পৃথিবী (৭)ঃ এবং আমি
লিখেছেন লিখেছেন ড: মনজুর আশরাফ ২৩ নভেম্বর, ২০১৪, ০৭:০৯:৫৬ সন্ধ্যা
আমার নাম রনি। গত দুইদিন ধরে শুধু দৌড়াচ্ছি। শুক্রবার ক্যানবেরা, অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশী হাই কমিশনের সামনে বাংলাদেশের স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মিছিলে ছিলাম। তার আগের রাতে পোস্টার প্লাকার্ড তৈরী করেছিলাম। আট ঘন্টা ড্রাইভ করে অন্য স্টেট থেকে সঙ্গী সাথীদের নিয়ে এসেছি। যেন আলোর মিছিল। প্রতিবাদের মিছিল। সত্যের মিছিল।
প্রতিবাদ শেষে আবার ড্রাইভ - সোজা এয়ার পোর্ট - রাত একটায় ফ্লাইট - বাংলাদেশের উদ্দেশে। লং ড্রাইভে আমার কাজ ছিল - ফেইসবুক থেকে আমার প্রফাইল টেম্পোরারিলি মুছে ফেলা।
বাংলাদেশ নামক জেলখানার অনেক স্তর বিশিস্ট প্রহরা। তার প্রথমে ই হল এয়ারপোর্ট এর কাস্টমস। এরা শুনেছি কম্পিউটারে ফেইসবুকে নাম চেক করে! যদি দেখা যায় - স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে কোন স্টেটাস দিয়েছে সাথে সাথে অন্য রুমে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে ইদানিং!
**
আমার ফেইসবুকে স্বৈরাচারের দুর্বিনীত চোর-ডাকাত মন্ত্রী আমলাদের দুর্নীতির তথ্যচিত্র - সরকারের সাধারন মানুষকে রাস্তা-ঘাটে, ঘরে ঢুকে, পুলিশের হেফাযতে হত্যা করা, চোখ উপড়ে ফেলা, আহত করার বর্ননা আর চিত্র! সত্য মানুষকে তো জানাতে ই হবে|
দেশে আজ কোন পত্রিকা নেই - কোন মিডিয়া নেই - সব তাবেদার মিডিয়া। সময়ের প্রয়োজনে আমরা আজ সবাই একেকজন মিডিয়া -- সত্যের পতাকাবাহী যোদ্ধা। সত্যের জন্য জীবনকে তুচ্ছ করতে আকাঙ্খী একেকজন সৈনিক।
তাই আমি ফেইসবুক থেকে আমার প্রফাইল টেম্পোরারিলি মুছে ফেলেছি। দেশ থেকে ফিরতে পারলে আবার প্রোফাইল রিস্টোর করব! কোন ঝামেলা নাই! কাউকে আগে থেকে জানানো যাবে না যে দেশে যাচ্ছি। বাড়ি গেলেও নিশ্চুপ থাকতে হবে। উত্তেজিত হওয়া একেবারে বোকামি হায়নার সামনে!
কোথায় যেন শুনেছিলাম - জয়ী হওয়ার প্রায় একশত উপায়ের ৭০ টির ও বেশি হল পিছিয়ে গিয়ে অথবা বাকা পথে চালাকির মাধ্যমে সুযোগমত আঘাত হানা!
**
অন্ধকার বাংলাদেশের কাস্টমস সৌভাগ্যক্রমে অসংখ্য প্রশ্নবান শেষে পার হলাম। কাটা-ছেড়া বা হাওয়া না হওয়া লাগেজ নিয়ে বেরুলাম। এখন সোজা যাব চট্টগ্রাম - সেখান থেকে পাহাড়ের দেশে। আমার নাড়ি সেখানে লাগানো যে! ওয়েটিং রুমে বসে কবিতা বানাচ্ছি। অনেক অনেক স্মৃতি মনে পড়ছে -
"পাহাড়ের বুক ফুড়ে বহুদূর চলে গেছে পথ
সে পথ দিয়ে আমি এগুচ্ছি - ঝোপ অর্কিডের প্রাণগুলো স্থবির হয়ে কতকাল;
কাটাবনের ফাঁক দিয়ে নিচে দেখা যাচ্ছে নদীর কাল জলস্রোত;
সুন্দর ঝি ঝি শব্দের সাথে ক্ষীণ জলধারার ঐকতান।
সুন্দর সাদা মেঘের ভেলা ভেসে যায় দূর পাহাড়ে;
মৃদু বাতাস মাঝে মাঝে হানা দেয় প্রবল হয়ে;
পাতায় পাতায় ঝন ঝন শব্দ হাকিয়ে চলে যায় সে;
কোথাও পাখির কান্না ভেসে চলে, কদম্ব ফুলও ভেসে চলে ক্ষীণ পানির স্রোতে।
পাহাড়ের বুক ফুড়ে গড়ে উঠেছে জনপদ;
মানুষের হাসি-কান্না,
প্রেম ভালবাসার কথা।
আমি কবিতা লিখছি বদ্ধ ঘরে বসে
সেখান থেকে কিভাবে প্রকৃতিকে দেখব? তবে প্রকৃতিকে অনুভব করা যায়;
তোমাকেও দেখতে হবে, চেষ্টা দরকার কেবল ...
চেষ্টা করছি।
বৃষ্টি - কাল আকাশ ভেঙ্গে সব কিছু ভেঙ্গে ফেলার মতই বৃষ্টি।
কৃষকেরা দ্রুত ফিরে চলছে নীচে,
সাঁওতালি মেয়েরা খিলখিলিয়ে হেসে চলে যায় জনপদে।
পাহাড় একাকী;
দুরে কাল মেঘেরা আসছে - যাচ্ছে,
গাছগুলো দাড়িয়ে চুপ চাপ শুনছে আশ্চর্য বৃষ্টির গান।
ক্ষীণ নদীর স্রোত বাড়ে,
নতুন উদ্যোমে এগিয়ে চলে অজানায়।
শুধু আমি আর তুমি বৃষ্টিতে ভিজছি;
ভিজেই চলেছি।
উদাসীনতায় আচ্ছন্ন আমরা,
শুনছি দূর আকাশের গান।
নাহ, রাত দুটার সময় গ্রীষ্মের কড়া এক প্রহরে এমন মিথ্যা কল্পনা! ভাবাই যায়না।
অগত্যা ..
ঘুরি উড়াচ্ছি আকাশে,
অনেক দিন আগের কথা
ঘুড়ি এখন ই কাটাকাটি লাগার অপেক্ষায়।
বাজার থেকে কিনে এনেছি আজ ঘুড়ি,
আব্বুর পকেট থেকে দু' টাকা চুরি করে।
... এইত কাটাকাটি লাগল বলে।
পাশেই কেউ চিত্কার করছে, 'সুতা ছাড়, সুতা ছাড়!'"
বিষয়: বিবিধ
১৪৩৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন