যুদ্ধবিগ্রহের আবর্তে পুরোপুরি জড়ানো ছিল! যারা তাদের কন্যা সন্তানদের জীবন্ত কবর দিত! সন্তানদের ক্ষুধার ভয়ে হত্যা করত। যারা তাদের গোত্র বা পিতার গর্ব করত এবং মা'দের বিয়ে করত। লাম্পট্য ও ব্যভিচার ছিল তাদের গর্ব! তারা জ্ঞানকে তিরস্কার করত, এবং গোত্রের অহংকার দেখাত। তাদের অহংকার এবং উগ্র জাতীয়তাবাদ এর বহি:প্রকাশ সত্বেও তারা প্রত্যেক শিকারীর শিকারের পাত্র হত এবং যারা ই তাদের দখল নিতে চাইত তারা ই তাদের রাজত্ব দখল নিতে পারত। একদিন তারা ইয়েমেনী শাসনের অধীনে থাকত তো তারা ইথীয়পিয়ান শাসকদের অধীনে থাকত। কখনো বাইজেন্টাইন শাসকের অধীনে থাকত তো অন্য কোন সময় পারস্যের অধীনে নিগৃহিত হত! এটি ই ছিল আরবের চিত্র - এক অর্থে সকল আরব গোত্রের অবস্থা ইসলাম আগমনের পূর্বে! এমন ই এক পরিবেশে কোরআন নিয়ে আসলেন ইসলামের নবী মুস্তাফা (স)!

ধরেই নেই একজন মানুষই একটি বই নিয়ে আসলেন; বললেন যে, সমগ্র বিশ্বের জন্য এটি এক হেদায়েত। তিনি কি এ সাহস করবেন এমনি তথ্য দেয়ার যা গায়েব বা অদেখা বিষয়কে উপস্থাপন করে - অতীত ও ভবিষ্যতের? শুধু এক বা দুই জায়গায় না - সারা কোরআন জুড়ে - এর পরতে পরতে? গল্পের মাধ্যমে, ভবিষ্যত বাণীর মাধ্যমে, ভবিষ্যতে ঘটবে এরূপ ঘটনার প্রাজ্জ্বল উপস্থাপনের মাধ্যমে (এমন ই বর্ননা যেন বাস্তবে ঘটছে) ! এবং আপনার বিচারই বা কি হবে যখন দেখবেন এর একটি বিষয়ও মিথ্যা প্রমান করা সম্ভব হয়নি?

পরন্তু, যেকোন মানুষ প্রাকৃতিক বিশ্বের একটি অংশ; যে বিশ্ব ক্রমপরিবর্তনশীল। বিশ্ব উন্নততর হচ্ছে ক্রমাগত - দৃষ্টিভঙ্গি ক্রমাগত উত্কর্ষ হচ্ছে - জ্ঞান ও অনুশীলন নিখুত থেকে নিখুততর করছে এর প্রতিটি দিক!

একজন মানুষের পক্ষে মানবজীবনের সর্ব দিক সম্পর্কে এমনভাবে কি কথা বলা সম্ভব - এমন জ্ঞান, আইন, প্রগ্গা, তিরস্কার, উপমা, গল্প বিশ্লেষন করা কি সম্ভব - প্রতিটি বিষয় - বড় কি ছোট - কোন একটি অমিল ছাড়া, বর্ণনা বা বক্তব্যের ক্রমাগত উত্কর্ষতা ছাড়া? বিশেষ করে, তিনি যখন বক্তব্য রাখছেন একাধারে ২৩ বছর ধরে - যা এক সময়ের একাধার বক্তব্য নয় - প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সকল বক্তব্য কোন একটি অমিল ছাড়া, বর্ণনা বা বক্তব্যের ক্রমাগত উত্কর্ষতা ছাড়াই প্রদত্ত হল কিভাবে? যখন কোন টপিক বা বিষয় পুন: পুন: বিবৃত হল - যখন পূর্বে বপন-কৃত কোন চারা থেকে পাতা বের হল - বিষয়ের ধারাবাহিকতার (বা নতুন বিষয়ের সাথে পুরাতন কোন বিষয়ের কোন সংঘর্ষ হল না!) কোন ই ছন্দপতন হল না? নি:সন্দেহে এটি অসম্ভব; কারন কোন মানুষই সারা জীবন তার জ্ঞান এবং জীবন সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি বা মনোভাব অপরিবর্তিত রাখতে সক্ষম নয়!"

[তাফসীর আল মিজান, আল্লামা তাবাতাবাই - আয়াত ২ঃ২৪ এর তাফসীরের অংশ বিশেষের অনুবাদ]

বিষয়: বিবিধ

১৪৭৯ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

299267
০৪ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ০৯:০১
এ কিউ এম ইব্রাহীম লিখেছেন : বিগত চৌদ্দশত বছরে পবিত্র কুরআনের এই চ্যালেঞ্জ গ্রহন করার সাহস কেউ দেখাতে পারেনি। এটা অবশ্যই মিরাকল!
যারা বলে ৬,৬৬৬ টি আয়াত এর সবই মোহাম্মদ (সাঃ) এর মনগড়া, তাদেরকে বলা যায় ৬,৬৬৬ টি নয় কেবল একটি আয়াতই রচনা করে দেখাক! প্রমান করুক তিনি কেমন জ্ঞানী! নাস্তিকতা জাহির করার জন্য এই চ্যালেঞ্জটা অন্তত নিতে পারে।

লেখককে আন্তরিক ধন্যবাদ..জাযাকাল্লাহ
Rose Rose Rose

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File