নাস্তিকতা (৭)ঃ বিজ্ঞান কি নাস্তিকতায় ধাবিত করে?

লিখেছেন লিখেছেন ড: মনজুর আশরাফ ১৯ নভেম্বর, ২০১৪, ১০:৩৫:০৮ সকাল

১) বিজ্ঞানীরা কি বিশ্বাস করে?

Science vs. Religion: What Scientists Really Think, Rice University গ্রন্থে সসিওলোজিস্ট এলাইন হাওয়ার্ড এবং তার সহযোগীরা এক জরিপ-এক্সপেরিমেন্টে যুক্তরাস্ট্রের ২১টি প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতটি ন্যাচারাল এবং সোশ্যাল সাইন্স বিভাগ থেকে রান্ডমলি (randomly) গবেষক বাছাই করলেন।

সে জরিপ-এক্সপেরিমেন্টে ১৬৪৬ জন গবেষক বিস্তারিতভাবে তাদের ধর্ম-বিষয়ক বিশ্বাসবোধ এবং ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের কি সম্পর্ক সে সম্পর্কে উত্তর দিয়েছিলেন। এরপর তাদের মাঝে ২৭৫ জন বিজ্ঞানীদের সাথে বিস্তারিত সাক্ষাত্কার নেয়া হয়েছিল।

জরিপের উপসংহারে যা উঠে এসেছে তা হল: "অধিকাংশ ব্যক্তিই বিজ্ঞানী হওয়ার সাথে সাথে অধার্মিক বা নাস্তিক হয়েছেন এটা সত্য নয়। পরন্তু যে কারনে তাদের মনে অবিশ্বাস-বোধ জন্ম দিয়েছে তা অন্যান্য সাধারণ আমেরিকানদের মতই। আর তা হল: তারা কোন ধার্মিক পরিবেশে বড় হননি। তাদের ধর্মীয় পরিবেশ বা পরিস্থিতির সাথে বাজে অভিগ্গতা হয়েছিল। তারা স্রষ্টাকে অগ্রাহ্যই করেছিল (গভীর চিন্তা ছাড়াই) অথবা স্রষ্টাকে পরিবর্তনশীল মনে করেছিল!"

[http://www.thenewatlantis.com/publications/what-scientists-believe

Ecklund, Elaine Howard, and Christopher P. Scheitle, “Religion among Academic

Scientists: Distinctions, Disciplines, and Demographics,” Social Problems, 54(2): 289- 307, 2007.]

১,১) জীববিজ্ঞানী স্যার পিটার মেডাওয়ারঃ

"সায়েন্স এর লিমিট (সীমা) এর অস্তিত্ব যদিও পরিষ্কার হয়েছে তার (সায়েন্স এর) শিশুসুলভ প্রাথমিক বা প্রারম্ভিক প্রশ্নের উত্তর প্রদানে অক্ষমতা থেকেই - যা প্রথম ও শেষ বিষয়গুলোকে ইঙ্গিত দেয়। প্রশ্ন যেমন- 'কিভাবে সব কিছু শুরু হল?' 'আমরা কেন এখানে - এ পৃথিবীতে অবস্থা করছি?' 'জীবনে বেঁচে থাকার অর্থ কি?' এগুলোর উত্তর সাইন্স দিতে অক্ষম।"

[Cited from John C. Lennox. God’s Undertaker: Has Science Buried God. Lion. 2009, p.31.]

২) বিজ্ঞানের সংজ্ঞা কি?

> 'সায়েন্স' শব্দটি ল্যাটিন শব্দ 'scientia' (অর্থ 'জ্ঞান') থেকে এসেছে।

> দার্শনিক বারট্রেন্ড রাসেল বিজ্ঞানকে সংগায়িত করতে গিয়ে বলেছেন: "কোন কিছু আবিস্কারের প্রয়াস বিজ্ঞান হিসেবে পরিচিত - যা পর্যবেক্ষন এবং প্রচলিত যুক্তিবোধেরই উপর কেবল নির্ভর করে। .. এর অন্তর্ভুক্ত হল: পৃথিবীর কোন নির্দিস্ট ফ্যাক্ট, ফ্যাক্ট গুলোকে নিয়ন্ত্রনকারী সূত্রসমূহ ইত্যাদি।"

[Bertrand Russell. Religion and Science. Oxford University Press. 1935, p. 8.]

৩) সাইন্স এর লিমিট (সীমা):

৩.১) দু'টি বিষয় সাইন্স কে সীমিত করে দিয়েছে উপরোল্লিখিত সংগা অনুযায়ী:

(ক) প্রয়োগবাদ (Empiricism), এবং

(খ) প্রকৃতিবাদ (Naturalism)

পরে এর বিস্তারিত বিশ্লেষন আসবে ইনশাআল্লাহ ।

৩.১.১) তত্ত্ব: সাইন্স এর দর্শন (philosophy of science) অনুযায়ী (৩.১) এর দুটি বিষয়

(ক) স্রষ্টার অস্তিত্বের স্বপক্ষে পরোক্ষ্য প্রমান দেয়;

(খ) তা কখন ই স্রষ্টার অনুপস্থিতি প্রমাণ করতে সক্ষম নয়।

৩.২) প্রয়োগবাদ (Empiricism):

> প্রয়োগবাদ (Empiricism) অনুযায়ী নতুন অভিগ্গতা বা আবিস্কার অতীতের ভিন্নতর অভিগ্গ্তাকে ভুল প্রমাণিত বা অস্বীকার করতে পারে!

> প্রয়োগবাদ (Empiricism) এর প্রচলিত মূলনীতি: কোন একটি বিষয় সম্পকে জানতে বা কোন ধারনাকে প্রমান করতে আমাদের দুটি বিষয় ছাড়া জ্ঞানের কোন উত্স নেই। উত্স দুটি হল: [১] অন্য কোন বিষয়ের প্রতিষ্ঠিত ধারনা, এবং [২] পঞ্চ-ইন্দ্রিয়ের অনুভুতিলব্ধ জ্ঞান।

> প্রয়োগবাদ (Empiricism) অনুযায়ী

"যে তত্ত্ব কোন বাস্তব পর্যবেক্ষন ছাড়া কোন কিছুর বর্ননা দেয় - তাকে যৌক্তিকভাবে ও আবশ্যকীয়ভাবে বিশ্বাস করা যায় না। একজন প্রয়োগ-বাদীর কাছে: একটি তত্ত্ব যদি যৌক্তিকভাবে সঙ্গতপূর্ণ হতে হয়, তবে পর্যবেক্ষন ই কেবন একমাত্র জ্ঞানের উত্স হবে ওই তত্ত্ব সম্পর্কে! "

[Elliot Sober “Empiricism” in The Routledge Companion to Philosophy of Science edited by Stathis Psillos and Martin Curd. 2010, pp. 129.]

৩.২.১) প্রয়োগবাদ (Empiricism) এর সমস্যা:

প্রশ্ন: আমাদের কি সেন্সরি বা পঞ্চ-ইন্দ্রিয়ের অনুভুতিলব্ধ জ্ঞান ছাড়া সত্য যাচাইয়ের আর কোন কি উপায় নেই?

উত্তর: এলিয়ট সবার এর উত্তরে বলেন, "প্রয়োগ-বাদীরা অনুভুতিলব্ধ দর্শনের মাধ্যমে কোন সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করেন কেবল। এক্ষেত্রে প্রথমে যা ঘটে তা হল: কোন বস্তু থেকে আলোক এসে মানুষের ব্রেইনে একটি ভিজুয়াল অনুভুতির জন্ম দেয়।

কিন্তু একটি চিত্র অনুমান করুন: তীব্র তুষারঝড়-এর মাঝে হারিয়ে যাওয়া একটি শ্বেত-শুভ্র বিড়াল যেমন অদৃশ্যমান হয় - অথবা একটি ছায়াময় বস্তু (silhouette- যেমন পূর্ণ চন্দ্রগ্রহনের অব্যহিত পরপরই একটি চাদের আবছা-ধরনের দৃশ্যমান অবস্থা) অবশ্যই প্রমান করে যে: অনুভুতিলব্ধ দর্শনের মাধ্যমে কোন কিছু প্রমান করা কখন ই পর্যাপ্ত নয় বা অবশ্য প্রয়োজনীয় নয়।"

[Elliot Sober “Empiricism” in The Routledge Companion to Philosophy of Science edited by Stathis Psillos and Martin Curd. 2010, pp. 131.]

৩.২.২) প্রফেসর এলিয়ট সবার বলেন, "কোন এক মুহুর্তে বিজ্ঞানীরা তাদের হাতে যে অনুভুতিলব্ধ উপাত্ত আছে তা দ্বারাই তারা সীমিত - তাদের চিন্তা-চেতনাও সীমাবদ্ধ । এটি এমন ই একটি সীমাবদ্ধতা যা বিজ্ঞানকে শুধুমাত্র এমন সীমিত সংখ্যক সমস্যার সমাধানে আবদ্ধ করে ফেলে যাদের কেবল অনুভুতিলব্ধ জ্ঞান দিয়ে সমাধান করা যায়!"

[Elliot Sober “Empiricism” in The Routledge Companion to Philosophy of Science edited by Stathis Psillos and Martin Curd. 2010, pp. 137-138.]

৩.২.৩) উদাহরন:

(ক) আপনি কি আপনার পর্যবেক্ষিত অনুভুতিলব্ধ জ্ঞান দিয়ে প্রমান করতে পারবেন যে, আপনার সাত পুরুষ আগের দাদীর (great granmother X ৭) অস্তিত্ব ছিল?



(খ) তীব্র তুষারঝড়-এর মাঝে হারিয়ে যাওয়া একটি শ্বেত-শুভ্র বিড়াল - কিভাবে এ উপস্থিতি আপনার পর্যবেক্ষিত অনুভুতিলব্ধ জ্ঞান দিয়ে প্রমান করতে পারবেন?



৩.২.৪) প্রয়োগবাদ (Empiricism) অনুযায়ী স্রষ্টা প্রসঙ্গ: সরাসরি পর্যবেক্ষন অনুপস্থিত!:

প্রয়োগবাদ (Empiricism) যদি সরাসরি পর্যবেক্ষন দাবি করে, তার অর্থ স্রষ্টার অস্তিত্ব এক্ষেত্রে এমন কোন বিষয় নয় যা সম্পর্কে প্রয়োগবাদ (Empiricism) কোন উত্তর দিতে সক্ষম। কারন, স্রষ্টা সংগানুযায়ীই সরাসরি অপর্যবেক্ষনযোগ্য।

কিন্তু যদি পরোক্ষ্য (Indirect অর্থাত সরাসরি নয়) পর্যবেক্ষন দিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হয়, তবে বিজ্ঞান অবশ্যই অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে সাহায্যকারী তথ্য-উপাত্তের আলোকে। যেমন: বিশ্ব ব্রম্মান্ডের সূচনা, সচেতনতা (consciousness), ইত্যাদি।

কিন্তু বিজ্ঞান কোন অবস্থাতে প্রমাণ করতে পারবে না যে, স্রষ্টা অনুপস্থিত বা বিদ্যমান নেই।

কারন, স্রষ্টাকে অস্বিকার করতে আমাদের প্রয়োজনীয় সংখ্যক তথ্য-উপাত্ত থাকতে হবে - যার একটি ও বিজ্ঞানের নেই!

এর পরোক্ষ্য অর্থ: এমন সম্ভাবনা থাকাও অমূলক নয় যে, ভবিষ্যতের একটি পর্যবেক্ষন হয়ত বর্তমানের কোন বিষয়ের উপসংহার কে পরিবর্তিত করতে পারবে!

৩.২.৪.১) সাধারন একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টির সহজ- বিশ্লেষন :

(ক) স্রষ্টার অস্তিত্বের প্রশ্নে প্রয়োগবাদ (Empiricism) সাধারনভাবে নিশ্চুপ - এটাই স্বাভাবিক! তবে:

(খ) এক্ষেত্রে প্রয়োগবাদ (Empiricism) যদি সরাসরি পর্যবেক্ষন দাবি করে স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমানে: তবে তা যেমন (স্রষ্টার অস্তিত্ব) মিথ্যা প্রমান করতে পারবে না - তেমনি স্রষ্টার উপস্থিতি সত্য প্রমানও করতে পারবে না!

কিন্তু প্রয়োগবাদ (Empiricism) যদি পরোক্ষ্য (Indirect অর্থাত সরাসরি নয়) পর্যবেক্ষন দিয়ে চিন্তা-ভাবনা দাবি করার মত সত সাহস দেখায়, তবে আপনি কিছু প্রমান - যেমন বিশ্ব-ব্রম্মান্ডের ফাইন টেউনিং বা বিশ্ব-ব্রম্মান্ডের অস্তিত্ব রক্ষার্থে বিভিন্ন ধ্রুবকের নিখুত পরিমাপ কে পেশ করুন!

এ সকল প্রমান অবশ্যই স্রষ্টাকে সরাসরি অস্বিকার করতে বা মিথ্যা প্রমান করতে ব্যর্থ! বরঞ্চ ওই সকল তথ্য উল্টো লজিকাল প্রমান ই (অর্থাত স্রষ্টাকে পরোক্ষ্য ভাবে সত্য প্রমান ই করে) দেয়!

৩.২.৫) যুক্তিসম্মত প্রয়োগবাদ এর (empiricism) মৃত্যু:

"কেন সকল পানি প্রদেয় বায়ুর চাপে একটি নির্দিস্ট তাপমাত্রায় ১০০ ডিগ্রী সে: এ ফুটে? যেহেতু এই ফ্যাক্ট টি অবারিতভাবে বিশ্বজনীন সাধারন অবস্থায় পর্যবেক্ষিত হয় , আমরা এ তত্বে উপনীত হতে পারি যে, কোন নির্দিস্ট সংখ্যক পর্যবেক্ষন (তথ্য বা ডাটা) এর সত্যতাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রয়োজনীয় নয়। এর থেকেও একটি অতিরিক্ত এবং সম্ভবত সমস্যাবহুল ইস্যু হল: আমরা যখন সাইন্স এর উচ্চপর্যায়ে চিন্তাভাবনা করি, আমরা প্রত্যেক পদার্থের গঠন-কাঠামোতে পৌছে যাই - যা অণু-পরমাণু, ইলেকট্রন, প্রোটন - এসব উচ্চমাত্রার কমপ্লেক্স, প্রশ্নবিদ্ধ তাত্বিক (ব্যবহারিক দৃশ্যমান নয়) উপাদান ভিন্ন কিছু নয় -- এক্ষেত্রে আমরা সরাসরি অনুভুতিলব্ধ অভিগ্গতা থেকে অনেক অনেক দূরে চলে যাই!"

[John Cottingham. Rationalism. Paladin. 1984, p. 109.]

৩.২.৬) নাস্তিকদের উভয়সঙ্কট (dilemma):

"এটা প্রচলিত যে, একটি স্টেটমেন্ট অর্থপূর্ণ যখন তাকে প্রমান করা যাবে অথবা তার স্বপক্ষে তথ্য পাওয়া যাবে সেন্সর বা অনুভুতির মাধমে। কিন্তু পদার্থের মেটা-ফিজিক্সের তাত্বিক বিষয়গুলোকে (যেমন: অণু-পরমাণু, ইলেকট্রন, প্রোটন - এসব উচ্চমাত্রার কমপ্লেক্স, প্রশ্নবিদ্ধ তাত্বিক উপাদান) এরা আবার অন্য চোখে দেখে! এক্ষেত্রে (তা বিশ্বাস করতে) তাদের নীতিকে সহজ বা রিলাক্স করে! 'স্রস্টার অস্তিত্ব-সম্পর্কিত স্টেটমেন্ট' অথবা 'স্বাধীনতার সংগা' বা চেতনার প্রকৃতি, ইত্যাদি কে অভিগ্গতার মানদন্ডে ফেলা অর্থহীন। কিন্তু এসকল বিষয়ে আবার ওই মানুষগুলো শক্ত কঠোর হয়ে যায়!

এভাবে ওই সকল ব্যক্তি একটি বৈপরিত্য বা দ্বি-মুখী আচরণ প্রকাশ করে। অথচ হয় তাদের নীতি সব সময় একই রকম শক্ত হওয়া উচিত - যার দরুন সাইন্স এর থিওরেটিকাল তত্ব (যার প্রমান পাওয়া যায়নি) কে সব সময় অস্বীকার করতে হবে যেভাবে তারা স্রষ্টাকে অস্বীকার করে থাকে -- অথবা তাদের নীতিকে রিলাক্স করতে হবে মেটা-ফিজিক্সের অনুমান বা ধারনা এবং স্রস্টার ধারনা উভয়কেই চিন্তার জগতে অনুপ্রবেশ করানোর জন্য!

এসকল লোকদের এ ধরনের উভয়সঙ্কট (dilemma) এর সুরাহা আজ অবধি হয়নি!"

[John Cottingham. Rationalism. Paladin. 1984, p. 110.]

৩.৩) প্রকৃতিবাদ (Naturalism): একটি ভুল লেন্স:

>ফিলোসফিকাল প্রকৃতিবাদ (Naturalism) এমন একটি দৃষ্টিপট যা বলে যে, অতি-প্রাকৃত কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই। এ বিশ্ব ব্রম্ম্যান্ড একটি বন্ধ (closed) সিস্টেম - যার বাইরের কোন কিছু এর উপর প্রতিক্রিয়া দেখাতে সক্ষম নয়। প্রাকৃতিক নিয়ম-নীতিই সকল ঘটনার বিশ্লেষনের জন্য পর্যাপ্ত!

> অধিকাংশ নাস্তিক এবং বিজ্ঞানীদের এটি ই প্রকৃতি বা ফিলোসফি। তারা বিশ্বাস করে যে, সাধারন পদার্থই বাস্তবতার উত্সমুল!

> অনেক নাস্তিক ধারনা করেন যে, ফিলোসফিকাল প্রকৃতিবাদ ই সত্য। এজন্য তারা অন্ধভাবে মেটা-ফিজিকাল অনুসিদ্ধান্ত বাতিল গণ্য করেন।

৩.৩.১) প্রকৃতিবাদ (Naturalism) কি একটি ধর্ম?

> "আমি সব সময় বলি যে, প্রকৃতিবাদ (Naturalism) নিজেই একটি ধর্ম ছাড়া কিছু নয়!"

[Michael ruse in Robert B. Stewart (ed.). Intelligent Design: William A. Dembski & Michael Ruse in

Dialogue. Fortress. 2007, p.37.]

একটি সহজ প্রমান:

যদি ধর্ম ই না হয় তবে তারা কেন অন্ধভাবে মনে করে যে, এ বিশ্ব ব্রম্ম্যান্ড একটি বন্ধ (closed) সিস্টেম - যার বাইরের কোন কিছু এর উপর প্রতিক্রিয়া দেখাতে সক্ষম নয়?

> অনেক বিরুপ ফ্যাক্ট এ মতবাদের বিরুদ্ধে সহজেই উপস্থাপিত করা যায় (যা পূর্বের অধ্যায়গুলোতে আলোচিত হয়েছিল)

- সচেতনতা (consciousness)

- উদ্দেশ্যমুলক নৈতিকতা

- বিশ্ব ব্রম্মান্ডের সূচনা

- মৃত্যুর মুখোমুখি অভিগ্গতা (near death experience)

> একটি সহজ প্রশ্ন:

যেহেতু উপরের অনেক কিছু ই এ তত্ত্ব ব্যখ্যা করতে অক্ষম, সেক্ষেত্রে কিভাবে এ তত্ত্বকে (প্রকৃতিবাদ (Naturalism)) স্রষ্টার অস্তিত্বকে মিথ্যা প্রমান করতে সক্ষম বলে ধরব? কোন যুক্তিতে?

৪) ইসলাম মানুষকে বিজ্ঞান-মনস্ক করে:

> ঐতিহাসিকদের মতে, ইসলামিক দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক এবং বুদ্ধিজীবিগন সাইন্টিফিক পদ্ধতির অগ্রদূত ছিলেন।

> মুসলিম ফিজিসিস্ট এবং সায়েন্টিস্ট ইবন আল হায়্থাম এক্স্পেরিমেনটস করেছিলেন যা তার Book of Optics (১০২১ খ্রি ) এ প্রকাশিত হয়েছিল।

তিনি অভিগ্গতা, এক্সপেরিমেন্ট এবং যুক্তিবোধকে সমন্বিতভাবে তার উদ্ভাবিত থিওরি অব ভিশন (theory of Vision) কে ব্যখ্যা করতে ব্যবহার করেন।

[D. C. Lindberg. Theories of Vision from al-Kindi to Kepler. University of Chicago Press. 1976, pp. 60–7.]

৫) ইসলাম রেনেসাঁ বা পুনর্জাগরনের প্রভাবক:

রেনেসাঁ বা পুনর্জাগরনের প্রভাবক হিসেবে ইসলামের অবদান অনস্বিকার্য। থমাস আর্নল্ড বলেন, "মুসলিম স্পেন মধ্যযুগীয় ইউরোপের ইতিহাসে উজ্জ্বলতর অধ্যায় রচনা করেছিল। এর প্রভাব ইউরোপে ছড়িয়ে পড়েছিল। একটি নতুন সাহিত্য, সংস্কৃতি শুরু হয়েছিল। মুসলমানদের মাধ্যমেই খ্রিস্টান গবেষকরা গ্রীক-দর্শন বা ফিলোসফি সম্পর্কে অবগত হয়েছিলেন। সাইন্স এমন একটি অগ্রযাত্রা সূচনা করেছিল মুসলমানদের স্পেন বিজয়ের সময় থেকেই যা মানসিকভাবে পুরো ইউরোপের জনগোষ্ঠিকে কার্যকারিতা প্রদান করেছিল ইউরোপের রেনেসা আন্দোলনের সময় পর্যন্তই!"

[Thomas Arnold. The Preaching of Islam, p. 131.]

৬) কোরআনের উত্সাহ:

"তারা কি কখনো আকাশ ও পৃথিবীর ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে চিন্তা করেনি এবং আল্লাহর সৃষ্ট কোন জিনিসের দিকে চোখ মেলে তাকায়নি?" (৭: ১৮৫)

EXERCISE

প্রশ্ন: ইভোল্যুশন এবং কোরআনের আদম-সৃষ্টির বিষয়ের মাঝে কিভাবে তুলনামূলক সম্পর্ক দেখাতে পারেন নাস্তিকদের?

ইঙ্গিত:

বিবর্তনবাদ বা ইভোল্যুশন কে দুটি বিষয় দিয়ে ব্যখ্যা করা যায় বৈজ্ঞানিকভাবেই:

(ক) induction বা আবেশন প্রক্রিয়া দিয়ে: যা তথ্য-নির্ভর। এটি ০ - ৯৯% সত্য।

নতুন ভিন্ন ধরনের তথ্য আবিস্কার হলে পুরাতন অনুসিদ্ধান্ত প্রবাবিলিটি নির্ভর সত্য বা মিথ্যা বলে নির্ণিত হয় (যেমন: ০ - ৯৯% সত্য)।

(খ) প্রয়োগবাদ বা Empiricism: নতুন তথ্য (যা পূর্বে পর্যবেক্ষিত হয়নি) আবিস্কার হলে পুরাতন অনুসিদ্ধান্ত বাতিল গন্য হয়।

ডারউইনিজম বা বিবর্তন্বাদ (ইভোল্যুশন) এর ধারনাকে সহজেই প্রয়োগবাদ বা Empiricism এবং induction বা আবেশন প্রক্রিয়া দিয়ে নিচের ছবির মত সাইন্টিফিকালি বুঝা যায়।



অন্যদিকে কোরআনিক সৃষ্টি-তত্ত্বীয় মতবাদ কে ভুল প্রমান করতে হলে কোরআনের নির্ভুলতা এবং উপস্থাপিত নিম্নের অনুসিদ্ধান্তকে Empiricism এবং induction উভয় প্রক্রিয়াতেই বাতিল প্রমানের যুক্তি এবং সাহস দেখাতে হবে:

[১] কোরআন ১০০% ঐশিবাণী এবং সে অর্থে অসীম জ্ঞানের আধার কতৃক রচিত।

[২] কোরআনের সৃষ্টি তত্ত্বীয় এবং অন্যান্য সাইন্টিফিক মিরাকল বা উপস্থাপিত ফ্যাক্টস গুলো ১০০% নির্ভুল প্রমাণিত আজ অবধি!

[৩] ভাষাগত উত্কর্ষতা এবং চ্যালেঞ্জ - এর কোন ভুল বের করতে বা এক সমমানের একটি আয়াত তৈরী করতে!

বিষয়: বিবিধ

১৫৬০ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

285897
১৯ নভেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৪:০৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ শিক্ষনিয় পোষ্টটির জন্য।
বিজ্ঞান দিয়ে ধর্ম বা আল্লাহর অনস্তিত্ব প্রমানের দাবিদার রা আসলে মিথ্যাবাদি। কোন বিজ্ঞানির ব্যাক্তিগত বিশ্বাস ই প্রমানিত বিজ্ঞান নয়।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File